একশত ভাগ খাটি লেখকের বই পড়ুন

জিসান শা ইকরাম ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, সোমবার, ০৩:৪৪:৩৪অপরাহ্ন রম্য ৫৪ মন্তব্য

এমন দিন হয়ত বেশি দূরে নয়,যখন খাঁটি নারকেল তেল,খাঁটি ম্যাংগো জুস এর বিজ্ঞাপনের মত বই বিক্রীর বিজ্ঞাপনেও ভেজাল মুক্ত একশত ভাগ খাঁটি লেখকের বই পড়ুন বিজ্ঞাপন দেখতে পাওয়া যাবে।

আপনার লেখক হিসেবে পরিচিতি পেতে তীব্র আকাঙ্খা ? আপনার প্রকাশিত বই বুকের সামনে নিয়ে হাসি মুখে চ্যাগিয়ে ফটো তুলে ভাব নিতে চান ? টিভিতে আপনার বইটি সহ আপনাকে এক ঝলক দেখতে চান ? আপনি কি চাচ্ছেন আপনার পরিচিত মহলে আপনাকে সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত করাতে? আপনাকেই খুঁজছে প্রকাশক। আপনার সমস্ত মুসকিল আসান করে দিবেন দেবদূত তুল্য এই প্রকাশক। তাহলে বিলম্ব কেন? আপনার স্বপ্ন পুরন করে ফেলুন।

আপনি লিখতে পারেন না? এটা কোন সমস্যাই না,লেখার দায়িত্বও প্রকাশকের। তাহলে আপনি কি লিখবেন যা বইতে প্রকাশ হবে? আপনার নাম লিখবেন শুদ্ধ করে,আর আপনি যে একটি সম্ভ্রান্ত সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্মেছেন তা লিখে দিবেন। আপনার পেটে ব্যাথা হয়ত,তাই হাত দিয়ে লিখতে পারছেন না, বলুন প্রকাশককে, তিনি ব্যবস্থা করবেন।এবার কত ফর্মার বই হবে সেটা বলুন আর হিসেব করে টাকা দিন। প্রকাশক কিন্তু চাইবেন বেশি ফর্মার বই প্রকাশ করতে। কিন্তু আপনি তো বুদ্ধিমান, সর্ব নিম্ন কত ফর্মার বই প্রকাশ করা যায়,আপনি সেটা করবেন। বই প্রকাশটি আসল কথা,ফর্মা নয়। ছাপার খরচের অতিরিক্ত কিছু টাকা দিতে হবে অবশ্য…… আপনার লেখা যিনি লিখে দিচ্ছেন তার জন্য।

এরপর ফেইসবুকে একটা ভাব বাচক ইষ্ঠাঠাস দিতে পারেন, ” একজন প্রকাশকের জ্বালায় অস্থির হয়ে গিয়েছি,আমার একটি বই উনি প্রকাশ করবেনই করবেন। আমি তো বই প্রকাশ করে সাহিত্যিক হতে চাইনা,আমি নামে বিশ্বাস করিনা,এসব আর ভালো লাগেনা, অবশ্য ত্রিশ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। এত অল্প টাকায় একটি ল্যাপটপও তো কেনা যাবে না। কি যে করি ? ”

দুই দিন পর প্রেস থেকে বইয়ের কভার এনে ট্যাগাতে থাকুন গণহারে। লিখুন ‘ বইটা মনে হয় এবার বের হচ্ছেই,এড়ানো গেলো না ‘- এমন হালকা একটু ভাব। কয়েকটা ভাগে ট্যাগাবেন।

বই প্রকাশের ৩ দিন আগে থেকে বইমেলায় যাবেন, টিভির ক্যামেরা ম্যানের দিকে নজর রাখুন। দু-একজন পাবেনই নিশ্চিত। খেজুরে আলাপের চেষ্টা করুণ। ক্যামেরা ম্যান পুরুষ হলে দূরে অচেনা কোন সুন্দরী মেয়েকে দেখিয়ে বলুন ‘ ওই যে আমার ছোট বোন ‘ -বলেই তাবাসসুম বলে চিৎকার দিয়ে ওই মেয়ের কাছে ছুটে যান। কে কাকে ডাকছে কেউই বুঝতে পারবেনা। মেয়েকে একটু হাই হ্যালো বলুন হাসিমুখে ক্যামেরাম্যানকে পিছনে রেখে, তিনি উত্তর দিবেনই। এরপর ক্যামেরা ম্যানের কাছে আসুন আবার। ‘ বোনকে আপনার কথা বলেছি ,খুব খুশি সে আপনার কথা শুনে‘ 🙂 এসব হচ্ছে আসলে প্রভাবক।
৫০০ টাকার বেশি লাগবে না একটু বেশি সময় সময় দেখাবে আপনাকে ক্যামেরায়। আপনি হয়ে গেলেন একজন সাহিত্যিক,যার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে এই বই মেলায়। বিপুল উদ্যমে বই মেলায় বই সহ আপনি দাঁড়ানো এমন ফটো আপলোডান। প্রচুর বই বিক্রী হচ্ছে, অটোগ্রাফ দিতে দিতে আপনার হাত ব্যাথা হয়ে গিয়েছে, এসব লিখুন ফেইসবুকে। ব্যাথা নাশক একপাতা ট্যাবলেটের ফটোও দিতে পারেন
(এটি কিনতে হবেনা,ফার্মেসিতে গিয়ে হাতে নিয়ে ফটো তুলে আনবেন- ক্যাপশনঃ হাতে ব্যাথার মেডিসিন কিনলাম) ।

আপডেটঃ
বহু চেষ্টা তদবির করে আপনার ৫ জন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছে ৫ কপি বই গছাতে পেরেছেন। অন্য সব বন্ধুরা আপনাকে বলেছে ‘দোস্ত এইডা তুমি কি কও,আমি সৌজন্য কপি পামু না? এই আমাদের বন্ধুত্ব ?’

দ্বিতীয় আপডেটঃ
যে পাঁচজনে আপনার বই কিনেছেন,তারা বই ফেরত দিয়ে টাকা নিতে আসতে পারেন।তাদেরকে বলুন-  ‘বিক্রিত বই ফেরত নেয়া হয়না। ‘

একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে লেখা,কোকিলার পরিবর্তে কোকিলও হতে পারে লেখকের নাম।

উৎসর্গঃ  নিজকে ব্লগের কবিশ্রেষ্ঠ উপাধি দেয়া একদা আমার অতিপ্রিয় কবিকে। যিনি একমাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে, হাত পা ধরে তার ১৩ কপি কবিতার বই বিক্রী করতে সমর্থ হয়েছিলেন।আমার প্রত্যাশার চেয়ে যা ১০ কপি বেশি।

১জন ১জন
0 Shares

৫৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