নীল জামা পরা মেয়েটা নিউমার্কেটে রাস্তা পার হচ্ছে, আইল্যন্ডে উঠতে উঠতে প্রায় পরে যাচ্ছিল। পাশেই দাড়িয়েছিলাম, বললাম, ‘পর পর পর’।
মেয়েটা নিজেকে সামলে নিলো, আমি আর মামুন দাঁড়িয়ে আছি। মেয়েটা রাগে পেছন ফিরে ঘুরে বললো, ‘ তুই পর, তোর বাপ পর’
বলেই রাস্তা পার হয়ে হনহন করে চলে গেল। এতো সুন্দর চোখের একটা মেয়ের মুখে এমন ঝারি শুনে আমি ভ্যবাচ্যকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
কল্যানপুর বাস স্ট্যান্ডে চায়ের দোকানে বসে চা- বিড়ি খাচ্ছি আমি, মামুন আর আসলাম। দূর থেকে একটা মেয়ে এইদিকে হেটে আসছে। কাছাকাছি আসার পর বুঝলাম সেই নিউমার্কেটের মেয়েটাই। আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলাম, আমার হাত- পা থরথর করে কাপছে, মেয়েটা মনে হয় আমাকে থাপ্পর মারতে আসছে।
– আপনি মেয়েদেরকে টিজ করেন কেন?
– ভুল হয়ে গেছে, আর জীবনেও করবো না।
– সেদিন খুব রাগ হয়েছিলো। এমনিতেই কি গরম তার উপরে আপনি আমার পরে যাবার জন্যে দোয়া করছিলেন। আপনাকে থাপ্পর মারতে ইচ্ছে হইছিলো। আপনি কাপছেন কেন?
– জ্বী, ভুল হয়ে গেছে। আর কাপবো না।
– হি হি হি। আমার নাম রিয়া, কল্যানপুরেই থাকি। সেদিন বকা দিয়েছি বলে সরি। আপনার নাম?
– আমি আসাদ, আমিও কল্যানপুরে থাকি।
– আর কোন মেয়েকে টিজ করবেন না, আসি। ভালো থাকবেন। রিয়া চলে যাচ্ছে, আমি ঘেমে নেয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
রিয়া আর আমি বাবুবাজারের দিকে হাঁটছি, নান্নার বিরিয়ানী খাবো, রিয়া খাওয়াবে।
– রিয়া একটা কথা বলতে চাই।
– একদম কথা বলবা না, আধাঘন্টা লেট করে আসছো। কথা বললে থাপ্পর খাবা।
এই মেয়ে কথার আগের পরে থাপ্পর মারতে চায়। ব্যাপারটা একদম ঠিক না, আমি চুপ করে রইলাম।
– কি বলবা বল?
– থাপ্পর দিবা না তো?
– এই আমি কি সত্যি সত্যি থাপ্পর মারতে চাইছি নাকি? বলো কি বলবা?
– আমি তোমাকে ভালোবাসি।
রিয়া আর আমি গত দেড় বছর যাবত হাত ধরে পাশাপাশি হেঁটেছি। প্রতি বিকেলে একসাথে মিরপুর স্টেডিয়াম প্রাঙ্গনে রাস্তার বাচ্চাদেরকে পড়িয়েছি, শীতের দিন বাড়ি বাড়ি ঘুরে শীতার্ত মানুষের জন্য কাপড় সংগ্রহ করেছি, রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা খেয়েছি, সন্ধ্যায় হাত ধরে একসাথে বাড়ি ফিরেছি, অজস্র দিন থাপ্পর খাবার হুমকি পেয়েছি। রিয়ার কাছ থেকে রাস্তার গরিব মানুশ গুলিকে ভালোবাসতে শিখেছি। এই মেয়ে আমার নিশ্বাসের সাথে মিশে গেছে।
মাস খানেক যাবত রিয়ার ব্যবহারে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগের মতো হাসে না, রাস্তার বাচ্চাগুলোকে পড়াতে আসে না, ফোন করে পাওয়া যায় না এমনকি ভুল করলে হুটহাট থাপ্পর মারবে বলেও শাসায় না। জিজ্ঞেস করলেও বলতে চায় না, ভাবলাম মন ভালো হলে বলবে।
সেদিন বিকেলে শাহীন ফোন করে বললো রিয়ারা সপরিবারে ইংল্যান্ড চলে গেছে। গত সাতদিন রিয়াকে ফোনে পাইনি, বাসা চিনতাম না বলে যোগাযোগও করতে পারিনি। আমার মাথায় আকাশ ভেংগে পড়লো। রাস্তায় রাস্তায় পাগলের মতো হাটছি, বুকটা চিনচিন করছে। আশ্চর্য একটা ব্যাথা…
রিয়ার দেখানো পথেই আছি, মানুষের সাথেই আছি। প্রায় ৮ মাস রিয়াকে দেখিনা, একটু কথা বলতে পারি না।
রিয়া নিউমার্কেটে রাস্তা পার হচ্ছে, আইল্যন্ডে উঠতে উঠতে প্রায় পরে যাচ্ছিল, রাস্তা পার হয়ে ভিরের মধ্যে হাড়িয়ে গেল।
আমি স্পস্ট বুঝতে পারছি আমি স্বপ্ন দেখছি, আমার ঘুম ভেঙ্গে জাগতে ইচ্ছে করছে না, আমি পেছন থেকে চিৎকার করে বললাম, “ রিয়া আমি ভালো আছি, বেঁচে আছি। তুমিও ভালো থেকো, বেঁচে থেকো..
১৩টি মন্তব্য
আফ্রি আয়েশা
রোমান্টিক মন খারাপ করা গল্প …
বনলতা সেন
ছোট গল্পটি মোটামুটি হয়েছে ।
নিয়মিত লিখতে হবে ।
জিসান শা ইকরাম
এমন স্বপ্ন না ভাংগাই ভালো ।
সুন্দর , ছোট গল্পে অনেক ভালো লাগা ।
মা মাটি দেশ
বেশ মজা পেলাম থাপ্পরের ।
নীহারিকা
থাপ্পরের ব্যাপারটা শিখে নিলাম, কাজে লাগাতে হবে 🙂 সুন্দর লিখেছেন।
লীলাবতী
সুন্দর , কোমল
যাযাবর
স্বপ্ন না লিখলেই ভালো হতো ভাই । অনেক লাইক জানালাম।
খসড়া
আপনি ভাল থাকুন সবসময়, এই কামনা করি।
ফরহাদ ফিদা হুসেইন
ধন্যবাদ আফরী 🙂
ফরহাদ ফিদা হুসেইন
বনলতা আপুকে এক কোটি ধন্যবাদ, পাশে থাকবেন 🙂
স্বপ্ন নীলা
ভাল লাগলো
শুন্য শুন্যালয়
মন খারাপ করিয়ে দেয়া সুন্দর লেখা…
বেলাল হোসাইন রনি
ছোট গল্প, পড়ে অনেক মজা পেলাম, আসলেই এরকম স্বপ্ন মানুষ রোজ দেখে, কিন্তু কবে সফল হবে এই প্রশ্ন: থেকে যায়।