
১.
কখনও চাড়া খেলেছেন ? চাড়া খেলা কিভাবে খেলে জানেন ? আমি কিন্তু জানি। শৈশবে অনেক খেলেছি। মাটির বাসন ভাঙা চাড়া দিয়ে। সাতটা চাড়া দিয়ে খেলা হয় সাতচাড়া। এটা আমি কম খেলতাম, কারণ এই খেলায় এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষ গায়ে বল ছুঁড়ে মারে। এইসব মারামারিতে আমার খুব ভয়। আমি খেলতাম সিগারেটের খালি প্যাকেট দিয়ে। এটা চাড়া খেলার অন্য ভার্সান। এই খেলায় সানমুন, গোল্ডলিফ, স্টার, নেভী এমন আরো অনেক রকমের সিগারেটের প্যাকেটরে টাকা হিসেবে মূল্যায়ন করা হতো।
খুব ভোরে বন্ধুরা রাস্তায় বেরিয়ে পরতাম। রাস্তায় পরে থাকা প্যাকেট গুলো কার আগে কে কত বেশি সংগ্রহ করতে পারে, ভেতরে ভেতরে এমন একটা প্রতিযোগিতাও চলতো। এমনকি খেলতে যাওয়ার সময়, স্কুলে যাওয়া আসার সময়ও চোখ থাকতো রাস্তায়, ডাস্টবিনে। যদি কোন প্যাকেট পাওয়া যায়!
২.
‘লেখকদের একটা অসাধারণ ক্ষমতা থাকে, তারা বিশেষ কোন মানুষ, বিশেষ কোন মুহূর্তকে হারিয়ে যেতে দেয়না। কলমের কালি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে।’ হুমায়ূন আহমেদও তার শৈশবকে বাঁচিয়ে রেখেছে, তার লেখা ‘কিছু শৈশব’ এর মাধ্যমে। আমি যখন বইটা পড়তেছিলাম। তখন পড়ার সময় কখনও শব্দ করে হেসেছি, কখনও আবেগে আপ্লুত হয়েছি। আবার খুব বেশি অবাকও হয়েছি এই ভেবে যে, মানুষটার শৈশবের সাথে আমার শৈশবের এতো মিল কেন!
এখানে লেখকের সাথে আমার মিলে গেছে লেখকের এমন একদিনের একটা ঘটনা হুবহু দিয়ে দিচ্ছি।
‘গরম পীরের মাজারের সামনে দিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ দেখি রাস্তায় কী যেন চকচক করছে। দূর থেকে থ্রি ক্যাসেল সিগারেটের প্যাকেটের মতো দেখাচ্ছে। আসলেই কি তাই? আমি ছুটে গেলাম। যা ভেবেছি তাই। আমার হাত-পা গেল ঠান্ডা হয়ে। বুক ধ্বক ধ্বক করছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। এত সৌভাগ্য কারো হয়?’
বলে রাখি, লেখক যখন চাড়া খেলতেন তখন সবচে’ দামি ছিল থ্রি ক্যাসেল সিগারেটের প্যাকেট।
আমাদের শৈশব যে কত মধুর ছিলো, কত আনন্দময় ছিলো, আর তা এখন কি পরিমাণ মিস করি, এসব নিয়ে এখন লিখতে ইচ্ছে করেনা। ভাবতে ইচ্ছে করেনা। ভাবলে বুক ভারী হয়ে উঠে। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। লেখকের লাইন গুলো মনে পড়ে। ‘আমরা যখন জীবনের হিসাব মেলাই তখন শৈশবের অলৌকিক আনন্দময় অংশটা বাদ থাকে। বাদ থাকে বলেই লেখক হুমায়ূন আহমেদের অলৌকিক আনন্দময় মুহূর্তের যে তালিকা পত্রিকাওয়ালারা ছাপে তাতে থ্রি ক্যাসেল সিগারেটের প্যাকেট প্রাপ্তির অলৌকিক আনন্দের কথা থাকে না।’
