১৯৯৭ এর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরে লুবনা প্রচন্ড রকমের হতাশা গ্রস্থ । মাত্র ২ নাম্বারের জন্য সে স্থান তালিকায় নেই। তাঁর এবং তাঁর বাবা মা এর আত্মবিশ্বাস ছিল সে বোর্ডের ২০ জনের মধ্যে অবশ্যই স্থান পাবে। হতাশা বৃদ্ধি পেতে থাকে তাঁর টিভি চ্যানেল গুলোতে স্থান পাওয়া ছাত্র ছাত্রী এবং গর্বিত বাবা মা এর নিউজ দেখে। সেও তো এমনি বাবা মা এর হাসি মাখা মুখ দেখতে পেতো টিভিতে । রেজাল্টের পরদিন থেকেই সে প্রায় সব নিউজ পেপার সংগ্রহ করেছে । তাঁর চেয়ে অনেক কম নাম্বার পেয়েও অন্যান্য বোর্ডে ছাত্র ছাত্রীরা মেধা তালিকায় স্থান নিয়েছে । মনকে সে কিছুতেই বোঝাতে পারেনা । সে যদি অন্য বোর্ডে পরীক্ষা দিত , তাহলে তো সেও মেধা তালিকায় থাকতো ।
খাওয়া দাওয়া বলতে গেলে ছেড়েই দিয়েছে। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিল ,তাঁর এই কথা জানাবে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে।
মনের সমস্ত যন্ত্রনা আর আবেগ দিয়ে সে লিখে ফেললো এক চিঠি।
” আমি কেন অন্য বোর্ডের মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া ছাত্র ছাত্রীদের চেয়ে বেশী নাম্বার পেয়েও বঞ্চিত হলাম ? আমি কেন অন্যায়ের স্বীকার হলাম ? কেন আমি আমার বাব মা এর সাথে টিভিতে নিজকে দেখিয়ে আমার বাবা মা এর গর্বিত মুখ দেখতে পেলাম না ? আমার কি দোষ ? এই মেধা তালিকা আমাকে বঞ্চিত করেছে , এই পরীক্ষা পদ্ধতি আমার মত অনেককেই হতাশার মাঝে নিমজ্জিত করবে । ‘
তাঁর চিঠির শেষ অংশে ছিল এমনঃ
‘ আমি একজন প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিচ্ছি না , আমি চিঠি দিচ্ছি একজন মা এর কাছে , যে মায়ের মেয়েটি দেখতে চেয়েছিল তাঁর বাবা মায়ের গর্বিত হাসি মাখা মুখ । ‘
চিঠি পাঠাবার পর উত্তরের আশা ছিলনা তাঁর । তাঁর বাবা মা মেয়ের এমন ইচ্ছেকে প্রশ্রয় দিয়েছেন এটুকু ভেবে , যে মেয়ে শান্তি পাবে। প্রধানমন্ত্রী এমন কত চিঠি পান প্রতিদিন।
চিঠি পাঠাবার দশ দিন পর লুবনার বাসায় ফোন আসলো ।
” আমি শেখ হাসিনা বলছি , লুবনার সাথে কথা বলবো । ”
মা এর কাছে ফোন এর কথা শুনে বারান্দায় থাকা লুবনা যেন উড়ে এলো ফোনের কাছে । ‘ আমি লুবনা বলছি ‘ , কেঁদে ফেললো লুবনা ।
” কেঁদোনা লুবনা , তুমি আসলেই বঞ্চিত হয়েছ , পালটে ফেলবো এই পরীক্ষা পদ্ধতি । এক মেয়ের কাছে মায়ের ওয়াদা এটি । ‘‘ বললেন শেখ হাসিনা ।
এরপরের ইতিহাস আমরা জানি । মেধা তালিকা আর নেই ।
লুবনা ভালো আছে এখন । ভালো একটি চাকরী করছে্ন ঢাকায় এক বিদেশী দুতাবাসে ।
আমি যে শহরে থাকি , লুবনা সেই শহরেই বড় হয়েছেন । যে স্কুলটিতে আমি জড়িয়ে আছি বিগত ১৩ বছর ধরে , সেই স্কুলের কৃতি ছাত্রী ছিলেন সে।
৩৫টি মন্তব্য
শিশির কনা
অবিশ্বাস্য , তিনি টেলিফোনে কথা বলছেন ? অবাক হলাম খুব । এমন সুন্দর ছবিটা কোথায় পেলেন আপনি ? রঙধনুর পটভূমিতে কত সুন্দর লাগছে শেখ হাসিনাকে -{@
জিসান শা ইকরাম
অবিশ্বাস্য হলেও এটি সত্য ।
নেটে পেয়েছি সার্চ করে ।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য —-
রাতুল
🙂
জিসান শা ইকরাম
রাতুলকে দেখলাম অনেক দিন পরে নাকি ? 🙂
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
মুগ্ধ হলাম এমন আন্ত্রকিতায় । ছবিটা এত সহজ সরল , মনেই হয়না তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী ।
জিসান শা ইকরাম
এমন আন্তরিকতা বিরল । ফোন না করলেও পারতেন তিনি।
হ্যা ছবিটা অত্যন্ত সুন্দর ।
"বাইরনিক শুভ্র"
এইজন্যই তিনি জননেত্রী ।
জিসান শা ইকরাম
হুম , এইজন্যই তিনি জননেত্রী ।
ছাইরাছ হেলাল
ভাবাই যায় না এমন আন্তরিকতা ।
জিসান শা ইকরাম
আসলেই ভাবা যায়না ।
শুন্য শুন্যালয়
অনেক সুন্দর একটি ছবি, সাথে সুন্দর একটি না জানা কথা… -{@
জিসান শা ইকরাম
হ্যা , অপ্রকাশিত একটি ইতিহাস ।
নীলকন্ঠ জয়
এমন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে গর্ব না করে উপায় আছে?
