তারপর মেয়েটি বললো আমার নাম মিথিলা,আমি চট্টগ্রামের মেয়ে এইবার ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
আমার পরিবারে আমার বাবা আর সৎ মা আর সৎ ভাই আছে।আমি যখন ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছি তখন যে তিন মাস ছুটি থাকে
সেই সময় আমার মামা আমাকে একটা মোবাইল উপহার দিয়েছিলো,সেই নতুন মোবাইল পেয়ে আমি তো খুব খুশী।
তো একদিন আমার এক বান্ধবীর কথায় মোবাইলে নতুন নতুন নাম্বার বানিয়ে মিসকল দিয়ে মজা করি। ও এই রকম মজা করে আর ওর সাথে এইভাবে একটা ছেলে প্রেম হয়ে গিয়েছিলো।
মেয়েটি কথা বলে যাচ্ছে আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি।একটা কথা ও বলছি না দেখে মেয়েটি বললো আপনি কি শুনছেন আমার কথা।
আমি তখন বললাম হুম শুনছি আপনি বলেন।তারপর মেয়েটি আবার বলতে শুরু করলো। এইভাবে একদিন নতুন নাম্বার বানিয়ে মিসকল দিলাম।
অপর প্রান্ত হতে সাথে সাথে কল ব্যাক করলো,আমি ভয়ে কল রিসিভ না করে আমার বান্ধবীর হাতে ধরিয়ে দিলাম। ও কল টা রিসিভ করে কথা বলা শুরু করলো।
ওদের ভেতর অনেক কথা হলো আমি শুধু শুনলাম,আমি কথা বলি নাই,তবে ছেলেটার কন্ঠ টা খুব সুন্দর ভরাট কন্ঠ। সেদিন ওরা দুজনে অনেক কথা বললো।
এক পর্যায় কল কেটে দেওয়ার আগে আমার বান্ধবী বললো আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন সেটা আমার বান্ধবীর নাম্বার।ও ভয়ে কথা বলেনি তাই আমি বললাম।
তখন ছেলেটা বললো তাকে একটু দেন তো কথা বলি,আমার বান্ধবী আমাকে ফোন টা দিলো আমি ভয়ে ভয়ে হ্যালো বলে কল কেটেদিলাম।
আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।কি বলবো চিনি না যানি তাই কেটে দিয়েছি।কিন্তু ছেলেটা বার বার কল করেই যাচ্ছিলো।
আমি একবার ও ধরি নাই,পরে ফোন বন্ধ করে দিয়েছিলাম,আর তার থেকে বড় ভয় পাচ্ছিলাম,আমার বাবা আর সৎ মা যদি জানতে পারে আমাকে মেরে ফেলবে।
সেদিনের মত আমি আর ফোন ওপেন করি নাই।তারপর দিন সকালে বান্ধবীর বাসায় গেলাম ওদের বাসা আর আমাদের বাসা পাশাপাশি।সেখানে গিয়ে ফোন টা ওপেন করলাম ওপেন করার সাথে সাথে
দেখলাম অনেক মেসেজ।সব গুলো মেসেজ পড়লাম।আর তার কিছুক্ষন পরে সেই ছেলেটি কল দিলো।এইবার আমি রিসিভ করলাম আর তার সাথে কথা বলা শুরু করলাম।
ছেলেটি আমার নাম জানতে চাইলো,আমার সব কিছু জানতে চাইলো আমি তাকে বললাম,তারও সব কিছু আমাকে জানালো। তার নাম সিহাব, সে লেখাপড়া করে কলেজে।তার পরিবারে সে আর তার বাবা মা।
এইভাবে তার সাথে আমার পরিচয়,আর কথা বলা শুরু,তারপর আস্তে আস্তে ভালো লাগতে শুরু করলো ছেলেটাকে,তারপর ভালোবেসে ফেললাম।
