আজ রাতে একটা রোমাঞ্চকর ও দু:সাহসিক অভিযানে নামছি – দোয়া করবেন সবাই ।
আমার এক কলিগ সম্প্রতি নতুন বাসায় উঠেছে, পাবনা ল ‘কলেজের পাশের বিল্ডিং এ ॥ বেচারা গত কয়েকরাত ধরে ঘুমাতে পারছেনা ॥ প্রতিরাত ২/৩ টার দিকে সে নাকি ল ‘কলেজের ছাদে জিন- পরী জাতীয় কিছু একটা দেখে ॥
সে ভীষণ ভয়ংকর সব শব্দ করে আর আমার কলিগের উপর নাকি সবসময় নজর রাখে ॥
আসেপাশের আরো অনেকেই নাকি জিনিসটা দেখেছে — কলিগ বাসাটা ছেড়ে দিতে চাচ্ছে।
আমি সিদ্বান্ত নিয়েছি আজ রাত বারটার পরে একটা কম্বল আর বালিশ আর এক প্যাকেট বেনসন নিয়ে ঐ ল ‘কলেজের ছাদে রাত কাটাব ॥ সবাই নিষেধ করছে — আমি অনড়, প্রয়োজনে ওদের আমার সুইসাইডাল নোট লিখে দিতে চেয়েছি, “আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় ॥ ”
— পরী বা পেত্নী দেখার অনেকদিনের শখ আমার — দোয়া করেন আমার আশাটা যেন পূণ হয় আজ ॥ অবশেষে অনেক কস্ট করে ভাঙা দেয়াল টপকে আমি এখন ভুতের বাড়িতে নীচতলায় ৫/৬টা কক্ষ, কোনটারই দরজাজানালা কিছুই নেই,শুধুই আবর্জনা ।। একটুকরা কাগজ সাথে এনেছিলাম, ওর ওপর বসে সিগারেট ধরালাম ।।দোতলায় আলো জ্বলছে দেখে অনেক কস্ট করে কনুই এর চামড়া হারিয়ে দোতলায় উঠে দেখি জংগলের মাঝে বসে ৩ জন নেশাখোর হেরোইন টানছে ।। আমাকে দেখে ৩ জনই আমাকে ঘিরে ধরলো ।।। একজন আবার ইয়া বড় এক চাক্কু বের করলো ।। আমি মাথা ঠান্ডা রেখে ওদের আগে শান্ত হতে বললাম ।।
তিন হিরোইঞ্চিকে অস্ত্র সহ দেখেও আমি মাথা ঠান্ডা রাখলাম, তাছাড়া ছোটবেলা থেকেই আমার ভয় ডর একটু কম ।। শুধু ভয় পাচ্ছিলাম আমার এন্ডয়েড ফোন আর সংগে থাকা ৮/৯ শ টাকার জন্য ।। যাই হোক একটু অভিনয় শুরু করলাম ।। ওদের বললাম আমি পাবনায় নতুন, আমার বাড়ীওয়ালা আবার এলাকার একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি, তার নামও করলাম ।। বললাম আমিও নেশা করতেই এই ফাঁকা বাড়ীতে ঢুকেছি, অলরেডি একডোজ প্যাথেডিন নিয়েছি — আপনাদের দেখে একটু সুখদু:খের আলাপ করার বাসনা জেগেছে, তাই এলাম ।। ওরা বিশ্বাস করলো, মুখে পয়সা নিয়ে মোটা কাগজের পাইপ দিয়ে রাংতার নীচে ম্যাচের কাঠি দিয়ে ওরা হিরোইন টানছে — আমাকেও অফার করলো ।। আমি বল্লাম এটা আমার চলেনা । তখন বললো বাবা (ইয়াবা) চলবে ? আমি রেট জানতে চাইলাম — হিরোইন এর পুরিয়া ১০০ টাকা, বাবা ২০০ থেকে ২২৫ ডাইল ৬০০ আর গাঁজার পুরিয়া দশ ।। ভাবলাম ভার্সিটি ছাড়ার পর ডাইল খাওয়া হয় নাই, টেস্ট করা যেতে পারে আর ওদের ও পর্যবেক্ষণ করা যাবে । ইতিমধ্যে ওরা গাঁজার স্টিক ধরিয়েছে, আমার পালা এলো, লাগালাম দুইটান ।।আরো একটা স্টিক শেষ করে ওরা উঠে পড়লো — বাবা খেতে যাবে। ওদের লিডার,নাম উকিল বললো, ভাই টাকা দ্যান আপনার জন্যে ডাইল আনবো, আমি বল্লাম আমার কাছে মাত্র ৩০০ টাকা আছে — ও নিজের পকেট ঘাটাঘাটি করে নিমরাজি হলো এবং ৩ জন মিলে বিদায় হলো।
অবশ্য এরই মধ্যে উকিল মিয়া পাশের হোটেল থেকে এক প্যাকেট বিরিয়ানি এনে,একটা কয়েল আমার পাশে জ্বালিয়ে দিয়ে গেছে ।।
