ভুমিকা এবং একটি ছবির কথাঃ
তিনবার ভিসা এবং একবার ট্রানজিট নিয়ে সর্বমোট চার বার গ্রেট ওয়ালের দেশ চীন ভ্রমন করেছি। কোনো ধরনের মানসিক প্রস্তুতি ছাড়াই ভ্রমন কাহিনী লিখতে বসেছি। ভ্রমন কাহিনী লেখায় সবচেয়ে যেটি প্রধান উপাদান তা হচ্ছে ভ্রমন স্থানের বর্ণনা। এখানেই আমার প্রধান সমস্যা, আলসেমিতে আমার ভ্রমন স্থানের কথা কোনো নোট বইতে লিখতে ইচ্ছে করেনা। আমার দৃষ্টি থাকে মানুষের উপরে, স্থান আমার কাছে গৌণ। যেখানেই যাই, আমি মানুষ দেখি, মিলিয়ে নেই কোন স্থানের মানুষ কেমন। আর আমার স্মৃতির যা অবস্থা, তাতে স্থানের বর্ণনা করা আমার কাছে আশা করা উচিৎ হবেনা। তবে যতটা সম্ভব লিখতে চেষ্টা করব।
২০০৯ সনে প্রথম ভ্রমনে যাই চীনে। চীনের ভিসা সংগ্রহ করে দেয় উত্তর কোরিয়া দূতাবাস। মুলত উত্তর কোরিয় সরকারের রাষ্ট্রীয় গেস্ট হিসেবে উত্তর কোরিয়া যাওয়া। উত্তর কোরিয়ায় ঢাকা হতে কোন সরাসরি বিমান নাই বিধায় চীনের ভিসার প্রয়োজনীয়তা। উত্তর কোরিয়া দূতাবাসকে জানিয়েছিলাম যে, আমি ট্রেনে বেজিং হতে পিয়ং ইয়ং যে যাবো দেখতে দেখতে। তাই চীনের ভিসা বাধ্যতামূলক ছিল। চীনের সাথে উত্তর কোরিয় সরকারের সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল থাকায় তারাই চীনের ভিসা ম্যানেজ করে দিয়েছে। ২০১১ সনে আবার যাই চীনে, আবারো উত্তর কোরিয়ার সরকারী গেষ্ট হিসেবে, এবং একই ভাবে আমার চীনের ভিসা হয়ে যায়। ভিসার জন্য চীন দূতাবাসে লাইনে দাঁড়াতে হয়নি এবং কোনো টাকা খরচও হয়নি। তৃতীয় বার যাই ২০১৭ সনে। নিজেই ভিসার ব্যবস্থা করি, টাকা খরচ হয়েছিল এগার হাজার। ২০১৬ সনে দক্ষিন কোরিয়ায় যাই, তখন ট্রানজিট নেই ইচ্ছে করে ২২ ঘন্টার যাতে কুনমিং শহরটা দেখতে পারি। কুনমিং বিমানবন্দরে ট্রানজিট ভিসা নেই।
গ্রেট ওয়ালে যাবার পর এর বিশালতা দেখে অভিভূত হয়ে যাই, কি বিশাল এক নির্মাণ কাজ। গ্রেট ওয়ালের বর্নণা পরে একসময় দেব। ছবির কথা বলি, আমার সফর সঙ্গীদের ছবি তুলে দিচ্ছিলাম আমি। তাঁদের ছবি ভালোই আসছিল। আমার যে ছবি তারা তুলে দিচ্ছিল তা আমার মনমতো হচ্ছেন। ভাবছিলাম কি করা যায়। কিছু দূরে দেখি এক যুগল ক্যামেরা স্ট্যান্ড এ ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলতে নিজেদের মনে। ভাবলাম এরা ভাল ক্যামেরাম্যান। কাছে গিয়ে নিজের নাম, দেশ বলে পরিচিত হলাম। নিউজিল্যান্ডের দুজন এরা। নাম মনে নাই। আমার কিছু ছবি তুলে দেয়ার অনুরোধ করলে, রাজী হয়ে যান তারা। হাসিমুখে মহিলা আমার ক্যামেরা নিলেন। আমি পিছনে গ্রেট ওয়াল রেখে ক্যামেরা দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। মহিলা এভাবে ছবি তুলবেন না। তিনি বললেন গ্রেট ওয়ালের দিকে হেঁটে যেতে, ক্যামেরা থাকবে আমার পিছনে। আরে কি বলে ঐ মহিলা? আমি যে গ্রেট ওয়ালে এসেছি তা বুঝাতে হবে না? কিন্তু তিনি সামনের ফটো তুলবেনই না। অগত্যা কি আর করা তার কথা মত হাটা শুরু করলাম। তিনি এই অবস্থায় ছবি তুললেন। ছবি তোলার পরে আমার অখুশি মুখ দেখে বললেন ‘ যারা ফটো বুঝে তাঁদেরকে তোমার এই ছবি দেখিও, তোমার মুখে তখন হাসি ফুটবে।’ কষ্ট করে মুখে হাসি এনে ধন্যবাদ দিয়ে তার হাত থেকে ক্যামেরা নিলাম।
কয়েকজন ফটোগ্রাফারকে এই ছবিটা দেখিয়েছি দেশে ফিরে, সবাই বলেছেন অসাধারন এক ছবি এটি। মন ভাল হয়ে যায় আমার। অনলাইনের সমস্ত আইডিতে এই ছবিটি দিয়েছি তখন।
এখনো আমাকে এই ছবিটায় টানে,
২৬টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
ছবিটি সত্যিই অসাধারণ, অজানা ফটোগ্রাফার অশেষ ধন্যবাদ।
আমরা গ্রেটওয়ালের বর্ণনার অপেক্ষায় রইলাম।
প্রত্যেকটি পর্যটক তার নিজের নিজস্ব দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে ভ্রমন অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
আপনিও আপনার মতই লিখবেন।
জিসান শা ইকরাম
গ্রেট ওয়ালের বর্ননা দেব আমি আমার মত করেই।
ধন্যবাদ উৎসাহ দেয়ার জন্য।
নীলাঞ্জনা নীলা
সেলফোন দিয়ে অবশেষে প্রবেশ করতে পারলাম সোনেলায়।
ছবির কাহিনী তাহলে জানলাম। এবারে অপেক্ষা গ্রেটওয়ালের। আমি হিংসিত, কবে যে চায়না যাবো!