একবার ছেলেটা চট্টগ্রামে গিয়েছিলো আমার সাথে দেখা করতে। সেদিন অনেক ঘুরলাম তাকে নিয়ে।তারপর আমি কলেজে ভর্তি হলাম।আমাকে আমার সৎ মা পড়াতে চাইনি।
আমি জোর করে বিষ খাবো ফাঁসী দেব এই ভয় দেখিয়ে বাবা কে ভর্তি করাতে বাধ্য করলাম।কলেজ ভালো চলছিলো তার সাথে সিহাবের সাথে প্রেম,খুব ভালো যাচ্ছিলো।
তার ভেতর একদিন আমার সৎ মা জেনে গেলো আমি মোবাইলে কার সাথে যেন রাতে কথা বলি।আর সেটা জেনে আমার ফোন কেড়ে নিলো আর আমাকে অনেক মারলো।
আমাকে আটকে রেখেছিলো ঘরে,আর বাবা কে বলেদিলো,সাথে এইটা ও বললো আমি নাকি কি সব করে বেড়ায়।আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে বলল তার বোনের ছেলের সাথে।
সেই ছেলের নেশা করে,আর আগে একটা বিয়ে হয়েছিলো সেই বউ কে অনেক মারতো তাই সেই বউ পালিয়ে গেছে।আমাকে সেখানে বিয়ে দেবে।
আমি সব শুনলাম দরজার সাথে কান পেতে।বাবা বলল তুমি যা ভালো মনে করো তাই করো।আমার কিছুই বলার নেই।আমি এই কথা শুনার পর
অনেক কেঁদেছিলাম,একবার মনে হয়েছিলো ফাঁসী দিয়ে মরে যাই,পরে সিহাবের কথা চিন্তা করে একটু মনোবল পেলাম ও বলেছিল,আমাকে ঢাকা পালিয়ে চলে আসতে।
ও আমাকে বিয়ে করবে।আমি তখন না করে ছিলাম বলেছিলাম আমার পরীক্ষা শেষ হলে তুমি বাসায় প্রস্তাব দিও,তারপর রাজী না হলে দেখা যাবে।
আমার তখন এই চিন্তা মাথায় ঘুরছিলো কিভাবে সিহাবের সাথে যোগাযোগ করা যাই।পরদিন সকালে মা এসে বললো রেডি হতে আমাকে আংটি পড়াতে আসবে তার বোন।
আমি তখন তার কথা মত রাজী হলাম,আর নিজেকে শক্ত করে তার কথা মত চলতে লাগলাম।আমাকে আংটি পরিয়ে গেল।আমি হাসি খুশী ভাবে রইলাম।তারপর আমার মোবাইল টা ও
আমার মা খুশী হয়ে দিয়ে দিলো সে কিছুই বুঝতে পারলো না আমি যে অভিনয় করছি।মোবাইল টা হাতে পেয়ে আমি যেন জান ফিরে পেলাম।আমি সাথে সাথে সিহাব কে কল করলাম।
ও তো রিসিভ করে অনেক প্রশ্ন শুরু করলো,আমি তাকে শুধু বললাম সব বলবো আগে শুনো আমি আজ এখনই ঢাকা আসছি তুমি আমাকে বাসস্ট্যান্ডে নিতে আসবে।
ওকে এখন রাখি আমার এখানে অনেক ঝামেলা।ও বলল আচ্ছা তুমি চলে আসো।আমি মাকে বললাম আমি একটু বান্ধবীদের বাসায় যাচ্ছি।মা তো মনে করলো সব ঠিক আছে।
তাই যেতে দিলো আমি আমার জমানো কিছু টাকা আর আমার মায়ের কিছু গয়না নিয়ে বের হলাম,সোজা বাসষ্ট্যান্ড এসে ঢাকার বাসে চড়ে বসলাম।
আর সিহাব কে কল করলাম করে বললাম আমি আসচ্ছি। ও বলল আচ্ছা আসো আমি বাসষ্ট্যান্ডে অপেক্ষা করবো।আমি ঢাকায় আসলাম ও আমাকে রিসিভ করলো।
খুব ভালো লাগছিলো তখন ওকে দেখে।ও আমাকে এক হোটেলে খাইয়ে বলল আমি তো এখন বাসায় নিতে পারবো না,তোমাকে আমার এক বান্ধবীর বাসায় নিয়ে রাখতে হবে।
