চেতনা :-
এক অন্যরকম যাপনচিত্র ওকে ঘিরে। ওর চাওয়ার কাছে কোলাহলের প্রাচুর্য আর মায়াকভস্কির কবিতা মিলেমিশে একাকার। ঋদ্ধ মননশীলতার শ্বাসমূল এখন সিজোফ্রেনিক কল্পনাকে ছাড়িয়ে, চেতনাকে বিদ্ধ করা এক এপিলেপটিক জগতে পোক্ত করে নিয়েছে। এখন এই ‘আমি’র মধ্যেই ওর জীবনবেদ। কখনো আবার এনার্কিষ্ট সম্প্রদায়ভুক্ত হয়েও বেঁচে থাকে। ও জানেনা ওর পাশে কে থাকে আর কাছেই বা কে! ওর মুখোমুখি অজস্র মুখ, কিন্তু অন্দরের কক্ষে সে একলাই।
বন্ধন :-
আইসোটোপ ঘের দেয়া ঘরও একদিন জলপেইন্টিং-এর বিরান শূণ্যতার জলছাপ দাগ পড়ে যেতে পারে, যায়ও। নষ্টালজিয়া ভোর চলন্ত রাতের ট্রেনে একেকটি প্রহর পার করে অন্য কোনো ষ্টেশনে ক্ষণিক বিরতির পর আবার ছুটে চলে। ওই বিরতির নামই স্মৃতি। ও এসবের সবই জানে। এক পূর্ণাঙ্গ পূর্ণ সংখ্যা শূণ্য, তার থেকে কিভাবে অপূর্ণ সংখ্যায় ছুটতে থাকে। অস্তিত্ত্বহীনতাই যে আদতে সম্পূর্ণতা ও এটাও জানে!
অভিনয় :-
আসলে ও নিজেরই এক গল্পের গল্পকার। “Sing, of delight drink deep”—মায়াকভস্কির সঠিক অনুবাদ করতে না পেরে ওই বাক্যেই সারেগামা সুর ভাজে। ও এক গল্পেরই গল্প। কি অদ্ভূত, তাই না? একেকটি চরিত্রের মুখের উপর সেই একই চোখ, নাক, ঠোঁট, মুখ; কেবল ওরই এসব কিছু নেই। ঝিমিয়ে পড়া নৈঃশব্দ খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায় তখনই, যখন ওর অদৃশ্যর দৃশ্যতে আলো এসে আলিঙ্গন করে।
মূলকথা :-
ওর যাপন-চিত্রে বিযুক্ত সম্পর্কের দহন আছে। নিঃশ্বাস আছে, কেবল স্বস্তি নেই। অহঙ্কার বেশীক্ষণ আকাশ ছুঁয়ে থাকতে পারেনা, মাটিতেই নেমে আসে। মিথ্যের খেলায় জীবন বেলুনের মতো ওর। এক এক করে প্রকাশ হচ্ছে ওর মুখ। কিন্তু ও জানেনা শুধু এটুকু, মাথার ওপর ছায়ার চেয়ে পাশে থাকা হাতের ছোঁয়ায় কতো প্রাণশক্তি! আমি দেখি, আর বলি ওকে, দূরের তারাদের আলোয় আকাশ সাজে, কিন্তু মাটি নয়।
======================================================
**মাথার ভেতর কতো কি যে আসে! অনেক রকমের কাহিনী, চোখের সামনে কতোধরণের মানুষ। একেকজন একেকরকম। সবাই ছুটছে এক অজানা শূণ্যের দিকেই। এই লেখাটিকে গল্প হিসেবেও ধরতে পারেন, আবার গদ্য-কাব্য হিসেবেও। এভাবে এই প্রথম লিখলাম। এখানে চরিত্রের নামই “ও।” এই “ও” হলো এমন একটি মিথ্যে অহঙ্কারযুক্ত অস্তিত্ব, যার কোনো মুখ নেই। কিন্তু প্রাণ আছে।**—–২০১৬ সালের শেষ লেখা এটি।
হ্যামিল্টন, কানাডা
১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ইং।
২৬টি মন্তব্য
আলমগীর
ভাল লিখেছেন তো! লেখাগুলো সংগ্রহে রাখার মত। চালিয়ে যান…..আমি আছ আপনার সাথে..
