
শান্তাঃ আজ সকাল নয়টায় পল্টন এসে দুটো টিকিট কাটবে গ্রীন ঢাকা বাসের, উত্তরার শেষ স্টপেজ আবদুল্লাহপুর এর।
প্রবালঃ আচ্ছা ঠিকাছে।
পরদিন সকালে প্রবালকে দেখা গেলো পল্টন এর প্রিতম হোটেলের সামনে দাঁড়ানো দেখা গেলো গ্রীন ঢাকা বাস কাউন্টারে। এসি বাস, রামপুরা হয়ে আবদুল্লাহপুর যায়। ঠিক নয়টায় শান্তা এসে জিজ্ঞেস করলো টিকেট কাটা হয়েছে কিনা? জবাবে হ্যা সূচক মাথা কাত করলো প্রবাল। লাইন দিয়ে যাত্রী দাঁড়ানো আছে। আগত বাসটিতে সিট পেয়ে উঠে গেলো দুজনেই। তবে সিট খালি আছে একদম পিছনের সারিতে। উজ্জ্বল হয়ে উঠলো শান্তার চোখ মুখ। সিটে বসল দুজন,
শান্তাঃ জানো গত পরশু রাতে কি স্বপ্ন দেখেছি?
প্রবালঃ হ্যা জানি তো, আজ সারাদিন বাসে চরে দিন কাটাবো আমরা 🙂
শান্তাঃ কিভাবে জানলে? আমি তো বলিনি তোমাকে এটা !
প্রবালঃ আমি বুঝতে পাড়ি।
শান্তাঃ স্বপ্নে যে আমরা সব শেষের সারির সিটে বসেছি তা কি জানো তুমি?
প্রবালঃ না তা জানিনা, তবে তোমার চোখ মুখের ঝিলিক দেখে অনুভব করতে পেরেছি।
শান্তাঃ হ্যা তা তো জানবেই, তুমি তো পণ্ডিত হয়েছো। স্বপ্ন দেখলে তার বাস্তবায়ন করতে হয় 🙂
প্রবালঃ তাই তো করছি এখন।
বাস চলছে, দুজনে পাশাপাশি হাতে ধরে বসে আছে। বাসে তেমন একটি কথা বলতে তাদের দেখলো না কেহ, যেন হাতে হাতেই কথা হচ্ছে দুজনের। দুজনে একই সাথে মুচকি হাসি দিচ্ছে। একই সাথে দুজনের মুখ উজ্জ্বলতায় উছলে উঠছে। কথা না বলায় তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।
আবদুল্লাহপুর গিয়ে তারা আবার বাস চেঞ্জ করলো। বিআরটিসির এসি বাস এর টিকিট কেটে মতিঝিলে যাচ্ছে এবার তারা। এবার ইচ্ছে করেই পিছনের সিটে বসল। মতিঝিল নেমে একটি রেস্টুরেন্টে খেলো দুজনে।
শান্তাঃ চলো হাঁটি কিছুক্ষণ।
বেশ কিছুটা হেঁটে গুলিস্তান গিয়ে এবার মোহাম্মদপুরের বাসে উঠলো। সারাদিন এভাবেই বিভিন্ন রুটের বাসে ঘুরলো তারা। সন্ধ্যে ছয়টায় আসলো নীলক্ষেত, নীলক্ষেত থেকে রিক্সায় টিএসসি। দুজনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাপা পিঠে খেলো, প্রবাল অতিরিক্ত খেলো ছোলা বুট। শান্তা পাশে থাকায় সব খাবারই যেন অমৃত। চা খোর প্রবালের চা এর তৃষ্ণা লাগায় টিএসসির সামনেই ফুটপাথে থাকা চা এর দোকানে চা এর অর্ডার করলো। বিভিন্ন ধরনের চা বিক্রী হয় দোকানে। কাঁচা মরিচের চা দেখে অবাক হলো দুজনেই। শান্তা খাবে কাঁচা মরিচের চা। কতগুলো কাঁচা মরিচের টুকরো একটা কাঁপে নিয়ে তার মধ্যে লিকার চা আর আচারের মত কি একটা দিলো, আর দিলো বিট লবণ। এমন চা এই প্রথম দেখছে দুজনে, তাই মজা করে খেলো শান্তা। কখন রাত আটটা বেজে গেলো দুজনের কেহই খেয়াল করল না।
