মাহবুবুল আলম
অস্থির সময় ও সমাজব্যবস্থা আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে! সময় কেন আমাদের সম্পর্কের খুঁটিগুলোকে নড়বড়ে করে দিচ্ছে। প্রবল নদীভাঙ্গনের মতো ভেঙে যাচ্ছে, ক্ষয়ে যাচ্ছে সামাজিক মূল্যবোধের ভিতে্র মাটি। আর এ কারণে তছনছ হয়ে যাচ্ছে আমাদের পরিবার-সংসার। এর থেকে পরিত্রানের কোনো পথ যেন কারোই জানা নেই। কেন এমনটি হলো?
বরগুনা শহরে ২৭ জুন ২০১৯ বুধবার দিনে-দুপুরে স্ত্রীর সামনে রিফাত হোসেন নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা কাছে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করেছেন কলেজ ছাত্র নুরুল ইসলাম রনি। বুধবার সকাল আনুমানিক সাড়ে দশটার দিকে কলেজের সামনে রাস্তায় জনসমক্ষে যখন এই হামলা চলছিল, রনি বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ জটলা, চিৎকার শুনে তিনি এগিয়ে যান। তিনি বলেন, হামলাকারীদের বেশ ক’জনকে তিনি ব্যক্তিগতভাবেও চিনতেন। বন্ধুদের মাধ্যমে নিহত যুবক নেয়াজ রিফাত শরিফকেও চিনতেন রনি। রিফাতের স্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন”আমি রাস্তার উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে ওদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করছিলাম মারিস না মারিস না। ছেড়ে দে। কে শোনে কার কথা।” এগোননি কেন? প্রতিরোধ করার চেষ্টা কেন করেননি? “ওদের হাতে ধারালো অস্ত্র। কেউ এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। বহু মানুষ জড়ো হয়ে ঘটনা দেখেছে। পাশের কলেজের ছাদ থেকেও অনেক দাঁড়িয়ে দেখেছে। মোবাইল ফোনে ছবি তুলেছে। কিন্তু কেউ প্রতিরোধের চেষ্টা করেনি।তিনি আরও বলেন, “আমার আশাপাশে অনেক মানুষ ছিল। আমি চিৎকার করেছি, সবাইকে বলেছি – ওরে একটু বাঁচান। কিন্তু কেউ আমারে একটি সাহায্য করে নাই।” বহু মানুষের চোখের সামনে দিনে দুপুর এমন একটি হত্যাকাণ্ড ঘটে গেলেও কেন মানুষজন প্রতিরোধের চেষ্টা করলো না – এ নিয়ে সোশাল মিডিয়াতেও অনেকেই সমালোচনা করছেন। লোকজন এখন হামলা থামানোর চাইতে ছবি তুলে ফেসবুকে দেওয়ার জন্য ব্যস্ত থাকে – এ ধরনের মন্তব্য করছেন অনেকেই। স্থানীয় জনগণের ভাষ্য হামলাকারীদের প্রায় সবাই চিহ্নিত অপরাধী, দের সবাই চেনে, ফলে স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ ভয়ে এগুতে ভয় পেয়েছে।”এদের কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীও। কয়েকজনের বিরুদ্ধে সাত/আটটি করে মামলা আছে। এদের একজনকে (সাব্বির আহমেদ নয়ন) তো শহরে সবাই নয়ন বন্ড নামে চেনে, নিজেকে সে জেমস বন্ড বলে ভাবে।” এ ঘটনাটি সমগ্র জাতির বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা কোথায় আছি, কী অবস্থায় আছি প্রকাশ্য দিবালোকের এ নৃশংস হত্যাকান্ড শুধুমাত্র একটি উদাহরণ।
এ সমস্ত ঘটনা দিন দিন আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে বেড়েই চলছে। কেন বার বার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। কেউ কেউ বলছেন দেশে ক্রমবর্ধমান বিচারহীনতার কারণে এ সমস্ত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বেড়েই চলেছে। কিন্তু এর কোন প্রতিকার হচ্ছে না। এর উত্তরে সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, মা-বাবা ও পরিবারের সাথে দিনে দিনে দূরত্ব সৃষ্টির কারণেই ঘটছে এসব ঘটনা। আর এই সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছে জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদী মাফিয়ারা। এই বিষয়টি নিয়েই আজ আমি আলোচনা করতে চাই। আমাদের