নীলাঞ্জনা নীলা
কথাগুলো মনের এতো গভীর থেকে এসেছিলো যে, কখন কিভাবে যে লিখেছি নিজেও বুঝে উঠতে পারিনি।
অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটির পাশে থাকার জন্য।
ইঞ্জা
মাথা ঘুরাচ্ছে, দুইবার পরার পর বামের একটা দাঁত খুলে পড়ে গেল, ভাবছি কি কমেন্ট করবো, আপু ভাইয়ের দোয়া রইল।
নীলাঞ্জনা নীলা
ও হ্যান্ডপাম্প ভাই সবশেষে তো মানেটা বলেই দিলাম। আমাদের সবার মধ্যে এমন একজনের বাস যার কোনো আলাদা চেহারা নেই। আমরাই সেই একজনকে ধারণ করি। আর সেই একজনের ভেতর থাকে ভালো থেকে খারাপ সবটুকুই। যে কিনা ধারণ করে আনন্দ-হাসি-দুঃখ-কষ্ট-ক্ষোভ-অহঙ্কার ইত্যাদি। আমি লিখেছি মিথ্যে অহঙ্কার করা একটি অস্তিত্ব নিয়ে। আর সেই অস্তিত্বের কোনো নাম দেইনি, “ও” বলে সম্বোধন করেছি। আসলে ভ্লাদিমির মায়াকভস্কির কবিতার অনুবাদ পড়ছিলাম।
বোঝাতে পারলাম? 😀
ভালো থাকুন।
ইঞ্জা
(y) 😀
নীলাঞ্জনা নীলা
😀 -{@
মিষ্টি জিন
নীলাদি,অনেক কিছু বুঝলাম।
বুঝলাম আমি যেমন তুই নিয়া আছি তুমি তেমন ও নিয়া আছো। 😀
সব মাথার উপ্রে দিয়া গেল।
কুবিরাজ ,নীলাদী কে গুরু কে শিষ্য বুঝতেছি না।
অনেক ভাল লিখেছো।
^:^ ^:^
নীলাঞ্জনা নীলা
মিষ্টি আপু দারুণ মন্তব্য। হাসতে হাসতে আমার পেটে ব্যথা হয়ে গেছে।
মাথার উপ্রে দিয়ে যাওয়ার মতো লিখেছি? কি যে মরণ! বুঝছি এখন থেকে আর ভেবে-চিন্তে লিখবো না। যা মনে আসে সেসবই।
আমি-তুমি, তুমি-আমি চিরদিনের আমরা
আমি মৌমাছি, তুমি হুল ফোঁটানো ভোমরা। 😀
কুবিরাজ ভাইয়ের কাছে আমি তো নস্যি!
ভালো থেকো আপু।
আবু খায়ের আনিছ
ও এর অনেক অর্থ করা যায় এখানে, কিছুই করছিনা না জেনে।
নীলাঞ্জনা নীলা
আনিছ ভাইয়া আমি হ্যান্ডপাম্প ভাইয়ার মন্তব্যে যা লিখেছি সেটাই এখানে তুলে দিচ্ছি। কেমন?