শীতের রাত আটটা অনেকটাই রাত এখন। তখন শান্তাকে বাসায় পৌছানোর জন্য প্রবাল শান্তাকে জোর করছে, একা শান্তাকে বাসায় যেতে দেবে না। টিএসসি থেকে হেঁটে শাহবাগে গেলো দুজনে। পথে আর্ট কলেজের সামনে ফুটপাথের বইর দোকানের একটি বইতে চোখ আটকে গেলো বই পাগলী শান্তার। বইটি অনেক খুঁজেছে শান্তা, পায়নি কোথাও, একথা শান্তা বলায় প্রবাল বইটি কিনে দিলো শান্তাকে। এই প্রথম কোনো বই গিফট করল শান্তাকে প্রবাল।
শাহবাগে অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থেকেও খালি কোন বাস পেলো না। অতঃপর এলো বিআরটিসির দোতলা মহিলা বাস। বাসটি প্রায় খালিই। শান্তা উঠতে পারবে কিন্তু প্রবাল উঠবে কিভাবে মহিলা বাসে? দাঁড়িয়ে আছে বাস, কন্ট্রাকটর হঠাৎই বললো, ভাই আপনি সামনে ড্রাইভারের পাশে বসেন, বলেই দরজা খুলে দিলো, শান্তার দিকে তাকিয়ে বলল – আফা আপনে ওঠেন। শান্তা হাসছে মুখটিপে।
মোহাম্মদপুরে নেমে-
শান্তাঃ আজ এক অন্যরকম দিন, তুমি মহিলা বাসে চড়লে পুরুষ হয়ে 🙂
দুইদিন পরে–
শান্তাঃ আজ কি স্বপ্ন দেখেছি জানো?
প্রবালঃ হ্যা জানি, বিকেল চারটায় মোহাম্মদপুর আসতেছি, নিয়ে যাবো তোমাকে স্বপ্নের ঠিকানায়।
শান্তাঃ সত্যি? 🙂
প্রবালঃ হ্যা।
বিকেল চারটায় প্রবাল গেল শান্তার বাসার কাছে। একটি সিএনজি ডেকে চললো তামান্না ফ্যামিলি পার্কের দিকে। প্রবেশ পথের বাম দিকেই নদী।
প্রবালঃ দেখো তোমার স্বপ্নকে।
শান্তা চোখে মহা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে নদীর দিকে, ঠিক যেভাবে স্বপ্নে দেখেছিল, নদীটা তেমন। অস্তগামী সূর্যের সোনালী আলোয় একটি নৌকা চলে যাচ্ছে নদীর বুকে। সোনালী আলোয় নৌকো এবং নদীর পানিকে সোনালী মনে হচ্ছে। কিভাবে জানল প্রবাল এই স্বপ্নের কথা? চোখে আনন্দাশ্রু।
শান্তাঃ আই লাভ ইউ প্রবাল,
হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে দুজন নদীর দিকে,
=================================
প্রবালের গল্প – ৩
প্রবালের গল্প- ২
প্রবালের গল্প- ১
৪৮টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
হাজিরা দিলাম
জিসান শা ইকরাম
প্রথম হয়েছেন আজ 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
অনেক দিন পর।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা,
কাল ফোনে জরুরী কথা বলবো।
মোঃ মজিবর রহমান
ঠিক আছে ভাইয়া।
মোঃ মজিবর রহমান
সব স্বপ্ন যদি এভাবেই দেখে বাস্তবে মিলে যায়
হই আবার বাস্তবায়ন হয়ে যায় সোনায় সোহাগা।
পাক পরিপুর্নতা। এভাবে নদির পাশে দাড়াতে বুঝি খুব ভাল লাগে ভাইয়া। শুভ কামনা রইল।
জিসান শা ইকরাম
শান্তা আর প্রবাল তাদের সব স্বপ্ন বাস্তব করে 🙂
শুভ কামনা।
মোঃ মজিবর রহমান
স্বপ্ন বাস্তব করা আরো ভাললাগার স্থান করে দেয়। যা ভালিবাস্তে আগ্রহ জাগায়। ভাল থাকুন ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
আপনিও ভালো থাকুন মজিবর ভাই।
সুপায়ন বড়ুয়া
স্বপ্নের জুটিকে আমাদের খোলা ছাদে আমন্ত্রন ,
দুই সিটের দোলনায় বসে
পা দুলিয়ে হাসবে
নতুন স্বপ্ন দেখবে
শুভ কামনা
জিসান শা ইকরাম
বাহ দুই সিটের দোলনা আছে !
