আকাশে ছিল মেঘ , জ্যোৎস্না নিয়ে চাঁদ উঠলেও দেখা যাচ্ছিল না চাঁদকে । আগামী দিনের একটি রায় নিয়ে অস্বস্তি । অন্ধকার নদীর দিকে তাকিয়ে লঞ্চের বারান্দার চেয়ারে বসে আছে বয়স্ক এক মানুষ। রাত গভীর হয়ে যাওয়ায় একাই বসে আছে সে। অস্থির খুব , সিগারেট শেষ হচ্ছে একটির পর একটি।
এই মানুষটি ১৯৭১ দেখেছে । এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ হতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিশোর বেলায় ভয়ে , আতংকে , কষ্টে পরিবারের সবার সাথে পালিয়ে বেড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। আত্মীয় , অনাত্মীয় বহু আন্তরিক মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে । অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটিয়েছে। বড় চার ভাই যুদ্ধে চলে গিয়েছে এপ্রিল মাসেই। চার ভাইয়ের এক ভাইয়ের কোন সংবাদ ডিসেম্বরে দেশ স্বাধীন হবার পূর্বে আর সে পায়নি। তিন ভাইয়ের খবর পাওয়া যেত মাঝে মাঝে যে তারা বেঁচে আছেন।
কিশোরটি দেখেছে দক্ষিনাঞ্চলের সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহরটি আগুনে পুড়ছে । ডিম্বাকৃতি আগুনের শিখা দেখেছে সারারাত নিজ বাড়ি থেকে দূরে সরে যেতে যেতে ।
কিশোরটি দেখেছে রাজাকারদের লুটপাট , টেনে হেঁচড়ে নারীদের নিয়ে যেতে , শুনেছে নারীদের আর্ত চিৎকার , দেখেছে নদীতে ভেসে যাওয়া বাঙালীর লাশ , লাশের উপর বসা শকুন ।
কিশোরটি দেখেছে , রাজাকাররা তার বাবাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে , দীর্ঘ ২১ দিন ধরে সেনা ক্যাম্পে অমানুসিক নির্যাতন সহ্য করা , জীবিত ফিরে আসা বাবাকে । জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত রাইফেলের বাটের আঘাতে মেরুদন্ডের ব্যাথায় কাতরাতে দেখেছে তার বাবাকে।
কিশোরটির পরিবারের বাসস্থান ভেঙ্গে লুট করে নিয়ে গিয়েছে শান্তি কমিটির লোকজন , সেপ্টেম্বরে তাও দেখেছে দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে । সেপ্টেম্বর মাসেই পুড়ে যাওয়া শহরটি ঘুরে ঘুরে দেখে – তাদের ২ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান , আরো একটি বাড়ি পুড়ে গিয়েছে । পোড়া টিন , কয়লা জমে আছে শুধু। গাল বেয়ে চোখের পানি ফেলেছে সেই কিশোর ।
সেই ছোট্ট কিশোর ১৪ ডিসেম্বর শতশত জনতার সাথে রাজাকার কমান্ডার বারেক কে লাথির পর লাথি দিয়েছে । শতশত মানুষের লাথিতেই রাজাকার কমান্ডার বারেকের মৃত্যু। খুব সামান্য অংশ গ্রহণ এই আনন্দে। কিশোরের ইচ্ছে করত একটা আস্ত রাজাকার খুন করার , একটা আস্ত পাকি সেনা খুন করার ।
শেষ রাতের দিকে মেঘের মাঝ থেকে চাঁদ উঠলো । জ্যোৎস্নার আলো পরছে পদ্মা নদীর পানিতে । অতীত ভাবনা থেকে বর্তমানে ফিরে আসে সেই কিশোর , একজন জিসান শা ইকরাম। চাঁদের আলোতে চিকচিক করা পানি দেখে হঠাত তার উপলব্দি – সত্যর জয় অনিবার্য । আকাশে মেঘ থাকলেও সূর্য উঠবেই আগামি সকালে । ফাঁসীর রায় হবে খুনী রাজাকার কসাই কাদের মোল্লার ।
মন শান্ত হয় তার , অন্ধকার দূরীভূত এখন। ভোর রাতে জ্যোৎস্নায় ভিজে ঘুমাতে যায় সে।
তারিখঃ ১৭ সেপ্টেম্বর
ভোর রাত
২০টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এ দেশ হোক রাজাকারহীন এমন স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখেই
চোখ বুঝতে চাই ।
জিসান শা ইকরাম
রাজাকার প্রধান্য মুক্ত বাংলাদেশের প্রত্যাশায় অবিরাম স্বপ্ন দেখা —
তওসীফ সাদাত
হবে, একদিন পুরোপুরি রাজাকার মুক্ত হবে এই দেশ। সে স্বপ্নই দেখছি !
