দশ বছরের শাহাবানু ফ্রক পরে ছুটত এ বাড়ি সে বাড়ি। হঠাৎ ছোটা ছুটি বন্ধ। খাঁচা বন্দি হয়ে গেলেন শাহাবানু। জন্মভূমিতে অবরুদ্ধ হয়ে পরলেন।ভারতের নাগরিক ছিলেন আগে। ৪৭ এর দেশ বিভাগ পালটে দিল সব।৪৭ এর আগস্টের পর ভারতের নাগরিক হলেন ঠিকই,তবে তার জন্মভূমির চারিদিক হয়ে গেলো পাকিস্তান।সিট মহল নামের খাঁচায় বন্দি হয়ে গেলেন তিনি সহ দুই দেশের হাজার হাজার মানুষ। একটি দেশের নাগরিকগণ যে সুবিধা ভোগ করেন তার প্রায় সবগুলো থেকেই বঞ্চিত ছিলেন সবাই।নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে অন্য দেশ হওয়ায় ঐটুকু জমিনেই ছিল তাদের বিচরণ। চিকিৎসা,শিক্ষা,বিদ্যুত থেকে বঞ্চিত ছিলেন তারা। আজ ১ আগস্ট আনুষ্ঠানিক ভাবে এই শাহাবানু বাংলাদেশের নাগরিক হলেন।গভীর মমতা আর আবেগে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে নিলেন মুক্ত পাখি হয়ে। মৃত্যুর পুর্বে অনুভব করে গেলেন মুক্তির স্বাদ।
মানচিত্র পালটে যাবে আজ হতে। লাল ফোঁটাগুলো যা ছিল এতদিন ভারত,আজ হতে তা হয়ে যাবে বাংলাদেশ।
সবুজ ফোঁটাগুলো ভারত হয়ে যাবে।
আজ ১ আগস্ট রাত ১২:০১ মিনিটি বাংলাদেশের ছিটমহল গুলোতে আনুষ্ঠানিক ভাবে উত্তোলন করা হবে বাংলাদেশের
পতাকা। সমস্ত ছিটমহল গুলোতে চলছে উৎসব।
প্রতিটি মুসলমান বাড়িতে ৬৮ টি মোমবাতি এবং প্রতিটি হিন্দু বাড়িতে প্রদীপ জ্বালানো হয়েছিল ৬৮ বছর পর মুক্তির
এই ক্ষণটি স্মরণ করে।
কিন্তু জনতার তর আর সহ্য হচ্ছে না।তারা আগে ভাগেই উত্তোলন করেছেন জাতীয় পতাকা।
বাধ ভাঙ্গা আনন্দে ভাসছে জনতা।আমাদের কাছে বর্তমানে স্বাধীনতা বা মুক্তির আবেগ তেমন প্রভাব না ফেললেও
ছিট মহল বাসী আনন্দে ভাসছে সবাই ৬৮ বছর পরে মুক্ত,স্বাধীন হয়ে।
এই আনন্দে সামিল ছোট থেকে বড়রা সবাই।
ভারতের সাথে ছিট মহল বিনিময়ঃ
আজ ৩১ জুলাই মধ্যরাতে কার্যকর হচ্ছে দুই দেশের ছিটমহল বিনিময়। বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের ভেতরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল আজ মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশের হচ্ছে। এগুলোর আয়তন ১৭১৬০.৬৩ একর। অন্যদিকে ভারতের মূল ভূখণ্ডের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল হয়ে যাচ্ছে ভারতের। এগুলোর আয়তন ৭১১০.০২ একর। কাল থেকে দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে অন্য দেশের মূল ভূখণ্ডের ভেতরে ছিটমহলে অবরুদ্ধ জীবন কাটানো প্রায় ৫২ হাজার বাসিন্দার আজ তাই আনুষ্ঠানিক মুক্তির রাত।
আনুষ্ঠানিকভাবে ছিটমহল বিনিময় অর্থাৎ ৩১ জুলাইকে ধরে কে কোন দেশের নাগরিক হবে সেসব বিষয়ে কাজ করা হয়েছে। যারা ভারতীয় নাগরিক হওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছে তাদের চলে যেতে হবে ভারতীয় এলাকায়। আগামীকাল শনিবার ১ আগস্ট থেকে তাদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে। আগামী নভেম্বর পর্যন্ত তারা ভারতীয় ও বাংলাদেশের এলাকায় আসা-যাওয়া করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে তাদের জন্য ভারত সরকার ‘ট্রাভেল পাস’ ইস্যু করবে।বাংলাদেশের ছিটমহলে থাকা ৪১ হাজার ৪৪৯ জন বাসিন্দার মধ্য থেকে ৪০ হাজার ৪৭০ জন বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। ভারতীয় নাগরিক হতে চেয়েছে ৯৭৯ জন।
মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির ৪১ বছর পর ভারতের অনুমোদন পাওয়ার পরে এই বিনিময় সম্ভব হলো।বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৭৪ সালে সই হওয়া স্থল সীমান্ত চুক্তি ও এর প্রটোকল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে কয়েক দশকের পুরনো সীমান্ত সমস্যার স্থায়ী সমাধান হওয়ার পাশাপাশি সীমান্তে আসবে শান্তি। একই সঙ্গে খুলবে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত। এ চুক্তি ও প্রটোকল বাস্তবায়নের ফলে ছিটমহলের বাসিন্দাদের গত ছয় দশকের মানবিক সংকটের অবসান ঘটবে। এ ছাড়া রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার বাস্তবায়নের সুযোগ হবে তাদের। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক ইচ্ছে এবং প্রচেষ্টায় এই মানবিক সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়ে দু দেশের ৫২ হাজার মানুষ মুক্তির স্বাদ পেলো আজ।
অন্যদিকে ভারতের প্রাপ্ত ছিট মহলগুলুতেও আনন্দ উল্লাসের মাঝে পালিত হয়েছে মুক্তির এই দিনকে।রাত ১২:০১ মিনিটে ওখানে উড়েছে ফানুস।
শান্তি ও স্বকীয় সৌহার্দ্যের এই বাতাবরণ বজায় থাকুক দু’দেশের মাঝে।
এ সম্পর্কে আরো জানতে চাইলে পড়ুন- ছিটমহল যেন অশ্রু বিন্দু এক একটি
৩৬টি মন্তব্য
অরণ্য
এটি একটি বিরাট বড় দিন হয়ে থাকবে; তাদের জন্যে এবং বাংলাদেশের জন্যে।
জিসান শা ইকরাম
অবশ্যই।
এই সিট মহলবাসীর আন্দোলনের খবর জানার পর থেকেই এ বিষয়ের উপর আগ্রহ আসে আমার
এরপর সব সময়ই নজর রেখেছি।
ভালো লাগছে আমারো খুব।
সীমান্ত উন্মাদ
আজ দিনে যখন খবরটা দেখছিলাম, আর দেখছিলাম শাহবানুর মত হাজার হাজার মানুষের আনন্দ অশ্রু। তখন ছুটে গেছে মন বারবার। আজ থেকে তারা আমাদের একজন। তারা আর বঞ্চিত নামের অভিশপ্ত শব্দটার সাথী নন এই ভেবেই মনে একটা প্রশান্তি পেয়েছি।
এই সময়ে এমন একটি লিখার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ মামা।
শুভকামনা জানিবেন নিরন্তর।
জিসান শা ইকরাম
টভিতে এদের বাঁধভাঙ্গা আনন্দ দেখে আমিও আনন্দে আপ্লুত হয়েছি।
শিপু ভাই
আমি খুবই আপ্লুত এই ব্যপারটায়।
একুশ শতকে এমন অমানবিক একটা বিষয় মানা কষ্ট।
শুভেচ্ছা স্বাগতম আমার নতুন বাংলাদেশী ভাই বোনদের।
ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
পোস্টের জন্য ধন্যবাদ মামা।++++++++
জিসান শা ইকরাম
তোমার মনে আছে অবশ্যই এদের অধিকারের আন্দোলনের সময় পোষ্ট দিয়েছিলাম একটা।
গতকাল টিভিতে এদের উচ্ছ্বাস দেখে ভাল লাগছিল খুব।
তোমাকেও ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
স্বর্ণাক্ষরে এ দিনটির কথা মনে থাকবে দেরির যন্ত্রণা ভুলে।
জিসান শা ইকরাম
হ্যাঁ অবশ্যই
শুন্য শুন্যালয়
৬৮ টি বছর!! আহারে কত জীবন ঝরে গেছে অমানবিক জীবন যাত্রায়। বড় আনন্দ হচ্ছে এমন সংবাদে। ১ আগষ্ট স্বাধীনতার আরেকটি দিন। ৬৮ বছরের যন্ত্রনা ভুলিয়ে তাদের আপন করে নেবার দিন। গোছানো লেখা ভাইয়া, ধন্যবাদ শেয়ারের জন্য।
জিসান শা ইকরাম
আমরা হয়ত তাদের আনন্দটা সম্পুর্ন বুঝতে পারবো না।
সাবরিনা
অবশেষের অবসান!
