জীবন যে কখন, কি করায়, দেখায় আমরা জানিনা। কিন্তু আমরা তবুও চলি। প্রতিদিন কতো অচেনা মুখ দেখি, আবার সেই মুখের নাম জানিনা। আবার কারো নাম জানি, কিন্তু চেহারা জানিনা। একসময় পত্রমিতালী দেখতাম, জীবনে আমার একজনও পত্রবন্ধু নেই। আমার বর তরুণেরও নাকি পত্রবন্ধু ছিলো। আমার কি আফসোস! সেই আফসোস অন্যভাবে মিটিয়ে দিলো ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার। তরুণ দেশের বাইরে যাবে আমার ই-মেইল এড্রেস খোলা হলো ২০০২ সালে। কম্পিউটারে লেখা মানেই ইংরেজী ভেবে নিতাম। তরুণ মেইল করতো ইংরেজীতে, আমিও রিপ্লাই দিতাম ইংরেজীতে। মনের অনেক কথাই ভাষার জন্য আটকে যেতো। বাংলা নিয়ে অনার্স-মাষ্টার্সের পরে ইংরেজীর জগতটা একটা বিশাল আতঙ্কের জায়গা হয়ে গিয়েছিলো।
যাক জাপান গেলাম, ই-মেইল খুলতেই ভাই রানার মেইল। আবার ছোট বোনের বর অপু জার্মানী থেকে মেইল। একদিন তরুণ বললো, “তুমি তো চ্যাট করতে পারো ম্যাসেঞ্জারে?” এ কি দারুণ জগৎ! অপু, জয়, রানা, শোভনদা মোটামুটি প্রিয় সব ভাইদের সাথেই কথা হচ্ছে। আবার বাপি-মামনিরও খবর নেয়া যাচ্ছে। একদিন হঠাৎ অন্য একজনের ম্যাসেজ চ্যাট অপশনে। তরুণ এলো জিজ্ঞাসা করলাম সে চেনে কিনা! বললো আমি কি কথা বলতে চাই? বললাম না চিনে কথা কি বলবো? মজা হলো ভাই-বোনদের বাইরে প্রথম অনলাইন বন্ধুর নাম বাবলু। খুব ভালো একটা ছেলে। অনেক গল্প করতাম। কতো যে হাসাতো। মজা হলো আমি এবং বাবলু আমরা দুজনেই দুজনার ছবি দেখেছি ২০১৫ সালে। অথচ পরিচয় সেই ২০০৪ সালে। কতো সুন্দর একটা পরিচ্ছন্ন বন্ধুত্ত্ব। আবার ওই ইয়াহুতেই দীপু ভাইকে পেয়েছিলাম। আজও মেইল করে জিজ্ঞাসা করবে, “ও দিদিভাই ভাইয়াকে মনে আছে?” এখন আর ইয়াহুতে বসিনা। অফিসিয়াল মেইল ছাড়া আর কোনো মেইল আসেনা। কিন্তু দীপু ভাইয়া এখনও মেইল করে। দীপু ভাইয়াকেও দেখেছি এই বছরখানেক আগে। অবাক লাগে চেহারা না দেখে এতোগুলো বছর এতো সুন্দর একটা সম্পর্ক কি করে টিকে আছে? এর উত্তর আজও পাইনি। এই ইয়াহুতেই পরিচয় হয়েছিলো তানিয়া নামের একটি মেয়ের সাথে। বিয়ের পর জাপান এলো। কি ভয়ঙ্কর অবস্থা! মেয়েটি আমার ঠিকানা জানতো, একদিন হঠাৎ করে বাসায় উপস্থিত। বরের থেকে পালিয়ে এসেছে। শুধু তাই নয় তার বর তো এসে আমাদের শাসানো। তারপর কোনোভাবে মিটমাট করিয়ে পাঠিয়ে দেয়ার পর আবারও পালিয়ে গেলো। পরে শুনলাম মেয়ে বিয়ে করেছিলো বিদেশী ছেলে, টাকা-পয়সা আছে। কিন্তু জাপানে এতো কষ্ট করে থাকা, কাজ করতে হবে তাই থাকেনি। এই ইয়াহুতেই বন্ধু রনিকে পেয়েছিলাম। দেশে গেলাম ২০০৮ সালে দেখা করতে এলো বৌ-বাচ্চা নিয়ে। আবার অন্যদিকে ভাই জয় গুগলে অরকুট আইডি খুলে দিলো।
