আমি জীবনে প্রথম প্রেমে পড়ি যখন , তখন প্রেম শব্দটার গভীরতা বুঝতাম না। কোন ক্লাশে পড়ি ঠিক মনে নেই, তবে এটা মনে আছে তখনো প্রাইমারির গন্ডি পেরোইনি। বিটিভিতে আফজাল, সুবর্না আর মেঘনার একটা ট্রায়াঙ্গল লাভস্টোরি মুলক নাটক দেখে আমার আফজালকে খুব ভালো লাগতে শুরু করে। আফজাল সুবর্নার মধ্যে ভাব থাকা সত্ত্বেও আফজালের মেঘনাকে বিয়ে করাটা আমার অতটুকুন বয়সে প্রচন্ড প্রভাব ফেলে। আমি কেঁদেকেটে জ্বর বাঁধিয়ে ফেলেছিলাম।
এরপর প্রাইমারি পেরিয়ে যখন হাই স্কুলে পড়ি তখন মহেশ ভাটের “সড়ক” ছবি দেখে বড়বড় চোখ আর ঘার অব্দি ঝুলানো চুলের সঞ্জয় দত্তের প্রেমে পড়ে যাই। সঞ্জয় যখন পুঁজাভাটকে নিয়ে গান গায়, “তুমহে আপনা বানানেকি কসম খায়ি হ্যা” তখন আমার বুকের ভেতরে একশ মাইল বেগে কষ্টের টর্নেডো বইতে থাকে! পুঁজাভাটকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করে । সঞ্জয়ের পাশে কোন মেয়েকেই সহ্য হোত না ।
আহা আমার বোকা বোকা কৈশর । আজ এত বছর পরে এসে হঠাৎ করেই টিভির চ্যানেল চেন্জ করতে করতে ক্যাটরিনা কাইফের চিকনি চামেলিতে এসে চোখ আটকে গেল । একি আমার কৈশরের ঘুম হারাম করে দেয়া, বুক তোলপাড় করা প্রেমিকের একী অবস্হা!!! কোথায় গেল সঞ্জয়ের ঘার অব্দি ঝোলানো চুল ! চুল বিহীন সঞ্জয়কে দেখে মনে হচ্ছে কোন এক কালের সবুজ বনভূমি আজ রুক্ষ মরুভুমিতে পরিণত হয়েছে । আমি অবাক হয়ে ভাবছি এর প্রেমেই কী আমি পরেছিলেম কোন এক কৈশরে ।
কৈশর পেরিয়ে আমি উঠতি তরুনি । তখন টিভি সিনেমার থেকে গল্পের বইয়ের ঝোঁক বেশী । স্কুলের লাইব্রেরিতে বসে গোগ্রাসে শরৎ , রবীন্দ্রনাথ গিলছি । শরৎ এর সৃষ্টি করা নায়কদের প্রেমে পরে গেলাম। শেষের কবিতার অমিতের প্রেমে পরলাম । শেষের কবিতার অমিতের ঘোর যেন আমার কাটেনা। নিজেকে লাবণ্য ভাবতে থাকি, আর মনে মনে আওরাতে থাকি,
‘ফর গড সেক, হোল্ড ইওর টাং এন্ড লেট মি লাভ ।’
আমি সদ্য যুবতি, হাতে পেলাম শীর্ষেন্দুর দুরবীন। আমি ধ্রুব গ্রস্হ হলাম । প্রেমিক মানেই ধ্রুব। ধ্রুবর অহংকার, খামখেয়ালিপনা, রেমির প্রতি উদাসীনতা, আবার হুট করে রেমিকে কাছে টেনে নেয়া এসব আমাকে ভয়ংকর ভাবে ধ্রুবকে ভালবাসতে বাধ্য করল।।।
২৭টি মন্তব্য
লজিক্যাল সুমধু
হা হা হা।
তারপর?
জানিয়ে রাখি, আমারো একটা পিচ্ছি প্রেমিকা আছে, ক্লাস ফোরে পড়ার সময়ে আমাকে বলেছিল, আই লাভ ইউ। এখন আপনার কাহিনী পড়ে শান্তি পেলাম, ব্যাপারটা এত সিরিয়াস কিছু নয় দেখছি! শীঘ্রই আমি বাতিল হয়ে যাব,ধ্রুব বা অমিতের প্রেমে পড়বে সে!
লীলাবতী
তারআর পর নেই ।এখন তো বড় হয়ে গিয়েছি , ফিক্সড , থিথু হয়ে আছি 🙂 জি ভাইয়া সিরিয়াস কিছু নয়। এমনটা হয় সবার ক্ষেত্রেই।
ছাইরাছ হেলাল
ভালোবাসার পাঠ বেশ গোড়াতেই নিয়ে ফেলছেন দেখছি ।
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকতেই হচ্ছে ।
লীলাবতী
জি ভাইয়া 🙂 শুধু আমি নয় , আমার আমুরও এমন প্রেম ছিল। এমন সবারই থাকে মনে হয়। পরের পর্ব ? কি জানি লিখতে পারি কিনা !!