৩১টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
প্রথমত হাজিরা দিলাম শৌশবে
আসিব আমি ফিরে সময় হলে।
মোঃ মজিবর রহমান
ভাই একান্ত অনুভুতি না দিয়া বুক রিভিউতে দেন সম্পাদনা করে।
আকবর হোসেন রবিন
যদিও বুক রিভিউতে ধরাবাঁধা কোন নিয়ম নেই , তারপরেও অন্তত পাঠ প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়। বইটি পড়ার পর কেমন লেগেছে, অল্প কথায় বর্ণনা করতে হয়। কোন কোন ব্যাপার ভাল লেগেছে আর কোন ব্যাপারটা খারাপ লেগেছে এগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হয়। লেখকের লেখার ধরণ কেমন, আগে তার কোনো বই পড়ে থাকলে সেটার সাথেও তুলনা করা যেতে পারে। এইসব বিবেচনা করলে এই লেখাটা কোনভাবেই বুক রিভিউর মধ্যে পড়ে না। এখানে আমি জাস্ট একটা খেলার কথা বলেছি। বইটা পড়ার সময় এই খেলার স্মৃতি মনে পড়েছে। কারণ বইয়ে লেখকও তার একই ধরনের খেলার কথা বর্ণনা করেছেন।
মোঃ মজিবর রহমান
শৈশব সৃতি, শৈশব খেলা এখনকার ছেলেমেয়েদের কপালে জুটবেনা। কারন পেটে থাক্তেই বাবামা তাদের স্কুল রেডি করে রাখে, তাছআড়া শহর জুড়ে কোথায় বা নিরাপদ ঈ সময় খুজে পাবে?
ভাল লাগ্ল।
আকবর হোসেন রবিন
বাচ্চারা সকালে স্কুলে যাচ্ছে। বিকালে কোচিং করে। রাতে বাসায় টিউটর আসে। খেলার আর সময় কই!!! শহরে তো খেলার মাঠও নাই। কি অদ্ভুত তাই না? অথচ আমরা লোকক্রীড়া খেলতে খেলতে বড় হয়েছি। এখনকার বাচ্চারা দুই একটা খেলার নামও বলতে পারেনা।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
মোঃ মজিবর রহমান
সত্যি তাই।
ছাইরাছ হেলাল
হারিয়ে যাওয়া শৈশব স্মৃতি হীরক-দ্যুতি নিয়ে হৃদয়ের গভীরে থেকেই যায়।
লিখুন লিখুন, আর-ও লিখুন।
আকবর হোসেন রবিন
লিখবো লিখবো, আর-ও লিখবো। ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
জিসান শা ইকরাম
আমি খেলেছি, মফস্বল শহর হওয়ায় একটু বেশিই খেলেছি,
মনে করিয়ে দিলেন কত স্মৃতি,
কোথায় সেইসব ছোট বেলার খেলার সাথীরা!
এমন লেখার জন্য ধন্যবাদ ভাই।
শুভ কামনা।
আকবর হোসেন রবিন
শৈশবের স্মৃতি মনে পড়লে ওল্ড স্কুল ব্যান্ডের এই গানটা গাইতে ইচ্ছে করে-
চাঁদমামা আজ বড্ড একা
বড় হয়েছি আমি
রোজ রাতে আর হয়না কথা
হয়না নেয়া আমি
রোজ রাতে আর চাঁদের বুড়ি
কাটেনা চরকা রোজ
ও বুড়ি, তুই আছিস কেমন
হয়না নেওয়া খোঁজ
কোথায় গেলো সে রুপকথার রাত
হাজার গল্প শোনা
রাজার কুমার, কোটাল কুমার, পঙ্খীরাজ
সে ঘোড়া
