বায়ু দূষণ বলতে বোঝায় যখন বায়ুতে বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থের কণা ও ক্ষুদ্র অণু অধিক অনুপাতে বায়ুতে মিশে যায় । তখন এটি বিভিন্ন রোগ , অ্যালার্জি এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে । এছাড়াও এটা অন্যান্য জীবন্ত বস্তু যেমন ; পশুপাখি , ফসল ইত্যাদির ক্ষতি করে । দুষিত বায়ু সুস্থ পরিবেশের জন্য বাধা। ২০১৪ সালের WHO এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১২ সালে বায়ু দূষণে প্রায় ৭ মিলিয়ন মানুষ মারা গেছে ।
বায়ুদূষণের মূল উপাদানসমূহ এবং তাদের প্রধান উৎস
• কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2)- পরিবেশের নেসেসারি ইভিল এই গ্যাসীয় উপাদানের অতিরিক্ত উপস্থিতি ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। মূলত গ্রিনহাউজ এফেক্টের ফলে এটি হয়ে থাকে। কলকারখানা, যানবাহন-ই এই গ্যাসের প্রধান উৎস।
• কার্বন মোনো-অক্সাইড (CO)- মানুষের শ্বাসক্রিয়ার পক্ষে চূড়ান্ত ক্ষতিকারক। এই গ্যাস বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় ভারসাম্যের বিঘ্ন ঘটাতে পারদর্শী। মূলতঃ পুরনো যানবাহনের থেকে এই গ্যাসের উৎপত্তি। এই কারণে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলীতে বিভিন্ন দূষণ-নিয়ন্ত্রণজনিত বিধি লাগু করা হয়েছে। ইউরো স্টেজ এবং ভারত স্টেজ (ইঞ্জিন-এর রেটিং ব্যবস্থা) এই ধরনের দূষণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
• সালফার ডাই-অক্সাইড (SO2)- ট্যানারি এবং অন্যান্য কলকারখানার চিমনি থেকে নির্গত ধোঁয়ার অন্যতম মূল উপাদান হল SO2 এই গ্যাস। বাতাসের ভাসমান জলীয় বাষ্পের সাথে মিশে গিয়ে এই গ্যাস অতি ক্ষতিকারক অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটানোর ক্ষমতা রাখে। মানুষের ক্ষতির পাশাপাশি তাজমহলের মতো মার্বেল-নির্মিত সৌধের-ও অপরিবর্তনীয় ক্ষতি হয়েছে এর কারণে।
• ক্লোরো ফ্লুরো কার্বন (CFC)- মূলতঃ পুরোনো এয়ার কন্ডিশনার এবং বাণিজ্যিক সিলিন্ডার এর উৎস। পৃথিবীর ওজোনোস্ফিয়ার বা ওজোন স্তর লঘুকরণের অন্যতম উপাদান এটি। কিন্তু বর্তমানে এই গ্যাস ব্যবহার করা নিষিদ্ধ হয়েছে প্রায় সব দেশেই। প্রকৃতপক্ষে, এই ফ্লুরো কার্বন পরিবারের কোনো গ্যাস-ই আর তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না।
• অন্যান্য- সোনার কারখানাতে ব্যবহৃত নাইট্রিক অ্যাসিড জনিত গ্যাস যেমন নাইট্রোজেন মোনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড প্রভৃতি, প্রায় সব কারখানাতেই ব্যবহৃত সালফারের যৌগ, ক্লোরিনের যৌগ ইত্যাদি থেকে উদ্ভুত গ্যাসগুলিও বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হিসাবে পরিগণিত করা যেতে পারে।
তবে বর্তমানে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং সরকারের নানা পদক্ষেপের ফলে বায়ুদূষণ বৃদ্ধির হারে লাগাম পরানো গেছে।
• SPM(Suspended Particulate Matter)- এটি ধোঁয়া-ধুলো বা এরোসল হতে পারে।যানবহন বা জ্বালানি থেকে নির্গত ধোঁয়ার মধ্যে যে কার্বন কণা থাকে ,তার আকার 10 ন্যানোমিটার থেকে কম হয়। এগুলি বাতাসে ভেসে থাকে এবং বাতাসে মধ্যে কয়েক সপ্তাহ থাকতে পারে।এটি একটি বিশেষ কারণ।

বছরের পর বছর বায়ু দূষণে পরিবেশের চরম অবনতি হলেও যেন সেদিকে নজর নেই কারোরই । বায়ু দূষণের জন্য দায়ী ইট ভাটা, মোটর যানের কালো ধোঁয়া ও অপরিকল্পিত নির্মাণ কাজ কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না পরিবেশ অধিদপ্তর । আর এই বায়ু দূষণের কারণে মানবদেহ সৃষ্টি হচ্ছে নানান রোগ । দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবকে দায়ী করছেন পরিবেশবিদরা।

সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তরের এক পর্যবেক্ষণে দেখা যায় দেশের সবচাইতে দূষণাক্রান্ত শহর ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ । এ দুটি শহরের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ১০১- ১৫০ পর্যন্ত থাকে। যা সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর।

এদিকে ঢাকা বছরের পর বছর আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণাতে বায়ু দূষণে শীর্ষে থাকলেও এর প্রতিকারে কোন পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের। ভুক্তভোগী এ শহরের মানুষও অনেকটা নিরুপায়।

বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘ফুসফুস, কিডনী, শ্বাসকষ্টজনিত রোগগুলো পরিবেশ দূষণের কারণে বেড়ে যাচ্ছে।’

বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায় ইট ভাটা বায়ু দূষণের জন্য ৫৮ ভাগ দায়ী। পরিবেশ দূষণ রোধে ‘ইট ভাটা আইন’ করা হলেও প্রায়ই অমান্য হচ্ছে সেই আইন। বায়ুমান ব্যবস্থাপনার পরিচালক জিয়াউল হক বলছেন সমন্বয় ও জনবলের অভাবেই সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ ও বায়ু দূষণ রোধ সম্ভব হচ্ছে না।

১১০৯জন ৮৭৮জন
0 Shares

৩৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