প্রথমে টুং টুং পড়ে ঘটাং ঘটাং করে শব্দ করতে করতেই রাস্তার পাশে দাড়িয়ে গেল অটোটি।অটো চালক অটোটি দাঁড় করিয়ে অত্যন্ত নিপুণতায় অতি দ্রুত ছোট্ট তক্তপোষটি অটোর তলায় স্থাপন করে নিরীক্ষা শেষে জানাল বিনীত ভাবে সে মুজিব নগর যেতে পারবে না।
কুষ্টিয়া থেকে দু’ঘণ্টা বাস ভ্রমণ শেষে মেহেরপুর পৌঁছে অটোতে মুজিব নগর যাওয়ার মাঝামাঝি এ ঘটনা। হাল্কা প্রমাদ গুনে
ভর দুপুরে প্রায় চক্চকা টাক মাথায় আর একটি অটোর অপেক্ষায়।রাস্তার পাশে বড় প্যানে দুধ জ্বাল হচ্ছে ,ঘন দুধের মিষ্টি গন্ধ নাকে লাগছে। চা খোর নই, কিন্তু চা খাওয়ার ইচ্ছেটা চাগার দিচ্ছে বিনা নোটিশে। দোনো-মোনো মন, চা খেতে যাব না অটোর অপেক্ষায় থাকব। ধীর পায়ে আড়াইটি (দুটি সরব একটি নীরব ) যুবক কাছে এগিয়ে এলো। কাছে এসে একজন বাংলায় ও অন্যজন ইংরেজিতে জানতে চাইল আমি কোন দেশ থেকে এসেছি । বিস্মিত চোখের ছানাবড়া ভাব লুকিয়ে উত্তর দিলাম ‘এ আমার দেশ ’। প্রকট অবিশ্বাসী হয়ে বলল ‘এত সুন্দর বলা বাংলা ভাষাটি কোথায় শিখলেন সেটি আগে বলুন?’। সবিনয় উত্তর দিয়েছি ‘ শিখেছি আমার মা ও ‘খালা’র’ কাছ থেকে। বিস্ফোরিত হাসি চোখে সবাই টং এর চা-দোকানে।
পাওয়া গেল আধাআধি যাত্রী সমেত আর একটি অটো, দাম-দস্তুরের রফা শেষে চা খাওয়ার সময় চাইলাম, ঠাণ্ডা চা খেতে হবে তাই। চালক যত খুশি তত অপেক্ষায় তার অনাপত্তি জানিয়ে অটোতে থাকা যাত্রীদের অন্য অটোতে তুলে দিল। অটো চালক চা এর আমন্ত্রণ সবিনয়ে না করে দিল।
এই চালক নিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা পরে বলা যাবে কখনও।
যা বলছিলাম………
ভ্রমণ শেষে নিজ শহরে দ্বিতীয় বাসস্টান্ডে নামলাম রাত একটায়। বাসায় ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা যা আগে থেকে করা তা ক্লিক না করাতে ভারী গাঁট্টি-বস্তা নিয়ে পদ যুগল ভরসায় পদব্রজ , যদিও ব্রজটি হাঁটা দূরত্বের।জেলার প্রায় জ্যেষ্ঠ সুরক্ষা আধিকারিকের (প্রতিবেশী) গাড়িটি বার দু’য়েক পাশ কাটিয়ে গিয়ে আবার ফিরে এসে ইংরেজিতে প্রশ্ন , কোন্ দেশের মানুষ ও এই রাতের গভীরে কোত্থেকে এসেছি ও কোথায় যাব? গাড়ীর কাছে মুখ নিয়ে জানতে চাইলাম ‘ভাবী কেমন আছে এখন?’
হাঁটতে হয়নি গাড়িতেই বাসায় পৌঁছেছি।
৫৬টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
আম প্রথম হেলাল ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
অবশ্যই আপনি প্রথম।
এ জন্য শুভেচ্ছা।
মোঃ মজিবর রহমান
হেলাল ভাই, ভ্রমণ কাহিনী ভাল লাগলো ত দুধের এখন আর স্বাধ ও গন্ধ আছে নাকি সব নকল।
মোঃ মজিবর রহমান
আপনারে দেখলে বিদেশি ভাবে কেন,
আপনি সাদা না কালা?