তাহলে শান্তা আর প্রবালকে পাঠাতে হয় আপনার বাড়িতে 🙂
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ দাদা।
নতুন লেখা দিন,
শুভ কামনা।
সুপায়ন বড়ুয়া
পাঠিয়ে দিন ,
সাথে লেখাটা ও দিব
ধন্যবাদ , শুভ কামনা
জিসান শা ইকরাম
আচ্ছা একদিন ঠিকই পাঠিয়ে দেবো 🙂
নতুন লেখা দেয়ায় ধন্যবাদ আপনাকে।
তৌহিদ
বিষয়টি কিন্তু দারুণ মজার। সারাদিন বিভিন্ন বাসের রুটে বসে প্রেমালাপ করে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরা। প্রবাল খুব রোমান্টিক তরুণ। তার শান্তার প্রতি কেয়ারিং জিনিসটিই কিন্তু শান্তাকে তাকে ভালোবাসতে বাধ্য করছে।
আচ্ছা স্বপ্ন কি এভাবে জানা যায়? ধরুন বললাম না তারপরেও সে বুঝে যায় কিভাবে যেন! স্বার্থক প্রেম বুঝি এটাকেই বলে।
নদীর তীরের কিছু রোমান্টিকতা পড়ে ঘুমাতে গেলে মন্দ হতোনা কিন্তু! পাঠকদের এভাবে বঞ্চিত করা মোটেই উচিত নয়।
দারুণ একটি লেখা পড়লাম ভাই। বয়সে যে দিনে দিনে তরণ হচ্ছেন সে খবর কি কেউ রাখে?
জিসান শা ইকরাম
হ্যা প্রবাল বেশ রোমান্টিক,
শান্তার প্রতি কেয়ারিং খুব।
কখনো কখনো শান্তা আর প্রবালের স্বপ্ন মিলে যায়। ভালোবাসার তীব্রতায় এমন হতে পারে।
লেখার মুল ভাবকে বুঝবার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে,
চেস্টা করি তরুন মন ধরে রাখার জন্য।
শুভ কামনা।
ইসিয়াক
দারুণ রোমান্টিক গল্প,ভালো লাগলো।
জিসান শা ইকরাম
ভালো লাগাতে পেরে ধন্য হলাম।
শুভ কামনা ইসিয়াক ভাই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দাদা ভাই খুবই রোমান্টিক লেখা। ভালো লেগেছে
জিসান শা ইকরাম
রোমান্টিকতা আনার চেষ্টা করেছি, কতটা পেরেছি জানিনা।
শুভ কামনা ছোটদি।
সাবিনা ইয়াসমিন
আহারে, বেচারা প্রবাল। শান্তার জন্যে তাকে কত কিছু করা লাগে। শেষ পর্যন্ত সে কিনা মহিলা বাসেও চড়লো! আবার একজনের দেখা স্বপ্ন আরেকজন না দেখেই পুরণ করে দেয়! প্রবাল কি প্রেমিক নাকি ম্যাজিকম্যান!
★ বেশ কিছুটা হেঁটে গুলিস্তান গিয়ে এবার মোহাম্মদপুরের বাসে উঠলো। সারাদিন এভাবেই বিভিন্ন রুটের বাসে ঘুরলো তারা। শীতের রাত আটটা অনেকটাই রাত এখন। তখন শান্তাকে বাসায় পৌছানোর জন্য প্রবাল শান্তাকে জোর করছে, একা শান্তাকে বাসায় যেতে দেবে না। শাহবাগে অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থেকেও খালি কোন বাস পেলো না।…..
