তোলপাড়

জিসান শা ইকরাম ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫, বুধবার, ১২:৪২:৩৮পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৬৭ মন্তব্য

1239584_749219815183099_195705892148328253_n
লিখতে পারছিনা কিছুই বেশ কিছুদিন যাবত। কি লিখবো, কিভাবে লিখবো, কতটুকু লিখব বা লিখব না, শুরুটা কিভাবে করব এবং শেষ কী! এসব ভাবতে ভাবতেই চলে যায় সময়। লেখারা থমকে দাঁড়িয়ে আছে যে একটি বিশাল আবেগের সমুদ্রকে সামনে নিয়ে। আমি ও.হেনরী নই। তিনি হলে কত আগেই লিখে ফেলতেন নতুন এক ডেলা আর জিমের উপাখ্যান। সৃষ্টি হতো আর একটি কালজয়ী গল্প দি গিফট অব দি মেজাই-২।

** জিসান অনেক অনেক দিনের ইচ্ছে একটি ভালো মোবাইল গিফট করি তোমাকে, তুমি তো জানো গত কয়েকবছর আমার জব নেই। আমার খুব খারাপ লাগে, আমার ইচ্ছেটা পূরন করতে পারছি না।
* আরে না, মোবাইল গিফট করতে হবেনা, আমার তো মোবাইল আছেই। এই যে বলেছ এতেই মহাখুশি। তোমার গিফট পেয়ে গেছি।
**আমি মোবাইল গিফট করব, করবই একটি। জব পেলে প্রথম মাসের আয় এর অর্থ থেকেই তোমার জন্য মোবাইল কিনবো।
* আচ্ছা আগে জব পেয়ে নাও, তারপর দেখা যাবে।

এরপর ঘড়ির কাঁটা ১২ টা ছুঁয়েছে কয়েকশত বার, ক্যালেন্ডার পাল্টেছে কয়েকবার। কিন্তু তাঁর ইচ্ছে একটুও পাল্টে যায়নি। কিছু ইচ্ছে না পাল্টানোতেই রয়ে যায়। কিছু ইচ্ছে মিশে যায় ভালোবাসার রঙে। যে রঙ মানুষকে বাঁচতে প্রেরণা যোগায়।

** জিসান তোমার জন্মদিন এগিয়ে আসছে। কিছু একটা গিফট করতে চাই।
* শুভেচ্ছা দিও, তাতেই চলবে।
** না, শুধু শুভেচ্ছায় চলবে না। কী দেবো ভাবছি।
*ভাবাভাবির কিছু নেই। কিছু দিতে হবেনা।
**আমার কাছে কিছু ডলার আছে 🙂 আচ্ছা এক ডলারে কতো টাকা? একশত ডলারে কতো? ২০০ ডলারে কতো? ………… 🙂
* এই কি হচ্ছে এসব?
** কিছু হচ্ছে না 🙂 আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি তোমাকে মানি গ্রামে। প্লিজ না করো না।
* এমন করো না। কিছু ডলার থাকা উচিৎ তোমার কাছে। দরকার হতে পারে যে কোন সময়।
** ডলার তো আমার আছে আরো ব্যংকে। কিন্তু এগুলো আমার নিজের কাছে জমানো ডলার।
* না পাঠিও না। তুমি জব পাও এরপর দিও না হয়।
** জিসান, এক সেন্ট দুই সেন্ট এক ডলার দুই ডলার করে এসব দীর্ঘ দিনে জমিয়েছি। ধীরে ধীরে জমানো ডলার দিয়ে তোমাকে একটি গিফট দিচ্ছি, এ যে কত আনন্দের তা কি তুমি বুঝতে পারছো?
* তা পারছি, তবে যখন তুমি এই ডলার জমানো আরম্ভ করলে তখন কি আমার কথা ভেবে জমানো শুরু করেছিলে?
** না, তা করিনি। কিন্তু তাতে কি?এখন ভাবছি কষ্ট করে এই জমানো অর্থ দিয়ে তোমাকে গিফট কিনে দেয়া যায়। আমাকে আনন্দ থেকে বঞ্চিত করো না প্লিজ।

এরপরে আর না বলা যায় না। পরদিন ভোরে তিনি একনাগারে দেড় ঘন্টা হেঁটে মানিগ্রাম অফিসে গিয়ে ডলার পাঠালেন। অনভ্যাসে পা ব্যাথা করে এসে আমাকে জানালেন ডলার পাঠিয়ে এই বাসায় ফিরলেন। কত আনন্দ তাঁর। কত খুশি নিয়ে তিনি জানাচ্ছেন পা ব্যথা করছে অবশ্য। এই আনন্দের নাম কি? এই খুশিরই বা নাম কি?

তাঁর পাঠানো টাকায় কেনা এই গিফট। ব্যবহার করছি মনের আনন্দে 🙂
কিভাবে আমি আমার মনের খুশিকে প্রকাশ করবো? তোমাকে ভালোবাসি এটি বললেও যে কম বলা হয়। তুমি তো জানো কলম হতে শুরু করে ল্যাপটপ পর্যন্ত গিফট আমি পেয়েছি। এত আনন্দ এত খুশি আমি হইনি কোনদিন। এর মাঝে আছে একজনের শতশত দিনের সঞ্চিত ধন। হাতেই থাকে অধিকাংশ সময় এই মোবাইল, মনে হয় হাত স্পর্শ করে আছি তোমার। যে কারো সাথে কথা বলার সময় মনে হয়, মোবাইলের মাঝে থাকা তুমি ফিসফিস করে বলছো ‘কি করো? কার সাথে কথা বলো?’ যেন প্রতি মুহূর্তে স্ক্যান করছে এই মোবাইল আমাকে, আমার হৃদয়কে, আমার চিন্তাকে।

ধন্যবাদ, ভালোবাসা দেয়া খুবই অল্প আর ফরমাল হয়ে যায় রে। আবেগ প্রকাশে আমার অক্ষমতা জানো তুই।
বুঝে নে আমার মাঝের তোলপাড়কে।

১২৪৫জন ১২৪৫জন
0 Shares

৬৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