এ জীবনে পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়া মানুষ একজন আমি। তাই প্রতিটি আইডির পাসওয়ার্ড প্রিয় মানুষদের কাছে থাকে। তেমনি অরকুটের পাসওয়ার্ড জয়ের কাছে, ইয়াহু তরুণের কাছে। আর ফেসবুকের পাসওয়ার্ড কয়েকজনের কাছে। যাক অরকুটে পেয়েছিলাম দেবাশীষকে, এমন এক বন্ধু ২০০৯ সালে বাপির ওপেন হার্ট সার্জারীতে সে রক্ত সংগ্রহ করে দিয়েছিলো। কি আফসোস ও রক্ত দিতে পারেনি বলে। অনলাইনে পরিচয়, অথচ ব্যবহার দিয়ে আপনেরও আপন হয়ে গেছে। চেহারা আসলে কিছু না। ফেসবুক আইডি খুলে দিয়েছিলো ভাই দীপ। ফেসবুকে প্রথম যে স্ট্যাটাস লিখেছিলাম সেখানে কোনো মন্তব্য/লাইক নেই। কারণ ভাই-বোন ছাড়া আর কেউই ছিলোনা। তাও যারা নিয়মিত তারা তখন শুধু পড়েই চলে যেতো, মন্তব্য করতো ই-মেইলে। তারপর একসময় ফেসবুকে বোকার মতো অজস্র মানুষ এড করেছি, ৫০০০ বন্ধু। এখন এড রিক্যুয়েষ্ট তালিকা দেখি-ই না। পরিচিত কেউ যদি ম্যাসেজ দেয় তাহলেই অনুরোধের তালিকা খুলি। এখন পরিচিত ছাড়া কাউকেই তালিকায় স্থান দেইনা। ওহ এখানে একটা কথা বলে নেই, সেদিন এক প্রিয় মানুষকে ভুল করে রিমোভ করে ফেলেছি। আসলে এখন হয়েছে কি কাউকে রিমোভ করতে গেলে, যখন স্ক্রল করা হয় তখন অটোমেটিকভাবে চলে আসে এমন করে ছবিটি দিচ্ছি।
আর তখনই দেখি যাকে করবো তাকে রিমোভ করিনি, প্রিয় মানুষটি রিমোভ হয়ে গেছে। যাক চেষ্টা করেছি বোঝানোর, একদিন ভুল ভাঙ্গবে। আমি যদি সত্যি হয়ে থাকি অবশ্যই ফিরে আসবে। তা নইলে বুঝে নেবো আমাদের বন্ধুত্ত্ব আসলে ছিলোনা।
যাক এতো কথা বলছি। পরিচিত থেকে অপরিচিত নিয়ে বলতে গিয়ে কোথায় চলে এলাম। বলছিলাম কাউকে চিনি নামে, কাউকে চেহারায় আবার কাউকে নামে-চেহারায় দু’ভাবেই। কিন্তু এমন কিছু মানুষ আছে যাঁদেরকে নামে কিংবা চেহারায় কোনোভাবেই চিনিনা। কিন্তু উনারাই কলকাঠি নাড়ছেন। বিশেষ বিশেষ বিপদে-আপদে পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন, সাহায্য করছেন। আবার কোনো ভুল হলে সেসব ধরিয়েও দিচ্ছেন। বুঝতে পারছেন কাদের কথা বলছি? হুম ব্লগ সঞ্চালকের কথা বলছি। জানিনা এই ব্লগের মডু কারা! আজ বড়োই প্রয়োজন, তাই উনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমার অদেখা মন্তব্য আটকে গেছে, কিছু একটা করুন প্লিজ। বড়ো জ্বালায় আছি। কখনো ভাবিনি মডুদের খোঁজার জন্য এমন পোষ্ট দিতে হবে। আর তাও এতো এলোমেলো কথা বলে।
৩৬টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আচ্ছা, এতো দেখছি কঠিন কবিতা!! বড় কবিরা বুঝি এমন লেখে!!
সবই মাথার উপ্রে দিয়ে যাচ্ছে। এ ভাবে আমাদের মাথা আউলা করা ঠিক না।
তয় ফেবুর পাসটি আমারেও দেলে পারতেন!!
নীলাঞ্জনা নীলা
বড়ো কবি বলে কথা। কবিতা লেখা শিখতে চাইলে এপ্লিকেশন দিয়ে রাখুন এখানে সোনেলায়।
মাথার উপ্রে দিয়ে গেছে বুঝি? চুল আছে তো?
ফেবুর পাসওয়ার্ড চাই?
