ঋতু কি সময়ের উপর নির্ভর করে ? নাকি সময় নির্ভর করে ঋতুর উপর ? সহজ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়না , এটা আমার জীবনে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে । উপরের দুটি প্রশ্নের উত্তর ঠিকই জানি , কিন্তু বুঝিয়ে বলাটাই কঠিন । যতো কথাই হোক না কেন , শরত চলে গিয়ে এখানে শীত চলে এসেছে । চারিদিকে ফেনিল সাদা । প্রকৃতি সাদা শিফনের শাড়ী পড়ে নায়কের জন্য অপেক্ষা করছে । নায়ক আসবে একটা শ্যাম্পেনের বোতল হাতে নিয়ে । আর বোতল খোলার সাথে সাথেই ফেনায় ফেনায় ডুবে যাবে । মনে পড়ে রোমান্টিক একটি দৃশ্যর কথা । নায়ক চিঠি লিখেছে ,
পাখী ,
আমার অনেক স্বপ্ন তোমায় নিয়ে । শুনতে চাও ? একদিন আমি আসবো । এসে অনেক ভোরে তোমার ঘুম ভাঙ্গাবো । তারপর যাবো লং ড্রাইভে । তোমার ওই দূরের পাহাড়ে । আমরা দুজন সূর্যোদয় দেখবো । তুমি গান গাইবে ,
“দূরে কোথাও দূরে দূরে আমার মন বেড়ায় গো ঘুরে ঘুরে ।।”
তারপর যাবো কটেজে । অরণ্যের ভেতর থেকে সূর্যাস্ত দেখবো । আর তুমি আমার কাঁধে মাথা রাখবে । আমি গাইবো তখন , “সূর্য ডোবার পালা আসে যদি আসুক বেশ তো…।” পাখীদের কিচির-মিচির থেমে যাবে , চারিদিক অন্ধকারে ছেয়ে যাবে । তখন তুমি সাদা শিফনের শাড়ী আর আকাশী নীল ব্লাউজ পড়বে । আমি চেয়ে থাকবো । চেয়েই থাকবো । তুমি লজ্জ্বায় ডুবে থাকবে আর আমি শুধু তোমাকেই দেখবো । বাবুই পাখী রে আমি তোর মনের আদর চাই , তোর স্বচ্ছ আবেগ শুধু আমাকে দিবি ?
-তোর নক্ষত্র
চিঠিটা অনেক সুন্দর । তাই না ? একটি মেয়ের জীবনে পুরুষের সাথে প্রথম পরিচয় বাবাকে দিয়ে তো , তাই প্রেমিকের আদরের চেয়ে মেয়েরা আহ্লাদী আদর চায় । এটা খুব কম পুরুষ জানে ।
আসল কথায় ফিরে আসি । শীত চলে এলো । গত রবিবার থেকে তুষারপাত শুরু হয়েছে । ১৮ নভেম্বর সকাল সাড়ে সাতটায় মারাত্মক ঠান্ডার মধ্যে যখন কাজের উদ্দেশে বের হই । বাসা থেকে বাস স্টপেজ বারো মিনিটের পথ । স্কার্ফ নিয়ে যাইনি , শুধু টুপি আর ওভারকোট । অবস্থাটা ভাবতে অন্যরকম । কিন্তু বাস্তবে খবরই আছে । এছাড়া গ্লাভসও নেইনি । গান ছিলো বলে সেদিন রক্ষা পাইনি । আজ কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে আবার শুরু হলো তুষারপাত । তবে তুষারপাত হলে ঠান্ডা কম । অদ্ভূত না ? তুষার জমে যখন শক্ত বরফ হয়ে যায় , তখন বোঝা যায় ঠান্ডা কতো প্রকার ও কি কি ? তুষার ছেলেটি বড়ো আদুরে-কোমল-নরম…কিন্তু উত্তুরে হাওয়া মেয়েটি অনেক কষ্ট পেয়েছে তাই নরম-কোমলকে তুষারকে জমিয়ে বরফ বানিয়ে দেয় । বরফ করে কি আমাদেরকে শাস্তি দেয় ।