তুমি ঐখানে কিছুদিন থাকার পর আমি আমার মাকে বলে তোমাকে বাসায় নিয়ে আসবো কেমন।আমি ওর কথা গুলো বিশ্বাস করে ওর সাথে এক ফ্ল্যাট বাসায় গেলাম।সে খানে আমার মত আরো ৪টা মেয়ে কে দেখলাম।
তারা আমাকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।তাদের ভেতর একটা মেয়ে নীলা নাম তাকে বলল সিহাব ও এইখানে থাকবে ওকে দেখে রাখিস।
এই বলে আমাকে রুমে নিয়ে বসিয়ে সিহাব বলল তুমি কি টাকা পয়সা কিছু এনেছো আমার না হাত একদম খালি আর বাবা মার কাছে এখন নিতে পারবো না।কয়দিন আগে পরীক্ষার জন্য টাকা দিয়েছে।
তোমার জন্য তো কিছু জামা কাপড় কিনতে হবে।এই কথা বলল,আমি ওকে ভালোবাসি আর বিশ্বাস করি,তাই ওকে বললাম আমি আমার জমানো হাজার পাঁচেক টাকা আর এই আমার মায়ের কিছু গহনা এনেছি।
তুমি এই গুলা রাখো,ও প্রথমে টাকা নিয়ে বলল আচ্ছা টাকা গুলো নেয় গহনা গুলো থাক তোমার মায়ের স্মৃতি,এই টাকায় চলবে আর দেখি আমি কারো কাছে ধার করে পাই কিনা।
আমি এই ধারের কথা শুনে ওকে বললাম তোমার ধার করতে হবে না,তুমি এই গুলো সব নিয়ে যাও।আমার মানে তো তোমার আর তোমার মানে আমার।
ও একটা হাসি দিয়ে বলল হুম আচ্ছা তুমি যখন এত করে বলছো না নিয়ে তো পারছিনা। বলে নিয়ে চলে গেল,আর বলে গেল তুমি থাকো আমি তোমার জন্য জামা -কাপড় কিনে নিয়ে আসচ্ছি।
ও চলে যাবার সময় নীলা কে কি কি জানো বলে গেল।ও চলে যাবার পর নীলা আমার রুমে আসলো আর
এসে জিজ্ঞেস করলো নাম কী কোথায় হতে এসেছি।এই লাইনে কত দিন।আমি নীলা কে নাম বললাম কোথা হতে এসেছি সেটা ও বললাম।
কিন্তু এই লাইনে কত দিন সেটা বুঝিনাই তাই উত্তর ও দিতে পারি নাই।ওকে জিজ্ঞেস করলাম এই লাইনে বলতে কি বুঝাতে চাইছো বলো।ও আমার কথা শুনে হেসে দিলো আর বলল কিছু না।
তারপর ও আমাকে ভাত খেতে দিলো,আমি ফ্রেস হয়ে ভাত খেলাম।আর খুব ক্লান্ত লাগছিলো সিহাবের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,হঠাত ফিসফিসানির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল
সিহাবের কন্ঠ শুনলাম নীলা কে কি জানো বলছে।আমি একটু শোনার চেষ্টা করলাম শুধু এইটুকু শুনতে পেলাম,পাখী আপনা আপনি জালে ধরা দিছে,এই টাকে দিয়ে অনেক টাকা কামানো যাবে।
একদম ইনটেক,আমি এই কথা শুনে মনের ভেতর ভয় ঢুকে গেল,পেপারে পড়েছিলাম এই ভাবে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মেয়েদের ধরে নিয়ে আসে আর তাদের দিয়ে জোর করে দেহ ব্যাবসা করায়।
আমি তখন এই সব মনে করে চুপসে গেলাম,আর ভয় পেতে শুরু করলাম।আর নিজেকে নিজে সান্তনা দিতে লাগলাম না সিহাব আমাকে ভালোবাসে সে আমার সাথে এমন করবে না।