কেড়ে নিলো কে সে আজব সময়
আমার কাজলা দিদি
কে রে তুই, কোন দৈত্যদানো
সব যে কেড়ে নিলি
কেরে তুই, কেরে তুই
সব সহজ শৈশবকে
বদলে দিলি
কিছু যান্ত্রিক বর্জ্যে
তুই, কে রে তুই
যত বিষাক্ত প্রলোভনে
আমায় ঠেলে দিলি
কোনো এক ভুল স্রোতে
আলাদিন আর জাদুর জীনি
আমায় ডাকছে শোনো
ব্যস্ত আমি ভীষণ রকম
সময় যে নেই কোনো
আলীবাবার দরজা খোলা
চল্লিশ চোর এলে
সিনবাদটা, একলা বসে
আছে সাগর তীরে
সময়টা আজ কেমন যেন
বড় হয়ে গেছি আমি
তারাগুলো আজও মেঘের আড়াল
কোথায় গিয়ে নামি
জিসান শা ইকরাম
ওল্ড স্কুলের এই গানটি নিয়ে এক সময় একটি পোষ্ট এসেছিল সোনেলায়। যিনি পোষ্ট দিয়েছিলেন তিনি সোনেলাতে এখন আর লেখেন না।
আমি সে পোষ্ট নিয়েই একটি ভিডিও আপলোড করেছিলাম ইউ টিউবে।
দেখুন কেমন হয়েছে ভিডিও 🙂
শুভ কামনা।
আকবর হোসেন রবিন
এই গানের ভিডিও ইউটিউবে অনেকে আছে। কিন্তু, আপনার টা দারুণ। ছবি গুলো লিরিক্সের সাথে মিলে গেছে।
জিসান শা ইকরাম
পোস্ট থেকে নেয়া ছবি,
তাই মিলে গেছে।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
রিভিউ পড়ে সিদ্ধান্ত নিলাম এই বইটিও আমি কিনবো। এখানে জীবনের কথা বলা আছে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
আকবর হোসেন রবিন
আমার লেখাটা পড়ে আপনারও পড়ার আগ্রহ হলো, এটা শুনে খুশি হলাম। তবে ভাই আমি এটাকে রিভিউ ক্যাটাগরিতে রাখতে পারলাম না। কারণ, যদিও বুক রিভিউতে ধরাবাঁধা কোন নিয়ম নেই , তারপরেও অন্তত পাঠ প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়। বইটি পড়ার পর কেমন লেগেছে, অল্প কথায় বর্ণনা করতে হয়। কোন কোন ব্যাপার ভাল লেগেছে আর কোন ব্যাপারটা খারাপ লেগেছে এগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হয়। লেখকের লেখার ধরণ কেমন, আগে তার কোনো বই পড়ে থাকলে সেটার সাথেও তুলনা করা যেতে পারে। এইসব বিবেচনা করলে এই লেখাটা বুক রিভিউর মধ্যে পড়ে না। এখানে আমি জাস্ট একটা খেলার কথা বলেছি। বইটা পড়ার সময় এই খেলার স্মৃতি মনে পড়েছে। কারণ বইয়ে লেখকও তার একই ধরনের খেলার কথা বর্ণনা করেছেন।
ঐ যে বললেন না এখানে জীবনের কথা বলা আছে, হ্যাঁ আপনি ধরতে পেরেছেন। বেশি কিছু বলবো না। পড়েন, পড়ার সময় হাসবেন, কাঁদবেন।
ধন্যবাদ ভাই।
মনির হোসেন মমি
আমিও খেলেছি তাস চাড়া দুটোই…তবে আরো আছে । স্মৃতি মনে পড়ে গেল।
আকবর হোসেন রবিন
হ্যাঁ। সবখেলা, অর্থাৎ লোকক্রীড়া নিয়ে একদিন বৃহৎ আকারে লিখবো।
মনির হোসেন মমি
অপেক্ষায় রইলাম। রবিন ভাইয়া আপনি কি সামুতে লিখতেন?