আমি একা ঐ ছাদে বসে রইলাম ।। ততক্ষ্ণণে গাঁজার নেশা আমাকে পেয়ে বসেছে । বসে থাকতে না পেরে ঐ নোংরা ছাদেই শুয়ে পড়েছি ।।মাথার ওপর আধখানা চাঁদ ।। নিজের উপড় কোন কন্ট্রোল নেই — ভাবছি ওরা ফিরে এসে যদি আমার মোবাইল, মানিব্যাগ এমনকি আমার প্যান্টও খুলে নিয়ে যায় আমি কিছুই করতে পারবোনা এখন, গায়ের গেঞ্জি আমি নিজেই খুলে ফেলেছি । শুধু ভাবছি আমাকে সুস্থ্য হতে হবে ।। উঠে গিয়ে বমি করলাম, পানি খেয়ে মাথায় ঢাললাম খানিক ।। এরপরে সামনে থাকা বিরিয়ানির প্যাকেট খুলে গপাগপ কয়েক গ্রাস সেটে দিলাম ।। এতক্ষ্ণণে কিছুটা নরমাল হয়েছি ।।। আমার ঐ কলিগকে মেসেজ পাঠালাম — আমি সেই ভৌতিক ছাদে দাঁড়িয়ে আছি, তাকিয়ে দেখুন ।। ব্যাটা দেখি জানালায় লাইট, জ্বেলে ভয়ে ভয়ে উঁকি দিচ্ছে ।।মোবাইল করার বা ধরার সাহস ও পাচ্ছেনা ।। এভাবেই রাত তিনটা বেজে গেল, কেউ নেই — না নেশাখোর, না পেত্নী, না পরী — কিচ্ছু না।
অবশেষে সাড়ে তিনটায় বাবাজিরা এলো — একেকজন পুরাই টাল — বললো ৩টা করে বাবা খেয়ে এসেছে। উকিল মিয়া এসে আমার পায়ে ধরে চিতপটাং — বারবার মাফ চাইছে, ভাই বাবা খেয়ে টাকা শেষ, আপনার জন্যে ডাইল আনতে পারি নাই, মাফ করেন ।। ২টা গাঁজার স্টিক হাতে দিলো ।। আমি আর ব্যাটারে কইলাম না, “তোর বিরিয়ানি খাইয়া আমার টাকা উসুল করছি ” — এবারে আমি আসল কথা পারলাম, ” তোমরা তো প্রতিরাতেই এখানে আসো, এই ছাদে নাকি শাড়ী পড়া মেয়ে অনেক রাতে হাঁটাহাঁটি করে — কাহিনীটা কি ।। উকিল বললো, আরে ভাই, ঐটা হইলো ঐ সামনের হোটেলের কর্মচারী মতি ।। শালা একটু হিঁজড়া টাইপের কয়দিন আগে একখান লালশাড়ী পরে এই ছাদে হাঁটছিলো — তখন ওরা তাকে ধরে ফেললে স্বীকার করে আসেপাশের বাড়ীর মানুষদের ভয় দেখানোর জন্য সে এ কাজ করে নাকি মজা পায়। আর গতমাস ছিলো রোজার — হোটেলে সেহরি রান্না শেষে রাত ৩টা থেকে ৪টার সময় সে একাজ করতো — কারন সেহরি খেতে ওঠা আসেপাশের ফ্লাটের মহিলারা ঐ সময় জাগা থাকতো আর জানালা দিয়ে তাকিয়ে ভয় পেতো ।।
★★ তো এই হলো সেই অশরীরী পরী রহস্য ★
১৪টি মন্তব্য
খসড়া
গোয়েন্দা হিসেবে আপনার উত্তর উত্তর উন্নতি কামনা করি। ভাল লাগলো আরও লিখুন। ধন্যবাদ।
মিসু
আপনার পরী কাহিনী পড়লাম । খসড়া ভাইয়া যা বলেছেন আমারও তাই মত। গোয়েন্দা হিসেবে ভালো করবেন আপনি 🙂 (y)
স্বপন দাস
ধন্যবাদ ।। আসলে যে কোন রহস্য বা নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আমার আকর্ষণটা একটু বেশিই ।।আর ছোটবেলা থেকেই মাসুদ রানার ভক্ত ।।
ব্লগার সজীব
আপনার তো অনেক সাহস। এমন হলে আমি ওখানে যাবার চিন্তাই করতাম না। নেশাখোরদের ভালোই ভাবে হ্যান্ডেল করা শিখেছেন 🙂 ভালো লাগা পোস্ট ।
প্রজন্ম ৭১
লেখা ভালো লেগেছে । পুড়ানো জমিদার বাড়ী নাকি এটি ? কোথায় ?
স্বপন দাস
প্রজন্ম৭১@ এটা পাবনায় রুপকথা সিনেমা হলের সামনে সামান্য দুরে ।।
ফাহিমা কানিজ লাভা
আপনি তো ভাই সাহসের ঢেঁকি!! চালিয়ে যান, শুভ কামনা।
আফ্রি আয়েশা
শেষ পর্যন্ত পরী কিনা মতি 😀 ভালো লিখছেন 🙂
আদিব আদ্নান
আপনার সাহস আছে বলতেই হবে ,
তবে নেশাখোরদের থেকে সাবধানতার ও দরকার আছে ।
লীলাবতী
আপনার ৩০০ টাকা লস । এমন সাহস আর করবেন না। বিপদ হতে কতক্ষন ।
মর্তুজা হাসান সৈকত
ভালো লিখেছেন তবে বানানের দিকে খেয়াল দিতে হবে খানিকটা । প্রচুর ভুল বানান দৃষ্টিকটু ভাবে চোখে পড়েছে ।
স্বপন দাস
ধন্যবাদ লীলাবতী ।। তবে Adventure তো তাই টাকাটা কোন ব্যাপার না ।।
স্বপন দাস
সৈকত ভাই, অবশ্যই খেয়াল রাখবো ।।তবে মোবাইলে লিখি তো তাই ইচ্ছা থাকলেও অনেক শব্দ ঠিকভাবে লেখা যায়না ।।
জিসান শা ইকরাম
হা হা হা হা , মজা পেলাম পড়ে । (y)
ঘটনা সত্যি হলে একা আর এমন করবেন না ।