এক অদ্ভূত সঙ্কেত পেলো ঋক নিরবচ্ছিন্ন নীরবতার মধ্যে। একটি চিঠি লেখার কথা ছিলো। সে ভুলে গেছে কবে, কখন বলেছিলো, “হুম লিখবো। ভেবোনা আমাকে নিয়ে।” কিন্তু আজও লেখা হয়ে ওঠেনি। কি যে হয়েছে আজকাল তার, বয়স কি মস্তিষ্কের নিউরণকে গিলে খায়? ক্যালেন্ডারের পাতার মধ্য দিয়ে জীবনকে চলতে দেয়নি বলেই কি আজ ব্যঙ্গ করছে ক্যালেন্ডারের ওই তারিখগুলো? কতো বছর জানি হলো ফুলের সাথে ঋকের আর কোনো কথা হয়না? বছর? ধ্যৎ বছর কোথায় এই তো মাত্র কিছুদিন। নাহ এভাবে জীবনকে চলতে দেয়া যায়না। কিছুদিন আগে পর্যন্তও ফুল ফোনের পর ফোন, ম্যাসেজের পর ম্যাসেজ দিতো, এখন ঋকের অবহেলায় বেশ কতোদিন থেকেই ফোনের ওপাশ নিশ্চুপ। আসলে ভালোবাসা রেললাইনের মতো সমান্তরাল নয়, কথাটির সাথে অনেকেরই পরিচয় নেই। —‘ধ্যৎ কি সব বলছি? নাহ একটা ফোন দিয়ে দেখি তো!’ ওপাশ থেকে সেই কিন্নরি কন্ঠে উচ্চারণ, ‘হুম বলো!’ কেমন জানি নির্বিকার কন্ঠস্বর ফুলের।
—আমার উপর রাগ?
—কই, না তো! অভ্যেস হয়ে গেছে, এসবে এখন আর তেমন কিছু আসে-যায়না আমার ঋক।
—বুঝেছি অভিমান!
—সত্যি বলছি বিশ্বাস করো আমার এখন তোমার উপর রাগ কিংবা অভিমান কিছুই আসেনা। হুম একটা মায়া কাজ করে, আর কিছু না।
—আর আমার প্রতি আদর?
—(ব্যঙ্গ হাসি দিয়ে) সত্যিটা নিতে পারবে ঋক? পারবেনা শুনতে, থাক তাহলে ওই প্রসঙ্গ। বলো কেমন আছো?
—(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে) ভালো আছি, খুব ভালো আছি। আমায় তুমি আর ভালোবাসো না, না?
—ঋক থাকনা ও প্রসঙ্গ!
—ঠিক আছে ভালো থেকো ফুল। আজ রাখি। বাই!
ফুল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার বইয়ের দিকে মনোযোগ দিলো। একজন নতুন লেখকের লেখা, যদিও কাহিনী পছন্দ হয়নি। তবুও পড়ছে “সম্পর্ক” নামের গল্পটি। ছাপার অক্ষরে লেখা কথাগুলো কি সুন্দরভাবে ঠিক এই সময়ের সাথেই মিলে গেলো। সম্পর্কের গোড়া পাকাপোক্ত করতে অনেক যোগাযোগ লাগেনা, চাই যত্ন। কথা হোক, না হোক, দেখা হোক কিংবা না হোক, ওই দূরত্বের মধ্যে যত্ন চাই। মানুষের কোমল আবেগের সাথে গাছের অনেক মিল। গাছকে শুধু জল আর সার দিলেই কি বাঁচে? ওকে আদর করতে হয় অনেক মমতা মাখানো যত্ন দিয়ে। আর ভালোবাসার সম্পর্ককেও ওভাবেই যত্নে রাখতে হয়। নাহ আসলেই ঋকের উপর আর কোনো অভিমানই নেই ফুলের। গভীর প্রেম মায়ায় গিয়ে একেবারে ফুরিয়ে যায়। বইটা হাতে নিয়ে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ফুল, আর প্রিয় কবিতার লাইনটা ছুঁড়ে দিলো আকাশের দিকে,
তোমাকে ভালোবেসে বুঝে গেছি বিষের স্বাদ কেমন!
একেকটি জিপসি রাতে শূণ্য আলিঙ্গনের স্পর্শ পেয়ে জেনে গেছি
তোমাকে না-পাওয়ার কারণটা কি!
হ্যামিল্টন, কানাডা
১৮ মে, ২০১৭ ইং।
২২টি মন্তব্য
নীহারিকা
“হুম বলো” শুনলেই তো মেজাজ খারাপ হয়ে যায় 🙂 কেন বাবা এত নির্বিকার থাকা? কেন এত অভিমান? একটু মলেমিশে থাকলে কি হয়?
