
প্রায় চার পাঁচমাস ধরে নিজেকে একটা জায়গায় নিবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেছি। দ্রুততালে গল্প লেখাতেও ছেদ পড়েছে অনেকটা। ফেসবুক বন্ধুদের সাথেও অনেকখানি দূরত্ব রচিত হয়েছে। তাদের কারও লেখাই সময়মত পড়ে উঠতে পারিনি, করতে পারিনি মন্তব্য। হয়তো অনেকে ভেবেছেন, হঠাৎ করেই অহংকার ভর করেছে আমার ওপর। তা নাহলে এড়িয়ে যাবো কেন? হয়তো মনে মনে অনেকেই কিছুটা রাগান্বিতও বোধ করছেন। কিন্তু আমি নিরুপায়। আমার পেশা আর সংসার, সাথে সেই নিবদ্ধকৃত জায়গা… এর বাইরে যেটুকু সময় বের করেছি, বেশ কষ্টসাধ্যই ছিল তা। তবুও করেছি। মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে উঠেই জায়গা খুঁজেছি অন্য কোথাও। মনটাতে একটু হাওয়া বাতাসেরও তো দরকার আছে, তাই না?
এই দেখুন, এতক্ষণ ধরে এত ভ্যাজর ভ্যাজর করে, আসল কথাটাই বলা হয়নি। নিবদ্ধকৃত যে জায়গাটার জন্য এত কথার অবতারণা, সেটাই স্পষ্ট করিনি এখনও!
একটা লেখা। যেটা নিয়ে এই কয়মাস ধরে একরকম হিমশিম খাচ্ছি বলা যায় । লেখাটি লিখতে গিয়ে প্রথমেই ধাক্কা খাই, কারণ তথ্যের অপ্রতুলতা। অনেক কষ্ট করে কিছু বইবত্র জোগাড় করে লেখা শুরু করি। কিন্তু লিখতে গিয়ে প্রতিনিয়তই মনে হয়েছে, আরও কিছু তথ্য পেলে লেখাটা আরও সুন্দরভাবে লিখতে পারতাম। আরও কিছু তথ্য প্রয়োজনও ছিল। কিন্তু “নাই মামার চেয়ে কানা মামাই ভালো!” তাই যেটুকু তথ্য পেয়েছি, তা দিয়েই মোটামুটি একটা লেখা দাঁড় করানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। জানি না কতটুকু পারলাম! কতটুকু সম্মান জানাতে পারলাম এমন একজন কীর্তিমান মানুষের কীর্তিকে।
ভাষাবিজ্ঞানী প্রফেসর আব্দুল হাই। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ – এর স্নেহছায়ায় বেড়ে ওঠা প্রফেসর হাই। মাত্র পঞ্চাশ বছর স্থায়ী জীবনে তাঁর যে অসামান্য কীর্তিতে আমাদের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতিকে দিয়ে গেছেন অমূল্য সব সম্পদ, তাঁকে নিয়ে লিখতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছি বার বার। আমার মত একজন সামান্য মানুষ একজন অসামান্য মানুষের কীর্তিময় জীবনকে তুলে ধরার যে সামান্য প্রয়াস করেছি, তা বিহ্বল করে তুলেছে আমাকে। জানি না কতটা পেরেছি। তবে তাঁকে নিয়ে লিখতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে অনেক।
লেখাটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে ওপার বাংলার একটি পত্রিকায়। সেই পত্রিকার অনুরোধেই লেখার প্রয়াস পাই ভাষাবিজ্ঞানী প্রফেসর আব্দুল হাইকে নিয়ে। যা একেবারেই আমার স্বভাববিরুদ্ধ একটি লেখা। প্রথমে লিখতে অস্বীকৃতি জানাই, কারণ এধরনের লেখা আমি আগে লিখিনি। কিন্তু তাঁদের অনুরোধ উপেক্ষাও করতে পারিনি। এখন ভাবি, যদি শক্তভাবে উপেক্ষা করতাম, তাহলে হয়তো আমার জীবনের অপূর্ণতা আরও কিছুটা বাড়তো।
এই মহান মানুষটির জীবন নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আলোচনার কারণে পড়তে হয়েছে তাঁর লেখা বইগুলো। যেগুলো আমি আগে পড়িনি। পড়ে যারপরনাই অভিভূত আমি। প্রফেসর আব্দুল হাই -এর ‘ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব’ , ‘ভাষা ও সাহিত্য’ , ‘তোষামোদ ও রাজনীতির ভাষা’ , ‘মধ্যযুগের বাংলা গীতিকবিতা’ বইগুলো আমাদের জন্য একেকটি সম্পদ, যা পড়লে আমরা শুধু সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হবো।
এই কীর্তিমান মানুষটি ১৯১৯ সালের ২৬ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। আগামীকাল তাঁর জন্মদিন ।
এই দিনটিকে সামনে রেখে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করি তাঁকে।
২৩টি মন্তব্য
আরজু মুক্তা
কীর্তিমান দের মৃত্যু নেই। এঁরা লেখায় বেঁচে থাকে।
ভালো থাকুন উনি।
রেহানা বীথি
শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিতাই বাবু
গুনীজনরা মরে না। তাঁরা বেঁচে থাকে ইতিহাসের পাতায় পাতায় আর মানুষের অন্তরে।
রেহানা বীথি
শ্রদ্ধাঞ্জলি
রুমন আশরাফ
Legends never die.
