আজ বাঁধনের অনেক সুনাম ও যশ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক বাধা বিপত্তি, সফলতা, ব্যর্থতার প্রাচীর পেরিয়ে আজকের বাঁধনে বাঁধা পড়েছে। হ্যাঁ বাঁধনের শৈশব,কৈশোর ও আর দশটা সাধারণ ছেলেবেলার মতোই কেটেছে। আজ তার সত্তর তম জন্মবার্ষিকী পালিত হলো। এতো কোলাহল,হৈ-হুল্লোর তবুও সে বারবার ফিরে যায় সেই ফেলে আসা শৈশব কৈশোরে আর তারুণ্যের উচ্ছলতায়। কোথা থেকে কখন কিভাবে সে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে আজকের বাঁধনে পরিনত হলো। ভাবতেই সে নিজমনে হেসে ফেলে। বৃদ্ধা স্ত্রী,দুই ছেলে মেয়ে আর তাদের ঘরের নাতি-নাতনি নিয়ে তার জগৎটা সাজানো।
বাঁধনের মনে পড়ে সেই প্রথম স্কুলে যাবার কথা। প্রথম দিন স্কুলে সে অনেক জোরাজুরিতে যেতে বাধ্য হয়েছিলো। সে-কি কান্না তার। দুই মামা মিলে পাঁজাকোলা করে তাকে কোনোমতে ক্লাস ঘরে দিয়ে আসলো। গ্রামে তার নানার অনেক পরিচিতি ছিলো। দাদা বাড়িতে ভালো স্কুল না থাকায় আর অনেকটা নানীর কারণেই নানা বাড়িতে তার ঠাঁই হলো। মামা-মামী, খালারা তাকে খুউব ভালোবাসতো। যাইহোক কোনোরকমে স্কুল জীবনের প্রথম দিন পার করলো। ডানপিটে আর দুরন্ত বলতে যা বোঝায় তার সবই বাঁধনের মধ্যেই ছিলো। নাম তার বাঁধন হলেও কোনো বাঁধনে সে বাধা থাকতো না। কখন ভোর হবে ভাবতে ভাবতেই সে ঘুমিয়ে পড়তো । সকালে তার কত কাজ সেকি ঘুমাতে চায়। মামাদের ভয়ে বিছানায় ঘাপটি মেরে থাকতো। আবুল,মঈন, সাত্তার ওর বয়সী আরো ছেলেপুলের দল নিয়ে ওর সারা দিন নানান আয়োজনে কেটে যেত। ভোরে ঘুম ভেঙ্গেই মুখে কিছু নাস্তা গুজেই ভোঁ দৌড় বাড়ির পাশের ধানক্ষেতে। ডাংগুলি, কানামাছি, হাডুডু, সাঁতরে নদীর এপার ওপার করা, এর ওর গাছের ফল-ফুল ছিঁড়ে আনা, সবজি ক্ষেতের মাঝ দিয়ে দৌড় ঝাঁপ আরো কতকিছু তার ফিরিস্তি শেষ হবার নয়। সেই বাঁধন হারা বাঁধন কি সময়ের শিকলে বাঁধা পড়তে পারে? তাই সে স্কুলে একদমই মন রাখতে পারতো না। ধীরে ধীরে স্কুলে কিছু বাঁদর টাইপ বন্ধু জুটে গেল। সেই থেকে বাঁধনের স্কুলের প্রতি একাগ্রতা বেড়ে গেলো। একবার পড়লেই ওর পড়া হয়ে যেতো। তাই বেশীক্ষণ পড়ার টেবিলে থাকতো না সে। মামীদের, নানীর ফাই ফরমায়েশ ও পালন করতো সে।
ছোটো থেকেই মুখে মুখে মনের আনন্দেই ছড়া কাটতো, সেগুলো কাগজে টুকে রাখতো। তার নানা সন্ধ্যায় পুঁথির আসর বসাতো তাই শুনে শুনে সেও পুঁথি পাঠ করতো। শৈশব থেকেই বাঁধন সাহিত্যের অনেক খানি পথ পাড়ি দিলো। বাঁধন আজ কলেজে পড়ে। এ ক’বছরে ওর লেখালেখি অনেক দূর এগুলো। আজ সে ছোট ছোট কিশোর কবিতা, গল্প ও লিখে। কলেজ পেরোনোর আগেই ওর একটা প্রেম হয়ে গেলো ওর এক খালাতো বোনের সাথে। তাকে ভালোলাগা থেকেই ওর লেখার গ্রাফটা যেন আরো ত্বরান্বিত হলো। একদিকে প্রেম, অন্যদিকে নিজের লেখালেখির ক্ষুধা সবকিছু তাকে সাহিত্যের আনাচে কানাচে বিচরণ এ খুব সহায়তা করলো। ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে বাঁধন ডিগ্রি পাস কোর্সে ভর্তি হলো। গ্রামের পরিবেশে মানুষ হওয়া দুরন্ত, ডানপিটে ছেলেটি আজ শহরে এলো বন্দী জীবনের বাঁধনে বাধা পড়তে। এ এক অন্য জগৎ,অন্য পরিবেশ। একাকীত্বের স্বাদ পেলো বাঁধন যে বাঁধন কখনো একা থাকেনি। হোস্টেলের জীবন যে নিয়মের বাঁধনে বাঁধা। সময়মত খেতে না গেলে খাবার জুটতো না, বসার জায়গা পেতো না, পেট পুরে খেতে পারতো না। তখন সে গ্রামের কথা, বাড়ির কথা, মামা-মামীদের জোর করে খাওয়ানোর কথা মনে করে চোখের জল ফেলে মুছতো। পাছে কেউ দেখে ফেললে ওকে নিয়ে মজা করবে এই বয়সে সেটা লজ্জায় ফেলবে তাকে। এরই মাঝে ওর জীবনে একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেল। ওর এতো দিনের ভালোবাসার আপনজন বিনা নোটিশে অন্যের বৌ হয়ে চলে গেলো চিরতরে ওকে একলা করে। ও কিছুই জানতে পারলো না, তার ভালোবাসাকে আর ধরে রাখতে পারলো না। মনে হলো ওর জীবনের আলোটাই যেন কেউ ছিনিয়ে নিয়ে গেলো। বন্ধু-বান্ধব সবাই মিলে ওকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো। যাইহোক কোনোরকমে পরীক্ষাটা দিয়ে বাড়িতে গেলো।
এতো দিনে অনেকটা পরিচিতি হলো নব্য লেখক হিসেবে বাঁধনের। বন্ধু মহল থেকে পত্রিকা-ম্যাগাজিনের পাতায় পাতায় ওর নাম ছড়িয়ে পড়লো। ডিগ্রি পাস করে চাকুরীর জন্য অপেক্ষা করছে আর সেই সাথে লেখালেখি থেকেও কিছু আয় রোজগার হচ্ছে। বাংলাতে মাস্টার্স করা ছেলেটি আজ বিদেশের মাটিতে অন্য এক পেশায় জড়িয়ে গেলো। ৯-৫টা অফিস করে, তবুও তার লেখালেখি চললো পুরোদমে। আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে পুরো পৃথিবী টাই তো এখন হাতের মুঠোয়। তাই প্রবাসে থেকেও দেশের সাথে , বাংলা সাহিত্যের সাথে প্রতিনিয়ত লেখা আদান-প্রদান করা হতো। বিয়ে করে সংসার জীবনে প্রবেশ করলো বাঁধন। স্ত্রীর কাছে সবই পেয়েছে- ভালোবাসা,সুখ, শান্তি, সন্তান। সন্তানরা আজ দেশের রত্ন। বাঁধনের সবকিছু ছাপিয়ে তার সাহিত্য পরিচয় টাই আজ বড়। কিন্তু তার লেখায় , ভাবনায় আজো তার ভালোবাসার সেই মানুষটি কোনো না কোনোভাবে জড়িয়ে আছে। আজকের এই দিনটি তার কাছে আরো একটা কারণে বিশেষ সেটা হলো আজকের এই দিনে বাংলাদেশ নামক একটি দেশের, রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। সেই সাথে জন্ম হয়েছিল তার মতো একজন কবি, লেখকের। তার জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ, বাংলা, বাংলা সাহিত্য।
বাঁধনের একজন লেখক হয়ে ওঠার গল্প পড়ে ভাল লাগল। আসলে লেখকের জীবন এরকমই হয়। নিজের ব্যক্তিগত প্রেম-ভালোবাসা নিজের লেখায় ফুটে ওঠে সব সময়। দারুন লিখেছেন, তবে লেখার মধ্যে বিরতি দিয়ে গুচ্ছ আকারে লিখলে দেখতে আরো সুন্দর লাগতো।
জীবনের প্রতিটি ধাপে নিত্ত নতুন পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়া বাধন শেষ অব্দি পৌছে গেলো আপন স্বপ্ন ভুবনে। একজন লেখকের লেখক হয়ে উঠার গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো।
