এটি আমার এক্কেবারে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের পারিবারিক ঘটনা তাই ফেসবুকে লেখা যাচ্ছেনা। আমার শ্বশুরের একমাত্র ছেলে তখন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। ঘটনাটা ফখরুদ্দীন, মঈনুদ্দীন সরকারের আমলের। তখন সেনাবাহিনীর হম্বিতম্বিতে ডিসি এসপি তটস্থ। এমনি এক নাজুক সময়ে ডিসি ও ইউ এনও দের সাথে মিটিংএ বসে বয়সে নবীন এক মেজর ধুমছে ধুমপান করে যাচ্ছিলেন। একফাঁকে বারান্দায় এলে উনি তার এক কলিগকে মেজরের বেয়াদবি নিয়ে কিছু বলেছিলেন ~ দুর্ভাগ্যক্রমে সেটা ঐ মেজরের কানে পৌঁছে যায়। ব্যাস, তাৎক্ষনিকভাবে ওনার নামে দু তিনটা মামলা করিয়ে এরেস্ট করে জেলা কারাগারে ঢোকানো হলো। ১/১১ এর সেটাই প্রথম কোন সরকারি পদস্থ কর্মকর্তাকে এরেস্টের ঘটনা।
আমি নিজে দু-তিনবার ঢাকা হাইকোর্টে দৌড়াদৌড়ি করলাম জামিনের জন্য – কোন বিচারকই সাহস করলেননা।
এবার আসল ঘটনায় আসি, আমি তখন এ পরিবারের ৭/৮ বছরের পুরোনো জামাই।তাই পরিবারটির মানসিকতা অনেকটাই জ্ঞাত। এদের এক পারিবারিক গুরুদেব আছে – ৩০/৩৫ বয়সের আস্ত ভূরিবাগানো অশিক্ষিত এক ধান্ধাবাজ। – কারন আমার খুবই নিরীহ আর সৎ প্রাক্তন আমলা এডভোকেট শ্বশুরমশাই ওনাকে পা ছঁয়ে প্রনাম করতেন – দেখে আমার মাথায় আগুন জ্বলতো।
তো পরিবারের এই মহাবিপদের মাঝে শ্বশুরালয়ে এসে ঘাঁটি গেড়ে বসলেন। আজ এ যজ্ঞ কাল আরেক যজ্ঞ ~~ দিশাহারা ফ্যামিলিটাকে ইচ্ছেমত দোহন করতে লাগলেন। কদিন পরে বললেন আমার সদ্য বিবাহিতা যুবতী শালীকে নিয়ে মাঝরাতে বিশেষ হোম করবেন।আর তাতে তার ভাইয়ের জামিন হয়ে যাবে। শালীকা কিছুটা চালাক ছিলো বলে, ওর খারাপ উদ্দেশ্য টের পেয়ে অন্য অছিলায় তার স্বামীর বাড়ীতে চলে যায়। বাড়ীতে তখন উক্ত ইউএনও সাহেবের মাত্র ১০/১২ বছরের কন্যা আর আমার বৃদ্ধা অতি গুরুপ্রানা শ্বাশুড়ী। এরপরে সেই লুইচ্চা গুরু আমার শ্বাশুড়ীকে বোঝায় এই নিষ্পাপ কিশোরী মেয়েকে নিয়ে জপ আর শাস্ত্রীয় হোম করলে তার বাবার কারামুক্তি নিশ্চিত। উনি বলে দিলেন, একটি নারিকেল তেলের বোতল,একটা পাকা কলা নিয়ে সেই কিশোরী মেয়েকে নিয়ে রাত বারটায় ঘরের দরজা বন্ধ করে তিনি যজ্ঞ করবেন – তাদেরকে ডিস্টার্ব করা যাবেনা। শ্বাশুড়ীমা খারাপ কিছু আঁচ করে ঘটনাটা তার মেয়েকে জানালেন। তার মেয়ে সাথে সাথে আমাকে মোবাইল করে বললো,”জামাইবাবু, মেয়েটাকে বাঁচান।” আমি তখন খুলনায়, সাথে সাথে রংপুর কারমাইকেল কলেজে পড়তে থাকা আমার ভাগ্নেকে মোবাইল করে ওর ৩/৪ জন বন্দ্ধুকে নিয়ে ঐ বাসায় পাঠালাম। বলে দিলাম,ভন্ড ঐ গুরুকে তক্ষুনি লাথি মেরে বাসা থেকে বের করে পাশেই র্যাব ক্যাম্পে দিয়ে আসতে।
