তুমি চিন্তা করো না আমার মত তোমার সর্বনাশ হতে দেবো না।তুমি এখন বাড়ি যেতে পারবে।আমি তোমাকে ঘর থেকে বের করে দেয়।তুমি এখনি পালিয়ে যাও।
আমি তার কথা শুনে একটু অভয় পেলাম,আর তাকে বললাম আমার কাছে তো কোন টাকা নেই আর আমি তো রাস্তা ঘাট কিছু চিনি না।
আমি সব ওকে দিয়ে দিয়েছি।নীলা বলল টাকা নিয়ে চিন্তা করো না,আমি দিচ্ছি তুমি যাও এখনি। আর রাস্তা ঘাট চিনতে হবে না,তুমি বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা একটা সিএনজি অথবা একটা ট্যাক্সি নিয়ে বাসষ্ট্যান্ড যাবা,
ঐখান হতে বাস ধরে চলে যাবে।আর পথে সমস্যা হলে মানুষ দের বলবে , কেমন ভালো থেকো বোন যাও,আর আমার জন্য ভেবো না ,আমাকে ও মেরে ফেলবে না।
তুমি যাও।আমি বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটা শুরু করলাম,খুব দ্রুত হেঁটে বড় রাস্তায় উঠলাম,কিন্তু কিছুই পাচ্ছিলাম না এত রাতে।তাই যে দিকে গাড়ি যাচ্ছে সেই দিকে হাঁটা শুরু করলাম।
আমার এই সীমানা হতে পালাতে হবে।ধরা পড়লে আমার সব শেষ।আর হাঁটতে হাঁটতে একটা রিক্সা পেলাম তাকে বললাম আমাকে বাসষ্ট্যান্ড নিয়ে যেতে সে আমাকে নিয়ে যাচ্ছিলো পথে,
ছিনতাই কারী আমার টাকা নিয়ে গেল আর টাকা নেই বলে বাধ্য হয়ে রিক্সা ও ছেড়ে দিতে হলো।আর তখনই আপনাকে দেখলাম আপনি যখন ঐ মেয়েদের বলছিলেন আমি ঐ টাইপ না।
তখন আপনাকে ভালো মানুষ ভেবে আপনার পিছন পিছন হাঁটা শুরু করেছিলাম।
আমি এতক্ষণ চুপচাপ এই ঘটনা শুনছিলাম আর সিগারেট খাচ্ছিলাম। একটা কথা ও বলি নাই। আমি আসলে বুঝার চেষ্টা করছিলাম,মেয়েটার কথার ভঙ্গি দেখে ঘটনা টা কি সত্যি কিনা।
এখন মনে হচ্ছে ঘটনা সত্যি কারন সে প্রতারক হলে এতক্ষণ তার দলে লোকজন চলে আসতো আর আমার সর্বশ কেড়ে নেবার চেষ্টা করতো,যেহেতু এসে নাই সেহেতু মেয়েটিকে বিশ্বাস করা যাই।
তাই আমি তাকে অভয় দিয়ে বললাম আপনি কোন চিন্তা করবেন না।আমি আপনাকে নিরাপদে বাসে তুলে দেবো,আর তাতে ও যদি না হয় আমি নিজে আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌছায় দিয়ে আসবো।
এখন বলেন আপনি যাবেন কোথায় ?আর চলুন আগে কিছু খাবেন। আর আমাকে কি বিশ্বাস হয়।যদি হয় তবে কান্না থামিয়ে নির্ভয়ে আমার সাথে চলেন।
মিথিলা তার ঘুমটা সরিয়ে ওড়না দিয়ে চোখ মুছতে যাওয়ার সময় তার মুখ খানা দেখলাম খুবই সুন্দর আর মায়াবী একটা চেহারা যে কেউ দেখলে প্রথম দেখায় তার প্রেমে পড়ে যাবে।
কিন্তু আমি হিমু হতে চাই তাই ঐ চিন্তা মাথা হতে বাদ দিলাম,তবে আমার অবচেতন মন বলছিলো এমন একটা মেয়ে জীবন সঙ্গিনী হলে আর কিছু চাওয়ার নেই।
আমি কি সব হাবিজাবি চিন্তা করছি নিজে কে নিজে ধমক দিলাম। আর তাকে নিয়ে হাঁটা ধরলাম,আমার পরিচিত হোটেলে নিয়ে গেলাম,
সেখানে তাকে খাওয়ালাম আর হোটেল মালিকের থেকে কিছূ টাকা নিয়ে তাকে বাসষ্ট্যান্ডে নিয়ে গেলাম।আর যাওয়ার সময় তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি যাবেন কোথায় ?