একটু পর সিহাব আমার জন্য ২টা ত্রিপিস নিয়ে আসছে।আর এসে বলল কি ঘুমিয়েছিলে,ঘুম ভেঙ্গেছে।আচ্ছা তুমি ঘুমাও আমি আজ মায়ের সাথে কথা বলবো কাল সকালে আবার আসবো কেমন।
আমি ওর কথা সুনে শুধু মাথা নাড়ালাম,আমি বুঝতে দেয় নাই আমি যে ভয় পাচ্ছি,আর ওকে ও জিজ্ঞেস করি নাই আমি যা কিছু শুনেছি।ও চলে যাবার পর নীলা আসলো।
নীলা কে আমি জিজ্ঞেস করলাম আমি যা কিছু শুনেছি সেই গুলো নীলা প্রথমে হেসে হেসে বললো আরে ধুর বোকা কিছুনা,এই গুলা অন্য একটা কাহিনী নিয়ে কথা হয়েছিলো।
এইবার আমি কেঁদে দিয়ে ওর পা জড়িয়ে ধরে বললাম প্লিজ তুমি বল আমি যা শুনেছি সত্যি কিনা,তুমি ও তখন আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে আমি এই লাইনে কতদিন। প্লিজ তুমি বল প্লিজ।
আমি এক জাহান্নাম হতে বেঁচে এসে আরেক জাহান্নামে পড়লাম,আমি কেঁদে যাচ্ছি আর নীলা পা জড়িয়ে রেখেছি,নীলা আমাকে উঠিয়ে বসালো আর আমার কান্না থামাতে বলল,
তারপর বলল তুমি যা শুনেছো সব সত্যি কথা,সিহাব তোমাকে এতদিন যা কিছু বলেছে সব মিথ্যা,ও এই সব প্রতারনা করে মেয়েদের জালে ফাসিয়ে তাদের দিয়ে দেহ ব্যাবসা করায়,
আমি ও ওর এই প্রতারনার স্বীকার,প্রথম প্রথম আমিও তোমার মত কেঁদেছিলাম কিন্তু তখন কেউ ছিলোনা আর শোনে নি,এখন আমার সয়ে গেছে।কিন্তু আমি তোমাকে এই জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেব।
চলবে।
১২টি মন্তব্য
খসড়া
চল চল হিমু সাহেব, এই তো চাই। খুব ভাল লাগছে নব্য হুমায়ুন বাদশাহ।
নিশিথের নিশাচর
কি যে বলেন ভাই কোথায় স্যার আর কোথায় আমি ।
আমি এই টুক টাক লিখার চেষ্টা করি। কিন্তু আমার লিখা কোন লিখার ভেতর পড়ে না।
আদিব আদ্নান
কাহিনী বেশ ভাল ভাবেই এগোচ্ছে , কিন্তু শুরুতে দেখছি শিশু প্রেম ……
নিশিথের নিশাচর
আরে ভাই আমি কি বড় নাকি আমিও তো শিশু তাই লিখার ভেতর শিশু শিশু ভাব আইসা পড়ছে।
জিসান শা ইকরাম
আহারে , এমনি প্রতারনার মাঝে কত মেয়ের জীবন শেষ হয়ে যায় —
লিখতে থাকুন —–
নিশিথের নিশাচর
অনেক বলে শেষ করা যাবে না। আরেক দিন লিখবো আমার দেখা আমার শোনা কিছু সত্যি ঘটনা।
ছাইরাছ হেলাল
তা হিমুর রাত তো রূপালী থাকছে না ,
কেমন যেন একটু ইয়ে মত হয়ে যাচ্ছে ।
চলুক ।
নিশিথের নিশাচর
কেমন যেন ইয়ে মত মানে বুঝতে পারছি না।
নীল প্রান্তর
বাকি লিখাটা পরে নেই । তারপর মন্তব্য করবো ।
নিশিথের নিশাচর
ঠিক আছে মামু।
লীলাবতী
কত শত সহস্র মেয়ে এমনি প্রতারনার ফাঁদে পা দেয় বোকার মত। পরের পর্বের অপেক্ষায়। ভালো লাগছে লেখা ।
নিশিথের নিশাচর
অনেক অনেক যা বলে শেষ করা যাবে না।