আমাদের সবার মধ্যে এমন একজনের বাস যার কোনো আলাদা চেহারা নেই। আমরা সেই একজনকে ধারণ করি। আর সেই একজনের ভেতর থাকে ভালো থেকে খারাপ সবটুকুই। যে কিনা ধারণ করে আনন্দ-হাসি-দুঃখ-কষ্ট-ক্ষোভ-অহঙ্কার ইত্যাদি। আমি লিখেছি মিথ্যে অহঙ্কার করা একটি অস্তিত্ব নিয়ে। আর সেই অস্তিত্বের কোনো নাম দেইনি, “ও” বলে সম্বোধন করেছি। আসলে ভ্লাদিমির মায়াকভস্কির কবিতার অনুবাদ পড়ছিলাম।
এবারে আপনি আপনার “ও”-এর অর্থ বলুন। শুনি এবং জেনে রাখি।
ছাইরাছ হেলাল
বাহ্, এই তো চাই, লেডিগুরু এবার স্বরূপে ধরায় নেমে এসেছেন।
চুল বা দাঁত পড়ে বা নড়ে যাবে তা কিন্তু বলছি না।
মায়াকোভস্কির কবিতা এখানেও একটু পোষ্টাইয়েন, পড়ুমনে।
যে কোন সম্পর্কের যাপন-চিত্রে বাহির-ভিতর যেমন থাকে তেমন থাকে বাদানুবাদের দ্বন্দ্ব, চাওয়-পাওয়া,
না পাওয়াও, অবশ্য স্বপ্নের পাহাড় ডিঙ্গিয়ে ধরায় নেমে আসতেই হয়,
কী না কী কইলাম, আর কী বুঝলাম কে জানে!!
নীলাঞ্জনা নীলা
আপনার কাছে আমি নস্যি। এই লেখা আপনাকে বোঝাবো, সেই স্পর্ধা নেই আমার।
মায়াকভস্কির কবিতা অনুবাদ পড়ছিলাম কুবিরাজ ভাই। সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের অনুবাদ করা এই কবিতাটি দিচ্ছি,
রাত একটা বেজে গেছে – ভ্লাদিমির মায়াকভস্কি
—————————————————
রাত একটা বেজে গেছে। তুমি নিশ্চয় শুয়ে পড়েছ।
সারা রাত জুড়ে রূপো বয়ে নিয়ে যাচ্ছে ছায়াপথ।
তোমাকে জাগাবার বা অসুবিধায় ফেলার কোনো কারণ নেই আমার।
আর সবাই যেমন বলে, ঘটনার ফাইল তো বন্ধ হয়ে গেছে
প্রতিদিনের হয়রানিতে প্রেমের নৌকো ভেঙে ছারখার।
আমার ও তোমার এবার ছাড়াছাড়ি। তাহলে দুশ্চিন্তা কেন
নিজেদের দুঃখ ব্যথা ও আঘাতকে সামাল দেবার?
অবাক হয়ে দ্যাখো, পৃথিবীতে থিতিয়ে-আসা এই নৈঃশব্দ্য।
নক্ষত্রের প্রশংসা শুনে আকাশকে গুটিয়ে নিচ্ছে রাত।
এরকম সময়ে, একজন কথা বলার জন্য উঠে দাঁড়ায়
সময়, ইতিহাস আর সমগ্র সৃষ্টির সঙ্গে।——–
এখন আমার এভাবেই সময় কাটে কুবিরাজ ভাই। অনেক কিছু পড়ি, বই এবং গুগল থেকে। বুঝেছেন? 😀
ছাইরাছ হেলাল
সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ আমার প্রিয় কবি, ভাবছি এবারের মেলার সময় তার সব কিনে ফেলব।
পড়ুন পড়ুন আমাদেরও সাথে রাখুন।
নীলাঞ্জনা নীলা
সুব্রত অগাস্টিন প্রিয় কবি তো হবেই। উনারটা বুঝতে গেলেও মাথা চুলকাতে হয় অনেক। ^:^
নিহারীকা জান্নাত
এত্ত কডিন ক্যারে? কিচ্চু বুঝি না ^:^
নীলাঞ্জনা নীলা
ইস কি কষ্ট দিলাম! আর এভাবে মাথা চুলকাবেন না। মানেটা বলছি।
আমাদের সবার মধ্যে এমন একজনের বাস যার কোনো আলাদা চেহারা নেই। আমরা সেই একজনকে ধারণ করি। আর সেই একজনের ভেতর থাকে ভালো থেকে খারাপ সবটুকুই। যে কিনা ধারণ করে আনন্দ-হাসি-দুঃখ-কষ্ট-ক্ষোভ-অহঙ্কার ইত্যাদি। আমি লিখেছি মিথ্যে অহঙ্কার করা একটি অস্তিত্ব নিয়ে। আর সেই অস্তিত্বের কোনো নাম দেইনি, “ও” বলে সম্বোধন করেছি। আসলে ভ্লাদিমির মায়াকভস্কির কবিতার অনুবাদ পড়ছিলাম।
ভালো থাকবেন নিহারীকা।
নিহারীকা জান্নাত
এতক্ষণে মাথায় কিছু ঢুকলো 😀
কষ্ট করে বুঝানোর জন্য ধন্যবাদ আপা।
নীলাঞ্জনা নীলা
ধন্যবাদ তো আপনার প্রাপ্য। লেখাটির পাশে ছিলেন।
ভালো থাকুন। 🙂
নাসির সারওয়ার
বাহ্, কি সৌন্দর্য। শেষমেষ সোনাদের নিয়ে পাগল পাগল খেলা!
