ভূত বাবা ক্ষমা করিস, ওপাড়েতে ভালো থাকিস।
নিষ্ঠুর বিধাতার সাথে যে আমরা পেরে উঠিনা।
ক্যাস্পারকে নিয়ে আমার ৩০ নভেম্ভর ২০১৩ এর লেখা নিভে যায় ইচ্ছে প্রদীপ লেখাটির পুনঃপ্রকাশ
টুনটুন কিছুক্ষন ধরে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে দিপুর লাল ব্যাগ প্যাক গোছানো । কিছুদিন আগে আব্বুও তাকে এরকম একটি ব্যাগ কিনে দিয়েছে, শুধু অপেক্ষায় ছিলো কবে আব্বু পাহাড়ে যাবে, আর সে সুন্দর করে গোছাবে তার ব্যাগ । আব্বু পাহাড়ে গেলে তার জন্যেও যে থাকে নতুন নতুন এডভেঞ্চার, নানুর বাড়ি । টেনে বের করে আনলো তার ব্যাগ ।
আব্বু একটা টর্চ নিলো, হুম টুনটুনের ও ছোট্ট একটা টর্চ আছে । আগেরবার সে নানুবাড়ি গাছে একটা প্যাঁচার চোখ দেখেছিলো শুধু, এবার সে পুরো প্যাঁচাটাকেই দেখবে । টর্চ টা খুব যত্ন করে ব্যাগে ঢোকাল । ভাগ্যিস আম্মু সেবার বুঝতে পারেনি প্যাঁচার চোখ দেখে সে কি ভয়টাই না পেয়েছিলো । এবার তো সে অনেক বড়, ভয় পাইয়ে দেবে সে প্যাঁচাটাকে । টুনটুনের চোখ দুটো উত্তেজনায় যেনো জ্বলছে । নিলো দড়ি, স্টিক । ঠিক জানেনা এগুলো কি কাজে লাগবে, তবে আব্বু যখন নিয়েছে তখন কাজে তো লাগবেই । স্টিক টা দিয়ে মাছ ধরা যেতে পারে, হুম ছোট মামা তাকে আগেরবার মাছ ধরতে দেয়নি, এবার সে নিজেই ধরবে । অনেকগুলো বন্ধু আছে তার নানুবাড়ী । তাদের সাথে কুমির কুমির খেলা, পুকুরের হাঁসগুলোকে রুটি ছুড়ে দেয়া, টুনটুন শুধু দিন গুনছে । সেখানে একরাতে প্রথম সে দেখেছে ছোট ছোট আলো জ্বলছে আর নিভছে । কি মিষ্টি তাদের নাম ‘জোনাকি’ । আর নানুর মতো এতো সুন্দর করে আর কেই বা পারে গল্প বলতে ।
দিপুর মনও টুনটুনের মনের জোনাকির মতোই অস্থির, অনেক দিন ধরে প্লান করা হচ্ছে পাহাড়ে যাবার, না যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই অস্থিরতা কমবে না । কিছুতেই কাজে মন বসছে না । এ কেমন নেশা দিপু নিজেও জানেনা । পাহাড়ের ঘ্রাণ, আকাশ, সবুজের পর সবুজ, ঝর্না সবকিছু দিপুকে মাতাল করে দেয় । কিছুদিন পর পর তারা হাতছানি দিয়ে ডাকে , তখন আর কিছু ভালো লাগেনা । দুবার প্লান ভেস্তে গেছে, পাহাড়ের কিছু লোকজন ঝামেলা করছে, এবার ও প্লান টা শেষ পর্যন্ত বাদ হয়ে গেলে একদম ভেঙ্গে পরবে দিপু । টিকেট কাটা শেষ হয়েছে জানতে পারলো গ্রুপ মেম্বারদের কাছ থেকে । দিপু অনেক খুশি । টুনটুন আর দিপুর খুশি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে ।
দিপুর হাতে একটার পর একটা সিগারেট । মোবাইল টা নিরাপদ দুরত্বে । আজ ওটা দুরেই থাকুক । এতো ভাংচুর হচ্ছে ভেতরে, যাওয়া হচ্ছে না তাদের । কিছুতেই মানতে পারছে না । অবরোধ, পাহাড় গ্রুপের ঝামেলা সব কিছু মিলে শেষ পর্যন্ত টিকেট বাতিল করা হয়েছে ।