সেই সুন্দর সবুজে ছাওয়া অরণ্য এখন সাদা কঙ্কাল । চারদিক শুভ্রতার কারুকাজ । মন ভরে যায় । অন্যরকম সৌন্দর্য । তবে সে ঘরের কিংবা বাসের জানলা থেকেই । আমি দেখি আর ভাবি প্রকৃতির সাথে সব রঙ কেমন মানিয়ে যায় । অথচ মানুষের সাথে সব রঙ মানায় না ।
ওই যে রোমান্টিক চিঠিটার লেখক নক্ষত্রকে উত্তরে পাখী কিছু লেখেনি । তাই আমি পাখীর হয়ে লিখে দিচ্ছি আমার মনের এলোমেলো কথাগুলো ।
নক্ষত্র ,
আমি জানো তোমার স্নেহ খুঁজি ? অনুভব করি ? প্রেম চাইনা । তোমার আহ্লাদ-বকুনি-শাসন ওসব নিয়ে কবে আসবে ? চলে এসো । কেন এতো দূরে সরিয়ে রাখছো ? অভিমানে ? যখন তুমি আসতে , তখন তোমায় অনেক অবহেলা দিতাম । আজ বুঝেছি আমার জীবনে তোমার অবদান । চলে এসোনা । ভালোবাসো ? তাহলে এখুনি এসো । তুষারে ভেঁজাই আমাদের আবেগ । ওই দেখো আমাদের জন্যে মেঘের ফাঁক থেকে উঁকি দিচ্ছে সূর্যের আলো । সময়ের বুকে উষ্ণতা ছড়িয়ে দিতে কি আপ্রাণ চেষ্টা ! চলো না আমরা এই হিম হিম উষ্ণতার স্পর্শ নেই ঝরে পড়া এই শুভ্র তুষারকে জড়িয়ে ।
-পাখী
হয়তো চলবে
নয়তো না
কি যে হবে সে জানিনা…
হ্যামিল্টন , কানাডা
১৯ নভেম্বর , ২০১৪ ইং ।
৩০টি মন্তব্য
মামুন
সুন্দর অনুভূতি! অসাধারণ লাগল।
মুগ্ধতা রেখে সাথেই আছি।
শুভরাত্রি। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
অসংখ্য ধন্যবাদ… 🙂
শুন্য শুন্যালয়
প্রকৃতির সাথে সব রং মানিয়ে যায়, মানুষের সাথে মানায় না। খুব ভালো বলেছেন। পাখি আর নক্ষত্রেরও প্রেম হয়!!!!!
চমৎকার লেখা। প্রেম আর প্রকৃতি প্রনয়ে পরিপূর্ণ।
নীলাঞ্জনা নীলা
পাখীর সাথে নক্ষত্রের যে আবেগ জড়ানো গোপনে…আকাশ হচ্ছে সেতু…
বন্য
বাহ!! আপনার লেখা আগেও পড়েছি একটা ঘোর সৃষ্টি হয় পড়তে পড়তে, এড়িয়ে যেতে পারি না বলে ঘোরেই কাটাতে হয় ডুবিয়ে অপাদমস্তক। প্রকৃতির যে অকৃত্তিম সৌন্দর্যের বর্ণনা আপনি দিলেন তা নিঃসন্দেহে অসাধারণ, বিশ্বাস করছি আজ হ্যা শুধু একমাত্র প্রকৃতিই পারে নাড়া দিতে ভেতরে, বাহিরে। প্রকৃতিতেই সৃষ্টি হয় মূর্ত,বিমূর্ত, শৈল্পিক চিত্রায়ণ। খানিকটা বর্ণনা তার পর চিঠির অনুভূতি, পরে বর্তমানের দিনগুলো সবশেষে চিঠির উত্তরে নিজেকে তুলে ধরার আদলে গ্রন্থিত করা সার্বজনীন অনুভূতি।
খুব তৃপ্তি পেলাম লেখাটা পড়ে, স্বীকার করছি যে আজ বুঝতে পেরেছি, জীবনকে দেখতে হলে আকাশ দেখতে হবে, যেতে পঞ্চইন্দ্রিয়ের বৃত্ত থেকে বাহিরে, শৃঙ্খলা নয় মাঝে মাঝে অশৃঙ্খলাতার মাঝেই রয়েছে অদৃশ্য তৃপ্তিবোধ। এলেমেলো কথা যে এতো সুন্দর আগে বুঝিনি। অনেক ভালো থাকুন আরো চাই এমন লেখা।