★ গল্পের মাঝে প্যারা দিয়ে নিলে লেখাটি পড়তে পাঠকের সুবিধা হয় আপু। সম্ভব হলে এডিট করে নিন। দেখতেও ভালো লাগবে।
২০টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
বাহ ! আজ বিজয়ের দিনটি বাঁধনের লেখক হিসেবে জন্ম নেয়ার দিনও 🙂
লেখাটি ভালো লেগেছে ছোটদি।
শুভ কামনা।
বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা তোমাকে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ দাদা ভাই। বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা রইল
নিতাই বাবু
আপনাকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, শ্রদ্ধেয়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ দাদা। বিজয়ের শুভেচ্ছা রইল
রেহানা বীথি
দুটো আনন্দ একসাথে। খুব সুন্দর লিখলেন।
মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ আপু। আপনাকে ও বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা
সুরাইয়া পারভিন
চমৎকার লিখেছেন বাঁধনের গল্প
বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ আপু। বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা রইল
বন্যা লিপি
বাহ্,বাঁধনে বাংলাদেশ! বাঁধনের জন্ম এবং স্বাধীন বাংলার জন্ম একইদিনে হওয়াতে এ পাওয়া দ্বিগুণ! বিজয়ের অভিবাদন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা
ছাইরাছ হেলাল
একজনের লেখক হয়ে ওঠার গল্প জেনে ভালই লাগল।
শুভেচ্ছা আপনাকে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ আপনাকে। বিজয়ের শুভেচ্ছা
আরজু মুক্তা
বিজয়ের শুভেচ্ছা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ আপু। বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা রইল
তৌহিদ
বাঁধনের একজন লেখক হয়ে ওঠার গল্প পড়ে ভাল লাগল। আসলে লেখকের জীবন এরকমই হয়। নিজের ব্যক্তিগত প্রেম-ভালোবাসা নিজের লেখায় ফুটে ওঠে সব সময়। দারুন লিখেছেন, তবে লেখার মধ্যে বিরতি দিয়ে গুচ্ছ আকারে লিখলে দেখতে আরো সুন্দর লাগতো।
শুভকামনা রইল।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
নুর হোসেন
চমৎকার লিখেছেন, বিজয়ের শুভেচ্ছা রইলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া। বিজয়ের শুভেচ্ছা রইল
সাবিনা ইয়াসমিন
জীবনের প্রতিটি ধাপে নিত্ত নতুন পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়া বাধন শেষ অব্দি পৌছে গেলো আপন স্বপ্ন ভুবনে। একজন লেখকের লেখক হয়ে উঠার গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো।
★ গল্পের মাঝে প্যারা দিয়ে নিলে লেখাটি পড়তে পাঠকের সুবিধা হয় আপু। সম্ভব হলে এডিট করে নিন। দেখতেও ভালো লাগবে।
শুভ কামনা নিরন্তর ❤❤
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ আপু। আমার এখানে সেটিংসে সমস্যা আছে। তাই এমন হয়। পোস্ট করার পর ভিউ টা অন্যরকম হয়ে যায়। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।