জবরুল আলম সুমন
এরকম ভালোলাগা কিংবা ভালোবাসা আপনার মতো আমাকেও ছুয়ে গেছে বার বার… মনে পড়ে গেলো সেই ছোট্ট বেলার কত কথা, কত পাগলামী, আহা! সব অকপটে স্বীকার করেছিও আমার সেই সব ভালোলাগা কিংবা ভালোবাসা। যাহোক, আপনার সাবলীল বর্ণনা লেখাটাকে ঈর্ষণীয় করে তুললো…
এই ব্লগেই আমার একটা লেখা আছে, আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি… সময় পেলে চোখ বুলাবেন। শুভ সন্ধ্যা।
http://www.jeshan4u.com/archives/387
লীলাবতী
এমন ভালবাসা সবারই থাকে ভাইয়া 🙂 ধন্যবাদ আপনাকে । অবশ্যই পড়বো আপনার লেখা ।
জিসান শা ইকরাম
ভাগ্য ভালো ওই সময়ে পুজা ভাট আপনার সামনে পরেনি ।
আমরা আসলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কল্পনার নায়ক/নায়িকাদের প্রেমে পরি।
খুব সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছেন আপনার প্রেম গুলো।
শুভকামনা।
লীলাবতী
পুজা ভাটের ভাগ্য আসলেই ভালো 😛 , ঠিক বলেছেন ভাইয়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কল্পনার নায়ক/নায়িকাদের প্রেমে পরি। কেউ প্রকাশ করি , কেউ করি না।
প্রজন্ম ৭১
আপনার প্রেম গুলো বেশ সুন্দর আর মিস্টি।
লীলাবতী
জি ভাইয়া 😛
আদিব আদ্নান
প্রেম বা ভালোবাসা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা নেই ।
যাক , আপনি স্পষ্ট করে বলেছেন দেখে ভাল লাগল ।
লীলাবতী
ধন্যবাদ আদিব মন্তব্যের জন্যে।
শুভসকাল
প্রজন্ম ৭১
লীলাবতী আপু এখন কি মন্তব্যের জবাব দিতে পারছেন ঠিক ভাবে ?
লীলাবতী
পিসি তে বসলে পারি তবে মাসি থেকে পারিনা জবাব দিতে। মাসির থেকে দেখি পিসি আপন
শিশির কনা
আফজাল , সঞ্জয় , অমিত , ধ্রুব মাত্র চার জন এর প্রেমে পরেছিলেন ? তাহলে তো আপনি অনেক স্থির । আমি যে কতো পরেছি , তার হিসেব নেই । আপনার উপস্থাপনা সুন্দর আপু।
লীলাবতী
শিশির বেছে বেছে চারটার নাম লিখছি। যত প্রেমে পরছি সবার কথা লিখতে গেলে একটা মহাকাব্য হয়ে যাবে। আপনার অভিজ্ঞতা শুন্তে ইচ্ছে কর্তছে।
নীলাঞ্জনা নীলা
ওরে প্রেম !! 🙂 তবে স্বাভাবিক এটা। লেখার স্টাইল টা সুন্দর।
লীলাবতী
থ্যাংকস নীলাঞ্জনা। আপনার প্রোপিটা মাশাল্লাহ সেইরকম সুন্দর।
নীতেশ বড়ুয়া
“চুল বিহীন সঞ্জয়কে দেখে মনে হচ্ছে কোন এক কালের সবুজ বনভূমি আজ রুক্ষ মরুভুমিতে পরিণত হয়েছে ।” এই লাইন পড়ার পর আমি আমার শৈশব-কৈশোর আর ভুড় বয়সে সব প্রেম ভালবাসার আবেগ ভুলে গিয়ে ‘হাহাপগে’ :D)
লীলাবতী
আপনার এমন রুক্ষ মরুভূমি নেই আশা করি :p
নীতেশ বড়ুয়া
নেই তবে সবুজ বনায়নের শেষে মরুভূমির ধূসর রনগ নজরে এসেছে :p
লীলাবতী
উক্কে,উহা বুদ্ধিমান লোকদের নিদর্শন :p
নীতেশ বড়ুয়া
অনেক সময় আবার বুদ্ধিলোপেরও :p
লীলাবতী
:D) :D)
শুন্য শুন্যালয়
লীলাবতী, নাআআআআআআআআআআআআআআ তুমি কিছুতেই ধ্রুবর প্রেমে পড়তে পারোনা, সে আমার। ছিলো, আছে।
আর সঞ্জয়? হা হা । নাহ্ এইবার আমাকে লিখতেই হবে আমার হাত-পা ভাঙ্গার কাহিনীগুলো, তাতে দুন্নাম হয় হোক। 🙂
আমার তো এখন সঞ্জয় কে দেখলেই তোমার কথা মনে পড়বে 😀
লীলাবতী
লিখুন লিখুন।প্রেম প্রকাশে ভয় কি? দুনিয়া জানুক আমাদের প্রেমের খবর :p হায় সঞ্জয় 😀
সুরাইয়া পারভীন
হা হা হা হা হা
দারুণ মজার তো