আমার বরকে বলে দেবো, ঠিক আছে? সে আপনাকে দিয়ে দেবে যদি বোঝে আপনাকে দেয়া যায়, তখনই।
ছাইরাছ হেলাল
খাঁচার পাখি!!
নীলাঞ্জনা নীলা
ইস আপনি কত্তো জানেন! খাঁচার পাখী কি করে জানলেন? নিজেকে দেখে বুঝি বুঝেছেন? আহারে 🙁
মৌনতা রিতু
এই অদেখা মন্তব্যের জালা আমারও। মডুরা যদি একটু সহায় হইত! ^:^
বন্ধু মানে সে আত্মার আত্নীয়। অনেকেই আছে আপু, এটার মধ্যেও নোংরামি টেনে আনে। তখন ইচ্ছে হয় ধরে এদেরকে আচ্ছামত পিটাই……
নীলাঞ্জনা নীলা
মৌনতা আপু আমার জ্বালা গেছে। অদেখা মন্তব্য থেকে মুক্তি পেয়েছি। 😀 আহ! কি শান্তি!!
যারা সত্যিকারের বন্ধু তারা কখনো নোংরামো করেনা।
আপু মডুরা আসলেই ভালো গো। 🙂
মিষ্টি জিন
আপু এই অদেখা মন্তব্য সমস্যা তো আমার ও. নতুন বলে বুঁঝতে পারিনি। আপনি বলার পর নজরে এল। মডুগন একটু দেখেন।
ভাল বন্ধুর কোন বিকল্প নাই।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমি মুক্তি পেয়েছি।
মডুরা সত্যি খুব ভালো।
আপনিও বলে দেখুন মডুদের ঠিক করে দেবে।
জিসান শা ইকরাম
ইয়াহু ম্যাসেঞ্জারই প্রথমে চ্যাট এবং ভিডিও কলের সুযোগ করে দেয়,
সময়ের ব্যবধানে, প্রযুক্তির উন্নতিতে বিশেষ করে আইফোন আর এন্ড্রয়েড এসে পরায়, ইয়াহুর গুরুত্ব কমে যায়,
আমি প্রাচীন মানুষ, তাই এখনো ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করি 🙂
তোমার পাসওয়ার্ড আমাকেও দিয়েছ একবার দিয়েছিলে কি জানি ঠিক ঠাক করতে,
আর পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়া তোমার স্বভাব 🙂 জানি আমি।
ফেইসবুকের সিস্টেম দিন দিন পাল্টায় জোকার বাঘ,
মডুদের খাবারের ফটো দিয়ে ভুলানো হচ্ছে? ফটো দেখেই ভুলে যাবেন তারা?
মডু কে তাইত চিনলামনা ;?
অচেনা মডুর প্রতি আবেদন, সমস্যার সমাধানের জন্য।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার এখন সময়ই নেই গো নানা ইয়াহুতে বসে চ্যাট করার। এখন আসলে চ্যাটই করা হয়না। আর তুমি জানবেই তো আমি যে পাসওয়ার্ড ভুলে যাই। 😀
মডুদের প্রতি অপরিসীম কৃতজ্ঞতা আমায় ঝামেলা থেকে মুক্ত করেছেন। নানা তুমি মডুদের চেনোনা, আমি তো এও জানিনা মডু কয়জন।
খাবারের থালাটা কেমন বলো তো? কি যে খেতে হয়েছিলো। আমি রাঁধিনি এসব কিন্তু। তবে তুমি এলে ঠিক এভাবে সাজিয়ে খেতে দেবো। -{@
জিসান শা ইকরাম
ঝামেলা মুক্ত হলেই ভাল,
মডুরা যে মন্তব্য দেখেন, তা তো প্রমাণিত হল এবার 🙂
থালায় খাবার সাজানো সুন্দর হইছে।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা হুম আজ বুঝলাম মডুরা সব খেয়াল করেন।
থালার খাবার আরোও বেশী সুস্বাদু। 😀
ইঞ্জা
আহা বোন আমার বড়ই বিপদে মডু ভাই ও বোনেরা কই?