তাজাপ্রাণ শিক্ষিত তরুণ সমাজের একটি অংশ জঙ্গিবাদ, সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডে ত্রমাগতই জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরা, শোলকিয়ার ঈদের জামায়াত সর্বশেষ কল্যাণপুরের জঙ্গিআস্তানায় হতাহতের ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, আমাদের সমাজ, সভ্যতা ও আধুনিকতার স্তর কোথায় নেমেছে। এমতাবস্থায় আমাদের মা-বাবা, পরিবার-পরিজন ওদের সন্তান ও স্বজনদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
আগে আমাদের মা-বাবারা আমাদের যতটুকু সময় দিতেন এখনকার মা-বাবারা তাদের সন্তানদের তেমন সময় দিতে পারছেন না বা দিচ্ছেন না। আজকালের মা-বাবাদের মধ্যে উভয়ে হয়তো চাকুরিজীবী, নয়তো কর্মজীবী। আবার কোন মা-বাবা আছেন যারা চাকুরিজীবী না হয়েও সন্তানদের সময় দিতে পারছেননা; কেননা, তাদের কেউ হয়তো পার্টি সোসাইট, রাজনীতি বা অন্য ধান্ধায় সন্তানদের সময় দিচ্ছেন না। তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে, তার খবর রাখেন না। দেখা গেল মা-বার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে অনেক সন্তান নিজের বাসায়ই খারাপ বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা, মাদক সেবন থেকে শুরু করে নানাবিদ সমাজবিরোধী কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। আর এই সুযোগটি কাজে লাগায় অন্ধকারের শক্তি। নানা প্রলোভনে তারা আমাদের মেধাবী ও সরলপ্রাণের কোমলমতি সন্তানদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই পরকালের অসীম স্বর্গসুখ হুরীদের আনন্দময় সেবা লাভের ভুল ব্যাখ্যায় আকর্ষিত হয়ে জঙ্গি হয়ে যাচ্ছে। আগে জঙ্গিদের সিংহভাগ মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও বর্তমানে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত উচ্চবিত্তের সন্তানরা বিপদগামী হয়ে যাচ্ছে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। অন্ধকারের শক্তি তাদের স্ট্রাটেজি পরিবর্তন করে আধিুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মেধাবী তরুণদের টার্গেট করে জঙ্গিশিকারে নেমেছে, যাতে করে একচেটিয়াভাবে মাদ্রাসা শিক্ষিতদের আর কেউ এককভাবে দোষারোপ করতে না পারে।
তারপরও এদের এই কৌশল ধরা পড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে জঙ্গীদের বড় একটি অংশ এসেছে জামায়াত-শিবির থেকে। জামায়াত-শিবির সংগঠনের দুর্ধর্ষ ক্যাডারবাহিনীর একটি অংশ জঙ্গীদের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে। এদের সঙ্গে আরও যোগ হয়েছে ধর্মান্ধ মৌলবাদে বিশ্বাসী ধর্মীয় চেতনায় উন্মাদ একটি অংশ। আগে ছিল এ তৎপরতা নিম্নস্তরে, নিম্নবিত্ত পরিবারে, মাদ্রাসা-এতিমখানা পর্যায়ে। এখন দেখা যাচ্ছে, এ ঘটনার বিস্তৃতি অভিজাত এলাকায় বিত্তবান-ধনাঢ্য পরিবারগুলোর মাঝেও। তাদের স্ট্রাটেডি পরিবর্তন করেই এরা বর্তমান পথটি বেছে নিয়েছে। তাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আমরা কি আমাদের দেশের তরুণদের ভেতরে পরিবার সমাজ সর্বোপরি দেশের জন্য ভালবাসার জন্ম দিতে পেরেছি? সেই ভালবাসার অভাবেই কী আমাদের সন্তানেরা ভয়ঙ্কর পঙ্কিলপথ জঙ্গিবাদের পথে ধাবিত হচ্ছে? জঙ্গীবাদ হচ্ছে এক ধরনের পৈশাচিকতা ও মানবতাবিরোধী পথ জেনেও বর্তমানে উগ্রবাদী চরমপন্থী কিছু গোপন সংগঠনের প্রভাবে কোন কোন তরুণ সেই পৈশাচিকতাকেই ধ্যান-জ্ঞানে পরিণত করেছে। ‘মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী’ মার্কা কল্পনাশ্রয়ী ধারণাকে মর্মমূলে এমনভাবেই গেঁথে নিয়েছে যে, অভিভাবকদের আদর-স্নেহ-ভালবাসা এমনকি সমাজও তাদের কাছে তুচ্ছ।