টুনটুন হাত পা ছুড়ে কান্নাকাটি করছে, সে নানুবাড়ি যাবেই । আব্বুটা একটুও ভালো না, কেনো সে পাহাড়ে যাচ্ছেনা ? তার মনে হচ্ছে প্যাঁচা, পুকুরের মাছগুলো, তার বন্ধুরা, ছোট মামা সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে । আম্মুর বুকে মুখ রেখে ফোঁপাতে ফোঁপাতে টুনটুন আড়চোখে দেখছে দিপু একটা একটা করে ব্যাকপ্যাক থেকে জিনিসগুলো বের করছে ।
এটি আমার জংলী বন্ধু কালপুরুষ অপু এবং তার ছোট্ট ভুত ক্যাস্পার কে উৎসর্গ করলাম …
৩২টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
খবরটা শুনে এত খারাপ লেগেছে যে প্রকাশ করতে পারছিনা।
কি দিয়ে কি হয়ে গেলো।
সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলো বাবুটা ওপারে।
অপারেশনের পরে ভেবেছিলাম,সুস্থ হয়ে উঠবে দ্রুত।
ভালো থেকো ক্যাসপার।
শুন্য শুন্যালয়
একবারের জন্যেও মনে হয়নি। সেদিন ইমন ভাইয়ার একটা কমেন্ট পড়ে তাকে রেগে গিয়ে উত্তর লিখতে গিয়েছিলাম, কেন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসবে এরকম বলছেন? মৃত্যু শব্দটা শুনেই এমন লাগছিল, একবারের জন্যেও ভাবিনি সত্যি হবে।
কি থেকে কি হয়ে গেলো ভাইয়া। বাবাটা ভালো থাকুক।
অনিকেত নন্দিনী
কালই তো মনে হয় দেখলাম ওর সমস্যা চিহ্নিতকরণের খবর, অপারেশন সাকসেসফুল হবার খবর। মন থেকে সব শংকা সরিয়ে দিয়ে আশা করেছিলাম ছেলেটা সেরে উঠবে, নাক চোখ কুঁচকিয়ে চমৎকার হাসি হেসে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবে। কী থেকে কী হয়ে গেলো!
ভালো থেকো বাচ্চা ভুত, ভালো থেকো ক্যাসপার।
শুন্য শুন্যালয়
সবাইতো এমনটাই ভেবেছিলাম আপু। পরে জানা গিয়েছিল, ফুসফুসে ইঞ্জুরি হয়েছে। ওর অই নাক চোখ কুঁচকানো ছবি যে ভোলবার নয় আপু।
মেহেরী তাজ
কখন??
কেনো? গত কালই তো শুনলাম ও ভালো আছে…..!!! !!!
শুন্য শুন্যালয়
কিভাবে যেন কি হয়ে গেলো আপু। সময় ছিলোনা তার।
আজিম
এরকম একটা শিশুর মৃত্যু মনটা চরম বিষাদগ্রস্থ করে দেয়।
শুন্য শুন্যালয়
মেনে নিতে পারিনি এখন অব্দি।
ছাইরাছ হেলাল
কালকে সম্ভবত একজন ডাক্তারের লেখা পড়লাম ওর অসুখের বিবরণ নিয়ে
এবং আরোগ্যের আশাবাদের কথাও শুনলাম। আর আজকে এ সংবাদে বেশ অস্থির হলাম।
ভালো থেক তুমি যেথায় যেমন থাকো।
শুন্য শুন্যালয়
এটুকুই এখন প্রার্থনা ওর জন্য। ভালো থেকো ভূত বাবা।
অরুনি মায়া
🙁
শুন্য শুন্যালয়
দোয়া করবেন ওর জন্য।
নীলাঞ্জনা নীলা
নাহ শব্দ নেই। শুধু ঈশ্বরের কাছে একটাই প্রশ্ন যদি এটুকুই সময়, তাহলে কেন পাঠানো? কেন?
শুন্য শুন্যালয়
তার কাছ থেকে উত্তর আসবেনা আপু। তার খেলাও বোঝার অসাধ্য।
জিসান শা ইকরাম
পূর্বের লেখাটি আবার পড়লাম
এমন লেখা আর লেখা হবেনা ক্যাসপারকে নিয়ে।
ক্যাসপার নামের প্রদীপটিই যে নিভে গেলো।
শুন্য শুন্যালয়
শুরুর দিকে লেখায় শিরোনাম দিতে ভুলে যেতাম আমি। লেখাটির শিরোনাম আপনি দিয়ে দিয়েছিলেন। কখনো কি ভেবেছেন, এই ইচ্ছে প্রদীপটি এতো দ্রুত নিভে যাবে !!