ছাইরাছ হেলাল
আমি বুইড়া কাউল্লাই ভাবি নিজেকে । কিন্তু সমস্যা ওদের চউক্ষে।
ওরা তা দেখে না। মহা ঝামেলা।
ছাইরাছ হেলাল
চা নিয়েও লিখব অবশ্যই। তখন সব জানতে পারবেন।
মোঃ মজিবর রহমান
ভাই আমি মেয়ে নই, আমারে ওভাবে বলার দরকার নাই। মানুস কেন আপনাকে ফরেনার ভাবে?
ছাইরাছ হেলাল
এরপর ওদের জিজ্ঞেস করব ভাবছি।
শুন্য শুন্যালয়
আপনি দেখি সুন্দর বাংলা ভাষায় টাইপও করতে শিখেছেন !!! বাহ বাহ বেশ, তা কোথা থেকে শিখলেন?
কি করে দেশি মানুষ বেড়াতে গিয়ে রাতারাতি বৈদেশিক হয়ে গেলেন? কুস্টিয়ার হাওয়া পানির গুণ বলতেই হবে।
নিরব মানুষদের বুঝি আধা ধরা হয়?
লেখা পড়ে ঘন দুধের চা খাবার তৃষ্ণা পেলো ভীষন। ঘুরে বেড়িয়ে এখন এরকম বর্ণনায় লোভ দেখানো ঠিক না।
ছাইরাছ হেলাল
ভাইয়া, আমিতো আপনাদের লেখা দেখে দেখে শেখার বিফল চেষ্টা করছি মাত্র।
একটু দোয়া-খায়ের করলে আপনাদের কাছাকাছি লিখতে পারব বলে মনে হচ্ছে।
আমাদের দোষ নেই সবই কপাল।
আছে আরও অনেক গল্প,বল-ভরসা পেলে লিখে ফেলতে কতক্ষণ!
চায়ের আরও টুকরো গল্প আছে।
আপনি ইচ্ছে হলে বেড়াতে পারবেন।
শুন্য শুন্যালয়
আপনাদের ট্যুরের গল্প শোনার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি, আর আপনি এখনো বল-ভরসার অপেক্ষা করছেন? ছবি চাই সাথে। তবে আমার আপত্তি অইখানেই চা-এর কথা শুনলেই আমার কেমন লাগে!!! এই যে এখন আমাকে চা বানাতে ছুটতে হবে।
দোয়া-খায়ের করছি বৎস, আমাকেও হেলাল ভাইয়ের মতো করে লেখার তৌফিক দেয়া হোক, আমিন…
ছাইরাছ হেলাল
ট্যুরের গল্প কিন্তু লিখতে শুরু করেছি আগেই।’মুক্তো হাসি’ ও ‘মিছে এই বারামখানা’ এই
ট্যুরের উপর ই লেখা।ছবির ‘প্রতিভা!’ এখনই দেখাতে চাই না। তবে অবশ্যই দেখবেন।
ত্যাছড়া করে দুয়া করলে কিছুই হপে না। সহি দিলে করতে হপে।
শুন্য শুন্যালয়
হুম ভাইয়া বুঝতে পেরেছি। প্রতিভা দেখার অপেক্ষায় থাকবো।
আমার দিল সহি হে, দুয়া, ও ভি সহি হে 🙂
লীলাবতী
বিদেশী কেন ভাববে? আপনার চেহারা মুবারক কি বিদেশীদের মত ? :p
ছাইরাছ হেলাল
মোটেই বিদেশীদের মত নয়।পুরোই দেশী বুইড়া। ঘটনা হল যারা দেখে তাদের চোখের দোষ।
কিছুতেই নিয়মিত ‘দাক্তার’ দেখায় না। তাই হ্যাপা আমাদেরই পোহাতে হয়।
শুন্য শুন্যালয়
তাই বইলা হগলতের চোখে সমস্যা, জাতীর এক সদস্য হিসাবে এটা মানতে পারলাম না।
ছাইরাছ হেলাল
আজকাল ডাক্তাররা খুব দুষ্ট, মন দিয়ে রোগী দেখতেই চায় না। বা রোগীরাই ডাক্তার
হয়ে গেছে। আল্লাহ সব্বাইকে সূক্ষ দৃষ্টি দান করুণ এহেন জাতীয় দুর্দিনে।
শুন্য শুন্যালয়
এইতো এইতো যত্ত দোষ ডাক্তারদের, এইটা তো আমি মানিয়া লইবোনা।
