স্থানঃ সিলেটের চৌহাট্টায় মানরু শপিং মলে ওয়ালটনের মোবাইল সার্ভিস সেন্টার
তারিখঃ ২০-০৩-১৬
সময়ঃ আনুমানিক দুপুর ১২টা।
আমি ওয়ালটন ‘প্রিমো ই৪’ সেট নিয়ে গেলাম। মোবাইলটার সমস্যা হল চার্জ ৬০% এর নিচে চলে আসলে ডাটা ইউস করা যেতনা। অটো অফ হয়ে যেত। আবার অন করলে বেটারী লো দেখাতো! তবে চার্জে লাগানো অবস্থায় এই সমস্যাটা হতনা। মানে চার্জ ৬০% বা তারও কম থাকলেও চার্জে লাগিয়ে ডাটা ইউস করা যেত। এতে ফোন অফ হতনা। আর টোটালী ডাটা ইউস না করলে ফোন স্বাভাভিক ভাবেই চলতো। এক কথায় ফোনটা ফেলে রাখার মত তেমন কোন সমস্যাই ছিল না। ব্যাবহার করার মত যথেষ্ট ভালোই ছিল। যাইহোক, ভাবলাম হয়তো ব্যাটারিতেই সমস্যা। ইদানীং চার্জও কম থাকছে। হালকা ফুলেও গেছে। তাই ব্যাটারিটা চেঞ্জ করে দেখলাম। ফোন একদম অকে। কোন সমস্যা নাই। সমস্যাটা ব্যাটারিতেই এটা বুঝতে আর বাকী নেই। তাও ভাবলাম একবার দেখিয়েই আনি। যেহেতু ওয়ালটনের সার্ভিস সেন্টার আমার বাসা থেকে মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা। তো আগের ব্যাটারিটা লাগিয়ে নিয়ে গেলাম। শ্যামলা এক তরুনী ফোনটা রিসিভ করল। বারকোড স্কেন করে বলল, আপনার ওয়ারেন্টি শেষ হয়েছে তিন দিন আগে। মানে ১৭-০৩-১৬ তারিখে। এখন আপনাকে ফোনটা রেখে যেতে হবে। আমরা চেক করে আপনাকে জানিয়ে দিব কত খরচ হবে। বললাম ওকে! তবে আমার ফোন যে রেখে যাব এতে কোন রিস্ক নাইতো?? উনি বলল, সফটওয়্যার আপডেট দেয়া হলে আপনার ডাটা ডিলেট হয়ে যাবে। বললাম শুধুই এটাইতো?? বলল, হ্যা। আমি বললাম ওকে!
সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে বলল, আপনার সেটের মাদারবোর্ড নষ্ট হয়ে গেছে। ঠিক করতে ১১০০ টাকা লাগবে। শুনে অবাক হয়ে গেলাম। বললাম এত টাকা দিয়ে কাজ করাব না। বলল, কাজ না করালে ফোনটা আপনাকে রিটার্ন নিয়ে যেতে হবে। পরদিন গেলাম ফোন আনতে। গিয়ে দেখি ফোন আর অনই হয়না। বললাম ফোনতো অন হচ্ছেনা। ডিলিভার কাউন্টারে বসা অল্প বয়সী সুন্দরী তরুনী ফোনটা চার্জে বসালেন। মিনিট পাচেক। লাভ হলনা। পরে একজনকে ডেকে বলল, এই সমস্যা। লোকটা ফোন নিয়ে ভেতরে গেল। আমি বসে রইলাম প্রায় এক ঘন্টা। এরপর এসে বলল, আপনার ফোনটা ডেড হয়ে গেছে। তাই অন হচ্ছে না। জানতে চাইলাম ডেড হবে কেন? আমিতো ডেড ফোন দিয়ে যাইনি। বলল, নন-ওয়ারেন্টি ফোনে সফটওয়ার আপডেট দিলে ফোন ডেড হবার চান্স থাকে। ওয়ারেন্টি ফোনে থাকেনা। বললাম তো এই কথা আমাকে আগে কেন জানান হয়নি? যখন ফোন দিয়ে গেলাম সেদিনওতো জানায় নি। আমি জিজ্ঞেস করায় শুধু ব্যাকাপ ডিলেট হতে পারে বলল। কিন্তু ডেড হতে পারে এ ব্যাপারে একবারও জানানো হয়নি কেন?