বেশি বোঝা ভালুনা। গুরুজনের কথাতো মানতেই হয়।
নীলাঞ্জনা নীলা
বেশী বোঝা ভালুনা আমিও জানি। কিন্তু আপনি যে বুঝেছেন সেটাও অনেক ভালো করেই জানি।
পাগলের আর কাজ কি পাগলামী করা ছাড়া? এই পাগলামী আমায় সহজে ছাড়বে না মনে হয় ভাইয়ূ।
অনেকদিন পর আমার মৌলিক পোষ্টে আপনার মন্তব্য ভালো লাগালো।
ভালো থাকুন। নতূন বছরের শুভেচ্ছা।
মৌনতা রিতু
অহংকার কেন এতো এসব ‘ও’দের।
শোন আপু, আমি এখন এসব ‘ও’দের উল্টা দিকে চলি।
মুই এক আধটু এহন ভাব দেখানো শুরু করছি।
যে যেমন তার সাথে তেমন।
আমার বান্ধবী মিতুর মতো বলি,”যেমন যেমন তেমন তেমন,
কান তপালে বোঁচা ঢাহন”।
এহন বইঝা লও।
নীলাঞ্জনা নীলা
শান্ত-সুন্দরী এই “ও” নামক অহঙ্কার আমাদের সবার মধ্যেই আছে। আমরা কেউ তাকে জাগিয়ে রাখি, কেউ বেশী পাত্তা দেই, কেউবা ঘুম থেকেই উঠতে দেয়না, আর কেউ কেউ একেবারেই পাত্তা দেয়না। কিন্তু প্রতিটি মানুষের মধ্যে অহঙ্কার থাকেই।
যেমন আমার অহঙ্কার আমার বন্ধুরা। এ জীবনে দারুণ কিছু বন্ধু পেয়েছি, যারা সবসময় আমার পাশেই থাকে। দূরত্ব হাজার কিলোমিটার হলেও, মনের খুব কাছে।
তয় এইডা আমিও করি। মনু ভাব দেখাইলে দেখাক তাতে আমার কি! আমি আমার ভাব লইয়া থাকি। 😀
আইলে ওয়েলকাম, গেলে যা ভাগ। ওই প্যানপ্যানানি, ঘ্যানঘ্যানানির দিন শেষ। \|/
বুজছো গো শান্ত-সুন্দরী? 😀
ইলিয়াস মাসুদ
জেগে থেকে এমন লিখা আসে না,আবার ঘুমেও না, ভাবনার ভেতরের ভাবনা এ সব, অদ্ভুত দিদি
খুব ধিরে ধিরে পড়লে মাথার ভেতরে একটা ঘোর লাগতাছে
নীলাঞ্জনা নীলা
ইলিয়াস ভাই যখন আমি লেখা শুরু করেছিলাম, কয়েকদিন কি যে এলোমেলো লাগছিলো!
আমাদের মানুষের মন কি বিচিত্র! আমরা নিজেরা নিজেদেরকেই চিনিনা। অথচ আমরা অন্যকে বলতে যাই, আমাকে কেউ চিনলোনা।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য। ভালো থাকুন।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
২০১৬ সালের শেষ লেখা।খুব ভালো হয়েছে।তবে চরিত্রের নামটি চমকপ্রদ। -{@ নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
নীলাঞ্জনা নীলা
মনির ভাই অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন। 🙂