এখানে একটু ছন্দপতন হয়েছে। গুলিস্তান থেকে মোহাম্মদপুরের বাসে উঠে তারা শাহাবাগ নামলো কখন? কেন? তা কিন্তু বলেননি।
জিসান শা ইকরাম
প্রবাল ম্যাজিকম্যানও হইতারে 🙂 বুঝে যায় জানি কিভাবে।
ছন্দ পতন ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
এখন সব ছন্দের পতন ঠিক করা হয়েছে, টিএসসিতে গিয়ে মরিচের চা খেয়ে আসবে একদিন 🙂
দারুণ টেস্টি, শান্তা খেয়ে বলছে প্রবালকে।
শুভ কামনা।
সঞ্জয় মালাকার
চমৎকার লেখা ভাইজান পড়ে বেশ ভালো লাগলো।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ দাদা,
প্রবাসে ভালো থাকুন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
শান্তা ও প্রবাল দুজনি তুখোড় প্রেমিক।
গল্পের ভাবদ্বারা বেশ রোমাঞ্চক।
ভালো লাগলো দাদা।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা তুখোড় প্রেমিক প্রেমিকা যুগল,
ধন্যবাদ প্রদীপ।
কামাল উদ্দিন
আগে শুনতাম জমজরা নাকি একে অন্যের মনের কথা ব্যথা বেদনা সব অনুভব করে। আপনার গল্প দেখছি প্রেমিক প্রেমিকাদের মাঝেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে………ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম ভাই, শুভ সকাল।
জিসান শা ইকরাম
প্রবাল আর শান্তা উভয়ে উভয়ের কথা আগে জানতে পারে,
শুভ কামনা ভাই।
কামাল উদ্দিন
আপনার জন্যও রইল অনেক অনেক শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
স্বপ্ন যেহেতু মুফতে দেখা যায় তাই বেশি কিছু চিন্তা করা লাগে না।
তাছাড়া বাস তো আমাদের নাগালেই, খুব-ই রোমান্টিক গল্প!
আহা ভালুবাসা, জড়িয়ে-গড়িয়ে যাচ্ছে।
জিসান শা ইকরাম
স্বপ্ন দেখতে টাকা টুকা লাগেনা 🙂
যাক রোমান্টিক গল্প তাইলে হইছে!
ভালোবাসায় একদম ল্যাপটা ল্যাপটি,
ইঞ্জা
সারাদিন বাসে ঘুরাঘুরি, বাহ বেশ তো, এইভাবেই স্বপ্ন পূরণ হতে থাকুক সবসময়।
জিসান শা ইকরাম
প্রবাল শান্তার স্বপ্ন পূরণ এভাবেই হচ্ছে ভাইজান 🙂
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
সুরাইয়া পারভিন
কাঁচা মরিচের চা হয় তা এই গল্প না পড়লে জানতেই পারতাম না। আচ্ছা প্রবাল কি সত্যিই জানতে পারে শান্তার স্বপ্নের কথা নাকি? তা কি করে আগে থেকেই জানতে পারে?
জিসান শা ইকরাম
একদিন সন্ধ্যায় টিএসসিতে গিয়ে খেয়ে আসুন কাচা মরিচের চা। আরো অনেক ধরনের চা আছে, অবাক হবেন মাস্ট।
প্রায় সময়ই প্রবাল শান্তার স্বপ্নের কথা জানতে পারে,
এ এক অদ্ভুৎ ব্যাপার।
নুরহোসেন
আবার প্রেম পড়তে ইচ্ছে করছে অনেকদিন-
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে ঘুরতে যাইনা।
জিসান শা ইকরাম
পড়ুন আবার প্রেমে,
ইচ্ছে পুরন করুন 🙂
নুরহোসেন
শীতের পরে চেস্টা করা যেতে পারে আপাতত রদ!
রেহানা বীথি
এই না হলে ভালোবাসা, স্বপ্নের কথাটাও অজানা থাকে না! দারুণ লাগলো ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
ভালোবাসা এমনই হওয়া চাই আপু।
ধন্যবাদ আপনাকে।
শাহরিন
ভালোই তো ভ্রমণ হচ্ছে। এদের কি দেশের বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি! তাহলে একটু বিদেশের গল্পও শুনতে পারতাম।
জিসান শা ইকরাম
দেশের বাইরেও গিয়েছে তো,
সময়ের অভাব এবং চোখের অসুস্থতার জন্য লিখতে পারছি না।
বিদেশের গল্প নিয়ে হাজির হবো এরপর।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
গল্প জমে উঠছে রোমান্টিক ভাবে।
জিসান শা ইকরাম
প্রবালের সব গল্পই রোমান্টিক গল্প।
শুভ কামনা।
মাহবুবুল আলম
সুন্দর গল্প। এগিয়ে যাক!
জিসান শা ইকরাম
আপনার মন্তব্য পেলে নিজেকে লেখক হিসেবে ভাবতে ইচ্ছে করে 🙂
শুভ কামনা।
শবনম মোস্তারী
দারুন রোমান্টিক।
আমার স্বপ্নগুলো ও যদি কেউ আগে থেকে বুঝে যেত….😃😃
জিসান শা ইকরাম
প্রবালের সব গপই রোমান্টিক আপু,
আগে বুঝতে হলে প্রবালের মত হতে বলুন ভাইকে 🙂
শুভ কামনা।