ধন্যবাদ ভাইয়াকে এই অজানা তথ্যটি জানানোর জন্য। -{@
জিসান শা ইকরাম
এক বছর পরে জবাব এই মন্তব্যের।
এমন আন্তরিকতা কি এখনো আছে নেত্রীর মাঝে ?
তবুও এটি সত্যি ইতিহাস।
মর্তুজা হাসান সৈকত
জানা ছিলোনা এই ইতিহাস। কেবল নির্মল বিনোদিতই হলাম না পাশাপাশি একটি অজানা ইতিহাসকে জেনেও নিলাম। অশেষ ধন্যবাদ ভাইয়া খুব সুন্দরভাবে ব্যাপারটিকে উপস্থাপনের জন্য। 🙂
জিসান শা ইকরাম
এটি ঝালকাঠীর এক স্কুলের ছাত্রীর কাহিনী।
মা মাটি দেশ
সত্যিই মহান প্রধানমন্ত্রী। (y) আমরাই লুকাই সত্যকে কিন্থু সত্য কখন লুকায়িত থাকতে পারে না এক দিন তা প্রকাশ পাবেই। (y)
জিসান শা ইকরাম
এমন নেতাই আমরা খুজি
কিন্তু পেয়ে আবার হাড়িয়ে ফেলি।
খসড়া
জাস্ট স্পিচলেস।
জিসান শা ইকরাম
আমারও প্রথম শুনে এমন হয়েছিলো।
অলিভার
একজন নেত্রী নয়, একজন সন্তানের মায়ের পক্ষেই এমন কাজ করা সম্ভব বলে আমার ধারণা।
লুকানো এমন অনেক ইতিহাসই চাপা রয়েছে অনেকের অন্তরে। জেনে ভালো লাগলো ব্যাপারটা।
আর উনার জন্মদিনে উনার জন্যে অনেক শুভ কামনা থাকলো।
জিসান শা ইকরাম
এ ধরনের গুন তাঁর আছে
ভবিষ্যতে কতটা রাখতে পারেন জানিনা।
জিসান শা ইকরাম
এমন নেতাই আমরা খুজি —
কিন্তু পেয়ে আবার হাড়িয়ে ফেলি।
জিসান শা ইকরাম
নেটে পেয়েছিলাম, ছবিটা একজন বাংলার নারীর মনে হয়েছে, একজন প্রধানমন্ত্রীর নয়।
তাই রেখে দিয়েছিলাম।
চাটুকর পরিবেষ্টিত হয়ে কতটা আর তাঁর কাছে আশা করবো বুঝতে পারছি না।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমরা আমাদের নেতা নেত্রীদের কাছে এমনটাই আশাকরি আসলে। কিন্তু পাইনা তেমন তাঁদেরকে। লেখাটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। এমন মমতা উদাহারনযোগ্য।
জিসান শা ইকরাম
আমরা আসলেই এমন আচরন চাই নেতা নেতৃদের কাছে।
নুসরাত মৌরিন
খুব অবাক করা গল্প। ভীষন ভাল লাগলো এই অজানা ইতিহাসটুকু জেনে…।
জিসান শা ইকরাম
লুবনা আমাদের এলাকার মেয়ে।
শাহানা আফরিন স্বর্ণা
I am becoming a fan of Sheikh Hasina!
প্রজন্ম ৭১
আপনি তো অনেক তৎপর একজন মানুষ!খুঁজে পেলেন লেখাটি!অবাক হলাম।
জিসান শা ইকরাম
পুরানো লেখা কেউ খুঁজে পড়লে ভালোই লাগে 🙂
অরণ্য
জিসান ভাই, খুবই ভাল লাগল লেখাটি পড়ে। আজ জানতে পারলাম লুবনাকে। আজ জানতে পারলাম এমন একটি স্ট্র্যাটেজিক ডিসিশনের পেছনের মূল ঘটনাটি। আপনার স্কুলের এই কৃতি ছাত্রীকে আমার শ্রদ্ধা জানালাম।
জিসান শা ইকরাম
আমরা লুবনার জন্য গর্বিত।
একারনে ব্যাক্তি হাসিনার প্রতি শ্রদ্ধাও অপরিসীম।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
ফাতেমা জোহরা
সত্যিই খুব গর্ব লাগে এমন একজন প্রধানমন্ত্রী পেয়ে 🙂
জিসান শা ইকরাম
অবশ্যই তিনি গর্ব আমাদের -{@