নীলাঞ্জনা নীলা
নীহারিকা আপু আমারও না রাগ হয় এই “হুম” শব্দটা শুনলে। ঠিকই বলেছেন আপু, দুইদিনের দুনিয়া একটু মিলেমিশে থাকলে কি হয়?
সুন্দর মন্তব্য পেলে লিখতে ইচ্ছে করে বেশি বেশি। -{@
নীহারিকা
আমি আবার গুছিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি না। সমস্যা এটা। 🙁
নীলাঞ্জনা নীলা
লেখালেখিতে মনের ভাব প্রকাশ করা সহজ। কিন্তু মুখোমুখি বড়ো কঠিন। আমি তো আমার পুরাতন প্রেমিককে গুছিয়ে কথা বলতেই পারতাম না। :p 😀
নাজমুস সাকিব রহমান
সুন্দর। লেখা আরও বড় করেন। ছোট হয়ে গেল। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
চেষ্টায় থাকবে পরে যদি গল্প লিখি বড় রাখবো।
ধন্যবাদ প্রেরণাদায়ক মন্তব্যের জন্যে। 🙂
ইঞ্জা
তোমাকে ভালোবেসে বুঝে গেছি বিষের স্বাদ কেমন
এক একটি জিপসি রাতে শুণ্য আলিঙ্গনের স্পর্শ
পেয়ে জেনে গেছি তোমাকে না পাওয়ার কারণটা কি।
শেষের কয়েক লাইন বলে গেল অনেক অভিমান কবির বুকে।
Just অনবদ্য।
নীলাঞ্জনা নীলা
কি জানি অভিমান কাকে বলে? কতো প্রকার ও কি কি? অভিমানের সংজ্ঞাসহ উদাহরণ সংক্রান্ত প্রশ্ন পরীক্ষার খাতায় কখনও লিখিনি। 😀
হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করা শিখিয়ে দিন আমাকে। 🙂
ইঞ্জা
এই এই এই, এ যে মামার কাছে নানার বাড়ীর গল্পের মতো আবদার, আপু, আমি শিখি আপনার কাছ থেকে, আমি শিখাবো কি করে আপনাকে, লজ্জায় পড়ে গেলাম।
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া আমার কাছ থেকে শিখেন? তাইতো বলি আমার মন্তব্য বাক্স এতো ফাঁকা কেন? :p
ছাইরাছ হেলাল
রেল লাইন বহে সমান্তরাল,
তবুও আমার এই রেল- লাইনের আশে পাশেই চলি,
সব আশংকা মাথায় নিয়েই।
পাওয়ার হিসাব না-পাওয়ায় মিলিয়ে যায়।
নীলাঞ্জনা নীলা
মন্তব্য এভাবে পেলে লিখতে কষ্ট হয়না। তখন লেখার প্রতি আরও যত্নশীল হয়ে পড়ি।
উৎসাহ সবাই দিতে পারেনা, কেউ কেউ পারে।
কুবিরাজ ভাই ধন্যবাদ দিলাম না, কৃতজ্ঞতা। 🙂
আবার দেইখেন ফুইল্যা যাইয়েন না যেনো! 😀
শুন্য শুন্যালয়
সম্পর্কের জন্য যোগাযোগ লাগে আপু, সময় লাগে। সময় ছাড়া যত্ন হয়না, কিংবা যত্ন বোঝা যায়না।
ছোট ছোট গল্পও কতো সুন্দর করে গুছিয়ে লেখো তুমি।
বিষের স্বাদ আর কারণটা বলে গেলে না?
নীলাঞ্জনা নীলা
শুন্য আপু “সময় গেলে সাধন হয়না!” গানটা আমার বেশ লাগে। আমরা পাশের মানুষটিকে ভাবি সে তো আছেই। কিন্তু অবহেলা পেয়ে পাশে থেকেও অনেক দূরে সরে গেছে সেটা আমরা খেয়ালই করিনা। আসলে গল্প নয় এটি, বাস্তব ঘটনা। আশেপাশেই এমন কতো কি ঘটে যাচ্ছে, সব কি আর দেখা যায়? বলো?
