চার বছর পর আজ Mum Show দেখতে গিয়েছিলাম। ওন্টারিও প্রভিন্সের সবচেয়ে বড়ো ক্রিসেনথিমাম শো-ও বলা হয় একে। হ্যামিল্টনের গেইজ পার্ক গ্রিনহাউজে প্রতিবছর ফুলের এই আসর বসে থাকে। আর আমি একে বলি “ফুলের আসর।” ক্রিসেনথিমামের এতো এতো রঙের বাহার, যে মনে হয় যেনো স্বর্গে আছি। স্বর্গ কি এমন, মনে হয় না। ১৯২০ সালে এই শো-এর শুরু হয়। হেমন্তকালীন ফুলের এই আসরে একেকবছর একেকরকম থিম প্রদর্শন করা হয়। চারবছর আগে যখন গিয়েছিলাম, তখন ছিলো সাদা আর কালো ক্রিসেনথিমাম ফুল দিয়ে সাজানো বিশাল বড়ো ফুটবল, অর্থাৎ সে বছর বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা ছিলো। এবারকারটা হলো Kid-friendly carnival theme. প্রবেশদ্বারের সামনেই লেখা ONCE UPON A TOY.
টিকেটের দাম মাত্র সাত ডলার। ভেতরে ঢোকার পরে সময়ই আর মনে থাকেনা যেনো। প্রবাদ আছে না, যারা ফুল ভালোবাসেনা, তারা নাকি মানুষ হত্যা করতে পারে! আমায় দিয়ে মনে হয়না কাউকে খুণ করানো যাবে! ফুল দিয়ে কতো কী যে সাজানো। বাচ্চাদের খেলার সামগ্রীগুলো পর্যন্ত ফুল দিয়ে সাজানো। বিশাল বড়ো একটা সাপলুডুর বোর্ড দেয়ালে ঝুলে আছে দেখলাম এবং অবশ্যই সেটা ফুলের। আর বোর্ডের সামনে চেয়ার-টেবিল, তাতে আসল লুডু বোর্ড রাখা। যাতে শিশুরা এসে খেলতে পারে। ইচ্ছে হচ্ছিলো বসে খেলতে, কিন্তু সাথে কেউ তো নেই। তাই ইচ্ছে বাদ দিলাম। একটা জায়গায় দেখলাম অনেক অনেক এন্টিক খেলনা, পুতুল, গাড়ি, রোবট। না, না ওসব অবশ্য ফুল দিয়ে সাজানো নয়। ওসবের বয়স প্রায় আশি থেকে একশ বছর আগের। ওখানে গিয়ে জানতে পারলাম অনেক কিছুই। ভাবা যায় ২০০ জাতের ক্রিসেনথিমাম থেকে প্রায় ৭৫,০০০ ফুল প্রতিদিন ফোঁটে! শুনে সত্যিই অবাক হয়ে গেছি।
শুধুই কি ফুলের মেলা? সাথে গানের আসরও! গেইজ পার্কের গ্রিন হাউজের ভেতর ফুলের মেলা আর গেইজ পার্কে বিশাল বড়ো স্টেজে লাইভ কনসার্ট শুরু হয় বিকেল চারটা থেকে। যদিও আমার দেখা হয়নি, গিয়েছিলাম দুপুর সাড়ে বারোটায়, তাই। তাছাড়া বিভিন্ন রকমের ইভেন্টও আছে। যেমন, সবুজ বাগানের ভেতর বসে যোগ ব্যায়ামের ইভেন্টটা দারুণ। চারদিকে সবুজ আর সবুজ। তাছাড়া আছে Family Event, যেখানে বিভিন্ন বয়সীদের জন্য বিভিন্ন আয়োজন করা হয়ে থাকে। Face painting, গল্প বলার আসর, Magic Show, Family photo booth, Baloon twisting ইত্যাদি। সত্যি বলতে কী এতো সুন্দর আয়োজনের মধ্যে থাকলে যে কোনো স্থবির জীবনও নেচে ওঠে প্রজাপতির মতো।
Mum Show তে প্রবীণদেরকেই বেশি দেখা যায়, আর শিশু সন্তানসহ মায়েদের। মজা হলো চারিদিকে সাদাদের মেলা, একমাত্র আমি-ই ছিলাম ব্রাউনি। বুঝলাম আমি ছাড়া এখানে বাংলাদেশী তো কেউ নেই-ই, এমনকি নেই ভারতীয়রাও। গিয়েছিলাম একঘন্টার জন্য, কিন্তু ফিরে আসতে মন চাইছিলো না। ইচ্ছে করছিলো আরো কিছুটা সময় যদি থাকতে পারতাম! কিন্তু চাইলেই কী তা আর হয়! তবু সন্তুষ্ট এই ভেবে যে তবু তো দেখা হলো এই দু’ চোখ ভরে! মনে মনে বললাম, আবার আসবো।
হ্যামিল্টন, কানাডা
২৯ অক্টোবর, ২০১৮ ইং।
১৮টি মন্তব্য
পথহারা পাখি
বাহ! খুব সুন্দর তো! (3 -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
ফুল, সে তো সুন্দরই!
ধন্যবাদ!
ছাইরাছ হেলাল
লেখায় ফাঁকি দেয়া ঠিক না!!
তা ব্রাউনিটায় একটু রং মেখে পিক তুলে আমাদের দেখালে মন্দ হতো না।
আহারে প্রজাপতি!! শুধু ডানা নেই, এই যা পার্থক্য!
নীলাঞ্জনা নীলা
ব্রাউনির ছবি দিইনি। রং মাখা ছবি আছে ফেসবুকে। 😀
রংহীন ছবি দেবো না হয় কোনো কালে। 💃
কে বলেছে ডানা নেই, আছে আছে!
