নখ কাটা খুব কঠিন একটি কাজ
কিছু কিছু বিষয় আমি এখনো পারিনা । আমার যে বয়স তাতে এসব আর শেখারও সময় নেই। নখ কাটা এর মাঝে একটি। এটি যে আমার কাছে কত কঠিন একটি বিষয় , তা বুঝিয়ে বলতে পারাও কঠিন । এই মহা ঝামেলার কাজটি এখন আমার স্ত্রী বহন করছেন । তাঁকে ধন্য করেছি এই কাজটি দিয়ে ।
পূর্ব কথন
আমার বিদ্যালয় জীবনটা শুরু হয়েছিল গার্লস স্কুলে। দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত গার্লস স্কুলেই পড়েছি। একদম ছোট বেলায় আমার মা আমার নখ কেটে দিতেন। স্কুলে যাবার পরে এক মেয়েকে দেখি কুটুস কুটুস করে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে । এত ভালো লেগেছিল ওই মেয়ের নখ কাটা , ব্যাস অভ্যাসটা আমার মাঝেও চলে আসে। আঙ্গুলে নখ নেই , কিন্তু সব সময় মুখে আঙ্গুল দিয়ে রাখতে বেশ ভালোই লাগতো। দিনের পর দিন যায় , আমার মা তো অবাক , চেক করে দেখেন আমার হাত – না নখ নেই । অবশেষে ধরা পরলাম মা এর কাছে , স্কুলের বড় ম্যাডাম আমার মাকে বলে দিলেন , আর আমি খেলাম পিঠে কয়েকটা দুমদাম কিল 🙁 । এর আগের কাহিনী হচ্ছে ক্লাসের ম্যাডামরা অনেক নিষেধ করেও আমার এই অভ্যাসটা ফেরাতে পারেন নি। তারপরেও এই মজাদার অভ্যাস ছাড়তে পারিনি। ওই ছোট বয়সেই বুদ্ধি করে দাঁত দিয়ে সব নখ কাটতাম না , মা এর জন্য রেখে দিতাম । মা বুঝত , কিন্তু না বোঝার ভান করে বাকি নখ কেটে দিতেন।
প্রিয় অভ্যাস ত্যাগ
ক্লাস সেভেন পর্যন্ত এই দাঁত দিয়ে নখ কাটার অভ্যাসটা ছিল । ড্রিল স্যার এর রেগুলার বেতের পিটান খেয়ে এই অভ্যাসটি ছেড়ে দেই আমি । খুব কষ্ট হয়েছিল ছাড়তে । এরপর যথারিতি মা আমার নখ কেটে দিতেন। কলেজ লাইফ টা ছিল ছাত্রাবাস লাইফ । একদিন খুব সাহস করে ব্লেড দিয়ে নখ কাটতে গিয়ে হুলুস্থুল পরে যায় ছাত্রাবাসে। রক্তারক্তি কান্ড । তারপর নেইল কাটার দিয়ে চেষ্টা করেছি । কিন্তু কেমন সোজা ভাবে কাটি নখ । নখের কোনাগুলো কাটতে পারি না । এত কঠিন কেন নখ কাটা ? ছুটিতে বাড়ী এলে মা আঙ্গুল দেখতেন , হেসে সুন্দর ভাবে কেটে দিতেন । কাটার সময় বলতেন ‘ তুই বড় হবি কবে ? ‘। আমি কিছু বলতাম না , হাসতাম । মনে মনে বলতাম ‘ মা আমি যে বড় হতে চাইনা ‘ । এভাবেই কেটে যায় বছরের পর বছর। বিশ্ববিদ্যালয় লাইফেও একই অবস্থা । নিজে কাটতাম কোন মতে , এরপর ছুটিতে বাড়ী এলে মা কেটে দিতেন।
নখ কাটার দায়িত্ব হস্তান্তর/ গ্রহণ
৩০ বছর বয়সে বিয়ে করি। স্ত্রীকে বাসায় আনার দিনই আমার মা , নেইল কাটারটি আমার স্ত্রীর কাছে দিয়ে বললেন ‘ বৌমা এই নাও নেইল কাটার , ৩০ বছর ধরে আমি ওর নখ কেটে দিয়েছি , আজ থেকে এই দায়িত্ব তোমার ‘ । আমি অনেক লজ্জা পেয়েছিলাম ওইদিন 😛 । এরপর থেকে আমার স্ত্রী অত্যন্ত যত্ন ও নিষ্ঠার সাথে এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন ।
সবশেষে ,আমাকে যারা এই নেট জগতে চিনেন , জানেন , তাঁদের জ্ঞাতার্থে বলছি – আপনারা আমার নখ মাঝে মাঝে বড় দেখেছেন , দু একজনে বলেছেনও , কিন্তু আমি এর কারনটা কোনদিন বলিনি আপনাদের । আসলে আমি এই জিনিসটা পারিনা। নখ কাটা এত কঠিন কেন ? 🙁
৩৭টি মন্তব্য
আদিব আদ্নান
নখ কাটা কোন কঠিন কাজ নয় , তবে সবাইকে সবই পারতে হবে এমন কোন কথা নেই ।
পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি ।
জিসান শা ইকরাম
কিন্তু এই শেষ বয়সে এসেও এটা আমি পারিনা ।
বনলতা সেন
জিসান ভাই এটি আসলেই কি সত্যি ?
জিসান শা ইকরাম
জি সত্যি । এটা আমি পারি না।
বনলতা সেন
অবিশ্বাস্য , এটা কেন পারেন না ?
জিসান শা ইকরাম
পারি না , এটা জানি । চেষ্টা করেও সফল হতে পারিনি ।
জবরুল আলম সুমন
আপনার পুরোনো ঐতিহ্যবাহী অভ্যাস এখনো আমি ধরে রেখেছি… 😛 দাঁত দিয়ে নখ কাঁটার মতো আরামের ব্যপার পৃথিবীতে আর ক’টা আছে কে জানে! তবে এই অভ্যাসটা কিভাবে ছাড়বো তা ভেবে অস্থির… 🙁
জিসান শা ইকরাম
তাই নাকি ? ধরে রেখেছ তুমি !! কত মজার একটা কাজ , যে এটা না করেছে বুঝবে না ।
আমার ড্রিল টিচার পিটিয়ে অভ্যাস টা ছেড়ে দিতে বাধ্য করেছে ।
এখনো আফসোস করি 😛
জবরুল আলম সুমন
এই বদ অভ্যাসের কারণে বাবার হাতে অনেক মার খেয়েছি, আত্মীয় স্বজনের অনেকের কাছে তিরস্কৃত হয়েছি তারপরও অভ্যাস বলে কথা! তবে কারো সামনে এই আরাম চর্চা করিনা, যখন একা থাকি বা কোন কিছু নিয়ে গভীর ভাবে ভাবতে থাকি অথবা হালকা টেন্সিত হই তখন নিজের অজান্তেই নখগুলো দাতের কাছে নতি স্বীকার করে। শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গেরই নিজস্ব স্বাধীনতা আছে, কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যদি অন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কাছে মাথা নত করে নিজেকে বিলিয়ে দেয় তবে আমার কিই বা করার আছে বলুন?
জিসান শা ইকরাম
আসলে কিছু করার থাকে না । অভ্যাস সহজে ত্যাগ করা যায় না।
তবে এটি এক সময়ে পাল্টে যাবে ।
যদিও ভিতরে একটা টান থেকে যায় ।
লীলাবতী
চিমটি আমিও দাঁত দিয়ে হাতের নখ কাটি। কখন যে নখ কেটে ফেলি দাঁত দিয়ে সেটা খেয়ালই থাকেনা। তবে পায়ের নখ কাটতে নেইলকাটারের দ্বারস্হ হতে হয়
জিসান শা ইকরাম
হুম , বুঝলাম , আপনারও অর্ধেক আছে এই অভ্যাস ।
জবরুল আলম সুমন
দাঁত দিয়ে যত ইচ্ছে হাতের নখ কাটুন সমস্যা নেই কিন্তু ভুলেও পা’য়ের গুলো ট্রাই করবেনা… 😛
পেন্সিলে আঁকা পরী
মজা পেলাম।
জিসান শা ইকরাম
ধন্য হলাম ।
এমনি আরো কিছু অক্ষমতা আছে আমার।
লীলাবতী
যার নয়ে হয়না তার নব্বইয়েও হয়না।
জিসান শা ইকরাম
তাই ? তাহলে তো আপনারও হবে না , কারন আপনারও এমন অভ্যাস আছে কিছুটা ।
ছাইরাছ হেলাল
এত সমস্যার ভিড়ে অন্তত একটি সমস্যার স্থায়ী সমাধান তো পাওয়া গেল ।
জিসান শা ইকরাম
হুম , বউ কেটে দেয় , এটাই স্থায়ী সমাধান ।
আদিব আদ্নান
৩০ বছরে বিবাহ !
ওহ্ আপনি মৃত ………
মৃতদের এত ভাবনা ঠিক না – ঠিক না ।
নখের কিছু উপকারিতার কথাও শুনেছিলাম ।
জিসান শা ইকরাম
জি , ৩০ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলাম আমি। একটু কি বিলম্ব হয়েছিল !!
এখন হাফ সেঞ্চুরী পাড় করলাম 🙂 মৃতর কাছাকাছি তো বটেই।
নখের আবার উপকারিতা কি ? জানিনা তো !!
একজন আরমান
অনেক সাবলীলভাবে আপনার অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন। মামীকে অনেক কষ্ট করতে হয় আপনার এই ছোট একটা কাজ করে দেওয়ার জন্য।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য ।
তোমার মামি সানন্দে এটি করে থাকেন 🙂
এই মেঘ এই রোদ্দুর
আমিও কেটে দেই নখ আমার জামাইরে :ডি
জিসান শা ইকরাম
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ মেঘ আপা।
এই গ্রুপে আমি একা নই , খুব বড় শান্তনা পেলাম ।
শুভকামনা আপনাদের জন্য।
লজিক্যাল সুমধু
হা হা হা। পড়ে মজা পেলাম। নখ আমিও নেইলকাটার ছাড়া কাটতাম, তবে দাঁত দিয়ে নয়। নখ দিয়ে নখ কাটতাম। অবশ্য শেষ পর্যন্ত যেটা থাকত সেটা দাঁত দিয়েই কাটতাম। হাই স্কুলে উঠে খেয়াল করলাম, নখ শক্ত হয়ে গেছে! অগত্যা ব্লেড দিয়ে শুরু করলাম। কলেজে উঠার পর থেকে কাটার দিয়ে কাটি।
সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন, জিশান দা।
জিসান শা ইকরাম
নখ কাটার বিরাম্বনার শেষ নেই আমার 😛
শিশির কনা
সামান্য নখ কাটাকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করলেন জিসান ভাই। মজা পেলাম খুব।
জিসান শা ইকরাম
সত্যি ঘটনাকে এমন ভাবে লিখতে পারে সবাই 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
এটা কোন কথা ? এত সামান্য একটি কাজ না পারার কি আছে ? মজা পেলাম লেখা পড়ে।
শুন্য শুন্যালয়
:Amazed: ভাবিকে আমার সালাম জানাবেন। আমি হইলে পুরা আঙ্গুলই কেটে দিতাম 😛
কি তামসা, নখ কাটতে পারেনা কেউ ? হি হি।
থাক, কতো কিছুই তো না পারার আছে। সব পারতে হবে এমন কোন কথা নেই। 🙂
শিরোনামে ১ লেখা, ভাইজান, ১ এর কতো বছর পরে ২ হবে?
জিসান শা ইকরাম
পুরা আংগুল কাটার ভয়ানক চিন্তা মাথায় আসে কেমনে ?
ডাক্তাররা অবশ্য কল্লাও কেটে ফেলতে পারে 🙂
ছালাম পৌছালাম।
আসলে ভুলে গিয়েছিলাম এই পোষ্টের কথা।
লীলাবতী টেনে আনলো।
শুরু করবো আবার – ২ লেখা ।
ব্লগার সজীব
হা হা হা হা হা , ব্যাপক মজা পাইলাম। এই বয়সেও নক কাটতে পারেন না এটা আমি কি শুনিলাম। স্পিকার হইয়া গেলাম জিসান ভাই ।
জিসান শা ইকরাম
ব্যাপক লজ্জার ইমো হইবেক 😛
মেহেরী তাজ
আমার কাছেও কঠিন মনে হত ক্লাস সেভেন অব্দি। এখন ঠিক হয়ে গেছে।
মনির হোসেন মমি
গোপন কথাটা জেনে গেলাম আমিও ভাইজান। দাত দিয়ে নখ কাটার অভ্যাস প্রায় সবারই ছিলো ।আমার ছিলো এখন আমার ছেলে মেয়ে দুজনেরই আছে। মনে হয় এটা বংশগত।
সুরাইয়া পারভীন
হা হা হা হা হা
আমিও জেনে গেলাম এই কথাটা