তুমি না খুব দুষ্টু। আমি কিভাবে জানবো বিষের স্বাদ কেমন? মনে হয় বিস্বাদ হবে। আর কারণ, মনে হয় ঋকের ক্রনিক ডায়রিয়া। :p
আমি ফুল হলে তো ফিরিয়ে দিতাম না। বলতাম আসো, বসো এই নাও স্যালাইন খাও। 😀
জিসান শা ইকরাম
লেখার মাঝে কিছুটা বিষাদ,
সম্পর্ক নিয়ে অত্যন্ত সত্যি কথা লেখায় এসেছে” সম্পর্কের গোড়া পাকাপোক্ত করতে অনেক যোগাযোগ লাগেনা, চাই যত্ন। কথা হোক, না হোক, দেখা হোক কিংবা না হোক, ওই দূরত্বের মধ্যে যত্ন চাই। মানুষের কোমল আবেগের সাথে গাছের অনেক মিল। গাছকে শুধু জল আর সার দিলেই কি বাঁচে? ওকে আদর করতে হয় অনেক মমতা মাখানো যত্ন দিয়ে। আর ভালোবাসার সম্পর্ককেও ওভাবেই যত্নে রাখতে হয়।”
অত্যন্ত ভাল লেগেছে লেখা।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা মন্তব্য তুমি ফাটাফাটি লিখেছো। আমার মন ভরিয়ে দিয়েছো।
এই যে নানা-নাত্নীর সম্পর্ক, আমাদের কি রোজ কথা হয়? গল্প হয়? কিন্তু আমি জানি তোমার স্নেহ আমার প্রতি আছে। আবার তুমিও জানো আমার মেজাজ শুধু তোমাকেই আমি দেখাই। :p
ভালো থেকো একমাত্র নানা। -{@
রায়হান সেলিম
‘সম্পর্ক’র সংজ্ঞা সহজ নান্দনিকতার সাথে তুলে ধরেছো। ভালবাসায়, অভিমানে, অধিকারের স্বচ্ছ এবং স্পষ্ট দৃশ্য।
নীলাঞ্জনা নীলা
স্যার আপনার থেকে যখন একটা শব্দও পাই, আমার লেখার জন্য বিশাল পাওয়া হয়ে যায়।
আমি কৃতজ্ঞ আজীবন।
মিষ্টি জিন
আমি কথা গুলো বলতাম তা শূন্য আর জিসান ভাই বলেছে। ঠিক দিদি গাছে শুধু পানি দিলে হয় না। আদর করতে হয় আমি তার প্রমান পেয়েছি। ঢাকাত আমার বেলী গাছটা একদম মরে গিয়েছিল , দুইমাস আদর যত্ন করে ওটাকে বাচিয়ে তুলেছিলাম। সেদিন কাজের মেয়েটা বললো খালাম্মা গাছটা কোন রকম বেচে আছে। সম্পর্ক গুলোও এমন যত্ন আদর না করলে সম্পর্কের উপর ধুলো জমাতে জমাতে এক সময় তা মলিন হয়ে যায়।
বেশ ভাল লিখেছো , গল্পটা পডে শুধু ভাবছি।
নীলাঞ্জনা নীলা
মিষ্টি আপু আমি এক্সিডেন্টের পর ৪০ দিন হাসপাতালে ছিলাম। ফিরে এসে দেখি বেলী, হাস্নাহেনা, গন্ধরাজ আরও এ দেশীয় কয়েকটি গাছ একেবারেই শেষ। যে কয়টা বেঁচেছিলো, সব ধুঁকে ধুঁকে। আমি রোজ কাজ থেকে ফিরে ওদের সাথে কথা বলতাম। কথা না বললেও হাত বুলিয়ে দিতাম। এটা আমার রুটিন ছিলো।
যাক! এই যে দেখো তোমার সাথে আমার দেখা হয়নি, কিন্তু কখনও কি অপরিচিত মনে হয়? একটা টান কাজ করে না? ওই টানটার নামই সম্পর্ক। অনেক ভালো থেকো আপু। -{@
মৌনতা রিতু
এটাও আমার জন্য লিখেছো! কেন লেখ এমন করে! তোমার একান্ত এইসব অনুভূতিগুলো আমাকে বড় টানে। অবহেলায় সবকিছু ভুলে যেতে ইচ্ছে করে। তবুও কচ্ছপের মতো মুখটা বের করে আবারও এক শক্ত খোলসে ঢুকে যাই। এই খোলসটা একদিনে শক্ত হয়নি। দিনে দিনে হয়েছে বড় শক্ত। এখন সবকিছু নিরব ঠান্ডা একেবারে। সমুদ্রের তলদেশে থাকতে থাকতে তাতে দেখ শ্যাওলাও জমেছে।
ভালবাসা নিও আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
তুমি কি চমৎকার মন্তব্য করেছো, খেয়াল করে দেখো! আস্ত গল্প তো এখানে মন্তব্যের এই নয়টি লাইনের ভেতরেই। সত্যি তুমি দিন কে দিন পরিণত হয়ে উঠছো।
আরোও অনেক সমৃদ্ধ হোক তোমার লেখা শান্তসুন্দরী। -{@