উত্তরে বলল, ঠিক আছে আপনাকে যেহেতু আগে জানানো হয়নি আপনি রেখে যান। আমরা জানাব আপনাকে।
প্রায় একমাস কেটে গেল। জানায়নি। এরপর আমি নিজেই ফোন করলাম সেই একই কথা আপনাকে জানাব। এরপর অনেকটা বিরক্ত হয়ে একজন ভাইয়ের সহযোহিতায় ওয়ালটনের একজন বড় কর্মকর্তাকে জানালাম। উনি সব জেনে বলল, ঠিক আছে আমি নিজে গিয়ে দেখছি। উনি আসলেই দেখতে গেছিল কিনা আমার এতেই সন্ধেহ আছে। যাইহোক, উনি বলল, সার্ভিস সেন্টার থেকে নাকি আমাকে আগেই এই ব্যাপারে (ডেড হতে পারে) জানানো হইছিল। সব শেষে উনার পরামর্শ – কষ্ট করে সেটটা ঠিক করিয়ে নিয়ে আইসেন। আমি বললাম, ভাইয়া আমাকে যে রিসিভ কপিটা দেয়া হইছে তাতে দেখুন ‘ব্যাকাপ ডিলেট হতে পারে’ এই সামান্য ব্যাপারটা সীল মেরে দিছে। অথচ ‘ফোন ডেড হতে পারে’ এতবড় ব্যাপারটা এখানে নাই। এরপরো বলছেন এরা আমাকে জানাইছে?? আচ্ছা ধরে নিলাম জানাইছে। যদি জানিয়েই থাকে তবে যেদিন রিটার্ন আনতে গেলাম (২০ তারিখ দিছি ২১ তারিখ আনতে গেছি) সেদিন ওরা বলল কেন যে, আপনাকে যেহেতু আগে জানানো হয়নি ফোনটা রেখে যান পরে আমরা জানাব ?
এরপর উনি আর কোন কথা বলেনি।
মোবাইলটা ঠিক করাব কি না ভাবতে ভাবতে আজ আবার ফোন দিলাম। সার্ভিস আইডি বলে জিজ্ঞেস করলাম কি অবস্থা?
বলল আমি নাকি জানাই নি কাজ করাব কি না? এজন্য এটা পেন্ডিং এ পরে আছে। বললাম এটাতো আপনাদের জানানোর কথা ছিল। এরপর বলল, আমি ১০ মিনিট পরে আপনাকে জানাচ্ছি। ১০ মিনিট পর ফোন দিয়ে বলল, স্যার আপনার সেট এর মাদারবোর্ড চেঞ্জ করতে খরচ আসবে ১২০০ টাকা। (মাত্র ৮-১০ দিনের ব্যাবধানে ১০০ টাকা বেড়ে গেছে। আগে বলছিল ১১০০)। বললাম আগেতো ১১০০ বলছিলেন। বলে স্যার আমাদের প্রোডাক্ট এর দাম আপডেট হইছে।
:/
যাইহোক শেষ পর্যন্ত ১২০০ টাকার বাশ খেতেই যাচ্ছি। জানি এই ১২০০ টাকার সাথে আর হাজার দুই হাজার টাকা হলেই এই কনফিগারেশন এর নতুন মোবাইল কিনতে পারব। কিন্তু এই মোবাইলটাই যে আমার বড় বেশী প্রিয়। তিন মাসের টিউশানীর টাকা জমিয়ে কিনছিলামতো…
২৩টি মন্তব্য
ইকবাল কবীর
আমাদের দেশের প্রতিটা ক্ষেত্রে এইরকম অনিয়ম চলে। এই জাতীয় হয়রানি কবে বন্ধ হবে জানতে খুব ইচ্ছা করে। কিন্তু জানানোর মানুষরাই অনিয়মের জাল ছড়িয়ে বসে আছে।
আর্বনীল
এদের হাতে বাঁশ ধরিয়ে জায়গামত বসিয়ে দেয়া হইছে…
সঞ্জয় কুমার
এমন অভিজ্ঞতা আমার আছে এই নিয়ে বিস্তারিত একটা পোষ্ট দিব ।
তবে আমি কিন্তু বাঁশ দিয়েছিলাম ।
আর্বনীল
দেখে আসলাম আপনার বাঁশ দেয়ার সিস্টাম টা।। আবার যদি সুগোগ আসে কাজে লাগাবো…
জিসান শা ইকরাম
সমস্ত সার্ভিস সেন্টারেই এই একই অবস্থা,
সরকার এদের হাতে বাস ধরিয়ে দিয়েছে, এরা জনগনকে দিচ্ছে।
কিছু করার নেই আসলে।
আর্বনীল
সেটাই কিছু মানুষ এর প্রতিবাদ করবেনা। কিছু মানুষ প্রতিবাদ করতে গেলে আরো কিছু মানুষ এদের থামিয়ে দিবে…
সব শেষে ফলাফল হয় + – = –
মারজানা ফেরদৌস রুবা
বাঁশ খেতে যাচ্ছেন, এজন্য বাহবা দিতে পারলাম না। এদের বাঁশ দিতে যাচ্ছেন শুনতে পারলেই বেশি খুশি হতাম।
সঞ্জয় কুমার
আমি দিয়েছিলাম বলব সেই কথা
মারজানা ফেরদৌস রুবা
শুনতে চাই। অসৎ লোকদের বাঁশ দিতে পারার গল্প শুনতে ভালোই লাগে।
আর্বনীল
আমাদের মত কিছু পাব্লিকের জন্যই দেয়া যায়না।। যখনই একটু প্রতিবাদ করলাম তখনই বয়স্ক একটা লোক এসে বলল, ঝামেলা করে লাভ নেই বাবা। নিয়ে যাও…
এরপর আর কিছু করার থাকে???
