
ঘুম থেকে জেগেই কিছুটা বোহেমিয়ান টাইপ প্রবালের মধ্যে একটা তাড়া লক্ষ্য করা গেলো। সকাল দশটার মধ্যে পৌছাতে হবে গুলশান দুই তে। ঢাকার রাস্তার যা অবস্থা তাতে সময় মত পৌছানোই একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে। তারপরেও দ্রুতই ফ্রেস হয়ে শার্ট প্যান্ট পরিধান করলো। হাত ঘড়িটা খুঁজে পাচ্ছে না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখলো একবার। ফুলহাতা শার্ট এর হাতা কিছুটা ভাজ করে কনুই এর কাছে। না ঘড়িটা হাতে না থাকলে মানাচ্ছে না, রুপালী ঘড়িটা বাম হাতে দিলে মানাবে। কোথায় যে রেখেছে ঘড়িটা! সময় মত যদি পাওয়া যায় সব কিছু! ড্রয়ার, ল্যাপটপের পাশ, বালিশের পাশ সব স্থানে খোঁজা শেষ, নেই নেই কোথাও নেই। অবশেষে ডান হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো হাতের মুঠোর মধ্যেই ঘড়িটা রেখে সারা ঘর খুঁজে বেড়াচ্ছে। ও যে এত্তবড় ভোলানাথ তা শান্তাকে বলা যাবে না মোটেও।
ধানমন্ডি পনের নাম্বার থেকে গুলশান-২, অনেক পথ। উবার নিয়ে পৌছাতে পৌছাতে এগারোটার বেশী বেজে গেলো। একঘণ্টা বিলম্ব প্রথম দিনেই। সময় জ্ঞান নিয়ে শান্তা কথা না বললে হয় আবার। ধানসিঁড়ি রেস্তোরাঁয় বসার কথা শান্তার, দ্রুতই রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করে। কোনার টেবিলে শান্তাকে দেখে চিনতে মোটেই বেগ পেতে হয়নি। শান্তার চোখের সামনে দিয়ে টেবিলের চেয়ার টেনে বসলো প্রবাল। শান্তার চোখ রেস্তোরাঁর টিভির স্ক্রিনে। কি দেখছে শান্তা এত মনযোগ দিয়ে যে, ওর উপস্থিতি বুঝতে পারলো না!
টিভির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রবাল, কোথাও আগুন লেগেছে, হাজার হাজার উৎসুক জনতা, উদ্ধার কর্মীদের তৎপরতা এসব দেখাচ্ছে টিভিতে লাইভ। বনানী এফআর টাওয়ারে আগুন লেগেছে।
‘ হাই, আমি প্রবাল।’ কথা শুনেই ঘোড় লাগা দৃষ্টিতে প্রবালের দিকে তাকালো শান্তা। বুকে কেমন ধুকধুক শব্দ টের পাচ্ছে নিজে। প্রবাল…… এত সুন্দর হয় কোনো পুরুষ! মুহুর্তের মধ্যে নিজেকে প্রবালের পাশে কল্পনা করলো, মানাবে তো ওকে প্রবালের পাশে? শরীর আড়ষ্ট হয়ে গিয়েছে, মুখ থেকে কোন মতে উচ্চারন করলো, হাই প্রবাল কেমন আছো? কথা বলতে বলতে কখন জড়তা কেটে গিয়েছে দুজনার। একসময় কিছুক্ষণের জন্য কথারা স্তব্দ হয়ে যায়, দুজনের হাত দুজনের মুঠোর মধ্যে। দুজনের সমস্ত কথা যেন ট্রান্সফার হয়ে যাচ্ছে দুজনার মাঝেই, কত জনমের চেনা যেন দুজন।
আগে থেকেই পরিকল্পনায় থাকা মুন্সিগঞ্জের পদ্মা রিসোর্টে গেলো দুজনে। উদ্দেশ্য পদ্মায় নৌকায় চড়া। চৈত্রের এই গরমে দুজনে চড়ল নৌকায়। প্রেম ভালোবাসার কাছে গরম তো নস্যি আসলে। হালকা দক্ষিনা বাতাসে সময় চলে যাচ্ছিল স্বপ্নের মত। স্বপ্নে দেখা সোনালী বেতের নৌকাতেই যেন দুজনে ভাসছে, সন্ধ্যার পূর্বক্ষণে নদীর পানিও সোনালী রঙ ধারণ করেছে। সেই সোনালী সন্ধ্যায় হঠাৎ শান্তার আবদার আমি ডাবের পানি খাবো। সেই সন্ধ্যায় কোথায় পাবে প্রবাল ডাব! মাঝিকে নৌকা তীরে ভিড়াতে বলে দুজনে ডাবের খোঁজে গেলো। অবশেষে শান্তার চাহিদা মত শাস ওয়ালা ডাব পাওয়া গেলো।