~ ওরা সেটাই করতে যাচ্ছিল, বাধা দিলেন স্বয়ং শ্বাশুড়ীমা। ছেলেদের হাতে পায়ে ধরতে লাগলেন, বললেন গুরুদেব কাল সকালেই চলে যাবেন কথা দিয়েছেন।ওনাকে মারলে ভয়ংকর পাপ লাগবে ~ ইত্যাদি ইত্যাদি। বাধ্য হয়ে ওরা ফিরে গেলো। এই মেয়ের মা তখন তার বাপের বাড়ীতে আয়েশি জীবনযাপন করছিলেন – এ ঘটনাগুলির সব আপডেট তাকে জানানো হয়েছিলো – কারন তিনিও আমায় রিকোয়েস্ট করেছিলেন। ~~~ মেয়েটিকে বাঁচিয়েছিলাম সেদিন নিশ্চিত এক ভয়ংকর পরিণতি থেকে এক হায়েনার হাত থেকে।
এর ক’মাস পরে ইউএনও সাহেব ছাড়া পান।
জীবনের সবচে বড় শকটা খেলাম সেদিনই ~
~~~~~ শুনতে পেলাম তিনি ও তার স্ত্রী দুজনে মিলে গ্রামের ঐ গুরুদেবের বাড়ীতে গিয়েছেন পা ধরে মাফ চেয়ে আশীর্বাদ নিতে।
—সেই ইউএনও এখন অঢেল ঐশ্বর্য, বিত্ত সহ সরকারের বিশেষ আমলা। তবে তাঁকে আর আমি কোনদিন শ্রদ্ধা করতে পারিনি।।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বি:দ্র: বছরখানেক পর অন্য এক জায়গায় মেয়ে নিয়ে লুচ্চামি করতে গিয়ে পুলিসের হাতে ধরা খেয়েছেন সেই বাবাজী।
৬টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
অন্ধবিশ্বাস মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়!
আমাদের সমাজে এমন অনেক ভন্ড সাধু আছে। আর তাদেরকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে কিছু মানুষ।
মৌনতা রিতু
এই অন্ধবিশ্বাস নিয়ে ধারাবাহিক একটা পোষ্ট এসছে আমার পড়ে দেখতে পারেন। এদের আসলে কোনো লজ্জা নেই। শিক্ষিত হয়েও বেসরম।
হ্যাঁ, ১/১১ তে এমন সব হতো তা প্রশাসনে থেকে আমরা দেখেছি।
ধন্যবাদ আপনাকে এমন একটি সাহসি পোষ্টের জন্য।
স্বপন দাস
ধন্যবাদ, হ্যাঁ পড়বো আপনার লেখাটা
মোঃ মজিবর রহমান
এই অন্ধ বিস্বাশ সকল ধর্মে কুড়ে কুড়ে খায়।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
এই ২০১৬ সালে এসেও অন্ধ বিশ্বাসের বলি হয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন আমারই পরিচিত জগতের একজন। জানার পর নিজের সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব পরিবারটিকে সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করছি। ভাবতে পারছি না কি করে এরা এতোটা ঝুঁকে পড়েছিলো!
অন্ধবিশ্বাস বড় মারাত্মক!!!
আবু খায়ের আনিছ
বাহ! চমৎকার। এই হচ্ছে শিক্ষিত মানুষের শিক্ষার নমুনা।