লীলাবতী
কি যে অবস্থা দেশের সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। কোন সেক্টরে কোন সঠিক ব্যবস্থা নেই।
আর্বনীল
সঠিক ব্যাবস্থা থাকলেইতো আমার দেশ এগিয়ে যাবে। এটা কি আর মেনে নেয়া যায়??
যায়না।। এজন্যই এই ব্যাবস্থা…।
ব্লগার সজীব
এই বাঁশ দেয়ার প্রাকটিস করে সবাই। কেউ সফল হয় কেউ হয় না।
আর্বনীল
হুম…
খসড়া
চোরে আমার মোবাইল চুরি করছে, পুলিশ ফেরৎ দিছে, আমার খসছে ৮০০০টাকা। বাঁশতো ভালই খাইলাম।
আর্বনীল
কেম্নে কি ??/ বিস্তারিত বলেন…
অনিকেত নন্দিনী
ওয়ালটনের সার্ভিস সেন্টারে ফোন সারাই করতে দিয়ে কেউ সুস্থ ফোন ফেরত পেয়েছে তা কখনোই শুনিনি। আমিও ভুক্তভোগী। 🙁
আর্বনীল
আগে জানলে দিতামই না ফোন। অন্তত আরো কয়টা দিন এভাবেই ইউস করতে পারতাম…।
মৌনতা রিতু
রিসিপশনে সুন্দরী কর্মী দেইখা টাসকি খাইয়া ফোন রেখে আসলে বাঁশ তো খাওন লাগবোই।
যাইহোক, এই বাংলালিংক ব্যাটা মাঝে মাঝেই আমার টাকার বাঁশ মারতেছে। কারে বলি এ দুঃখের কথা!
আর্বনীল
সুন্দরী মহিলা দেখে না…। তাছাড়া ফোন রেখেই আসা লাগে… সব সার্ভিস সেন্টারে এমনই নিয়ম… 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
দাদা আমি দিয়েছিলাম মেসেজ তা নিম্নেঃ-
আমার ওয়াল্টন ফ্রিজ নস্ট হল দিলাম ফোন। দিনটি ছিল মংগলবার। কাল পাঠাব বুধবার এল না। বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করে ফ্রিজ সারার লোক আসেনি। আমি ফোন দিলাম আগামি দুইদিন বন্ধ বলে আগামি রবিবার, আমার মাথায় নষ্ট শালায় কয় কি আমার যা আছে ফ্রিজে নষ্ট হবে। তখন বাসায় ছিলে নেট কানেকশন। কোম্পানির ওয়েব সাইটে ঠুকে কমপ্লেন অপশনে মাথা গরম করে ৫ বা ৬ টা মেসেজ। পরে উত্তর আর দিয়েন লক পাঠেবে।
সঙ্গে সংগেই মিরপুরের রুপ পুর ওয়ালটন অফিস থেকে ফোন ভাই আপনার বাসার ঠিকানা বলেন ফ্রিজ মেরামতের লোক যাবে।
১০০% ঘাটি হালাল মেডিসিন কাজ হল।
আর্বনীল
আপনার বুদ্ধিটাও ভালো… সামনে কাজে লাগবে ইনশা-আল্লাহ!
নীলাঞ্জনা নীলা
এইটা কিছু হইলো? বাঁশ না দিয়ে আসলেন?