ঘটনা একঃ
সেদিন বড় ভাই হঠাৎ ফোনে নালিশ।
-মনু তুই কই?
-বাসায় আছি, কি হইছে?
-আজকে তো তোর ভাবি আমার ভাত বন্ধ করে দিছে।
-হায় হায় কন কি! কি করছেন আপনি?
-আমি কিচ্ছু তো করি নাই। যা করার বাসের সিটে করছে।
-মানে কি?
-আর কইস না, ঢাকায় বাসে উঠে ফিরতেছিলাম বাসায়। কোন জানি বেক্কল মাইয়া তার লিপিস্টিক বাসের সিটে খোলা অবস্থায় ফেলছে। পরে সে সিটে আমি বসার কারণে সব আমার জিন্সের প্যান্টে মাখছে। ভর দুপুর বেলা জামা কাপড় ছাইড়া ভাত খাইতে টেবিলের দিকে এসেই দেখি তোর ভাবি তো এক হাতে লাঠি অন্য হাতে প্যান্ট নিয়া সামনে খাড়ায়া আছে। দৌড় দিমু না কি করুম বুঝতে পারতেছিলাম না।
পরে বুঝাইয়া কইলাম। শুধু কইলো, প্যান্ট ভালো করে নিজে ধুয়ে পরিষ্কার করতে।
আমি সে প্যান্ট ধুয়ে তোরে ফোন দিলাম।
-ও এই কথা!! কোনো ব্যাপার না। মাঝে মাঝে লাডির দাবড়ানি খাওয়া ভালো।
মনে হইলো ভাইটা আমার মন খারাপ করছে। বইনেও তার একটু পক্ষ নিলো না।
ঘটনা দুইঃ
কিছুক্ষণ আগে ফেসবুকে আমার একখান মন্তব্য ভাইরাল হইতে হইতে বাইচা গেছি। নামডা ভালোমতো না পড়ে প্রোফাইল ছবি দেখে মনে হলো বন্দনা আপু। পোষ্টটা হলো,’রাতে রওনা করে সকালে কুড়িগ্রাম পৌছে সারাদিন কি কি দেখা যাবে?’
আমি মন্তব্য দিলাম,’তুমি যদি এসে আমাকে খবর না দেও তোমার সাথে কিন্তু আমার জনমের আড়ি তুমি আমার বাসাতেই উঠবা, পরে আর একটা মন্তব্য দিলাম,’তুমি কখন আসবা?’
চোখে ছিলো না চশমা। ইদানিং চশমা ছাড়া উল্টাপাল্টা দেখি মনে হয়।
চোখ বড় বড় কইরা দেখলাম, আরে! এডা তো কোন পোলা। মুখে একখান বিড়ি। আমি তো নাই। কাঁপা-কাঁপি শুরু হলো আমার। সাথে সাথে ডিলেট মারলাম মন্তব্য।
এহন কথা হইতেছে, এ পোষ্ট আর মন্তব্য যদি আমি চোখ বড় বড় কইরা পরে না দেখতাম আইজ আমার ডিভোর্স কেউ ঠ্যাকাইতে পারতো না। আর ও পোলা যদি বিবাহিত হতো আর তার বউ ফ্রেন্ডলিস্টে থাকতো তবে তারও একই অবস্থা হইতো। প্রেমিকা থাকলে তো ব্রেকআপ হইতো।
কি এ্যাক্টা অবস্থা হইতো! ভাবতে ভাবতে আমি কোমায় যাবার উপক্রম।
ঘটনা তিনঃ
তিনি একসময় নাটক টাটক করতেন। হিরোর রোল যাকে বলে। তার নায়িকারা বেশ সুন্দরী ছিলেন। তো, এক নাটকে তার চরিত্র ছিলো তিনি একজন গবেষক। তার পারসোনাল সেক্রেটারি তার নায়িকা। তিনি একটা গবেষণায় সাকসেস হয়ে ইউরেকা বলে নায়িকাকে জড়িয়ে ধরবেন। এবং তিনি খুব জোরেই ইউরেকা বলে একটা চিৎকার দিলেন। দৃশ্যমতে নায়িকাকেও জড়িয়ে ধরলেন। অমনি ধপাস করে স্টেজ ভেঙ্গে পড়লো। তিনি তো তখন নায়িকাকে নিয়েই পড়েছেন। পাঠক, একবার দৃশ্যটা কল্পনা করুণ! দর্শক সারিতে বসে ছিলেন তার প্রেমিকা। তিনি কিন্তু ভীষণ সুন্দর ছিলেন দেখতে। হায়রে! সে প্রেম শুনেছি সেখানেই ইতি টেনেছিল আর আমার কপাল পুড়েছিল। সে প্রেমিকার বাড়ি আবার তাদের ঘর থেকে বের হয়েই কিছুদূরে। একটা গান আছে না? ‘ঘরসে নিকালতেহি, কুচ্ দূর চলতেহি রাস্তেমেহে উসকা ঘর।’
আমি সকালে ইউটিউবে একটু গান শুনি। এ গানটা আমার বেশ পছন্দের। গানটা আসলে আমি মৃদু একটা খোঁচা মেরে বলি, গানটা বেশ তাই না?’ তিনি কটমট করে আমার দিকে তাকান। মনে মনে বলি,এতো কাঠখোট্টা একটা লোক সে বয়সে প্রেম করেছে কি করে! আর নাটকের নায়কই বা কেমন করে হইতো!! সবই সময়ের দোষ আসলে। ইদানিং তিনি রাতে একটু তাড়াতাড়ি ফেরেন উত্তমের ছবি নিয়ে বসে পড়েন। স্মৃতি আওড়ান মনে হয়।
আমি মুচকি হাসি।
নোটঃ দুই ভাইবোনের দুঃখের কথা শুইনা আবার কেউ হাইসেন না কইলাম।
২৬টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
তোমার ভাইর তো মন খারাপ হবেই। তুমি ভাবির পক্ষ নিলে কেন? তা তোমার ভাই কি মহিলাদের সীটে বসছিলো? সীটে বসার সময় দেখবেনা সীটের উপর কি আছে? যদি সেফটিপিন, চুলের কাটার উপর বসত তাইলে তো শেষ হইত।
চশমা ছাড়া কিছু লেইখ্য না, ভাইরাল হলে কত ভয়ংকর অবস্থা হতো!