আপনি যে চামে ফেয়ার এন্ড লাভলির গুণের কথা চাপিয়া যাচ্ছেন, ইহা বুঝিতে পারিতেছি। লীলাবতী দির সাথে একমত। এবার একটু ঘুরে তাকান, একটু হাসুন।
লীলাবতী
আমরা আপনার চেহারা মুবারক দেখতে চাই। আপনার পিছন আর দেখতে চাইনা, এবার একটু ঘুরে তাকান দেকি 🙂
ছাইরাছ হেলাল
আমার চেহারা মুবারক দেখাতে আমার কুনই আপত্তি নেই তবে আপনারা পালিয়ে
যাবেন আমি তা কিছুতেই চাই না। পালাবেন না এ আশ্বাস দিলে ঝুঁকি নিতে রাজি নই।
লীলাবতী
পালিয়ে যাবো কোথায়? আমরা আমরাই তো 🙂
জিসান শা ইকরাম
প্রথম ঘটনায় এত্ত কিছু হয়েছে, তা আমি দেখিনি।
গেলাম চা খেতে, এই টাইমে এত্ত কিছু।
তবে পাগলীকে নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে ছিলাম বলে দৌড়ে পালিয়েছি।
২য় ঘটনায় টাস্কি খাইছি।
শুন্য শুন্যালয়
আরে জিসান ভাইয়া, আমি তো আপনাকেই খুঁজছি। পত্রিকায় সেদিন নিউজ দেখলাম, ছবিও দেখলাম আপনার। পাগলীর সাথে একদিন… আহা !!! দারুন লুমান্টিক। এইবার কাহিনী বলুন। সত্য কখনো চাপা থাকেনা।
ছাইরাছ হেলাল
চাপা রাখা ঠিক ও না।
জিসান শা ইকরাম
একজনে ফেইসবুকে প্রকাশ কইর্যা ইজ্জতের বারোটা বাজাইছে।
সোনেলায় দিলে তো পুরাই ছ্যারা ব্যারা হইয়া যাইব।
শুন্য শুন্যালয়
তাই বলিয়ে আমরা সোনেলাবাসী কি দুষ করিলাম? আমাদের এমন ধুম্র জালে আটকাইয়া রাখিলে চলবেনা। ছবি দুইখান কপি পেস্ট করে দেব নাকি? 😛
জিসান শা ইকরাম
আরে না, ছবি দিয়েননা এখানে, শুন্য শুন্যালয়
শুন্য শুন্যালয়
আচ্ছা এবারের মতো বাঁচিয়ে দিলাম 🙂
জিসান শা ইকরাম
পাগলীর ঘটনা জানিতে চাহিয়া লজ্জা দিবেন্না ম্যাডাম
সে এক করুন ইতিহাস 🙁
শুন্য শুন্যালয়
করুন বলিয়া ইতিহাস কি কখনো থেমে ছিলো?? উহা প্রকাশিত হবেই। ইতিহাস বিকৃতির হাত থেকে বাঁচাতে হলে প্রত্যক্ষ বর্ণনাই শ্রেয়।
জিসান শা ইকরাম
প্রত্যক্ষ বর্ননা? আমি তাহলে দেখি নাই 🙂
লীলাবতী
পাগলীর ঘটনা কি শুন্য আপু ? জানতে মন চায় 🙂 জানানো হউক।
শুন্য শুন্যালয়
পাগলী কাহিনী পুরোপুরি মসলাসহ শুনতে হলে আমাদের অভি আপুকে লাগবে। তবে জিসান ভাইএর সাথে হেভভি দুইখান ফটুক দেখছি দুইজন পাগলী ম্যাডামের। আর ইস্টাইল দেইক্ষা তো আমি টাস্কি খাইছি। পুরাই মডেল ফবি কেটস :p
ছাইরাছ হেলাল
পাগলি উপাখ্যান আমি বলতে চাই না। ওটি যথা সময়ে উপস্থাপিত হবে।
এরকম টাস্কা-টাস্কি আরও আছে।
জিসান শা ইকরাম
আপনি না বলাই ভালো 🙂
শুন্য শুন্যালয়
বুঝতে পারছি উহা একটি ঐতিহাসিক এবং স্মরণীয় ট্যুর ছিলো। অভি আপুকে মিস করছি, সে ই এখন আমাদের সহায়।
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
আগে টাকা টুকা দেন, এরপরে ভেবে দেখি 🙂
ছাইরাছ হেলাল
হ্যা,এ ব্যাপারটিতে রফা হওয়া প্রয়োজন।
আবু জাঈদ
একটা চা পাওনা রইলাম, কবে পাব?
