
বর্তমানে “টক অব দ্যা কান্ট্রি” কুড়িগ্রামের আলোচিত আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার রাজস্ব) নাজিম উদ্দিন। ক্ষমতা মানুষকে পরিবর্তন করে, তবে সেই পরিবর্তন যদি নেতিবাচক হয় তাহলে তার পরিণাম কত ভয়াবহ হতে পারে তা আমরা ন্যাড়া বাংগালী অতিতেও দেখেছি বর্তমানেও দেখছি, হয়ত ভবিষ্যতেও দেখবো। যশোরের মণিরামপুরে দিনমজুর মৃত নেছার আলীর ভাগ্যদেব ততটা প্রশন্ন না থাকলেও তার ছেলের একেবারে রাজকপাল দেখা যাচ্ছে। ৩৩ তম বি,সি,এস নামক আলাদিনের চেরাগে ক্ষমতা নামক দৈত্য মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে জনাব নাজিম উদ্দিন ইতিমধ্যে কোটিপতির খাতায় নাম লিখিয়েছেন। চলুন এক নজরে চোখ বুলিয়ে নেই চেরাগে থাকা ক্ষমতার দৈত্যের দেওয়া নাজিম উদ্দিনের খতিয়ান সারাংশ।
১)যশোরের মনিরামপুর পৌরশহরে ৮ শতক জামির ওপর স্ত্রী সাবরিনা সুলতানার নামে ৪ তলাবিশিষ্ট ভবন, তিন ইউনিটের এই ভবনের প্রতি তলা ২৯০০ স্কয়ার ফুট, যা করতে খরচ হবে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ৫০ লাখ টাকা খরচ করে ৪ তলা পর্যন্ত ঢালাই কাজ সমাপ্ত।
২) মনিরামপুর পৌর এলাকার ৯৩ নম্বর গাংড়া মৌজার ৫৯৬ নম্বর দাগের (আরএস চূড়ান্ত) ১৪.৬৯ শতাংশ ক্রয়কৃত জমি যার মূ্ল্য ৪৬ লাখ টাকা। যদিও জমিটি তার শ্বশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (অব.) আবদুর রাজ্জাকের নামে রেজিস্ট্রি করা হয়। (সরকারি দফতরে থেকে দূর্নীতির টাকায় সম্পদশালী হওয়ার এটা বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত ওপেন সিক্রেট )।
৩) মনিরামপুর ৯৪ নম্বর মৌজায় ৮৩ খতিয়ানের ১৩২ নম্বর দাগের ( আরএস চূড়ান্ত) ৮ শতাংশ ক্রয়কৃত জমি যার মূ্ল্য ১৩ লাখ টাকা। যদিও জমিটি তার স্ত্রী সাবরিনা সুলতানার নামে রেজিস্ট্রি করা হয়। (সরকারি দফতরে থেকে দূর্নীতির টাকায় সম্পদশালী হওয়ার এটা বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত ওপেন সিক্রেট)।
তাহলে দেখা যাচ্ছে চাকুরি জীবনে ৬ বছরে সম্পত্তির পরিমান দারায় ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। তারমানে ৬ বছরের কর্মজীবনে মোট ৭২ মাস, আর সেই সুবাদে জনাব নাজিম উদ্দিন প্রতিমাসে বেতন তুলেছেন ২ লাখ ৪৮ হজার ৬ শত ১১ টাকা। “আই মিন সিরিয়াসলি!! একজন আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার রাজস্ব) এর বেতন কি প্রতিমাসে প্রায় আড়াই লাখ টাকা???? যদি না হয় তাহলে বাকী টাকার উৎস কি? যদিও তিনি গণমাধ্যমে একটা যুক্তি দেখিয়েছেন যে ৪৬ লাখ টাকার জমিটা তার শশুরের পেনশনের টাকায় কেনা কিন্তু উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস সূত্র জানা যায় ২০১১ সালের ১ মার্চ অবসরে যাওয়ার ৪ দিন পর নাজিম উদ্দীনের শ্বশুর আবদুর রাজ্জাক পেনশনের ৮ লাখ ১৭ হাজার ৬০০ টাকা উত্তোলন করেন। তাহলে স্বাভাবিক যুক্তিতেই প্রশ্ন আসে, পেনশনের এই টাকা ৮ বছর পর কিভাবে ৪৬ লাখ টাকা হয়ে গেলো?