বাসায় যাবেন না অন্য কোথাও ? মেয়েটি একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে বললো জানি না মাথায় কিছু আসছে না,বাড়িতে ফিরে যাবোনা।মামার বাড়ি যাবো।
আমি তখন মনে মনে বললাম তুমি যেও না আমার সাথে থেকে যাও,আমাকে বিশ্বাস করতে পারো আমি প্রতারক নই। আমি এই রকম একজন মায়াবতী কে খুঁজছিলাম।
তুমি থাকলে আমার হারানো স্বপ্ন গুলো আবার ফিরে পাবো।আর আমি স্বাভাবিক জিবন-যাপন করা শুরু করবো।
কিন্তু আবার নিজেকে ধমক দিয়ে বললাম এই আমি কী ভাবছি আমি না মহাপুরুষ, আবেগ, মায়াহীন হিমু হবো।
আমি তো সাধনা ক্রছি,আমার এই সাধনা নষ্ট হতে দেয়া যাবে না।এই ভেবে আমি আবার আগের মত ভাবলেশহীন হয়ে পড়লাম।
আর তাকে নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে গিয়ে বসে রইলাম সকাল হবার অপেক্ষায়। অবশেষে ভোরের আলো ফুটলো,আমি তার জন্য টিকিট কেটে তাকে বাসে বসিয়ে দিলাম।
আর তার জন্য কিছু শুকনো খাবার কিনে আর অবশিষ্ট টাকা গুলো তাকে দিয়ে,বাস থেকে বিদায় নিয়ে নেমে পড়লাম,তারপর আবার তার জানালার কাছে গিয়ে।
তাকে শুভকামনা জানালাম,আর বললাম এইভাবে আর অপরিচিত কাউকে বিশ্বাস করবেন না।আর এই রকম ভুল সিদ্ধান্ত নেবেন না।আপনার ভাগ্য ভালো আমাকে পেয়েছেন।
না হলে আল্লাহ জানে আপনার কি হতো।ভালো থাকবেন।কথা গুলো বলার সময় বার বার আটকে যাচ্ছিলো।খুব বলতে ইচ্ছে করছিলো থেকে গেলে কী হয় না।
আমি আপনাকে অনেক গুলো ভালো সময় দেবার চেষ্টা করবো।আপনার সব কষ্ট গুলো মুছে আপনাকে আনন্দের হাসি হাসাতে শিখাতাম।
কিন্তু আমি হিমু হবার পরিকল্পনা আছি তাই বলতে গিয়ে ও বলতে পারলাম না।
আর সে ও ছল ছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো,সে ও মনে হয় বলতে চেয়েছিলো আমাকে কিছু কিন্তু আমার ভাবলেশহীনের জন্য বলতে পারে নাই।
শুধু এই টুকু বললো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে সাহায্য করার জন্য,ভালো থাকবেন আপনিও।
বাস চলা শুরু করলো আমি দাঁড়িয়ে রইলাম আর তাকিয়ে থাকলাম বাসের দিকে।একবার মন বলে দৌড়ে গিয়ে বাসে উঠে বলি আমি ও যাবো তোমার সাথে, তুমি কি আমায় বিশ্বাস করো ?
যদি করো তাহলে আমার সাথে বাকী টা জীবন পার করতে পারবে ?