“তুমি কি ডাবের শাস খুবই পছন্দ করো? সারাদিনে তো অন্য কোন খাবার নিয়ে এত আগ্রহ দেখাও নি।” প্রবালের এই প্রশ্নের উত্তরে শান্তা মিষ্টি করে হেঁসে বলল ‘ হ্যা, খুবই’। প্রবাল মনে মনে বললো, আমি একাই তারছেড়া না 🙂 এরপরে দুজনে দেখা করেছে অনেক বার।
আজকেও দুজনের দেখা করার কথা ছিল। করোনা ভাইরাসের অবরুদ্ধ সময়ে ফোনেই দুজন ‘ ভালো বাসি তোমায় ‘ বলতে পারলো।
করোনা কতজনের কত প্লান যে মাটি করে দিলো,
২৯টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
আমি প্রথম।
গিফট রেডি করুন, আমি পড়া শেষ করি 🙂
জিসান শা ইকরাম
আচ্ছা, এই গরমে ডাবের শাস এবং পানির ছবি দিয়েছি।
খান, গলা ভিজান 🙂 এটাই গিফট।
সুপায়ন বড়ুয়া
প্রথম দেখাতেই রেস্তোরায় হাত ধরাধরি
পদ্মা রিসোট,
ভাগ্যবান প্রবাল বলা যায়।
তাদের জন্য শুভ কামনা করতেই পারি
সাথে গল্পকারকেও।
শুভ কামনা।
জিসান শা ইকরাম
প্রবাল শান্তার জন্য শুভ কামনা জানানোই যায়।
ধন্যবাদ দাদা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হুম প্রথম দেখাতেই সব শেষ হয়ে গেল ☹️☹️ আরো কিছুক্ষণ নাহয় রাখতেন। এফ আর টাওয়ারের আগুন দিয়ে শুরু করোনা দিয়ে শেষ করলেন!!!এত দুর্যোগ মাঝখানে ডাবের শাঁসের মতো নরম কিছু পেলাম। ভালোই হলো। ধন্যবাদ আপনাকে
জিসান শা ইকরাম
হ্যা, প্রথম দেখাতেই সব শেষ 🙂
শুভ কামনা ছোটদি।
রেজওয়ান
ভাল থাকুক ভালবাসা❤
জিসান শা ইকরাম
জয় হোক ভালোবাসার ♥♥
তৌহিদ
করোনায় শান্তা আর প্রবালের মত অন্য প্রেমিক যুগলেরও কিন্তু বেশ সমস্যা হয়েছে!! বাইরে বের হতে পারছেনা, তাই ফোনেই ভরসা। অনেকেই আবার ফ্লেক্সিলোডের দোকান বন্ধ থাকায় পড়েছে আরো বিপাকে!! ব্যালান্স নেই, কথাও বন্ধ। করোনা বিরহ নিয়ে এলো বলে!!
তারছেঁড়া শব্দটি মনোপূত হয়েছে। এরকম এক আধটু পাগলামি না থাকলে রসায়ন জমে নাকি??
জিসান শা ইকরাম
করোনা এমন প্রেমিক যুগলের কাছে ভিলেন হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। প্রেমিক যুগলদের কত প্লান যে বিনষ্ট হয়েছে, তার খবর কেউ রাখেনা।
সুরাইয়া নার্গিস
অনেক সুন্দর লেখাটা পড়ে ভালো লাগছে, করুনায় কার কি প্লান মাটি হলো জানি না বৈশাখে আমার আব্বু,আম্মুকে নিয়ে শাড়ি পড়ে বাইরে ঘুরে বেড়ানোর প্লানটা যেন ঠিক থাকে তাহলেই হলো,করোনা যেন সেই আনন্দটুকু নষ্ট না করে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়।
আল্লাহ্ সহায় হোন, মহামারী করুনা থেকে রক্ষা করুন।
আপনিও ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
শুভ কামনা রইল ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে ইনশ আল্লাহ্।
বৈশাখ নিয়ে আপনার প্লান বাস্তব রূপ লাভ করুক, এই দোয়া করি আপু।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ছাইরাছ হেলাল
এখানেও করোনা ফ্যাক্ট!!