শেষ পর্যন্ত নায়ক তোমার ভাগ্যে লেখা ছিল! হা হা হা
বাস্তব রম্য ভালো হয়েছে৷
রিতু জাহান
কি এ্যাক্টা অবস্থা হতো এবার ভাবুন ভাইয়া!!
এতো মানুষ ছোটো একটা দেশে। সেই তুলনায় যানবাহন নাই বললেই চলে। সাসনে বাস আসলে সিট পাইলেই হইলো৷ আর মহিলারা যদি পুরুষ সিটে বসে তাইলে কার দোষ?
আমার ভাই নির্দোষ।
হ, শেষ পর্যন্ত আমার কপাল পুড়ছে।
প্রহেলিকা
শিরোনামেই বুঝা গ্যাছে ভেতরে মেডিসিন ভালোই আছে। মজা পেলাম পোস্ট পড়ে। সকাল থেকে মেজাজ খিটখিটে এখন একটু কমলো। এমন পোস্ট বেশি বেশি দেয়া দরকার।
ভাগ্যিস ভাইরালের ভাইরাসের হাত থেকে বাইচা গেসেন। না হলে কাল সকালের শিরোনাম হতো “এ কি বললেন রিতু জাহান!!!”
রিতু জাহান
সেই জন্য ওয়াই ফাই লাইন আমার উধাও হইছে। অবশেষে ডাটা কিনলাম।
মজার ঘটনা আমার ওয়াই ফাই লাইন দিচে যে ছেলেটা ওর নাম মৃণাল। আমার তো আবার নাম মনে থাকে না। আমি নামের পাশে সে জন্য সে কে অল্প শব্দে লিখে রাখি৷আমি মৃণালের পাশে লিখে রাখছি,ওয়াইফ!! আসলে কেনো যেনো আর শব্দ যোগ হচ্ছিলো না। তো আমি বেখেয়ালে সেইভ করে রাখছি। সেদিন ওকে ফোন দিব নাম বের করতে গিয়ে দেখি এ অবস্থা! আমি হাসতে হাসতে শেষ।
স্কিন শর্ট দিয়ে দেখাতে পারলে বুঝতেন।
কি এক্টা অবস্থা আমার!!
ভাগ্যিস ভাইরাল হই নাই। আল্লাহ বাঁচাইছে
প্রহেলিকা
হা হা হা হাসতে হাসতে শেষ! ওয়াইফ!!
সাবধান, লেখা লেখার সময় একটু সাব্ধানেই লেইখেন। কোথাকার জল আবার কোথায় গিয়ে না গড়ায়! এমন রম্য আরো চাই কিন্তুক!
শুন্য শুন্যালয়
ভাই-বোনের উল্টাপাল্টা আকাম ঢাকতে তুমি আমার ভাইয়ের পেছনে লাগছো, এই চক্রান্ত আমি ঠিকই বুঝছি। ভাইটা ম্যালাকিছু দেখেনা বলে ভাইবোনা, আর কেউ কিছু দেখতেছেনা। আমি সব নালিশ করতেছি খাড়াও। “তুমি কবে আসবা?” খাড়াও আসাইতেছি।
কতটা যন্ত্রণাদায়ক বউ পাইলে লোকে উত্তমের মুভি নিয়া স্মৃতিচারণে বসে, আহা ভাইটা!