নীলাঞ্জনা নীলা
আকাশ ভাবায় , ভাবতে শেখায়…হাসায়…আবেগকে ভেঁজায়…খোলা মাঠে দু’ হাত বাড়িয়ে দিয়ে আকাশের দিকে চাইলে একাকীত্ত্ব কেটে যায়…
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ভাল লাগল আপনার অনুভূতি।
নীলাঞ্জনা নীলা
এটাই জীবন…এলোমেলো…গোছানো জীবন আমি ভালোবাসি না…
রিমি রুম্মান
সুন্দর লেখা… সুন্দর অনুভূতি
নীলাঞ্জনা নীলা
সুন্দর তুমি…সুন্দর তোমার মন… -{@
অরণ্য
আপনার লেখাটি খুব ভাল লেগেছে।
নীলাঞ্জনা নীলা
অরণ্য মানে তো সবুজ…
জিসান শা ইকরাম
তুই সব সময়ই ভালো লেখো।
সময়কে সময় প্রকৃতি মানুষকে দেখলাম এই লেখায়
যা নিপুনভাবে দেখিয়েছো, বুঝিয়েছো।
আমার পাখিটার দিকে তোর নজর পরলো নাকি ?
ভালো থাকিস প্রবাসে।
নীলাঞ্জনা নীলা
তোমার পাখীর নাম কি ? আমার পাখীর নাম বাবুই পাখী…যার প্রেম নক্ষত্রের সাথে…বুঝলা নানা ?
খেয়ালী মেয়ে
চমৎকার লেখা (y)
নীলাঞ্জনা নীলা
খেয়ালী মেয়ের মনটা কি খেয়ালী ? 🙂
ছাইরাছ হেলাল
চলতে চলতে চোখ মেলে যা দেখি যা ভাবি তাই ই সব নয় , আছে আরও অনেক অনেক
আপনার লেখা পড়লে সেটা আরও ভাল করে মনে করিয়ে দেয়।
নীলাঞ্জনা নীলা
কিছু ভেবে লিখিনা…তাই হয়তো যেমন-তেমন…ভালো থাকুক মন…
হৃদয়ের স্পন্দন
ভালো লেগেছে একটা আহ্লাদী চিঠি লেখার প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছে, কিন্তু কাকে যে লিখি
নীলাঞ্জনা নীলা
কাউকে খুঁজে না পেলে নিজেরই একটা নাম দিয়ে লিখে ফেললেই হয়… 😀
মোঃ মজিবর রহমান
প্রকিতি নিয়ে এত সুন্দর অবগাহন
খুব ভালো লাগলো
শুভেচ্ছা রইল।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার আবেগকে আগলে রাখে প্রকৃতি যে…
নুসরাত মৌরিন
দারুন লিখেছেন…। (y)
নীলাঞ্জনা নীলা
অনেক অনেক ধন্যবাদ… -{@
আবিদ রোজীনা
‘ প্রেমিকের আদরের চেয়ে মেয়েরা আহ্লাদী আদর চায় । এটা খুব কম পুরুষ জানে। আপু আপনার এই কথাটি সত্যি। আমারো এমন বিশ্বাস।ভালো লেগেছে আপনার লেখা।
নীলাঞ্জনা নীলা
বিশ্বাসটুকু মিথ্যে নয়…ভালো থেকো আহ্লাদীপনায়… 🙂
সীমান্ত উন্মাদ
আপু তুমি আছো কেমন?
তোমার লিখা পড়তে পড়তে একটা মগ্নতা চলে আসে। শুভকামনা নিরন্তর জানিও।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভালো আছি ভাই…তুমি কেমন আছো ?
ভালো থেকো নিরন্তর…
শুভ্র মোহন্ত
অসাধারন সব অনুভূতির ভাষা।
নীলাঞ্জনা নীলা
অনেক ধন্যবাদ -{@