জিসান শা ইকরাম
হ্যা, বর্তমানে করোনার বাইরে কিছু আসে না চিন্তায়।
ইঞ্জা
আহারে করোনা, এমন কেউ আছে যে তোমাকে ডরায় না?
ভালোবাসা, রোমান্সের মাঝেও এই করোনা বাধ সাধছে, সেই আগের মতো ডাবের শাঁস খেতে পারেনা কেউ, কেমনে পারবে, করোনা যে চোখ রাঙ্গাচ্ছে।
কথার ছলে বলে রাখি, চট্টগ্রামে ডাবের শাঁসকে ল্যাবা বলা হয়। 😆
চমৎকার রোমান্সে ভরপুর লেখাটি ভালো লাগলো ভাইজান।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা ভাই, কেউ ঘুড়তে যেয়ে আর ডাবের শাঁস ও খেতে পারছে না,
কত প্রেমিক যুগলের কত প্লান যে এই করোনা ভাইরাস বরবাদ করে দিলো, তাঁর হিসেব কেউ রাখে না।
ইঞ্জা
আহারে, কত কষ্ট। 😆
রেহানা বীথি
মিষ্টি গল্প। বনানী এফআর টাওয়ারের আগুন আর করোনা, দুটোই ভয়াবহ। তবে কোনও ভয়াবহতাই ভালোবাসাকে বেঁধে রাখতে পারে না। সাময়িক অদেখা বাড়িয়ে দেয় সে ভালোবাসা বহুগুণ।
ভালো থাকুন ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
ঠিক বলেছেন আপু, কোনও ভয়াবহতাই ভালোবাসাকে বেঁধে রাখতে পারে না।
শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
মৃত্যুকে ভয় করো না কিন্তু মানুষ করোনাকে ভয় করে!
কোন মহাবিপর্যয় মানুষের ভালোবাসাকে আটকে রাখতে পারপ না।
ভালো লাগার মতো একখানা গল্প।
শুভকামনা দাদা।
.
আজ ডাবের জল ডাবের শাঁস খেয়েছি বাড়িতে।
জিসান শা ইকরাম
একমত তোমার সাথে প্রদীপ ‘ কোন মহাবিপর্যয় মানুষের ভালোবাসাকে আটকে রাখতে পারবে না ‘
শুভ কামনা।
ইসিয়াক
ভালো লাগলো গল্পটি।
শুভকামনা জানবেন ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
শুভ কামনা ভাই।
এস.জেড বাবু
যেন এক দৌড়ে শোষকের দিলেন,
মজা লাগতে লাগতেই শেষ
যেন হাওয়াই মিঠাই
–
আজকে বের হলে প্রবালের খবর ছিলো- যা ভূলোমনা- মাস্ক নিতে ভূলে যেত নিশ্চই।
চমৎকার গল্প।
মুগ্ধ
জিসান শা ইকরাম
হু এক দৌড়ে শেষ 🙂
হা হা ঠিক, পুলিশের পিটুনি খেতেই হতো প্রবালের।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
কচি শাস ওয়ালা ডাব খেলে যদি তার ছেড়া হয় সেখানে আমাকে পাবেন সামনের সিরিয়ালেই 😀
জিসান শা ইকরাম
বাহ, শান্তার সঙ্গী তাহলে পাওয়া গেলো একজন 🙂
শুভ কামনা ভাই।
হালিম নজরুল
আপনি এত সুন্দর গল্প লিখেন আমার জানা ছিল না। আরও পড়তে চাই।
জিসান শা ইকরাম
আরে ভাই, আমার আবার গল্প লেখা,
আপনাদের সাথে দু একটা পোষ্ট দিতে হয় তাই দেই।
ভালো থাকবেন প্রিয় ভাই।