রেহানা বীথি
শ্রদ্ধাঞ্জলি
নাজমুল হুদা
কর্মেই মানুষ বেঁচে থাকে যুগ যুগ।
আপনার ধারাবাহিক লেখায় জানবো এই গুণী মানুষকে।
শুভ কামনা 💕
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
আজ তার শুভ জন্মদিন! কীর্তিমান মানুষদের কেবল জন্মই হয়। তারা অমরত্ব লাভ করেন তাদের কর্মে।এই গুণী মানুষটির আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি।
শুভ কামনা 🌹🌹
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন
মনির হোসেন মমি
১৯৬৮ ১সেপ্টেম্বর সালে ভিজিটিং প্রফেসর হিসাবে দশ মাসের জন্য তিনি আমেরিকা মিশোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে তার বিরুদ্ধে এক কুচক্রী সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এবং দুর্নাম ছড়াতে থাকেন তৎকালীন পাক সরকারের কাছে।অথচ তার মত ভদ্র সৎ সে সময় খুব কম লোকই ছিল।তিনি ভিজিটিং এর কাজ অসমাপ্ত করেই দেশে চলে আসেন।দেশে এসেও এ বিষয়ে তিনি কারো কোন সহযোগীতা পায়নি।ভারাক্রান্ত মনে ১৯৬৯ সালে ত জুন মধ্য দুপুরে ঢাকা শহরে চলন্ত ট্রেনের ধাক্কায় আহত হয়ে পরে মৃত্যু বরণ করেন যদিও তার মৃত্যুর কারন নিয়ে সেসময় অনেক তর্ক বিতর্ক ছিলো।
তার রচিত সাহিত্যগুলো- ১৯৫৪ সালে প্রকাশ পায় ৴সাহিত্য ও সংস্কৃতি,১৯৫৮ বিলাতে সাড়ে সাত শ’দিন,১৯৫৯ সালে তোষামোদ ও রাজনিতী,১৯৬০ সালে ভাষা ও সাহিত্য,১৯৬০ সালে-এ ফোনেটিক এন্ড ফোনোলোজিক্যাল স্টাডি অব নেইজালস অ্যান্ড নেইজালাইজেশন ইন বেঙ্গলি, ১৯৬৮ সালে সৈয়দ আলী আহসান সহ যৌথ ভাবে প্রকাশ পায় ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত।
এমন কৃর্তিমান ব্যাক্তিদের নিয়ে লেখার সুযোগ পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।লিখুন।আমরাও জানতে চাই পড়তে চাই।অবশ্যই সোনেলায়ও পোষ্ট দিবেন।যদি কোন শর্ত না থাকে। শুভ কামনা রইল আপু।
রেহানা বীথি
শর্ত তো কিছু রয়েছেই ভাইয়া। আর লেখাটাও অনেক বড়। তবু চেষ্টা করবো সংক্ষিপ্তভাবে সোনেলায় দেয়ার।
ভালো থাকবেন।
মনির হোসেন মমি
হুম। ধন্যবাদ।
সুরাইয়া পারভিন
আপনার লেখার মাধ্যমে জানতে পারবো এমন কৃর্তিমান ব্যক্তি সম্পর্কে। অপেক্ষায় থাকলাম। শুভ কামনা রইলো আপু❤
রেহানা বীথি
শুভকামনা আপনার জন্যেও
তৌহিদ
লেখাগুলি সোনেলাতেও চাই। সোনেলা সমৃদ্ধ হবে আপনার লেখায় আপু।
রেহানা বীথি
চেষ্টা করবো ভাই।
এস.জেড বাবু
তাঁকে নিয়ে লিখতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছি বার বার। আমার মত একজন সামান্য মানুষ একজন অসামান্য মানুষের কীর্তিময় জীবনকে তুলে ধরার যে সামান্য প্রয়াস করেছি, তা বিহ্বল করে তুলেছে আমাকে।
একজন গুণী মানুষ বেঁচে থাকে অনন্তকাল এমন আগ্রহে।
জন্মদিনের শুভাশিষ রইলো-
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
ভাষাবিজ্ঞানী প্রফেসর আব্দুল হাই সম্পর্কে কিছু লেখার জন্য সম্মতি জানিয়ে অত্যন্ত সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। তবে আপনি খুব সফল ভাবেই আপনার লেখা সমাপ্ত করতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমরা সোনেলার পাঠকরা কিভাবে আপনার এই লেখা পড়তে পারব জানাবেন।
ভাষাবিজ্ঞানী প্রফেসর আব্দুল হাই এর প্রতি জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি,
ভালো থাকুক তিনি ওপাড়ে।
অমর হয়ে থাকবেন তিনি তার কীর্তির জন্য।
আপনার জন্য শুভ কামনা।
রেহানা বীথি
আপনার জন্যও শুভকামনা ভাইয়া।
ছাইরাছ হেলাল
তাঁকে জানার সুযোগ হয়নি। জন্মদিনে তাঁকে সরণ করি শ্রদ্ধায়।
আপনার লেখায়-ই জানতে চাই অনেক কিছু।
রেহানা বীথি
চেষ্টা করবো সোনেলায় দেয়ার।
ভালো থাকবেন।