আমার নাম বাসুরী,এই নাম টা আমার খুব প্রিয় এই নাম প্রিয় হবার কারন এইটা আমার মা তার ডায়রীতে লিখে রেখেছিলো।
ছেলে হোক আর মেয়ে হোক ডাক নাম বাসুরী হবে।তাই আমি এই নাম টা রেখে দিলাম আর এই নাম টা আমার এত প্রিয়।
আর তার চেয়ে বড় কথা আমি আমার মাকে দেখি নাই বা তার কোন ছবি ও নেই আমার কাছে দেখতাম যদি বাবা থাকতো।
কিন্তু দূরভাগ্যের বিষয় বাবা কে ও দেখি নাই।আমি জন্মের পর হতে বাবা মা বিহীন বড় হয়েছি।আর কোথায় লালিত পালিত
হয়েছি সেটা আগে ও একবার বলেছি।আমি ভাবতাম আমার কেউ নেই এই পৃথিবীতে আমি এতিম পথ শিশু।
আবার মাঝে মাঝে কেউ কেউ বলতো আমি নাকি থাক সে কথা মনে করতে চাই না।
কিন্তু সব ধারনা একদিন মুছে গেল দাদী কে দেখে যাক আমার তাহলে পরিবার আছে। লোকে যা বলে আমি তা নই।
আমি একা একা লালিত পালিত হয়েছি সেটা তো বললাম।অনেক পরে আমি দাদীর কাছে আসলাম।
আর তখন হতে আমি ছন্নছাড়া ভবঘুরে ছিলাম,আমার যেহেতু পরিবার কেউ নেই দাদী ব্যাতিত তাই আমাকে কেউ
শাসন করার মত ও ছিলো না আমি নিজের মর্জি মত চলতাম।আমি যখন ক্লাস ৮ পড়ি তখন এক বন্ধুর থেকে হুমায়ন আহমেদ স্যারের
এবং হিমু উপন্যাস টা নিয়েছিলাম পড়ার জন্য।আর যখন আমি বই টা পড়ি তখন হতে আমার ভেতর হিমু হবার ইচ্ছা জেগেছিলো।
আর আমি আগে হতে রাত বিরাত ঘুরতাম।এবং হিমু পড়ার পর আমি চিন্তা করলাম আরে আমার তো হিমু হওয়া একদম সোজা
হিমুর কোন পরিবার নেই,আমার ও তো নেই।হিমু ভবঘুরে রাত বেরাত ঘুরে আমি ও তো ভবঘুরে রাত বেরাত ঘুরি।
হিমুর বাবা হিমুর শিক্ষক আর আমার শিক্ষক হিমুর বই। হিমু মহাপুরুষ হতে চাই আমি ও চাই,কারন আমার জন্মের পর যখন বুঝতে শিখলাম তখন আমার যে
ব্যাকগ্রাউন্ড শুনলাম তাতে আমার এই জীবনে কোন মেয়ে বা তার পরিবার আমাকে গ্রহণ করাতো দূরে থাক ফিরেও তাকাবে না।তাই সব বাদ দিয়ে হিমু হবার প্লান করলাম
মহাপুরুষ সব মায়া মমতা ভালোবাসার বিহীন এক মানব।
ব্যাস যেই ভাবা সেই কাজ হয়ে গেলাম হিমু চরিত্রের উপর পুরোপুরি ক্রাস।আর তখন হতে আজ পর্যন্ত আমি হিমু সিরিজের এমন কোন বাদ নেই যে পড়ি নাই।
আর বই টা পড়ার পর পুরোপুরি হিমু হয়ে গেলাম,দিনে ঘুমাতাম রাতে ঘুরতাম তবে সেটা সব সময় না স্কুল বন্ধের আগের দিন রাতে আমি হিমু হতাম।
এই ছিলো আমার প্রথম হিমু হবার পদক্ষেপ,অনেক চেষ্টা করেছি সব সময়ের জন্য হতে কিন্তু পরিবেশ,পরিস্থিতি,সমাজ ব্যাবস্থা আমাকে হিমু হতে বাধা সৃষ্টি করেছে।
কিন্তু আমি দমে যাইনি একটু বন্ধ রেখেছিলাম,সমাজ ব্যাবস্থা দেখে আবার ভেবেছিলাম স্বাভাবিক জীবন যাপন করে দেখি কেমন হয়।
তো স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে গিয়ে একজনের মায়া জড়িয়ে গেলাম মানে প্রেমে পড়লাম,আর তখন হিমু হবার চিন্তা পুরোপুরি মাথা হতে ঝেড়ে রঙিন স্বপ্ন দেখতে লাগলাম।
আহ কি সুন্দর না দিন গুলো ছিলো কত রঙিন স্বপ্ন ঘর বাধার স্বপ্ন।থাক সেই রঙিন স্বপ্নের কথা আর একদিন বলবো আজ না।
কিন্তু ঐ যে বললাম আগে যে আমার জন্মের পর যে ব্যাকগ্রাউন্ড মাশাআল্লাহ আর সেই ব্যাকগ্রাউন্ডই আমার জীবনে অভিশাপ নেমে আসলো।
আর আগে তো এমনি অভিশপ্ত ছিলো।ভালোবাসার প্রিয় মানুষ টা দিলো ছ্যাকা,সমাজ ব্যাবস্থার নিয়মে আমি তার যোগ্য নই।
আমি আগেই ভেবেছিলাম কিন্তু মন তো আর মানে নাই তাই মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছিলাম।
কিন্তু সেই মায়া বেশীদিন টিকে নাই,আর তারপর হতে আবার আমার ভিতর হিমু হবার বাসনা পুরোপুরি জেগে উঠলো।