কিন্তু না আমি পারলাম না।আমি হিমু হতে চাই মিথিলা তাই আমি বলতে পারি নাই।
আমি তোমার মায়া জড়াতে পারি নাই।শুধু এইটুকু বলি যেখানে থাকো ভালো থেকো অনেক শুভকামনা।আর বোকামি করবে না।
আর এইভাবে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসবে না।আর অপরিচিত কাউকে এত বিশ্বাস ও করবে না।
মনে মনে কথা গুলো বললাম আমি।না সকাল হয়ে গেছে।আমার এখন ঘুমাতে হবে।হিমুরা সকালে জেগে থাকে না।যাই ঘুমায়।
বিঃদ্রঃ এই গল্প টা সত্য ঘটনা অবলম্বনে। যত টুকু পেরেছি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ভুল – ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে ভালো থাকবেন।।
১৫টি মন্তব্য
খসড়া
খুব ভাল লাগল আবার বেশ কষ্ট পেলাম। কষ্ট ঠিক না একটা অদ্ভুত শুন্যতাবোধ। তবে আবেগ তাড়িত কোন সিদ্ধান্ত ঠিক হয় না তাই সাধুবাদ দেই আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। চলছে হিমু চলুক। 🙂
নিশিথের নিশাচর
ধন্যবাদ ভ্রাতা কষ্ট করে পুরো গল্প টা পড়ার জন্য। আমি হিমু হতে চাই তাই কোন আবেগে জড়াতে চাই না।
স্বপন দাস
শুন্যতা বোধ করছি ।। কেন হতে হবে হিমু ??
নিশিথের নিশাচর
হিমু হতে হবে আমাকে সবাই তো আবেগ ভালোবাসায় জড়াতে চাই।
আমি না হয় একটু অন্য রকম হয়ে বেঁচে থাকি।
ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।
আদিব আদ্নান
সত্য ঘটনা জেনে বেশ আগ্রহ বোধ করছি ।
নিশিথের নিশাচর
বলুন কী আগ্রহ প্রকাশ করতে চান।
ক'রেখেলা_কাটেবেলা
হুমায়ূন সহেবের হিমু মানবিক গুণ সম্পন্ন এক চরিত্র | নব্য হিমুর মধ্যেও এই বিশেষ গুণ দেখতে পাচ্ছি | ধন্য হিমুর সাধনা,- “সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই”, কথাগুলো বোধহয় হিমুদের কথা ভেবেই লেখা হয়েছিল | মানুষকে ভালো না বাসলে হিমু হওয়া যাবে না | চলুক এই ভলোবাসা … ভলোবাসা দীর্ঘজীবি হোক |
নিশিথের নিশাচর
ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।
নীল প্রান্তর
সত্য ঘটনা জেনে পুরা লিখাটা পরলাম ।
চলতে থাক হিমু । আর আমি চাই তুই যেন কোন আবেগে জরিয়ে না পরিস ।
সাথে সাথে এটা শুনে ভাল লাগলো যে তুই এখন হিমু হতে চাস তাই কোন আবেগে জড়াতে চাস না ।
সাধুবাদ জানাই তোকে ।
নিশিথের নিশাচর
তোকে ও সাধুবাদ জানাই মামু , আমি কোন আবেগে জড়ায় নাই , আর জড়াবো না।
জিসান শা ইকরাম
লেখাটা বড় হলেও লেখার গুনের কারনে পড়ে ফেলেছি দ্রুত
সুন্দর উপাস্থপনা
এমনই তো হয়— সমাজে ।
নিশিথের নিশাচর
ধন্যবাদ ভ্রাতা কষ্ট করে পড়ার জন্য । আমাদের সমাজে এর থেকে আরো খারাপ কাজ হয়।
কিন্তু আমরা দেখে ও না দেখার ভান করে থাকি।
বনলতা সেন
লেখাটি ভালই ।
হিমু হতেই হবে , এটা ঠিক নয় ।
মিসু
এমনি প্রতারনার মাধ্যমে খারাপ পরিবেশে চলে যায় কত মেয়ে 🙁 ভালো লিখেছেন ভাই -{@ (y)