
সকাল ৯টায় ফোন দেবার কথা হাসু’র। হাসি’কে আমি হাসু বলেই ডাকি। আমাকে ডাকে ময়না। যদিও নামটা আমার মোটেও ময়না নয়। মনিও ডাকতে পারতো। তা না, ময়না ডাকতেই নাকি হাসু’র বেশি ভালো লাগে।আচ্ছা, ডাক তবে। মনিরা থেকে অনেকেই আমাকে মনি ডাকে। হাসু’কে যখন আমি হাসু ডাকি তখন আমাকে মনিরা থেকে ভাগ করে ময়নায় যায়গা দিয়েছে। বোঝাতে যে হাসু কতটা ভালোবাসে আমাকে। আমরা একই পাড়ায় বড় হয়েছি। কিছুটা কাল একসাথে এক বেঞ্চে পাশাপাশি বসে প্রাইমারীর ক্লাস করেছি। তারপর একটু বড় হতেই হাসু অন্য স্কুলে চলে গেলো। আমার আর কোথাও যাওয়া হয়নি। অনেক বছর যোগাযোগ ছিলোনা হাসুর সাথে। যোগাযোগটা হলো আবার এই সামাজিক মাধ্যমে এসে।
প্রায়ই হয় হাসু চলে আসে, নয়তো আমি চলে যাই হাসুর কাছে। হাসু সাড়ে দশটার দিকে ফোন দিলো– তুই কখন রওনা দিবি ময়না? বললাম,–দেখি, বুয়া আসেনি এখনো, বাচ্চাদের জন্য কিছু রান্না করবো……-তাইলেই তো তোর দেরি হবে বান্দরডা! –আচ্ছা,করবো না তাহলে। ওরা বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে খেয়ে নেবে।– এইতো তুই আমার ময়না! তারাতারি আয়। আইসা রানবি না তুই? নাইলে খামু কি? —হা হা হা, না হাসু,দেরি করবো না। আমি তারাতারিই আসার চেষ্টা করছি।
ছেলে মেয়েদের বুঝিয়ে বলে দিয়ে। চটজলদি রেডি হয়ে রওনা দিলাম। এই পথে প্রায়ই আমি একা একাই যাই। খুব কাছেও নয় আবার খুব দূরেও নয়। যেতে যেতে আমি চারিদিক দেখতে দেখতে যাই। হাজারো কথা মনে মনে বলতে বলতে যাই।
ধুলো আর হালকা মেঘে ঢাকা আকাশ। রোদের তেজ নেই। এবার কি তবে শীত পড়বে ভীষণ? বেশ বাতাস দিচ্ছে হিমহিম।
টের পাই চলন্ত রিকসার গতিতে। ঠান্ডাটা জানান দিচ্ছে হাড়ের জোড়ায় জোড়ায়।
আচ্ছা যদি এমন হয়! বাসাবোর বৌদ্ধমন্দিরের ওই গলিটা থেকে হঠাৎ বের হয়ে এসে, আমার রিকসার সামনে এসে পথ আগলে দাঁড়ায় জাহিন? আমি কি খুব চমকে যাবো? নাকি অবাক হবার ভাণ করে জানতে চাইবো……তুমি? এভাবে পথ আগলে দাঁড়ালে যে? তুমি কি এত তারাতারি ঘুম থেকে জাগো? তোমার তো সকালই হয় সাড়ে বারোটার পরে!!
জাহিন কি বলবে হেসে, ভাগ্যিস আজ বউ একটা কাজে পাঠিয়েছিলো বলে, তোমার দেখা পেয়ে গেলাম এভাবে রাস্তার মুখে!!
একা একা হেসে ফেললাম! কি পাগল আমি! কি ভাবছি এসব?