রিতু জাহান
শোনো, তুমি একবার ভাব আমার কি অবস্থা। তার পাশে বসে দেখতে হচ্চে শাপ মোচন, শিল্পী, আরো আরো কতো কতো ছবি।
তোমার ভাই যে কি ছিলো আমি জানি।
আমরা দুই ভাই বোন লক্ষী পক্ষী। বুঝছো।
ছাইরাছ হেলাল
দেইক্কেন!! যেমুন লিখতেছেন তাতে দাবড়ানি আপনার না জুটলেই ভাল।
ভিন্নরকম উপস্থাপন,
চলতে পারে, চলুক, তয় সাবধানে কিন্তু।
রিতু জাহান
সেটাই ভাবছি। দাবড়ানি কখন কে জানি দেয়।
আমি সাবধান থাকবনে।
চলুক চলতে থাকুক,,,
মাহমুদ আল মেহেদী
ছবির নাম নির্দোষী যখন দোষী।
রিতু জাহান
একদম। কিন্তু প্রশ্ন হইলো দোষী আর নির্দোষ কে?
মাহমুদ আল মেহেদী
নির্দোষই তো দোষ।
নীরা সাদীয়া
কদিন যাবত বিষন্নতায় ভুগছিলাম। রম্য শব্দটা দেখেই মনটা নেচে উঠলো, ধরেই নিলাম রিতু আপার লেখা রম্য যেহেতু, তাহলে তা আমাকে হাসাবেই। প্রত্যেকটি ঘটনা পড়তে গিয়ে আপন মনে হো হো করে হেসে উঠলাম।
এরকম রম্য আরও চাই! এটা আবদার রইলো।
রিতু জাহান
আর বোলো না, তোমার মতো আমারও একই অবস্থা। মনটা বেজায় খারাপ ছিলো। দৌড়ের উপর বলতে পারো৷ অসুখ বিসুখ, টিচার পাওয়া না পাওয়া সব মিলায়ে উরাধুরা অবস্থা। তাই একটু নির্মলতা চাইলাম।
দিলাম ঢেলে। তুমি হেসেছো এটাই অনেক পাওয়া।।আচ্ছা, লিখব মাঝে মাঝে।।
মনির হোসেন মমি
কি এ্যাক্টা অবস্থা!না হেসে পারলামই না।
রিতু জাহান
হাসুন ভাই। যান্ত্রিক জীবনে এটা বড় প্রয়োজন।
অপার্থিব
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব মারাত্নক, দুই নম্বর প্যারাগ্রাফের মোরাল তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সতর্ক হওয়া! ভাল লিখেছেন।
রিতু জাহান
আসলেই সতর্ক হওয়া উচিত।
ধন্যবাদ ভাই
তৌহিদ
হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাচ্ছে!! কিছুই বলবোনা, শুধু হাসি আর হাসি।😃😃😃
কি একটা অবস্থা!!
তবে লেখাগুলির মোর্যালিটি ব্যাপক। আরো সাবধানী হতে হবে সবার। আর আপনি আপু চশমা ছাড়া লিখবেন না কিন্তু।
অনেকদিন পর প্রান খুলে হাসলাম।
তৌহিদ
হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাচ্ছে!! কিছুই বলবোনা, শুধু হাসি আর হাসি।😃😃😃
কি একটা অবস্থা!!
তবে লেখাগুলির মোর্যালিটি ব্যাপক। আরো সাবধানী হতে হবে সবার। আর আপনি আপু চশমা ছাড়া লিখবেন না কিন্তু।
অনেকদিন পর প্রান খুলে হাসলাম।
রিতু জাহান
সত্যি ঘটনা আসলে। আমি ঘেমে গেছিলাম পুরা।
হুম, দ্বীপ আই কেয়ারে দেখায়ে এসছি সেদিন। ঐ ডান চোখে গতবছর যে ইনফেকশন হইছিলো চোখ ওঠা যেটা বলে। সেই থেকে সমস্যা হয় একটু।
আপনারা হেসেছেন জেনে খুশি হলাম।
হাসা উচিৎ খুব ভাই।
তৌহিদ
ভালো থাকবেন আপু।
ব্লগার সজীব
আপু আপনাকে কে মনু ডাকে তা আমরা জানি 🙂 শেষ পর্যন্ত ভাইয়ার এই অবস্থা? হা হা হা হা হা । প্রতিটি পর্ব পড়ছি আর অট্টহাসি দিচ্ছি। আপনি তো রম্য লেখায়ও সেরা হবেন আপু।
রিতু জাহান
আপনারে নিয়ে একটা পোষ্ট দিতে হবে, শিরোনাম হারানো বিজ্ঞাপন ‘প্রেশার কুকারের সিটির’
কেমন আছেন?
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু এতো রাতে না পারছি জোরে হাসতে, না চেপে রাখতে। কোন কুক্ষণে যে রম্য দেখে ঢুকে পড়লাম এখানে। ধুত্তোর ছাই এখন কি যে করি! মাথার চুল ছিঁড়ার মতো অবস্থা। 🤣🤣🤣🤣
রিতু জাহান
নীলানদ হাসো হাসো। আমি আরও একটা রম্য লিখব।
ঘটনা কইলাম সবই সত্য। কেমন আছো আপু?