ছাইরাছ হেলাল
আপনি পেয়ে যাবেন অবশ্যই।
খেয়ালী মেয়ে
বাহ!!! আপনেতো দেখি খুব সুন্দর বাংলায় লিখতেও পারেন…সবগুলো বর্ণ কি সুন্দর একসমান…
ছাইরাছ হেলাল
আমি তো আপনাদের দেখেই শিখছি , আপনারা সবাই ভাল লেখেন।তাই আমিও একটু চেষ্টা করছি মাত্র।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ব্লগার সজীব
দারুন অভিজ্ঞতা তো। বেশ ভুষা কি বিদেশীদের মত ছিলো? ‘ প্রকট অবিশ্বাসী হয়ে বলল ‘এত সুন্দর বলা বাংলা ভাষাটি কোথায় শিখলেন সেটি আগে বলুন?’। সবিনয় উত্তর দিয়েছি ‘ শিখেছি আমার মা ও ‘খালা’র’ কাছ থেকে। ‘ প্রশ্নকর্তা ফেইসবুকার হলে Status দিতো ‘ আজ টাসকি খেলাম ‘ :p
ছাইরাছ হেলাল
এই বেশভূষা স্বাভাবিকই ছিল যা ব্যবহার করি সব সময়।তবে টাসকি খেয়েছে তা সত্যি।
স্ট্যাটাস দিলেও জানার উপায় নেই এখন।
মেহেরী তাজ
নিজের দেশে বৈদেশিক আহা সেকি কষ্ট। আপনাকে বৈদেশিক ভাবার করন কি ছিলো।
ছাইরাছ হেলাল
হ্যা, একটু বিপন্নবোধ এসেই যায়। আবার কখনও হলে জিজ্ঞেস করে নেব।
বন্য
তারা আপনাকে বৈদেশিক ভাবার কারনটা কি আসলে? খুলে বলেন একটু, দেখতে কি আপনি সত্যি বিদেশীদের মত সাদা নাকি?
ছাইরাছ হেলাল
উপরেই বলেছি দেখতে বুইড়া কাউল্লা। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। বিকেলে টেনিস মাঠে গিয়ে দেখি দু’জন
নবীন খেলোয়াড়ের গল্প করছে একটু দূরে বসে, শোনা দূরত্বে। একজন অন্য জনকে বলছে কাল গভীর রাতে দু’জন
বিদেশি কে ভারী গাট্টি-বস্তা নিয়ে হেঁটে যেতে দেখেছে , বেশি রাত তাই নেমে কথা বলেনি। আজ দিনে পথে ঘাটে আর দেখেনি, সে কি দেখছে………?
বানপ্রস্থ না হওয়ার কোন কারণ দেখছি না এ যাত্রা।
বন্য
একজন বিদেশীর মতো লাগতেই পারে তবে আপনাদের দুজনকেই কেন বিদেশী ভাবতে যাবে ওরা? আবার এমন নাতো যে রাতের আঁধারে আপনাদের আসল সৌন্দর্য ফুটে উঠে ?? একজন যদি দেখতো তাহলে নাহয় বলা যেত চোখের ভুল কয়েকজনতো একই কথা বললো। এখন নিশ্চিত যে চেহারার মাঝে নিশ্চই কোন না কোন রহস্য আছে আপনাদের। বুইড়া কথাটা না হয় বুঝলাম, কাউল্লা মানে কি? :p
ছাইরাছ হেলাল
কাউল্লা মানে হলো, কালো এবং ভয়ানক বিশ্রি দেখতে।
সাইদ মিলটন
চা কই পাই এতো রাইতে 🙁 এমন কইরা লিখছেন দুধের ঘ্রাণ নাকে আইসা ধাক্কা মারছে
ছাইরাছ হেলাল
তা ঠিকই বলেছেন এত রাতে কই পাই চা। এখানকার দুধ চা বিখ্যাত।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
হেলাল ভাইয়ের পোষ্ট চোখে এলে কেবল মন্তব্যগুলো পড়ি বেশ সুন্দর সুন্দর মন্তব্য ভাল লাগে বেশ।
ছাইরাছ হেলাল
এই একটু গপ-সপ করি আমরা।
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
লেখার প্রথম অংশ, এর স্থান কাল পাত্র কেনো জানি পরিচিত লাগছে :p
ছাইরাছ হেলাল
আপনাকেও ইট্টু ইট্টু চেনা চেনা লাগছে কেন বুঝলাম না।
ধন্যবাদ অবশ্যই।