আকবর হোসেন রবিন
সামু কী? আমি দৈনিক আজাদী পত্রিকায় লেখা পাঠায়, তাও মাঝেমধ্যে। আর আগে একটা অনলাইন পোর্টালে কয়েকটা লেখা পাঠিয়েছিলাম। এছাড়া বাকি লেখা সব ফেসবুকে।
বন্ধুরা মিলে একটা লিটল ম্যাগাজিন ছাপিয়েছিলাম।
অন্যকোন ব্লগেও লিখি নাই। সোনেলা-ই প্রথম।
মনির হোসেন মমি
ওআচ্ছা বুঝেছি।অসংখ্য ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
শুধু কি চাড়া, সাত চাড়া খেলা, বোম ফাইট ( বল দিয়ে বিপক্ষকে জোরালো ভাবে মারা), মার্বেল খেলা, বিশেষ করে ক্যাটস আই মার্বেল কালেক্ট করা, রঙ্গিন হলে তো কথায় নেই, ডাংগুলি সহ কত খেলায় না খেলতাম তখন, আহা সেইসব দিনে ফিরিয়ে নিতে গেলেন ভাই, স্মৃতিকাতর হয়ে উঠলাম ভাই।
আকবর হোসেন রবিন
লোকক্রীড়া নিয়ে একদিন বৃহৎ আকারে লিখবো।
ইঞ্জা
অপেক্ষায় রইলাম ভাই
নিতাই বাবু
আপনার লেখা পড়ে ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে গেলাম, আমার ছোটবেলায়। সেসব স্মৃতি মনে পড়ে গেলে অন্তত কিছুক্ষণের হলেও চুপ করে বসে বসে মনের টেলিভিশনের পর্দায় স্মৃতিগুলো দেখতে থাকি।
আপনার লেখা আমার কাছে যেন প্রিয় হয়ে উঠলো। লেখতে থাকুন, পড়তে থাকি।
আকবর হোসেন রবিন
বইটার পিডিএফ পাবেন। পড়ে দেখতে পারেন। একটানে পড়তে পারবেন। হাসতে পারবেন। কাঁদতেও হতে পারে।
ধন্যবাদ দাদা। ভালোবাসা নিবেন।
নীরা সাদীয়া
আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর বুক রিভিউ দেখে মনটা আবার টানছে, এ বইটাও কেনা লাগবে! অথচ আমার বাসায় আর নতিন কোন বই রাখার জায়গা নেই। তবু শখ তো যায় না! কি যে করি।
নীরা সাদীয়া
*নতুন
আকবর হোসেন রবিন
আমার লেখাটা পড়ে আপনারও পড়ার আগ্রহ হলো, এটা শুনে খুশি হলাম। তবে ভাই আমি এটাকে রিভিউ ক্যাটাগরিতে রাখতে পারলাম না। কারণ, যদিও বুক রিভিউতে ধরাবাঁধা কোন নিয়ম নেই , তারপরেও অন্তত পাঠ প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়। বইটি পড়ার পর কেমন লেগেছে, অল্প কথায় বর্ণনা করতে হয়। কোন কোন ব্যাপার ভাল লেগেছে আর কোন ব্যাপারটা খারাপ লেগেছে এগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হয়। লেখকের লেখার ধরণ কেমন, আগে তার কোনো বই পড়ে থাকলে সেটার সাথেও তুলনা করা যেতে পারে। এইসব বিবেচনা করলে এই লেখাটা বুক রিভিউর মধ্যে পড়ে না। এখানে আমি জাস্ট একটা খেলার কথা বলেছি। বইটা পড়ার সময় এই খেলার স্মৃতি মনে পড়েছে। কারণ বইয়ে লেখকও তার একই ধরনের খেলার কথা বর্ণনা করেছেন।
বইটার পিডিএফ পাবেন। পড়ে দেখতে পারেন। একটানে পড়তে পারবেন। হাসতে পারবেন। কাঁদতেও হতে পারে।
তৌহিদ
চারা খেলা আমাদের এখানে টিপু খেলা বলে। তবে আমরা ছোট ছোট চৌকনা কাঠের সাতটি টুকরো দিয়ে খেলতাম। মনে পড়ে গেলো সেই সোনালি শৈশবের দিনগুলি আপনার লেখা পড়ে।
লেখকেরা কখনো মুহূর্তকে হারিয়ে যেতে দেননা, কলমের কালিতে সংরক্ষণ করে রাখেন সেসব স্মৃতি। এটা আসলেই সত্যি।
বইটি পড়ার ইচ্ছে জাগলো।
আকবর হোসেন রবিন
অনলাইনে বইটার পিডিএফ পাবেন। পড়ে দেখতে পারেন। একটানে পড়তে পারবেন। হাসতে পারবেন। হয়তো কাঁদতেও হতে পারে।
তৌহিদ
তথ্যটির জন্য ধন্যবাদ ভাই।