সেদিন এক মেয়ের সাথে একুশে নিয়ে কথা হচ্ছিল
– ভাইয়া তোমার একুশের প্ল্যান কি
– আল্লাহর কাছে দোয়া করব শহীদ দের জন্য
– আমি সেদিন শাড়ি পড়ব। সারাদিন ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরব আর অনেক মজা করব
সারাদিন ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরলে আর মজা করলে ভাষা শহীদদের প্রতি কিভাবে শ্রদ্ধা জানান হবে বুঝতে পারলাম না। ব্যাপার না, কিছু পাবলিক তো আবার ভাষা শহীদদের মুক্তিযোদ্ধা বানায় ফেলেন। বাদ দেন এক তারছিড়ার গল্প শোনাই
ফেনীর ছেলে ছিল তারছিড়াটা। ২১ শে ফেব্রুয়ারি মিছিলে যাওয়ার আগে মাকে লেখা শেষ চিঠিতে সালাম বলেছিল,
মাগো ওরা আমার মা ডাক কেড়ে নিতে চায়। ঢাকার পরিস্থিতি ভালনা। যেকোন সময় ১৪৪ এর ডাক দিতে পারে। তবু আমরা থামব না মা। আমরা আমাদের মায়ের ভাষার অধিকার আদায় করবই। আব্বাকে বোলো আমার যদি কিছু হয়ে যায় ক্ষমা করে দিতে। মাগো তোমার ছেলে মা ডাকার অধিকার আদায় করেই ঘরে ফিরবে
নীলক্ষেত স্টাফ কোয়ার্টারে মেসে থাকত। ৫২ এর সেই আগুন ঝরা ফাগুনে মিছিলে যোগ দিতে গায়ে সাদা শার্টটা চাপিয়ে রাস্তায় নামে পাগল ছেলে সালাম। ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বেরোন মিছিলে সামনের সাড়িতেই ছিল ছেলে। পুলিশের এলোপাথারি গুলিতে বুলেট বিদ্ধ হয় পেটে
তিনদিন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলের করিডরে পড়ে ছিল। পাকস্থলী ফেটে মলমূত্র রক্ত মিশে পচা গন্ধ বেরোচ্ছিল। যন্ত্রনায় তিনদিন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেছে সালাম। এগিয়ে আসেনি সরকারের চাকর কোন ডাক্তার। তিন দিন পর সালামের পিতা ঢাকা পৌছে করিডরে ছেলেকে দেখতে পান। এপ্রিলের ৭ তারিখ মারা যায় সালাম
এই হল তারছিড়া সালামের ভাষার জন্য প্রাণ দেয়ার গল্প
এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেই সালামের কবরটা কোথায় সেটা পর্যন্ত আমরা জানিনা।আজিমপুরে কবর দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সালামের কবর চিহ্নিত করা হয়নি। আজিমপুরে আছে,কিন্তু কোথায় আছে কোন কোণায় আছে কেউ জানেনা। ৬২ বছরে কেউ একবার ভাবেনি সালামের কবর টা কে চিহ্নিত করার কথা। কি দরকার শহীদ মিনার তো আছে। মৃত্যুর আগে সালামের বাবা আফসোস করে বলে গেছেন
আমার ছেলেটা ভাষার জন্য প্রাণ দিল তার বদলে তার কবর টাও কেউ খুজল না। তোমরা তো শহীদ মিনারে যেয়েই খুশী। কিন্তু বাবা হিসেবে আমি একটাবারও ছেলের কবরের সামনে দাড়িয়ে জিয়ারত করতে পারলাম না।
সত্যিটা হচ্ছে আমরা এতই বেইমান যে, যে ছেলেটা প্রাণ দিয়ে ভাষার অধিকার আদায় করল সে ছেলেটার কবর টাই খোজার চেষ্টা করলাম না আমরা। এইটাই হইল আমাদের তথাকথিত ভাষা শহীদ দের প্রতি শ্রদ্ধা।
জি এটাই সত্যি। সেদিন সালাম নামে এক তারছিড়া ছেলেটা গুলি পেটে নিয়ে মেডিকেলের করিডরে প্রাণ দিয়েছিল যাতে আজকের মফিজ মর্জিনা সকিনারা ভাষা দিবসে চিপায় যাইয়া সেক্সুয়াল সেলিব্রেশন করতে পারে। বন্ধুদের নিয়ে টিএস সি বইমেলা শাহবাগে চুটায় মজা করতে পারে। মাল টাল খাইয়া ভাষা দিবস আর সেলিব্রেশন ডে এক কইরা ফালুদা বানাইয়া ভাষা সেলিব্রেশন দিবস টাইপ কিছু একটা পালন করতে পারে। চ্যানেলের উপরে শহীদ মিনারের লোগো লাগাইলে ভাষা দিবসের শ্রদ্ধা উদ্ধার হয়না।,
একুশ মানে কি শুধুই উৎসব, একুশ মানে যুবক সালামের পেটে গুলি নিয়া মেডিকেলের করিডরে যন্ত্রনায় আকাশ ফাটান। একুশ মানে মা কে লেখা চিঠিতে মা ডাকের অধিকার আদায়ের প্রতিজ্ঞা করা। একুশ মানে সালাম রফিক জব্বারের বুকের আগুন চোখে লাগিয়ে একশো চুয়াল্লিশ কে মাঝখানের আঙ্গুল্টা দেখাইয়া প্রচন্ড অহংকারে ভেঙ্গে চুরমার করা। একুশ মানে তারছিড়া সালামের রক্তে ভেজা সাদা শার্ট
একুশ মানে দু হাত তুলে খোদার দরবারে শহীদের আত্মার শান্তি কামনায় ফরিয়াদে চোখ ভাসিয়ে যাওয়া
ফেসবুকে ওয়ারিশ আজাদ নাফি র লেখা থেকে সংগৃহীত ।
১৮টি মন্তব্য
আবু জাকারিয়া
আমরা মুখে বলার ক্ষেত্রে আছি, কাজে নাই। এটা হল আমাদের দোষ। মুখে মুখে দেশকে খুব ভালবসি। কাজের বেলায় একশ হাত দুরে। অন্য কোন দেশ হলে শহীদ সালামের এ অবস্থা হতনা।
সঞ্জয় কুমার
মাঝেমাঝে নিজেকে অনেক বেশী অপরাধী মনেহয় ।
খেয়ালী মেয়ে
একুশ মানে তারছিড়া সালামের রক্তে ভেজা সাদা শার্ট
একুশ মানে দু হাত তুলে খোদার দরবারে শহীদের আত্মার শান্তি কামনায় ফরিয়াদে চোখ ভাসিয়ে যাওয়া
সত্যিটা হচ্ছে আমরা এতই বেইমান যে, যে ছেলেটা প্রাণ দিয়ে ভাষার অধিকার আদায় করল সে ছেলেটার কবর টাই খোজার চেষ্টা করলাম না আমরা—-এই লজ্জা আমাদের সবার..