নাজিম উদ্দীন সাহেব টাকার নেশা ছাড়াও ক্ষমতার অপব্যবহারে দীর্ঘদিন যাতব নানান তান্ডব করে যাচ্ছিলেন তারমধ্যে কিছু নমুনা তুলে ধরছি।
১) ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে কক্সবাজারে দায়িত্ব নিয়েই তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন একের পর এক বিতর্কিত কাজে। কক্সবাজারে দায়িত্ব পালনকালে নানা কর্মকাণ্ডের জন্ম দিয়ে পুরো সময়জুড়ে ছিলেন বিতর্কের শীর্ষে! পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে তখন প্রতিনিয়ত লেগে থাকত ভুয়া খতিয়ান তৈরি, খাস জমি উদ্ধারের নামে অভিযানের হুমকি দিয়ে মোটা অংকের অর্থ আদায়, নগদ টাকায় নামজারি খতিয়ান প্রদানসহ আরও অনেক অভিযোগ।
২) ২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবাজারের কলাতলী এলাকায় এক বৃদ্ধকে কলার ও কান ধরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছিল। তার আচরণ ও নৃশংসতা যে নতুন নয় তা সেই ভিডিওটি দেখলেই বুঝা যায়। প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকলেই কি বাবার বয়সী একজন বৃদ্ধের কলার চেপে ধরা যায়? হোক সে যত বড় অপরাধী? নৈতিকতার শিক্ষা কি সে পায়নি?? না পেয়ে থাকলে একজন অনৈতিক ব্যাক্তিকে রাষ্ট্রের পবিত্র দায়ীত্ত্ব থেকে অব্যাহুতি দেওয়া উচিত নয়ত আইন আনুযায়ি তার কঠুর শাস্তি হওয়া উচিত। কক্সবাজারের সেই ঘটনায় নাজিম উদ্দিনকে কক্সবাজার থেকে রাঙ্গামাটি বদলি করা হয়। তবে তিনি তদবির করে মাগুরায় বদলি হয়েছিলেন।
৩) মাগুরার মহম্মদপুরে এসি ল্যান্ড থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল যার মধ্যে জমি বরাদ্দের নামে অর্থ দাবি করা এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিকে সরকারি জমি দেখিয়ে টাকা দাবি করা। তার অনিয়মে অতিষ্ট হয়ে ২০১৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর নহাটা কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে এবং সংবাদ সম্মেলন করে নাজিমের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি, বিচার দাবি করেছিলেন।
৪) মাগুরার মহম্মদপুর বাজারের রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী মেসবাহুল ইসলামের চাচা আফসার উদ্দিন মাস্টারের জায়গা তিনি অন্য লোকের নামে ইজারা দিয়ে দেন। ঘটনায় প্রতিবাদ করায় ব্যবসায়ী মেসবাহুল ইসলামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে ২ মাস ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
এই যে খেটে খাওয়া একজন সাধারণ মানুষের ছেলে হয়েও তিনি প্রশাসনের গুরুত্ত্বপূর্ণ কাজে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন সেই জন্য নাজিম উদ্দিনের দুয়ার জণসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়া দরকার ছিল। কেননা একজন খেটে খাওয়া মানুষ অন্য একজন খেটে খাওয়া মানুষের সুবিধা অসুবিধাটা খুব সহজেই বুঝতে পারেন। কিন্তু অন্ধের মত সম্পদ আর ক্ষমতার মৌহে আজ তিনি একজন অমানুষের কাতারে দারিয়ে আছেন। শাস্তি হিসেবে ওএসডি তে থাকবেন কিছুদিন তারপর আবার নতুন কোন এক জেলার সাধারন মানুষ তার ক্ষমতার লেলিহান শিখায় দগ্ধ হবেন।
বৃটিশদের সুবিধার্থে করে দিয়ে যাওয়া শোষণের আইন কে নতুন করে ঢেলে সাজানো হোক। নাজিম উদ্দিনের মত ক্ষমতা অপব্যবহারকারীদের দূর্ণীতি প্রমাণ সাপেক্ষে চাকুরীচ্যুত করা না পর্যন্ত স্বাধীন দেশে ” দূর্নীতিতে জিরো টলারেন্স” শুধুমাত্র একটা বাক্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে আর নাজিম উদ্দিনদের ঝুলি ভারি হতেই থাকবে।
১৬টি মন্তব্য
আরজু মুক্তা
হায়রে চোর।
সরকার চোখ বন্ধ করে থাকে কীভাবে?