জিসান শা ইকরাম
অবশেষে মুক্তি
মিথুন
লেখাটি স্টিকি চাই মোডারেটর বাহিনী। এ আমাদের আরেক স্বাধীনতার দিন। -{@
জিসান শা ইকরাম
আমার কোন লেখাই ষ্টিকি করেনা,মডুরা আমারে ভাল পায় না।
টিভিতে তদের আনন্দ দেখে চোখে পানি এসে যায়।
মিথুন
সাধারন ব্লগারদের মতামত কে গুরুত্বই দেয়না মডুরা বুঝলাম 🙁
জিসান শা ইকরাম
আমার কোন লেখা মডূরা ষ্টিকি করে নাই আজ পর্যন্ত।
কি আর করা, আমি তো আর বলতে পারিনা- করেন করেন ষ্টিকি করেন :p
মিথুন
আপনাকে কেন বলতে হবে? মডুদের যেকোন একজনকে ধরে আমার মন্তব্য দেখিয়ে দিলেই হতো।তারা যখন চোখে দেখেনা, কি আর করার…… 🙁
জিসান শা ইকরাম
হ্যাঁ কিছু করার নেই।আপনাকে মডু বানানোর সুপারিশ করলাম।আপনি মডু হলে আমার পোষ্ট সব ষ্টিকি করে দিয়েন।
আর্বনীল
৬৮ বছর পর নতুন করে আবারও স্বাধীনতার স্বাদ…
জিসান শা ইকরাম
এই মুক্তির তুলনা হয়না
তানজির খান
কাঙ্খিত মুক্তি। ভাল লেগেছে।
জিসান শা ইকরাম
টিভিতে দেখে আবেগাপ্লুত হয়েছি।
ইমন
আপনাকে এবং দুই দেশের সরকারকেই অভিনন্দন 🙂
জিসান শা ইকরাম
দুই দেশের সরকারকে অভিনন্দন।
আমাকে কেনো ?
খেয়ালী মেয়ে
৬৮ বছর পরে মুক্তির স্বাদ!!!এ নিউজেই একধরনের শিহরণ জাগছে মনেপ্রাণে——
ছিটমহলবাসীর আনন্দ দেখে মুক্তির স্বাদ অনুভব করার চেষ্টা করছি———–
তারাও আজ থেকে গলা ছেড়ে জাতীয় সংগীত গাইবে, আজ থেকে তাদেরও অহংকার করার মতো একটা পতাকা আছে, ভাবতেই ভালো লাগছে……………….
জিসান শা ইকরাম
১৯৭১ এর বিজয়ের আনন্দ দেখেছি
টিভিতে ছিট মহল বাসীর আনন্দ দেখে সে কথা মনে পরে গেলো আমার।
স্বপ্ন
টিভিতে দেখলাম ভাইয়া।তাদের আনন্দ দেখে বুঝলাম মুক্তির স্বাধীনতার আনন্দকে।
জিসান শা ইকরাম
সমস্ত রাত এরা আনন্দ করেছে, দেখলাম আজ টিভিতে।
কৃন্তনিকা
🙂
জিসান শা ইকরাম
ছিট মহল আর থাকলো না
এটি এখন ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলো।
নীলাঞ্জনা নীলা
৬৮ বছর!!!
স্বাধীনতার স্বাদ যে কি আজ ছিটমহলবাসী তা পেলো। স্বাগতম আমাদের বাংলার ভূবনে। এবং অভিনন্দনন।
দারুণ একটা পোষ্ট। (y) -{@
জিসান শা ইকরাম
৬৮ বছর সীমানার বাইরে যেতে পারেনি মানুষ, এটি ভাবতেই কেমন লাগে ।
স্বপ্ন নীলা
ছবিগুলো দেখে শান্তি পেলাম, আমাদের অহংকার, মুক্তির আনন্দ —–
শেয়ার করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ
জিসান শা ইকরাম
মুক্তির আনন্দ বিশাল আনন্দ।
রিমি রুম্মান
এ অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করবার নয়। কেবলই অনুভবের। টিভিতে হাসি মাখা মুখগুলোর আনন্দ দেখবার সুযোগ হয়েছে আমাদের। আমরা ভাগ্যবান। বাংলাদেশের পরিধি বাড়লো। যদিও দীর্ঘদিন যাবত শুনে আসছিলাম, বাংলাদেশ ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে…
জিসান শা ইকরাম
এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
স্বাধীনতার পর থেকেই ৭৪ সনের চুক্তিকে গোলামী চুক্তি,দেশ বিক্রির চুক্তি বলা হয়ে আসছে।
পাগলে কিনা বলে ?