আমি আবার হিমু হবার চেষ্টায় লিপ্ত হলাম,এইবার আর কিছুর পরোয়া নেই,আর কোন মায়া নেই,
তাই পুরোপুরি হিমু হবার জন্য ভবঘুরে হয়ে গেলাম।রাতে ঘুরে বেড়ায় আর দিনে ঘুমায়।
আমাদের দেশে রাতে ঘুরে বেড়ালে অনেক প্রতিকুল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়,আর সবচেয়ে বেশি হতে হয় পুলিশি ঝামেলায়।
আমি অনেক বার পড়েছি,শুধু বুদ্ধির জোরে বেঁচে গেছি।
অনেক তো আমার কথা বললাম,এইবার গল্পের কথা বলি।
এমনিতে আমার রাতে ঘুম আসে না,তারওপর আমার হিমু হতে হবে,তার উপর নিজের জীবনের কষ্টের বোঝা সব মিলিয়ে আমি চরম হতাশ,তাই রাতে ঘুরে বেড়ায়।
আর ঢাকা শহরে দিনে বেলা একরকম রাতে বেলা আরেক রকম,এইটা অনেকে অবগত।
বিচিত্র রাত রাস্তা দিয়ে হাঁটলে দেখা যাই,কেউ নেশা করে বুদ হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে তো কেউ অন্ধকার গলির ভেতর দাঁড়িয়ে অসহায় মানুষের সর্বশ কেড়ে নিচ্ছে।
আর কেউ কেউ বেঁচে থাকার জন্য তাদের দেহ বিক্রি করার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে খদ্দের খুঁজছে,আর এই সব মানুষের একটা নাম আছে নিশিকন্যা।
এইভাবে এক রাতে ঘুরছি,তো হেঁটে যেতে যেতে ২-৪ জন নিশিকন্যা আমাকে তাদের খদ্দের ভেবে ডাকা ডাকি করছে।আমি প্রথম পাত্তা না দিয়ে আমার মত হেটে বেড়াচ্ছি।
আর আমার মহাপুরুষ হবার ধ্যানে মনোনিবেশ করছি,একটু পর অনুভব করলাম আমার পিছন পিছন কেউ একজন হেঁটে আসছে।আমি পাত্তা না দিয়ে আমার মত হাটছি,অনেক দূর হেঁটে আসার পর
বুঝতে পারলাম আমার পেছনের হেঁটে আসা মানুষটি আমার সাথে সাথে হেটে যাচ্ছে।আমি দাঁড়ালাম সে ও দাঁড়ালো,তারপর আমি পিছনে ফিরে তাকালাম দেখলাম মাথায় উড়না দিয়ে একটু বড় করে
ঘুমটা দেয়া একটি মেয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে,আমি তার সামনে গিয়ে বললাম কি চাই,আমার পিছন পিছন হাঁটছেন কেন সমস্যা কী ?আমি ঐ টাইপ না আপনি যেমন টা ভেবে আমার পিছন পিছন হাঁটছেন।
আপনি অন্য কোথায় যান গিয়ে খদ্দের খুজুন।একদমে কথা গুলো বলে আমি আবার আমার হাঁটা শুরু করলাম।হাটছি হঠাত ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় দেখলাম পিছনের মেয়েটি আবারো আমার পিছনে পিছনে আসছে।
এইবার আমার মেজাজ টা বিগড়ে গেল আমি এইবার পিছনে ফিরে একদম তার সামনে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে সমস্যা কী,
আপনাকে না বললাম আমি ঐ টাইপ নই,তারপর ও কেন পিছন পিছন হেটে আসছেন ? আমার পিছনে না হেঁটে খদ্দের খুজেন কাজে দেবে আর কাল পেটে ভাত ঢুকবে।বুঝলেন যান।
এত কথা বললাম মেয়েটির মুখ দিয়ে একটি শব্দ ও বের হল না,বুঝতে পারলাম মেয়েটি কাঁদছে তার ফোপানোর শব্দ পেলাম আর একটু পর পর কেপে উঠছে।
আমার এই টা দেখে কেমন জানি সন্দেহ লাগলো,সত্যি কি কোন বিপদে পড়েছে নাকি মেয়েটা না প্রতারক টাইপ কেউ যারা এই রকম প্রতারনার ফাদ পেতে অসহায় মানুষের সর্বশ কেড়ে নেই।
তবে আমার তেমন চিন্তা নেই মনে মনে বললাম আমার আমি ছাড়া আর কিছু নেই,আর বড় জোর এক প্যাকেট সিগারেট আর একটা কাঠি ম্যাচ পাবে তা ও সিগারেটের পুরোপ্যাকেট নেই ৯-১০ আছে মনে হয়।
তাই আর প্রতারনার চিন্তা মাথা হতে ঝেড়ে ফেলে আমি ফুটপাতে বসলাম আর সেই মেয়েটিকে বসতে বললাম।সে বসলো আমার থেকে একটু দূরত্বে,এইবার আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে আপনার কাদছেন কেন ?
কি সমস্যা আমাকে বলেন,অনেকক্ষন চুপ থাকার পর মেয়েটি অস্পষ্ট স্বরে বললো আমাকে একটা উপকার করতে পারবেন ?
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম কি করতে হবে বলেন সাধ্যের ভেতর থাকলে অবশ্যই করবো।
মেয়েটি বললো আমাকে চট্টগ্রামের বাসে তুলে দিতে পারবেন?আমার যাওয়ার মত কোন টাকা নেয়। আমি বাড়ি যাবো।
কথা গুলো বলে হু হু করে কাঁদা শুরু করলো,আমি তার কান্না দেখে তাকে থামতে বললাম।
তারপর জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে আপনি কাদছেন কেন?আর এইখানে কিভাবে আসলেন।
আমাকে বলেন আর আমি কাদবেন না চিন্তা ও করবেন না আমি আপনাকে বাসে তুলে দেব।
তারপর জিজ্ঞেস করলাম কিছু খেয়েছেন রাতে?এই কথা বলার পর আবার কান্না।
আমার তখন মেজাজ বিগড়ে গেল আমি ধমক দিয়ে তাকে বললাম চুপ একদম কাদবেন না।
কি হয়েছে সেটা বলেন আর আপনার এই কান্নার রহস্য কী আর এই খানে বা কিভাবে আসলেন বলেন।
তারপর মেয়েটি বললো আমার নাম মিথিলা,আমি চট্টগ্রামের মেয়ে এইবার ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
চলবে
১৬টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
পড়লাম হিমু কাহিনি —-
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম —-
হুমায়ুন আহমেদের এর লেখায় কত মানুষ যে প্রভাবিত হয়েছে , ভাবতে অবাক লাগে ।
নিশিথের নিশাচর
পরের পর্ব কাল দেবো ৩পর্বের গল্প।
আস্তে আস্তে দিতে হবে।
ধন্যবাদ ভ্রাতা ভালো থাকবেন।
ব্লগার সজীব
আকর্ষণীয় হিমু এখন আমাদের মাঝে , আগামী কালকেই পরের পর্ব চাই (y)
নিশিথের নিশাচর
ইনশাআল্লাহ ভ্রাতা আগামী কাল দেবো
ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।
আফ্রি আয়েশা
হিমু হয়ে উঠার গল্প ভালো লাগলো 🙂
নিশিথের নিশাচর
ধন্যবাদ তবে পুরা টা পড়ে মন্তব্য করলে আরো খুশী হতাম।
এখন ও ২ পর্ব আছে এইটা প্রথম ।
ছাইরাছ হেলাল
পড়লাম ‘হিমু’ কাহিনী , অপেক্ষা করতেই হচ্ছে ।
নিশিথের নিশাচর
অপেক্ষা করানোর জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ভ্রাতা।
ব্লগের নিয়ম অনুযায়ী একটির অধিক পোষ্ট করতে পারছি না
ছাইরাছ হেলাল
নিয়ম মেনেই অপেক্ষা করতে সমস্যা নেই ।
হিমু আমার পছন্দের চরিত্র ।
নীল প্রান্তর
এখন কোন মন্তব্য করবো না । বাকি ২ পর্ব পরার পর মন্তব্য করবো ।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম । -{@
নিশিথের নিশাচর
ওকে মামু
খসড়া
আমি একটি মন্তব্য করেছিলাম। সম্ভবত এই পোস্টের প্রথম মন্তব্য। কিন্তু মন্তব্যটি এখন না দেখে মন খারাপ লাগছে।
যাই হোক খুব ভাল লিখেছেন। এক নতুন হিমুকে আমরা পাচ্ছি। লেখা চলুক আপন ছন্দে।
নিশিথের নিশাচর
ধন্যবাদ ভ্রাতা এই পোষ্ট টা রিমুভ করে দিয়েছি।
ভালো থাকবেন।
আদিব আদ্নান
হিমুকে স্বাগতম ।
নিশিথের নিশাচর
ধন্যবাদ ভ্রাতা।
প্রিন্স মাহমুদ
(y) (y) (y)