*****
প্রতিবার হাসুর বাসায় এলেই আমার ভুল হয়। হয় গলি ভুলে যাই নয়তো অন্য বাড়িতে চার /পাঁচ তলা পর্যন্ত উঠে আবার খুঁজে খুঁজে হাসুর বাসায় পৌঁছাই। আজ আর গলি ভুল হলোনা। গেট দিয়ে ঢুঁকছিলো এক বোরকা পরিহিত অল্প বয়সি মেয়ে। তারাতারি পা চালিয়ে আমিও ঢুঁকে পড়লাম। হাসুকে ফোন দিতে হবে আবার চাবি নিয়ে নিচে নামার জন্য।
তবুও ভুল হলো। হাসু থাকে তিন তলায়।আমি উঠে গেছি চার তলায়। নিচে নেমে এসে নক করতেই হাসু জড়িয়ে ধরলো –ওরে ময়না তুই? কতযুগ যেন তোরে দেহিনাই। পাশের ফ্লাটের প্রতিবেশি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। –কে আন্টি? আপনার বোন?হাসু আমার গালের সাথে গাল ঠেসে ধরে জিজ্ঞেস করলো পাল্টা— দেখেন তো! প্রতিবেশিও তৎক্ষনাত উত্তর দিলো, — হ্যাঁ,বোনের মতোই তো লাগে! হাসু অমনি করেই জড়িয়ে জাপটে ধরে আছে, যেন কতযুগ পরে পেয়েছে আমাকে। অথচ দু’মাস আগেও এসেছিলাম ভুলেই গেছে যেন!
— ওরে ঘরে তো চল!
— আয় ময়না! তুই ব্লাক কফি খাবি তো?
–তোর কিছু করতে হবেনা, আমাকে দে, আমি করছি।
দু’কাপ ব্লাক কফি বানিয়ে দু’জন বান্ধবি শুরু করলাম নানা গসিপিং,অভিযোগ।
তুই সেদিন অমন করে কেন মেসেজ লিখলি? জানিস আমি তোর মেসেজ পড়ে কেঁদেছি?
— আমি বুঝছিলাম ময়না, তুই কষ্ট পাবি। কিন্তু তুইও তো আমাকে ভুল বুঝলি!
— আসলে হাসু কি হয় বলতো? লিখে লিখে মুখের এক্সপ্রশেন দেখাতে পারিনাতো তোকে! ওটা ভুল বোঝা বা তোকে অবিশ্বাস করার বিষয়ে ছিলোনা মোটেই!
— সেটাই হবে রে ময়না। যা সব ভুলে যাতো!
— এখন বল কি রান্না করবো?
— তুই রান্না করে খাওয়াতে আসছিস আমাকে?
— হ্যাঁ,বলেছিস্ না তুই? বের কর কি রান্না করবো?
চলবে…..
২৫টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভিন
জাহিন কি বলবে হেসে, ভাগ্যিস আজ বউ একটা কাজে পাঠিয়েছিলো বলে, তোমার দেখা পেয়ে গেলাম এভাবে রাস্তার মুখে!!
একা একা হেসে ফেললাম! কি পাগল আমি! কি ভাবছি এসব?
ভাবনা গুলো এমনিই। ভাবনার রাজ্যে অদ্ভুত কতো শত ভালোলাগারা করে বিচরণ।
এক বন্ধু অন্য বন্ধুর প্রতি তীব্র ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। দারুণ লেগেছে গল্প
বন্যা লিপি
জাহিনের কাহিনীটা এখানে আর এগোবেনা।”একদিন”এর প্রেক্ষাপট দিনের শেষ অব্দি পর্যন্ত কি ঘটে।দেখার বিষয়।
দুই বন্ধুর অনেকদিন পরে নিজেদের মতো করে একটু সময় কাটানো।
সুপায়ন বড়ুয়া
একদিনের গল্প মন্দ না
চলবে যখন চলুক না !
শুভ কামনা
বন্যা লিপি
তাইতো! একদিনের গল্প।
দেখাযাক একদিনে মনিরা হাসু কি কি আনন্দ কুড়ালো?
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
গল্প তো শুরু হলো, তবে মুল থিম এখনো আঁচ করতে পারিনি। পুরোনো দুই বান্ধবী রান্না-খাওয়া করুক তার পর দেখি ওরা আমাদের কোথায় নিয়ে যায়…………সাথেই আছি
বন্যা লিপি
শিরোনাসটাই মূল থিম। সাথে থেকে দেখুন-বুঝুন- পড়ুন।দিনশেষে ঘরে ফেরার আগ পর্যন্ত সফর করুস মনিরা’র সাথে। খারাপ লাগবে না আশা করি।
কামাল উদ্দিন
তো ঠিক আছে, থাকলাম সাথেই 🙂
ছাইরাছ হেলাল
ডায়েরির ছলে গল্পে গল্পে গল্প-বলা পড়তে মন্দ লাগে না,
গসিপিং টা আমাদের জানান, দেখি মোল্লা কোন মসজিদে যায়!