দেশের কোমলমতি সন্তানের যখন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসের পথে চলে যাচ্ছে এ পরিস্থিতেও থেমে নেই আমাদের দেশের রাজনীতি। রাষ্ট্র, সমাজ এবং শান্তিপ্রিয় মানুষের বর্তমানে প্রধান সঙ্কট এই ইস্যুতেও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টায় মত্ত একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী। জঙ্গী দমনে প্রতিটি পদে পদে এরা বিতর্ক সৃষ্টি করে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। এরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসদমনে সরকারকে ব্যর্থ করে দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এদের কাছে দেশ ও দেশের মানুষ ও আমাদের কোমলমতি সন্তানদের ভবিষ্যত সবকিছুই তুচ্ছ। এমন রাজনীতি জঙ্গী তৎপরতার মতোই সমাজের জন্য ক্ষতিকর বলে দেশের বিবেকবান মানুষ মনে করে। রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গীবিরোধী অভিযানের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি নেতারা সন্দেহ প্রকাশ করেন, নিহত ৯ আদৌ জঙ্গী কিনা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হান্নান শাহ (অব) এক অনুষ্ঠানে বলেন, শত শত পুলিশ মিলে ৯ জনকে হত্যা করেছে। তাদের গ্রেফতারও করা যেত। গ্রেফতার করা গেলে তাদের কাছ থেকে আরও তথ্য পাওয়া যেত। তাদের গ্রেফতার না করে হত্যা করার কারণে প্রশ্ন ওঠে, এরা আদৌ জঙ্গী কিনা। আমাদের ধারণা হলি আর্টিজানের ঘটনার পরে সমাজের একটি বড় অংশ সচেতন হয়েছে। তাদের বিবেককে চরমভাবে নাড়া দিয়েছে। তবে সকলে সচেতন হয়নি। কারণ জামায়াত ও বিএনপির একটি কট্টর অংশ তারা ওই ঘটনাকে ভিন্ন রূপ দিতে চাচ্ছে। কিছু মানুষ সেটা বিশ্বাসও করছে। তার পরেও সমাজের যে বড় অংশের অভিভাবকরা সচেতন হয়েছেন, তারা কী করবেন সন্তানকে নিয়ে।
তাই এখন দায় দেখা যাচ্ছে পিতা-মাতার। পিতা-মাতাকে তাই অনেক সময় দিতে হবে সন্তানের জন্য। তার সঙ্গে কথা বলতে হবে। তার মনোজগত বুঝতে হবে। সব থেকে বড় বন্ধু হতে হবে। বর্তমানে মধ্যবিত্তের অবশ্য সময় কমে গেছে। যে আমার গুরু শেখায় কিন্তু বুঝতে দেন না তিনি শেখাচ্ছেন। সন্তানকে এভাবেই শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করতে হয় পরিবার থেকে। মা-বাবা ও পরিবারকে তাদের সন্তানদের সময় দিতে হবে, তাদের সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে। তাদের সন্তান বা পরিবারের সদস্যের সাথে সব কিছুই শেয়ার করতে হবে। তাদেরতে বোঝাতে হবে একজন সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পরিবার বা রাষ্ট্রের কত টাকা খরচ করতে হয়। এ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যপক ও লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটি লেখার কিছু একটি অংশ এখানে তুলে ধরতে চাই। দৈনিক জনকন্ঠ ২৯ জুলাই ২০১৬ ‘ বিক্ষিপ্ত ভবনা’ শিরোনামের নিবন্ধে তিনি বলেছেন,‘ আমার লেকচারের ভাষা খুব কঠিন এবং তার সার-সংক্ষেপ অনেকটা এ রকম : ‘তুমি একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ছাত্রের পেছনে সরকারের কত টাকা খরচ হয় তুমি জান? যদি না জেনে থাকো তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটকে প্রতি বছর পাস করে বের হয়ে যাওয়া ছাত্রদের সংখ্যা দিয়ে ভাগ কর তাহলেই সেটা পেয়ে যাবে’ দেখবে দেশের সবচেয়ে হাইফাই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা পড়ালেখার জন্য যত টাকা খরচ করে তোমাদের পেছনে সরকার তার থেকে অনেক বেশি খরচ করে। কাজেই তুমি যদি ভেবে থাকো নিজের টাকায় কিংবা তোমার বাবা-মা বা গার্জিয়ানের টাকায় লেখাপড়া করছ, জেনে রাখো সেটা পুরোপুরি ভুল ধারণা। তুমি এখানে পড়ছ সরকারের টাকায়।’ এরপর আমি গলার স্বর আরও ভারি করে ততধিক কঠিন ভাষায় বলি, ‘তোমাকে লেখাপড়া করানোর জন্য সরকার সেই টাকা কোথা থেকে পায়? সরকার সেই টাকা পায় এই দেশের খেটে খাওয়া মানুষের কাছ থেকে, শ্রমিক-চাষী, মজুরদের কাছ থেকে। কাজেই তুমি মোটেও নিজের টাকায় লেখাপড়া করছ না’ তোমার লেখাপড়ার খরচ দিচ্ছে এই দেশের কোন একজন গরিব মানুষ, কোন একজন চাষী, রিক্সাওয়ালা কিংবা গার্মেন্টসের কোন একজন মেয়ে। যে গরিব মানুষের টাকায় তুমি বাংলাদেশের বড় একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছ, সেই গরিব মানুষটি হয়ত নিজের ছেলে বা মেয়েকে লেখাপড়াই করাতে পারেনি’ কিন্তু তোমার লেখাপড়ার খরচ দিয়ে যাচ্ছে।’
বাংলাদেশের আজ যে চোখেপড়ার মতো উন্নয়ন তা পেছনের নিয়ামত শক্তি হিসেবে বিবেচিত শক্তি হচ্ছে আমাদের দেশের তরুণ ও যুবসমাজ এদেরকেই টার্গেট করছে অন্ধকারের শক্তি। তারা এটা ভাল করেই জানে যে, একটা রাষ্ট্র বা সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে হলে প্রথমেই আঘাত হানতে হবে যুব ও তরুণসমাজের ওপর। এ কাজটি এখন তারা করছে। আর তা করা জদন্য বেছে নিয়েছে আমাদের দেশের বড় বড় পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। কিন্তু আমরা এতদিন এ ব্যপারে নির্লিপ্ত থাকার কারণেই বড় ক্ষ হয়ে যাচ্ছে, দেশ সমাজ ও রাষ্ট্রের। বাংলাদেশের বর্তমান ১৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১১ কোটির বেশি তরুণ। যাদের বয়স অনূর্ধ্ব ৩৫ বছর। মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের বেশি এ সংখ্যা। এদের মধ্যে পাঁচ কোটি হচ্ছে শিক্ষার্থী। এরা কী শিখছে সেসব নিয়ে যেন আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। এইসব শিক্ষার্থীর একটা অংশ পরগাছা হিসেবে বেড়ে উঠছে। একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা না থাকায় বহুমুখী শিক্ষার বহুমুখী প্রবণতা নেতিবাচক দিককেই সামনে নিয়ে এসেছে। যে শিশুরা আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে, এগিয়ে নিয়ে যাবে সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে, তাদের যোগ্য করে গড়ে তোলার কাজটি আর হচ্ছে না। আমাদের দেশের তারুণ সমাজই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাই তাদের অবক্ষয় কারো কাম্য হতে পারে না। তবে সন্তানদের ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনার কাজটি প্রথমে অভিভাবক ও পরে শিক্ষকের ওপর বর্তায়। কেন সন্তান আত্মঘাতী হয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে, তার উত্তর নিশ্চয় স্বজনদের জানা নাও থাকতে পারে। কিংবা জানার কোন মাধ্যমও অবলম্বন করা হয়নি। নিজের সন্তানকে স্বাভাবিক পথে ফিরিয়ে আনাটা আজ গুরুত্বপূর্ণ।
তাই আমাদের সন্তানদের কুটিল ও পঙ্কিল পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে হলে, পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গকেই একযোগে সক্রিয় হতে হবে। সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে মা-বাবা, ভাই-বোন এবং পরিবারকে। আমাদের সন্তানদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি তার তরুণ মনের ভাবনাগুলোকেও শেয়ার করতে হবে। এর সাথে খোঁজ রাখতে হবে আমাদের সন্তানদের মনোজাগতিক পরিবর্তনের এ সময়টাতে ওরা কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে, অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগে সে বিপথ চলে যাচ্ছে কিনা; একই আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সমান দায়িত্ব নিতে হবে তাদের প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতি, কোন প্রতিষ্ঠানে এমন কোন শিক্ষক নিয়োগ যেন নিয়োগ দেয়া না হয়, যারা শিক্ষকতার আড়ালে একজন মেধাবী ও সরলপ্রাণ সর্বোপরি একজন ধর্মভীরু ছাত্রকে প্রলোভন দেখি বিপথে নিয়ে যেতে না পারে।