দেখার চোখ নেই আপনার। চোখের পাওয়ার কতো এখন আপনার? 😁😎
ছাইরাছ হেলাল
চৌক্ষের পাউয়ার তো আপনার কাছে জমা!
আপনার ল্যাহা পড়ার জন্য।
একটি লাফালাফি-ফালাফালি কবিতা দিন, বাসি না, একদম তাজা।
কতদিন আফনেরে পচাই না!!
দেন দেন ল্যাহা দেন,
নীলাঞ্জনা নীলা
উফ অসহ্য!
নিন, লিখেছি।
যতো খুশী, ইচ্ছে পচাতে চান, পচান। ^:^
মোঃ মজিবর রহমান
আরো কিছু সময় যদি পেতাম
ফুলের মাঝে থাকবার ডুবে থাকতাম
ফুলের মাধুরীতে ডুবে চক্ষু চুড়াতাম।
মনের মত উড়ে বেড়াতাম।
নীলাঞ্জনা নীলা
মজিবর ভাই আসলেই যদি আরোও কিছুক্ষণ থাকতে পারতাম! 🙁
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
আপনার বদলতে কেনাডার অনেক অজানাই জানতে পারছি।আরো লিখুন আপনার জন্য রইল স্বদেশী শাপলা ফুলের শুভ কামনা।
নীলাঞ্জনা নীলা
মনির ভাই কতো ধরণের যে অনুষ্ঠান হয়! সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনা এখন। তাইতো আজকাল সেভাবে আর লিখতে পারিনা।
ভালো থাকবেন।
মাহমুদ আল মেহেদী
আপনার দ্বারা অনেক সুন্দর সুন্দর ভ্রমন কাহিনী অজানা কোন স্থান এর সন্ধান পাবো এ আশা জাগিল মনে এ লেখা পড়ে।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভ্রমণকাহিনী বেশ অনেকগুলোই লিখেছি আমি। ব্লগে আছেও। এখন আর সেভাবে লিখতে পারিনা। মনে থাকেনা কিছু। তাই লেখা হয়ে ওঠেনা।
https://sonelablog.com/%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%9f-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%8b%e0%a6%95%e0%a6%bf-%e0%a6%b9%e0%a6%b2%e0%a7%8b-%e0%a6%ab%e0%a6%b2%e0%a6%b8-%e0%a6%8f-%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%9b/
https://sonelablog.com/%e0%a6%98%e0%a7%81%e0%a6%ae%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a4-%e0%a6%86%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a7%9f%e0%a6%97%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a6%bf-%e0%a6%ab%e0%a7%81%e0%a6%9c%e0%a6%bf-%e0%a6%ae/
লিঙ্ক দিলাম। সময় হলে পড়ে নেবেন।
ধন্যবাদ
জিসান শা ইকরাম
মানুষের ভালো থাকার জন্য কত আয়োজন দেশের বাইরে, আর আমরা যাতে ভাল না থাকতে পারে সে আয়োজন করি।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা যখন কাজ করতাম, আমার ক্লায়েন্টদেরকে দেখতাম রেডি হয়ে বাইরে যেতে। মহিলারা সাজতো, আর পুরুষরাও হেব্বি ড্রেস আপ। বয়স নিয়ে ভাবনা নেই। অনেক কষ্ট তাদের জীবনে, কিন্তু সময়কে এনজয় করা থেকে পিছিয়ে নেই। আমার ভালো লাগে।
ভালো থেকো।
সাবিনা ইয়াসমিন
ফুলের মেলা যে খুব দারুন ছিলো তা ছবি গুলো দেখলেই বোঝা যায় ।আর আপনার লেখায় মেলার চিত্রটা হুবুহু দেখতে পেলাম আপু। (3 -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
ফুল, তা সবসময়ই সুন্দর। আমার খুব ভালো লাগে জল আর সবুজ। ফুল তো অবশ্যই। ইচ্ছে করে গিয়ে বসে থাকি, ঘুরে বেড়াতে। চাইলেই সব কী আর পাওয়া হয়ে ওঠে? তবুও যেটুকু পাই, তার ভেতর আনন্দের কমতি রাখিনা।
ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ!
মায়াবতী
ফুলের না জানি কি এক আকর্ষিক শক্তি আছে আপু যা খুব টানে সব সময় ই। আমরা এই তৃতীয় বিশ্বের মানুষ গুলো কত যে দুর্ভাগা হয়ে এখানে জন্মেছি তা এক মাত্র সৃষ্টিকর্তা ই ভাল জানেন, এখানে বেঁচে থাকাটা ই যেন বাক্সবন্দী। যাই হোক, হতাশা কে আপনার ফুলেল লেখার ছোঁয়ায় পাশ কাটিয়ে মনে মনে ছবির ফুল গুলোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিতে ই মন টা ভরে গেলো আপু। ভাল থাকুন সব সময়। (y)
নীলাঞ্জনা নীলা
দুর্ভাগা বলতে নেই। আমাদের দেশটা অনেক সুন্দর। দেশের বাইরে আছি ২০০৩ সালের ডিসেম্বর থেকে। জীবনের সুবর্ণ সময়গুলো তো কাটিয়েছি ওই দেশেই। কতো কী যে দেখেছি! বেড়িয়েছি, ঘুরেছি, সুন্দরের মাত্রা সীমাহীন। এখানে তো প্রায় সবকিছুই সাজানো, এলোমেলো সুন্দর শুধু আমাদের দেশেই আছে। ভালো করে চেয়ে দেখুন, পেয়ে যাবেন।
আপনিও ভালো থাকুন।