খাঁচা ( অনু গল্প )

সাবিনা ইয়াসমিন ২১ মার্চ ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১২:৫০:৩৫পূর্বাহ্ন গল্প ৩৭ মন্তব্য

রাজা বসে আছেন সিংহাসনে। সভা শুরু হয়েছে দুপুরের পর। মন্ত্রী–সেনাপতি চলে গেছেন সন্ধ্যায়। উজিরের সাথে কথা বলে জানতে পারলেন রাজ্যের পরিবেশ ভালো হলেও প্রজাদের মনে শান্তি নেই। তারা জায়গায়–জায়গায় জটলা বেধে বিক্ষোভের মতো কিছু একটা করতে চাইছে। রাজা চিন্তিত, উজির অধিক চিন্তামগ্ন। বলতে শুরু করলেন উজির সাহেব।

— মহারাজ, এইভাবে আর কতদিন?  প্রজাদের মন খুব খারাপ। তাদের অভিযোগটাও অবহেলা করার মতো নয়।

— কি বলছেন এসব! আমার রাজ্যে কি আমি সবাইকে সমান সুযোগ দিচ্ছি না? দিনে রাতে যার যা প্রয়োজন হয় সব দিয়ে দেই। আমার রাজ্যে কাউকে কোনো খাজনা দিতে হয় না। কেউ অপরাধ করলে তাকে কঠিন সাজা না দিয়ে সুযোগ দেই। অলস প্রজাদেরও কোনো কাজ কর্মের জন্যে তাগাদা দেই না। এতো সুযোগ–সুবিধা আর কোথায় পাবে তারা?

— তা ঠিক বলেছেন। আমাদের রাজ্যে সবাই সবার দায়িত্ব নিজে নিজেই পালন করে। কাউকে কিছু বলে দিতে হয় না। তবে বেশি বেশি কিছুই ভালো না মহারাজ। সুযোগ–সুবিধা বেশি পেয়েই তাদের শ্রমশক্তি কমে গেছে। এই কারণে তাদের অলস মস্তিষ্কে শয়তানের বাসা তৈরী হয়েছে।

— আসলে তাদের অভিযোগটা কি? তারা কি চায়? একটু খুলে বলুন।

— মহারাজ, তারা আপনার মতো হতে চায়। আপনি যা করেন, যা কিছু ভাবেন, তৈরী/ সৃষ্টি করেন তারাও ঐসব করতে চায়। তাদের জন্যে এতো করেন বলেই হয়তো তারা তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে প্রতিদান দিতে চায়। কিন্তু আপনি কিভাবে নিবেন/বুঝবেন তাই বুঝতে পারছে না।

— হুম, বুঝলাম। দুষ্ট প্রজা দমন করা সম্ভব কিন্তু উৎসাহী প্রজা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন আর কষ্টকর। জটিল অবস্থায় পরলাম মনে হচ্ছে।

— কিন্তু এভাবেও চলতে দেয়া যায় না। প্রজাদের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। ভেবে সমস্যার সমাধান দিন মহারাজ।

— হ্যা, বুঝতে পেরেছি আমাকেই সব ঠিক করতে হবে। আপনি প্রজাদের বলুন, আমি গোটা রাজ্য জুড়ে রাস্তা নির্মাণ করতে চাই। সবাই যেন নিজ–নিজ ঘর থেকে ঐ রাস্তার সাথে সংযুক্ত হয়। আর ইট সিমেন্ট যা যা লাগে তাও নিজেরাই যোগাড় করে নেয়। এতে আমার সাথে তাদের যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। আমার সাথে দেখা–সাক্ষাৎ ঠিক মতো করলে তারাও আনন্দে থাকবে।

— জ্বি হুজুর তাই হবে। তবে যাদের নিজস্ব ইট–বালু নেই তাদের কি হবে? তারা কি আপনার দেখা পাবে না?

— পাবে। যাদের নিজেদের কিছু নেই তারা অন্যের থেকে নিয়ে কাজ করবে। বিনিময়ে সাহায্যকারীদের সাথে সু–সম্পর্ক গড়ে তুলবে। তাহলে রাস্তা সহ রাজ্য সুন্দর হয়ে উঠবে।

— ঠিক আছে মহারাজ, তাই হবে। আমি কাল সকালেই ঘোষণা দিয়ে দিবো। আসলেই আপনি মহান, সব সমস্যার সমাধান আপনার কাছেই থাকে। এখন বিদায় নিচ্ছি। শুভ রাত্রি।

— শুভ রাত।

রাজা অন্দরমহলে প্রবেশ করলেন। মনে মনে খুশি। আজ পর্যন্ত তার হুকুম কেউ অমান্য করার সাহস পায়নি। তার রাজ্যে কোনো অবিচার হয়না। মহারাণী খাবার নিয়ে বসে আছেন। খাবার দেখে তার খিদে বেড়ে গেছে। টেবিলে ভাতের সাথে ডিম আর মুরগির মাংস দুটোই আছে। রাজা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন

— রানী, তোমার আজ কি হয়েছে? ডিম–মুরগী দুটো একসাথে রেঁধেছ কেন?

— আর বলবেন না। ডিমই রান্না করতে চেয়েছিলাম। মুরগীর ঘরে গিয়ে দেখি, সে চারটি ডিম পেড়েছিলো। তার একটা ডিম মোরগ ভেঙে ফেলেছে। এতো রাগ হলো, শেষে মোরগটাকে সাজা দেয়ার জন্যে ওকে জবাই করে রেঁধে ফেললাম। ভালো করেছি না?

— হুম, ভালো করেছো। খাওয়া শেষ, চলো ঘুমাই। মশারীটা ঠিকমতো গুজে দাও।

— আপনি মশারী ছাড়া একদিনও ঘুমাতে পারেন না কেন?

— মশারীটাই একমাত্র খাঁচা যেখানে আমি স্বেচ্ছায় বন্দি হতে চাই। বাতি নিভাও, ঘুমাবো।

১৯১৩জন ১৬০২জন

৩৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