১৬টি মন্তব্য
তৌহিদ
সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। আমাদের সন্তানরা বিপথে যাচ্ছে এর দায়ভার অনেকাংশেই পিতামাতার উপর বর্তায় বৈকি। বিদেশী সংস্কৃতির সাথে আমাদের সমাজ খাপ খাওয়াতে পারছে কিনা এটা সন্তানদের শেখাতে হবে পিতামাতাকেই। নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে সন্তানকে, এর জন্য শিক্ষাব্যবস্থা আর সামাজিক কাঠামোয় অনেক পরিবর্তন দরকার।
আইনের অনুশাসন এবং এর প্রয়োগবিধি জরুরী। এছাড়াও ধর্মীয় মুল্যবোধের চর্চা বহুলাংশে অপরাধ প্রবনতা কমিয়ে দেয়।
এত সুন্দর একটি লেখা উপহার দেবার জন্য ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য।
মাহবুবুল আলম
লেখায় মন্তব্য করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা! পরের কথা হলো দিন দিন যেভাবে আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে তাতে সমগ্র জাতি আজ শঙ্কিত। তবে সবাই পিছিয়ে গেলেও লেখকরা পিছিয়ে যাবে না।
তৌহিদ
অবশ্যই পাশে আছি ভাইজান।
শিরিন হক
লেখার ট্রপিক আমাদের সাবার জন্য প্রযোজ্য। তবে বাবা মাকে দায়ী করা কতটা যৌগিক আমি যানিনা। কলেজ পর্যন্ত বাবা মায়ের কঠোর নজরদারি করার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হবার পর বাবা মায়ের আর কন্ট্রোল থাকেনা সন্তানদের প্রতি।
আমাদের নৈতিক শিক্ষা টাকার কাছে বিক্রি হয়।একজন মেধাবী ছাত্র যখন দেখে বাবা মায়ের কস্ট হচ্ছে টাকা দিতে তখন প্রলোভন হাত ছানি দেয় তাকে।
শিক্ষা ব্যাবস্থা, চাকুরী নামক সোনার হরিণের পিছু ছোটা, রাজনৈতিক দলের তৎপরতা, প্রসাসনের নিরাবতা, আমাদের সামিজক মুল্যবোধের অভাবে আমাদের তরুনরা আজ বিপদ গামী।সব
এ থেকে উত্তরণের উপায় সরকার রাজনীতি বিদ পরিবার সবাইকে ভেবে বের করতে হবে নইলে ভবিষ্যত অন্ধকার।
মাহবুবুল আলম
আমি এ লেখায় মা-বাবাকে সরাসরি দায়ি করিনি। মা-বাবাদেরকে সচেতন থাকার কথা বলেছি।
তবে প্রতিটি ঘরই শোধনাগার না হলে এ শঙ্কট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।ভাল থাকবেন শুভ কামনা।
জিসান শা ইকরাম
সামাজিক অবক্ষয়ের সময়ে আপনার এই লেখাটি অত্যন্ত মূল্যবান।
আজকাল কেহ আক্রান্ত হলে কেহ এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করেনা,
অভিজিতকে কুপিয়ে মারা হলো প্রকাশ্যে , মানুষ গুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা প্রত্যক্ষ করলো, ভিডিও করল।
সিলেটে এক মেয়েকে কুপিয়ে প্রায় খুন করা হয়েছিল, কেহ বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি,
রিফাতের কথা তো আপনার লেখায়ই আছে।
মানুষের প্রতি মানুষের সহযোগিতার মনোভাব বর্তমানে শূন্যের কোঠায়। অথচ এ দেশের মানুষ ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় একে অপরকে বাঁচিয়েছে নিজের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে।
তরুণদের নিয়ে আপনার বিশ্লেষণের সাথে একমত।
সন্তানের বন্ধু হয়ে আমাদের সন্তানদের সঠিক পথে পরিচালিত করতেই হবে।
ধন্যবাদ এমন লেখার জন্য।
মাহবুবুল আলম
জিসান ভাই !