জিসান শা ইকরাম
শয়তানকে যদি কেউ দেখতে চায় , সে যেন এই রাজাকার এবং এর উত্তরাধীকারদের দেখে।
খসড়া
স্বপ্ন নয় আর বাস্তবে দেখতে চাই।এই স্বপ্ন দেখে দেখে কত প্রান চলে গেল, যাবার সময় স্বপ্ন আমাদের দুচোখে দিয়ে গেল। আমরা তা বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। যদি না সম্পুর্ন হয় এই স্বপ্ন তুলে দিয়ে যাব আমাদের সন্তানদের চোখে। আশায় বুক বেধে রাখি আশা নিয়ে বেচে থাকি।
জিসান শা ইকরাম
” যদি না সম্পুর্ন হয় এই স্বপ্ন তুলে দিয়ে যাব আমাদের সন্তানদের চোখে ” —- ভালো বলেছেন
হ্যাঁ আমরা আমাদের সন্তানদের চোখে দিয়ে যাবো এই স্বপ্ন ।
ক'রেখেলা_কাটেবেলা
আপনার লেখা পড়ে স্মৃতিপটে ‘৭১-এ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় আনন্দবাজার পত্রিকায় পড়া নরপশু রাজাকারদের বাঙালী নিধনের বিবরণ ও পাক্ বাঙ্কারে স্তূপীকৃত পচা-গলা নিথর নারীদেহের চিত্র যেন আবার দেখতে পাচ্ছি |
জয় বাংলা | বাঙালীর আশা পূর্ণ হোক, মানবতা বিরোধী শক্তি নিপাত যাক্ | চলার পথে প্রতিবেশী এক বাঙালীর আন্তরিক শভেচ্ছা রইল |
জিসান শা ইকরাম
আপনাদের প্রতিও রইল কৃতজ্ঞতা এবং শুভেচ্ছা ।
পশ্চিম বাংলার প্রতিটি বাঙ্গালী পরিবার ১৯৭১ এর ঐ সময়ে আমাদের পাশে এসে দাড়িয়েছিলেন ।
নইলে আমাদের জন্য বেঁচে থাকাটা কঠিন হয়ে যেত ।
লীলাবতী
দারুন লিখেছেন ভাইয়া । রাজাকার মুক্ত দেশ চাই ।
জিসান শা ইকরাম
চাওয়া আর পাওয়র মাঝে অনেক দুরত্ব এখন লীলাবতী ।
রকিব লিখন
সেই ছোট্ট কিশোর ১৪ ডিসেম্বর শতশত জনতার সাথে রাজাকার কমান্ডার বারেক কে লাথির পর লাথি দিয়েছে । শতশত মানুষের লাথিতেই রাজাকার কমান্ডার বারেকের মৃত্যু। খুব সামান্য অংশ গ্রহণ এই আনন্দে।—এই আনন্দের যদি শরীক হতে পারতাম।।
কিশোরের ইচ্ছে করত একটা আস্ত রাজাকার খুন করার ।—- আমারও বুকের আস্তিনে লুকিয়ে আছে এরকম একটি খুনী হওয়ার স্বপ্ন।।
জিসান শা ইকরাম
এ শুধু এখন স্বপ্নই ।
আফ্রি আয়েশা
সত্যর জয় অনিবার্য । আকাশে মেঘ থাকলেও সূর্য উঠবেই আগামি সকালে । রাজাকার মুক্ত দেশ আমরা পাবোই । দারুন লিখেছেন ।
জিসান শা ইকরাম
এখন আর তা মনে হয়না আফ্রী ।
নুসরাত মৌরিন
১৯৭১- এক আশ্চর্য সময়। সব হারিয়ে তবুও মানুষ হারেনি যে সময়ে। সব কিছুর বিনিময়ে একটা পতাকা,একটা মানচিত্র পাওয়া-খুব অদ্ভুত ছিল মনে হয় সেই অনুভূতি তাই না ভাইয়া?
আমার খুব ইচ্ছা করে সেই অনুভূতিটা কেমন ছিল জানতে।
স্বাধীনতার অনেক অনেক পরে আমরা যারা জন্মেছি সেই অপার্থিব সময়ের সাক্ষী কারো গল্প শুনলে গায়ে শিহরন জাগে।
একটা স্বপ্নের ঘোর লাগা চোখে খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করতো, এদেশের মাটিতে সব বিশ্বাসঘাতকের বিচারের সাক্ষী অন্তত হবো আমরা। কিন্তু আজকাল বিশ্বাসটাতেও চিড় ধরেছে…,তবু স্বপ্ন টা কে অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখি কোন এক ক্ষেপাটে যুক্তিতে…।
জিসান শা ইকরাম
আমরা মনে হয় আর বিচার দেখে যেতে পারবো না।
তবে তাদের এবং তাদের অনুসারীদের প্রতি ঘৃনার আগুন জ্বালিয়ে রাখতে পারবো হয়ত।
আপনারা যারা তুরুন আছেন, তাঁরা এ ঘৃনাকে ছড়িয়ে দিবেন আপনার সন্তানের মাঝে
তাঁরা ছড়িয়ে দিবে তাদের সন্তানদের মাঝে।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম জলতেই থাকবে এই ঘৃনার আগুন।
নুসরাত মৌরিন
হ্যাঁ ঘৃনার আগুন জ্বলবে……ধিকিধিকি করে হলেও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে…।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ মৌরিন, একজন তেজোদীপ্ত মা হন আপনি, এমন দোয়া করি।
ব্লগার সজীব
লেখাটি এতদিন দেখিনি কেনো ? এদের প্রতি ঘৃনার আগুন দাউদাউ করে জলতেই থাকবে।
জিসান শা ইকরাম
ইনশ আল্লাহ ।