তাড়াতাড়ি পরের পর্ব দাও।
জিসান শা ইকরাম
গ্রেট ওয়ালের কথা আর এক পর্বের পরে আসবে নাতনী,
সময় করে একবার ঘুরে আয় নাতনী, জীবন দেখা বাকি রাখবি কেন?
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা পরের পর্ব দিচ্ছো না কেন? :@
জিসান শা ইকরাম
সময়ই পাচ্ছি না লেখার,
যখন সময় পাই তখন অনেক রাত হয়ে যায়।
চেষ্টা করছি পরের পর্ব দেয়ার অপ্ল দিনের মধ্যেই।
ইঞ্জা
আসলেই ভাইজান, মন ভালো হয়ে যাওয়ার মতোই ছবি, যিনি তুলেছেন উনি আসলেই ফটোমুড বুঝেন।
চায়না ভ্রমণে যাদের অভিজ্ঞতা আছে শুধু তারাই বলতে পারে এর মজা কি, এর প্রতিটি শহরই আলাদা মূল্যায়ন রাখে, এর ইতিহাস এতোই বড় যে একটা বইয়ে এই ইতিহাসের বর্ণনা দেওয়া প্রায় অসম্ভব আর আপনার মতোই আমার ব্যস্ততা দেয়না আমার অবসর, ফলশ্রুতিতে ভালো করে যে ঘুরে দেখবো তা সম্ভব হয়না। ;(
জিসান শা ইকরাম
আপনার সাথে একবার চায়না যাবার ইচ্ছে আছে। এই বছর আমার চায়না যাবার কোনো প্রগ্রাম নেই, আপনি গেলে জানিয়েন, যাবো একসাথে।
ইঞ্জা
ইনশা আল্লাহ্ ভাইজান, একদিন দুজনেই যাবো।
মায়াবতী
ভ্রমন কাহিনী পড়তে আমার সব সময় ই খুব ভাল লাগে তার উপর আপনি যেমন রসিয়ে রসিয়ে লিখেন তা তে তো আমার বত্রিশ বের হয়ে আসে । :D) জলদি চাই এর পরের পর্ব গুলো …
জিসান শা ইকরাম
লেখা যখন শুরু করেছি, দিতে থাকবো একটার পর একটা পর্ব,
শুভ কামনা।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ছবিটা সত্যিই অসাধারন।
বিদেশ বিভুয়ে ভাই
পরের কাহিনী চাই -{@
জিসান শা ইকরাম
পরের পর্ব আসিতেছে 🙂
তৌহিদ ইসলাম
লেখা এবং ছবি দুটোই অসাধারন। ভ্রমন কাহিনী আমার খুব প্রিয় একটি বিষয় ভাইয়া। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
জিসান শা ইকরাম
সময় পাচ্ছি না আসলে লেখার, দেয়ার চেষ্টা করব দ্রুত।
গালিবা ইয়াসমিন
ছবি আর লিখা দু’টাই চমৎকার :c
জিসান শা ইকরাম
ভ্রমন কাহিনী কেবল শুরু করলাম, ভাল লাগলে বলবেন, না লাগলেও বলবেন 🙂
শুন্য শুন্যালয়
পড়েছি এটা আগে? চেনা চেনা লাগলো যেন। ছবিটা সত্যিই অসাধারণ একটা ছবি। এটা সত্যিই আপনি? 🙂
জিসান শা ইকরাম
না পড়েননি, ছবিটি পরিচিত হতে পারে, কারন এটি আমি প্রফাইল পিকচার দিয়েছিলাম সমস্ত স্থানে 🙂
আমি তো আমি না, ক্যামনে কই এইটা আমি? 😀
সাবিনা ইয়াসমিন
গল্পটি ধারাবাহিক হওয়ার কথা ছিলো।পরের পর্ব খুজে পেলাম না।লেখক কি পাঠকদের অধির আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়ে তারপর লিখবেন !!
জিসান শা ইকরাম
আসলেই এটি ধারাবাহিক হবার কথা ছিল।
এই একটি পর্বই দিয়েছি, নিজের অসুস্থতা এবং ব্যস্ততার জন্য পরের পর্ব লেখা হয়ে ওঠেনি।
আর বেশিদিন অপেক্ষা করাবো না 🙂
সোনেলায় স্বাগতম মন্তব্য নিয়ে আসার জন্য -{@
শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
নতুন কোনো ভ্রমনে যাওয়ার আগেই লিখে ফেলুন।নয়তো ভুলে যাবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ মন্তব্য এপ্রুভ করায়।
জিসান শা ইকরাম
এপ্রুভ করেছেন এক মডারেটর, তবে আমি তাঁকে চিনি 🙂
লেখা দেয়া আরম্ভ করুন ম্যাডাম।
কামাল উদ্দিন
কোন একদিন হয়তো আমিও থাকবো সোনেলা আড্ডা বিলাসে
কামাল উদ্দিন
(ভুল জায়গায় মন্তব্য করে ফেলেছি ভাই, কিছু মনে করবেন না)
গ্রেট ওয়াল দেকার আশায় দিন গুনছি আমি……………..