আসলে আমাদের মানবিক মূল্যবোধ নড়বরে বলেই কেউ এগিয়ে আসেনি। সবাই তামাশা দেখেছে। কেউ কেউ ভিডিও করেছে। এতগুলো লোক একসাথে এগিয়ে এলে রিফাতকে অকালে প্রাণ দিতে হতো না।
ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা অবিরাম।
ছাইরাছ হেলাল
খুব সহজে যদি বলি এই অবক্ষয় একদিনে তৈরি হয়নি, আর হুট করে উড়ে যাবে
তাও মনে করি না। এখানে দোষারোপের কালচার, এটা হলে এমন হতো না, এমন হলে অমন হত না।
ফেস বুকে জ্ঞান দান সব থেকে সোজা। সবাই গিয়ে প্রতিরোধ করলো না কেন!! বলা খুব সোজা।
চেনা সন্ত্রাসীরা দিনে দিনে মহীরূহ হয়ে উঠল তখন কে কথায় ছিলাম, এই জ্ঞানদান কথায় ছিল!!
আশাহত হচ্ছি না। আইনের কঠোরতম প্রয়োগ পরিত্রাণের এক মাত্র উপায়।
সরষেতে ভুত থাকলে কথা ভিন্ন।
অনেক ধন্যবাদ, একটি আপাত জ্বলন্ত বিষয়ে লিখছেন বলেই আমারাও সামান্য আলোচনায় অংশগ্রহন করলাম।
মাহবুবুল আলম
এটা একটা জাতীয় সমস্যা, এখানে রিফাত হত্যাকান্ডকে হাইলাইস করা হয়েছে। এই নিবন্ধে আরো অনেক বিষয় যুক্ত আছে। দোষারোপের সংস্কৃতি বাঙালির অস্থিমজ্জার সাথে জড়িত।
ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন । শুভেচ্ছা!
আরজু মুক্তা
নৈতিকতা আর মানুষের একে অপরের প্রতি সম্মান।। এই দুটো বড় প্রয়োজন।।
মাহবুবুল আলম
আরজু মুক্তা!
যথার্থ বলেছেন। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
রেহানা বীথি
সময়োপযোগী সুন্দর পোস্ট।
মনির হোসেন মমি
যে যাই বলুক এ সব ঘটনায় কেউ এগিয়ে আসবে না।কারন এখানে পুলিশী একটি ঝামেলা থাকে যা সাধারন মানুষ পছন্দ করেন না।তাছাড়া যে সমাজে পুলিশী প্রশাসনের নাকের ডগায় মাফিয়া চক্র নির্দধায় ঘুরে ফিরে সেখানে সাধারন জনগণের কি ঠেকা পড়েছে যে অযথা ঝামেলায় ঝরায়। এ সমাজ নষ্ট হওয়ার পিছনে সব চেয়ে বেশী দায়ী এ দেশের তথাকথিত রাজনিতীবদরা যারা সন্ত্রাসী বানায় সন্ত্রাসীদের সকল অপরাধের সাপোর্ট দিয়ে যায়। চমৎকার একটি লেখা দিলেন অনেক কিছুই উল্লেখ করেছেন।সবগুলো কথাতেই আমি সহমত জ্ঞাপন করছি।
মাহবুবুল আলম
প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু একজন শিশু বা কিশোরের অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিন্তু তার পরিবার। পরিবার থেকেই প্রতিটি শিশু বা কিশোর জীবনের মূল্যবোধ সন্মন্ধে প্রধান শিক্ষাটা পেয়ে থাকে । তাই সন্তানদের চরিত্র গঠন ও মানসিক বিকাশে মা-বাবা বা পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য, তা তাই বলতে চেয়েছি।
শামীম চৌধুরী
সময়পোযোগী লেখা ভাই। পরিবার থেকেই আসা উচিত সন্তানদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা।
মাহবুবুল আলম
শামীম চৌধুরী! আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা!