কিছুকাল আগে এক রাতে এয়ারপোর্ট থেকে রিকশায় করে বাসায় ফিরছিলাম।বাসার কাছে রিকশা থেকে নামার সময় পাশের বাসার এক আংকেলের চিৎকার শুনতে পেলাম।
-“তোর কি আমার স্টাটাস সম্পর্কে জানা আছে?তুই কার মুখের উপর কথা বলছিস ধারণা আছে?ব্যাটা দুইটাকার দারোয়ান।তোর সাহস দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি।এতবড় বাড়ি আর এতকিছু কি তোর বাপের টাকায় করেছি?”
-“স্যার আমিতো ……”
-“চুপ আর একটাও কথা না।কালকেই সবকিছু নিয়ে বের হয়ে যাবি।”
এতটুকু শোনার পর আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম।বাসায় ফিরে আসলাম।আজকে সকালে ঘুম ভাঙ্গল ঐ আংকেলের ডাকে।সারমর্ম এইযে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।দারোয়ান যাওয়ার পর গত রাতেই চুরি হয়েছে।ঘটনার ব্যাখ্যায় বোঝা গেলো পুকুর চুরিই হয়েছে এবং তার ধারণা ওই দারোয়ানেরই কাজ এটা।এখন থানা পুলিশ করা ঠিক হবে কিনা এটাই জানতে এসেছেন। জানিয়ে রাখি, আঙ্কেল এয়ারপোর্টে কাস্টমসের বড় একজন অফিসার।আর আমরা প্রতিবেশীরা তার কাছে কমদামে বিদেশী জিনিস কেনার নিয়মিত কাস্টমার!!!!
তার কাছে কিছু প্রশ্ন করে এটাই জানলাম যে এই দারোয়ান পাঁচ বছর ধরে কাজ করছে।তার নামে পুর্বের কোন অভিযোগও পেশ করলেন না। বিশ্বস্তই ছিল নাকি !!! যে অভিযোগে বিতাড়িত হয়েছে তা হলো পানির ট্যাঙ্কের পাইপ কেটে ছোট করেছে(লম্বা পাইপ দিয়ে উপচে পড়া পানি অন্য বাড়ির জানালায় গিয়ে পড়ত!!!!) “বেতন দিয়েছেন?” এমন প্রশ্নের না সূচক জবাব আসল।আমি তাকে থানা পুলিশ করার আগে আরেকটু ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়ে বিদায় করে দিলাম।যাবার আগে আঙ্কেল আমাকে পরামর্শ দিয়ে গেলেন যেন কোন চাকর-বাকরকে মাথায় না তুলি।তার ভাষায় ওরা নাকি মানুষ না।দুধ কলা দিয়ে সাপ পোষা আর কি!!!!!
তার কাছে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছিল আপনিও মনুষ্য প্রজাতির কিনা?যে লোকটি আপনাকে এতটা বছর ধরে নিরাপত্তা দিয়ে আসল বিশ্বস্ততার সাথে,যার সামান্য বেতনেই প্রতিটা ঈদে ছেলেমেয়েদের মুখে হাসি ফোটে,সংসারে আহার জোটে,যার অভাবে আজ আপনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আজ তার সামান্য একটা ভুলের জন্য তাকেসহ সকল চাকর-বাকরদের অমানুষর কাতারে ফেলে দিলেন?বেতন না দিয়েই বিদায় করে দিলেন?আপনাকেও যদি সরকার বেতন না দিয়ে এমনভাবে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিত?আপনিওতো প্রতিদিন কতগুলো অন্যায় করেন।সরকারও বুঝি আপনাকে দুধ কলা দিয়ে পুষছে?(হার্ট দুর্বল তাই জিজ্ঞাসা করার সাহস পাইনি।)
ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেটিং এর প্রথম ক্লাসে ড.আফসার উদ্দিন স্যার আমাকে একটা প্রশ্ন করেছিলেন,“By born every man is a marketer.ব্যাখ্য কর।”
আমার ব্যাখ্যাটা এমন দিকে গড়ালো যার ইংরেজি ও বাংলা মিলে এমন হয়,“By born every man is a product and he is a marketer too. যে যত বেশি নিজেকে বিক্রয় করতে পারবে,সে ততবেশি উন্নতি করবে। So by born everyone is a marketer.”
সবাই বেশ হাসাহাসি করলেও স্যার সমর্থন দিলেন এবং বললেন,”Its strongly true that we are selling us everywhere.A teacher is selling his education, a pilot is selling his skill, a rickshaw puller is selling his strength etc. So By born every human being is a product and a marketer too.”
আজ সকালে আঙ্কেলের কথাগুলো শুনে খুব করে মনে হলো উপরের ইংরেজি বাক্যদুটো পরিবর্তন করা খুব দরকার হয়ে পড়েছে।আমার মনে হয়,“By born every man is a servant.”কারণ-
বাংলায় “চাকুরী” শব্দটা এসেছে “চাকর” শব্দ থেকে।অপরপক্ষে ইংরেজি “service” শব্দটিও এসেছে “servant” থেকে। সুতরাং আমরা সকলেই কারো না কারো চাকর।সে আপনি যত বড়ই চাকরি করেন না কেন।আর যদি ব্যবসায়ী হন তবে বলতে হবে, ” You are serving you customer. So you are a servant too. “
আর রাজা বাদশা হলে তো কথাই নেই।আপনি তো সমগ্র জনগণেরই…
সুতরাং আমরা প্রত্যকেই কারোনা কারো চাকর,তাই বড়াই করার কিছু নেই।আমার বা আপনার মত বাড়ির কাজের লোকটিও একজন মানুষ এমন সত্যটাকে দয়াকরে কেউ যেন না লুকাই। প্রত্যেকের ঘামেই তিলে তিলে গড়ে উঠবে একটা সুখি-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ।
২০টি মন্তব্য
রাতুল
এ আর নতুন কি !!! জন্ম থেকেই কারো না কারো চাকর মানুষ। 🙂
নীলকন্ঠ জয়
হুম ধন্যবাদ।
মা মাটি দেশ
So by born everyone is a marketer.”সুন্দর ধারা ভাষ্যে ভাল লাগল (y) -{@
নীলকন্ঠ জয়
ধন্যবাদ প্রিয় ভাইয়া। -{@
রিমি রুম্মান
আর আমরা প্রতিবেশীরা তার কাছে কমদামে বিদেশী জিনিস কেনার নিয়মিত কাস্টমার!!!!____লাইনটি মজার বটে, আবার অর্থবহও …
নীলকন্ঠ জয়
আপনি বুঝেছেন এবং পড়েই মন্তব্য করেছেন । এজন্য অনেক ধন্যবাদ। -{@
আদিব আদ্নান
দুবৃত্তের মানবতা বোধ এত সহজ নয় ।
নীলকন্ঠ জয়
হুম ঠিক তাই -{@
জিসান শা ইকরাম
কঠিন সত্য
নীলকন্ঠ জয়
হুম -{@
ছাইরাছ হেলাল
সবাই বেশ হাসাহাসি করলেও স্যার সমর্থন দিলেন এবং বললেন,”Its strongly true that we are selling us everywhere.A teacher is selling his education, a pilot is selling his skill, a rickshaw puller is selling his strength etc. So By born every human being is a product and a marketer too.”
আপনার স্যার হয়ত ঠিকই বলেছেন , তবে আমি কিন্তু বিতর্ক করতে পারি ।
যাক , সেটি কথা নয় ।
পারস্পরিক সম্মান ও দায়বদ্ধতা আমারা এড়িয়ে যেতে পারি না ।
সুপ্রিয় মানুষদের কাছাকাছি হলে ভালই লাগে তা যদি অনেকদিন পরেও হয় ।
নীলকন্ঠ জয়
পারস্পরিক সম্মান ও দায়বদ্ধতা আমারা এড়িয়ে যেতে পারি না ।
সুপ্রিয় মানুষদের কাছাকাছি হলে ভালই লাগে তা যদি অনেকদিন পরেও হয় ।
সহমত এবং ভালোবাসা -{@
শুন্য শুন্যালয়
হুম ঠিক তাই…তবু আমরা এটাকে গালি হিসেবেই দেখি যেনো, আই এম নট ইয়োর সারভেন্ট…
ভালো লিখেছেন… 🙂
নীলকন্ঠ জয়
সহমত। ধন্যবাদ শুন্য -{@
স্বপ্ন নীলা
কঠিণ কথা,,,,,,,,,,,,,,কঠিণভাবে সহমত,,,,,,,,,,,
নীলকন্ঠ জয়
অনেক অনেক ধন্যবাদ -{@
নীহারিকা
আজ যে রাজা, কাল সে ফকির। তাই বড়াই করার কিছু নাই। আমরা সবাই এক, এটা বিশ্বাস করতে হবে। তবে বার বার ভুলে যাই আমরা আমাদের সত্যিকারের অবস্থান।
নীলকন্ঠ জয়
ঠিক বলেছেন। অনেক ধন্যবাদ -{@
যাযাবর
বড়াই করার আসলেই কিছু নেই । (y)
নীলকন্ঠ জয়
ধন্যবাদ -{@