সঞ্জয় কুমার
নিজেদের কে চরম সার্থপর মনে হচ্ছে । ছিঃ আমরা এতটা অকৃতজ্ঞ
শুন্য শুন্যালয়
যারা এভাবে রক্তে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন, তারা কিছুই চায়না বিনিময়ে। আমাদের নিরলজ্জতার প্রমাণ আমরা অনেক দিয়েছি। আরো দেব সন্দেহ নেই। তবু সালাম, রফিক, জব্বাররা আমাদের মনের মাঝে ছিলেন, আছে, থাকবে।
সঞ্জয় কুমার
এই অসাধারণ মানুষদের প্রতি সাধারণ ভদ্রতাও আমরা দেখাই নি । । আজ দেশে রাজাকারের জানাজায় লক্ষ লক্ষ মানুষ হয় । অথচ একজন ভাষা শহীদের কবরের ঠিকানা পাওয়া যায় না !!!!!
জিসান শা ইকরাম
একুশে ফেব্রুয়ারী এখন একটি উৎসবই হয়ে গিয়েছে অনেকের কাছে।
কঠিন কিছু সত্য প্রকাশ পেয়েছে পোষ্টে।
ধন্যবাদ।
সঞ্জয় কুমার
এই সব অজানা ইতিহাস গুলি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে জানানো খুবই প্রয়োজন ।
সবচেয়ে ভাল হয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব গল্প কে একসাথে একত্র করতে পারলে ।
লীলাবতী
খারাপ লাগলো লেখাটি পড়ে।
সঞ্জয় কুমার
খারাপ লাগারই কথা ।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
এই লেখাটি পড়ে সত্যিই আমি নিজেকে অপরাধী ভাবছি।
কঠিন সত্য।
সঞ্জয় কুমার
এই কঠিন আর বাস্তব সত্যির সামনে মাথা উচু করার মত শক্তি আমাদের নেই
প্রহেলিকা
দারুন একটি লেখার জন্য অবশ্যই আজাদ নাফিকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
একুশ মানে সবার কাছে এখন উত্সবই মনে হয়, চট্টগ্রামের শহীদ মিনারের পাশেই অবস্থিত কাজী নজরুল স্কোয়াড-এ একুশে ফেব্রুয়ারির দিন প্রবেশ করলে তা প্রমান করা যায় সহজে। ঘৃণ্য মানুষিকতা সম্পন্ন মানুষেরা এই মহান দিনটিকে উত্সবের দিন হিসেবে পরিনত করেছে, তবে দুঃখের বিষয় এই যে এর প্রতিবাদ করতেও কাউকে দেখা যায় না।
যে মহান বীর মায়ের ভাষার জন্য জীবন দিলো, যার জন্য আমরা মাতৃভাষা হিসেবে বাংলাকে পেলাম তার কবর চিহ্নিত করার জন্য আজও কোনো উদ্যেগ নেয়া হয়নি, এই উদাসীনতা জাতির জন্য কলংক, এর জন্য আমরা সকলেই অপরাধী।
ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।
সঞ্জয় কুমার
আপনাকে ও অনেক ধন্যবাদ ।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
যাদের ভাববার কথা তারা ভাবে না তারা ভাবেন কি করে চেয়ারে বসা যায় -{@
সঞ্জয় কুমার
একদম তাই ।
স্বপ্ন নীলা
হায়রে বাঙ্গালী !! এই দিনেও মানুষ মজার উৎসবে মেতে উঠে !!
আমার ভাবতে অবাক লাগে আমাদের সোনার ছেলে মেয়েরা ভাষার জন্য জান দিয়েছিলেন –অনেক অনেক শ্রদ্ধা তাদেরকে —
সঞ্জয় কুমার
আগে নিজেকে বাঙালী ভাবতে গর্ব হত । এখন লজ্জা লাগে । ।
ধন্যবাদ ।