তানজির খান
যেখানেই থাকুক ভাল থাকুক………
শুন্য শুন্যালয়
এটুকুই প্রার্থনা, ভালো থাকুক বাবাটা।
লীলাবতী
ভালো লাগছেনা আপু কিছু।কত আশা নিয়ে সোনেলায় পোষ্ট দিলাম।অপারেশন সফল হলো,তার পর এই অবস্থা।কত কিউট আর সবার আদরের ছিল সে।
শুন্য শুন্যালয়
চলে যাবে বলেই হয়তো এতো আদরে জড়িয়েছিল। খুব কষ্ট হচ্ছে আপু। যাবার আগে কত কষ্ট দিয়ে নিয়ে গেলো তাকে, উহ।
অরুণিমা
এমন শিশু ওপাড়েতে চলে গিয়েছে?জেনে মন ভারাক্রান্ত হলো।কেন এমন হয়!!
শুন্য শুন্যালয়
জানা নেই আপু। 🙁
খেয়ালী মেয়ে
বছরটা আমার জন্য কেমন জানি শুধু হারাচ্ছি 🙁
এই অ্যাঞ্জেলটাকে আমি চিনি না, অথচো নিষ্পাপ মুখটা দেখে মনে হলো সে আমার কতো আপন,কতো কাছের–ক্যাসপারের এভাবে চলে যাওয়াটা সত্যিই কষ্টের……
আমি ভূতদের সবসময় ভালোবাসি, কী অদ্ভূত মিল ক্যাসপারও একটা ছোট্ট ভূত….এত্তোগুলা (3 এই ছোট্ট ভূতটার জন্য………….
জানি এই ভূতটা এখন যেখানে আছে অনেক ভালো আছে..আরো অনেক ভালো থাকুক এটাই চাই……তার বাবা মাকে উপরওয়ালা শোক কাটিয়ে উঠার শক্তি যেন দেয়, আমিন….
শুন্য শুন্যালয়
এ শোক কি করে, কবে কাটাতে পারবে জানিনা। প্রার্থনা করি, তোমার মত করেই। বড় আদরের সে। অপূর সাথে কথা হতই শুধু ক্যাসপার কে নিয়ে। কতো ইচ্ছে, কতকিছু। ভাবতে পারিনা আর। ভালো থেকো ক্যাসপার বাবা।
মরুভূমির জলদস্যু
সব ক্যাসপার ভালো থাকুক আপন ভূবনে।
শুন্য শুন্যালয়
ভালো থাকুক ক্যাসপার।
প্রজন্ম ৭১
সবার ভালোবাসা নিয়ে,সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলো ক্যাসপার।ফেইসবুকের ইভেন্টে ছিলাম আমিও।সে আর আমাদের মাঝে নেই,এই সংবাদ জানার সাথে সাথে ইভেন্ট থেকে বের হয়ে এসেছি।সহ্য করতে পারছিলাম না।
শুন্য শুন্যালয়
হাজার হাজার মানুষকে কাঁদিয়ে গেছে প্রিয় ভূতটা।
ব্লগার সজীব
আপু ব্লগে আপনার এই পোষ্টের মাধ্যমে জানলাম এই সংবাদ।ভালো লাগছিলো না কিছু,তাই আসিনি ব্লগে।ভালো থাকুক আমাদের সবার আদরের প্রিয় ক্যাসপার।
শুন্য শুন্যালয়
অপারেশনের পর খুশি হয়েছিলাম, শুনেছিলাম সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এরপর জানতে পারি ওর ফুসফুস ঠিকমতো কাজ করছেনা। মিরাকল ছাড়া সম্ভব নয়। বাচ্চাটা টানা 11 দিন কি কষ্টটা নিয়ে চলে গেলো। ভালো থাকুক সে, এটুকুই চাই।
অরণ্য
ক্যাসপার যেন ভাল থাকে ওপারে ওর দুরন্তপনায় – ওর অট্টহাসিতে।
শুন্য শুন্যালয়
ভালো থাকুক ওপাড়ে আমার বাবাটা।