নীলাঞ্জনা নীলা
মডু ভাই-বোনেরা আমায় মুক্ত করেছেন সমস্যা থেকে। কি যে শান্তি। 😀
ইঞ্জা
\|/
নীলাঞ্জনা নীলা
😀
নাসির সারওয়ার
কেনো যে মডু অইতারল্লাম্না, এত্তু ভালো মন্দ খাওয়নতো যাইতো।
নীলাঞ্জনা নীলা
মন খারাপ কইরা কাইন্দেইন না। হ্যামিল্টন আইলে ঠিক এমন খানাই খাওয়ামুয়ানে। বুজছেন মনু? 😀
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এক লেখায় অনেক কথাই চলে আসল আমরাও জেনে নিলাম।এ অবস্থা আমারো বিদ্যমান। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
মনির ভাই মডুরা খুবই ভালো। অদেখা মন্তব্যর সমস্যা থেকে মুক্ত হয়েছি। 😀
মোঃ মজিবর রহমান
অনেক কথাই চলে আসল আমরাও জেনে নিলাম। (y) -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
মজিবর ভাই নয় বছর প্রেম করেছিলাম, সেই সময় মেয়েরা লুকাতো। আমার মধ্যে লুকোচুরি নেই এখনও। 😀
মোঃ মজিবর রহমান
আপু প্রেম পবিত্র গপন করার কিছুই নাই। আপনার প্রেম জাগ্রত করুক সকল পবিত্র মনের মানুষের মাঝে।
নীলাঞ্জনা নীলা
মজিবর ভাই এই বয়সে প্রেমের চেয়ে আত্মসম্মান বড়ো।
ক্রিস্টাল শামীম
আমার তো মডু হইতে ইচ্ছা করতাছে , এতো ভালো খাবার ইস……. :p
নীলাঞ্জনা নীলা
মডু-ই হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। এখানে এলে খাওয়া পাবেন, এই গ্যারান্টি দিলাম। 🙂
অপার্থিব
প্রতিটা লিংকে একবার করে ক্লিক করেন, চলে যাবে।
নীলাঞ্জনা নীলা
সেটা তো জানি। কিন্তু যদি কোনো পোষ্ট মুঁছে দেয়া হয়, তখন প্রতি-মন্তব্য যায়না। আমি সেই ঝামেলাতেই পড়েছিলাম।
যাক এখন ঠিক হয়েছে। 🙂
মারজানা ফেরদৌস রুবা
অই একই সমস্যায় তো আমিও পড়েছি গো নীলাদি। আমিও যে মডুদের খোঁজে বেড়াচ্ছি। :p
নীলাঞ্জনা নীলা
রুবা’পু আপনি চিন্তা করবেন না। মডুদের কাছে জানান। উনারা কিন্তু ঠিকই খেয়াল করেন।
শুন্য শুন্যালয়
তুমিতো আমার সোনেলা বন্ধু, তোমায় চিনেছি সোনেলায়, হাজার কথার লক্ষ উত্তর সেও বিনিময় সোনেলায়, আর বন্ধুত্বের জন্য ফেবু কী আদৌ লাগে নীলাপু? বন্ধুত্বের মধ্যে কখনো অন্য কিছু খোঁজা ঠিক নয়, বন্ধুর প্রতি অনেক সময় অধিকার চলে আসে, এটাকেই অনেকে ভিন্ন নাম দেয়। তোমার এই পোস্টের সব কথা আগেই জানা, অহম আর তিরির কাছ থেকে, তাইনা নীলাপু?
মডু হইতে আমারো খুব ইচ্ছে জাগছে, কিন্তু মডুরা যা পেটুক ভাগ কমে যাবে বলে আমাকে নেবেনা মনে হচ্ছে। ব্যাপারনা তুমি তো আছোই। কিন্তু টিকিটের কী হবে
;?
নীলাঞ্জনা নীলা
শুন্য আপু মনে আছে এমন কথাই একবার আমি বলেছিলাম। যাক সেসব। অহম-তিরিকে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। শিক্ষকদের ধারাবাহিক শেষ হলে লিখবো। আসলে তুমি এতোদিন নিয়মিত আসোনি, তাই অহম-তিরি লিখিনি। বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা। তবে এটাই সত্যি।
শোনো টিকেট তুমি-ই পাঠাও আমাকে, গিয়ে রান্না করে খাইয়ে আসবো। :p
আবু খায়ের আনিছ
না, এটা ঠিক নয়। শুধু মডুদের দিলে হবে না। সবাইকে সমান চোখে দেখতে হবে।
নীলাঞ্জনা নীলা
আনিছ ভাইয়া সমান চোখে কি করে দেখবো? আমি তো চশমা পড়ি। :p 😀
আবু খায়ের আনিছ
আমিও পড়ি, সুতরাং আমার দিকেও নজর দিতে হবে ।
নীলাঞ্জনা নীলা
হাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা!!! :D) :D) :D) :D)
আমার কিন্তু বাইফোকাল 😀