এলোমেলো কিছু কথা………**তিন**

নীলাঞ্জনা নীলা ২১ নভেম্বর ২০১৪, শুক্রবার, ১২:২২:১৭পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩০ মন্তব্য

ঋতু কি সময়ের উপর নির্ভর করে ? নাকি সময় নির্ভর করে ঋতুর উপর ? সহজ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়না , এটা আমার জীবনে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে । উপরের দুটি প্রশ্নের উত্তর ঠিকই জানি , কিন্তু বুঝিয়ে বলাটাই কঠিন । যতো কথাই হোক না কেন , শরত চলে গিয়ে এখানে শীত চলে এসেছে । চারিদিকে ফেনিল সাদা । প্রকৃতি সাদা শিফনের শাড়ী পড়ে নায়কের জন্য অপেক্ষা করছে । নায়ক আসবে একটা শ্যাম্পেনের বোতল হাতে নিয়ে । আর বোতল খোলার সাথে সাথেই ফেনায় ফেনায় ডুবে যাবে । মনে পড়ে রোমান্টিক একটি দৃশ্যর কথা । নায়ক চিঠি লিখেছে ,

পাখী ,

আমার অনেক স্বপ্ন তোমায় নিয়ে । শুনতে চাও ? একদিন আমি আসবো । এসে অনেক ভোরে তোমার ঘুম ভাঙ্গাবো । তারপর যাবো লং ড্রাইভে । তোমার ওই দূরের পাহাড়ে । আমরা দুজন সূর্যোদয় দেখবো । তুমি গান গাইবে ,

“দূরে কোথাও দূরে দূরে আমার মন বেড়ায় গো ঘুরে ঘুরে ।।”

তারপর যাবো কটেজে । অরণ্যের ভেতর থেকে সূর্যাস্ত দেখবো । আর তুমি আমার কাঁধে মাথা রাখবে । আমি গাইবো তখন , “সূর্য ডোবার পালা আসে যদি আসুক বেশ তো…।” পাখীদের কিচির-মিচির থেমে যাবে , চারিদিক অন্ধকারে ছেয়ে যাবে । তখন তুমি সাদা শিফনের শাড়ী আর আকাশী নীল ব্লাউজ পড়বে । আমি চেয়ে থাকবো । চেয়েই থাকবো । তুমি লজ্জ্বায় ডুবে থাকবে আর আমি শুধু তোমাকেই দেখবো । বাবুই পাখী রে আমি তোর মনের আদর চাই , তোর স্বচ্ছ আবেগ শুধু আমাকে দিবি ?

-তোর নক্ষত্র
চিঠিটা অনেক সুন্দর । তাই না ? একটি মেয়ের জীবনে পুরুষের সাথে প্রথম পরিচয় বাবাকে দিয়ে তো , তাই প্রেমিকের আদরের চেয়ে মেয়েরা আহ্লাদী আদর চায় । এটা খুব কম পুরুষ জানে ।

আসল কথায় ফিরে আসি । শীত চলে এলো । গত রবিবার থেকে তুষারপাত শুরু হয়েছে । ১৮ নভেম্বর সকাল সাড়ে সাতটায় মারাত্মক ঠান্ডার মধ্যে যখন কাজের উদ্দেশে বের হই । বাসা থেকে বাস স্টপেজ বারো মিনিটের পথ । স্কার্ফ নিয়ে যাইনি , শুধু টুপি আর ওভারকোট । অবস্থাটা ভাবতে অন্যরকম । কিন্তু বাস্তবে খবরই আছে । এছাড়া গ্লাভসও নেইনি । গান ছিলো বলে সেদিন রক্ষা পাইনি । আজ কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে আবার শুরু হলো তুষারপাত । তবে তুষারপাত হলে ঠান্ডা কম । অদ্ভূত না ? তুষার জমে যখন শক্ত বরফ হয়ে যায় , তখন বোঝা যায় ঠান্ডা কতো প্রকার ও কি কি ? তুষার ছেলেটি বড়ো আদুরে-কোমল-নরম…কিন্তু উত্তুরে হাওয়া মেয়েটি অনেক কষ্ট পেয়েছে তাই নরম-কোমলকে তুষারকে জমিয়ে বরফ বানিয়ে দেয় । বরফ করে কি আমাদেরকে শাস্তি দেয় ।

সেই সুন্দর সবুজে ছাওয়া অরণ্য এখন সাদা কঙ্কাল । চারদিক শুভ্রতার কারুকাজ । মন ভরে যায় । অন্যরকম সৌন্দর্য । তবে সে ঘরের কিংবা বাসের জানলা থেকেই । আমি দেখি আর ভাবি প্রকৃতির সাথে সব রঙ কেমন মানিয়ে যায় । অথচ মানুষের সাথে সব রঙ মানায় না ।

ওই যে রোমান্টিক চিঠিটার লেখক নক্ষত্রকে উত্তরে পাখী কিছু লেখেনি । তাই আমি পাখীর হয়ে লিখে দিচ্ছি আমার মনের এলোমেলো কথাগুলো ।

নক্ষত্র ,

আমি জানো তোমার স্নেহ খুঁজি ? অনুভব করি ? প্রেম চাইনা । তোমার আহ্লাদ-বকুনি-শাসন ওসব নিয়ে কবে আসবে ? চলে এসো । কেন এতো দূরে সরিয়ে রাখছো ? অভিমানে ? যখন তুমি আসতে , তখন তোমায় অনেক অবহেলা দিতাম । আজ বুঝেছি আমার জীবনে তোমার অবদান । চলে এসোনা । ভালোবাসো ? তাহলে এখুনি এসো । তুষারে ভেঁজাই আমাদের আবেগ । ওই দেখো আমাদের জন্যে মেঘের ফাঁক থেকে উঁকি দিচ্ছে সূর্যের আলো । সময়ের বুকে উষ্ণতা ছড়িয়ে দিতে কি আপ্রাণ চেষ্টা ! চলো না আমরা এই হিম হিম উষ্ণতার স্পর্শ নেই ঝরে পড়া এই শুভ্র তুষারকে জড়িয়ে ।

-পাখী

হয়তো চলবে
নয়তো না
কি যে হবে সে জানিনা…

হ্যামিল্টন , কানাডা
১৯ নভেম্বর , ২০১৪ ইং ।

৬৫৫জন ৬৫৫জন
0 Shares

৩০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