এদের বিচার কি হবে না?
ইকবাল কবীর
বিচার এই দেশে সার্কাসের জুকার এর মত জুজু সেজে বসে আছে। ধন্যবাদ
মনির হোসেন মমি
আসলে এ দেশে যিনি লংকায় যায় তিনিই রাবণ হয়ে যায়।দোষ কারো নয় দোষ আমাদের সিস্টেমের।নাজিমদ্দিন নির্ধিদায় একজন অপরাধী কিন্তু প্রায় শুনি এমন নরপশু নাজিমউদ্দিনের রোমহর্ষকর ঘটনা কিন্তু এর পিছনের গল্প অনেকে জানলেও সমাধানে নেই কেউ।সে চাকুরী নিতে পজিসন পেতেও তাকে অপরাধীর সাথে হাত মিলাতে হয়েছে দিতে হয়েছে অর্থের পাহাড়।তো সেতো অপরাধ দিয়েই তার কর্ম জীবন শুরু করেছে এখানে তার কাছ হতে এরূপ কার্যকলাপ অস্বাভাবিক কিছুই নয়।প্রয়োজন শিকড় উপরে ফেলা সিস্টেম বদলে ফেলা।
আমরা তার দৃষ্টান্তমুলক সাজা চাই।
ইকবাল কবীর
সমাধান যিনি করবেন তিনি নিজেই যদি দূর্ণীতির সমুদ্রে ডুবে থাকেন তাহলে সিস্টেম পরিবর্তন করবে কে?? ধন্যবাদ ভাই
রেহানা বীথি
ক্ষমতার অপব্যবহারেের এমন উদাহরণ বহু আছে। জনগণ এদের ভয়ে মুখ খোলে না। আজ একটা ঘটনা ঘটলো বলে এদের অপকর্ম বেরিয়ে আসছে। সময়োপযোগী পোস্ট ভালো লাগলো।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ আপনাকে।
ফয়জুল মহী
পরিপক্ব লেখা ।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ ভাই।
আলমগীর সরকার লিটন
অনেক ভাল লেখেছেন—–শুভেচ্ছা রইল
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ আপনাকে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সময়োপযোগী পোষ্টের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন অনেক বিসি এস ক্যাডার আছে যারা অন্যায়ভাবে ঘুষ দিয়ে চাকুরীতে নিয়োগ পায়। তারপর তারাও এসব অনিয়মে জড়িয়ে যায়। এভাবেই সিস্টেমেটিক ধারা চলে আসছে। কঠোর আইন, শাস্তি ই পারে এসব অনিয়মকে রুখে দিতে।
ইকবাল কবীর
এই দেশে সবলের জন্য কঠোর আইন বলে কিছু নাই। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
জিসান শা ইকরাম
এই দেশে নাজিম উদ্দিনদের কিছুই হবে না,
এদের বিরুদ্ধে সরকার কিছুই করবে না।
ইকবাল কবীর
কিছু করে না দেখেই এরা পার পেয়ে যায়। আরো সাহসী হয়ে নতুন উদ্যামে অনিয়ম এর দূর্গ গড়ে তুলে।
হালিম নজরুল
ক্ষমতা মানুষকে পরিবর্তন করে, তবে সেই পরিবর্তন যদি নেতিবাচক হয় তাহলে তার পরিণাম কত ভয়াবহ হতে পারে তা আমরা ন্যাড়া বাংগালী অতিতেও দেখেছি বর্তমানেও দেখছি, হয়ত ভবিষ্যতেও দেখবো।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ ভাই।