চলুক।
বন্যা লিপি
গসিপিং জানাবো বলেই শুরু করেছি এ হেন “একদিন”। আসলে মোল্লার দৌড় ওই মসজিদ পর্যন্তই। গল্পেও আনাড়ি! তাই ডায়রীর মতোই মনে হয়! কচু গাছ কাটতে কাটতে ডাকাত হবার প্রবাদ বাক্য অনুসরনীয় বলা যেতে পারে।
আরজু মুক্তা
আপা, ভালো লাগলো। থিম কি বন্ধুত্ব?
বন্যা লিপি
দুই বন্ধুর অনেকদিন বাদে একটাদিন গসিপিং,গল্পকথায় কাটানোই একদিনের গল্প। সাথে থাকুন আপু। দিনশেষে একটা কিছু তো পেয়েই যাই গল্পের যোগান হলো কেমন করে বলতে!
ইসিয়াক
শুভকামনা রইলো।
বন্যা লিপি
শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
হাসুর বাড়িতে যেতে প্রতিবার কেন ভুল হয়, আমি বুঝে ফেলেছি। কারণ হলো ঐ জাহিন মহাশয়। তার কথা ভাবতে ভাবতে তাকে সাথে নিয়েই পথ চলতে থাকো। আর কথায় কথায় পথ হারাও। 😀😀
পরের পর্বের অপেক্ষা..
শুভ কামনা 🌹🌹
বন্যা লিপি
একটা কথা আছে জানোতো? বাহান্ন বাজার আর তেপ্পান্ন গলির শহর ঢাকা শহর। অলিগলির গোলকধাঁধায় পথ মাঝেমাঝেই হারিয়ে ফেলাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।জাহিন মহাশয়ের সাথে এ গল্পে আর দেখা হবে না। হবে হয়তো অন্য কোনো গল্পে।
তোমার জন্য ভালবাসা💓💓
নুর হোসেন
চমৎকার হচ্ছে আপু, চলুক চলতে থাকুক-
পাঠক আগ্রহী।
বন্যা লিপি
এমন করে বললে তো আগ্রহটুকু বেড়েই যায় এগিয়ে যেতে। সাথে পাচ্ছি এই তো অনেক প্রেরনা।
শুভেচ্ছা ভাই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দুই বান্ধবীর গল্প বেশ জমে উঠেছে। ধন্যবাদ আপু
বন্যা লিপি
আপনাকেও ধন্যবাদ দিদি ।
আশা করি বাকি পর্বও জমেই যাবে।
জিসান শা ইকরাম
দুই বন্ধুর আন্তরিকতায় পূর্ণ গল্পের প্রথম পর্বটা চমৎকার হয়েছে,
একদিন এর বাকী অংশের অপেক্ষা করছি,
খুব বেশী অপেক্ষা করা যাবে না,
দ্রুত পরের পর্বের লেখা চাই।
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
ইনশাল্লাহ্, বেশি আর অপেক্ষা করাবো না এ গল্পে। শিরোনামটাই তো “একদিন”।
একদিনেরই গল্প শোনাবো ছোট কয়েকটা পর্বে।
কুতজ্ঞতা জানবেন।
তৌহিদ
বন্ধুত্বের এমন আন্তরিকতা গল্পে গল্পে ভালই লাগছে পড়তে। আচ্ছা হাসুর বাড়িতে যেতে প্রতিবার ভুল হয় কেন? রহস্য কি?
পরের পর্বে কিন্তু বাকীটুকু বলবেন। ☺
বন্যা লিপি
এত বেশি এঁদো গলি হাসুর বাসায় যেতে! সব গলি একইরকম দেখতে। তাই বারবার ভুল হয়।তারওপর অনেকদিন বাদে বাদে যাওয়া, সেটাও একটা কারন।
আসছি পরের পর্বে। আশা করি সাথে পাবো।
শুভেচ্ছা জানবেন।
মনির হোসেন মমি
যেতে যেতে কত কিছুই যে মনে পড়ে…ঠিকই বলেছেন টেনসনে পড়লে পথও যেন ফুরোয় না। লেখা চলুক।বান্ধবী দেখা পেয়ে দেখা যা কী খাওয়া দাওয়া হল।
রেহানা বীথি
রান্না খাওয়া সেরে গল্পের ঝাঁপি খুলে বসুক ওরা, আমরাও থাকবো ওদের সাথে। শুনবো, হাসবো, কাঁদবো…..