
জানালা খুলে উদাস হয়ে বসে আছে রূপু। বসে আছে সেই বিকেল থেকেই। গোধূলির রঙ ছড়িয়ে সূর্যটা ডুবে যাবে ভাব। পাখিদের তোড়জোড় নীড়ে ফেরার। কিন্তু কোথায় সে? ব্যস্ত পায়ে রোজ বিকেলেই তো হেঁটে আসে এপথ ধরে, কিন্তু গত দু’দিন কোনও খবরই নেই! কখনও কখনও হুটহাট ঢুকেও পড়ে রূপুদের বাড়িতে। মা, বাবা আর আপুর সাথে হৈচৈ করে গল্প জুড়ে দেয়। তবে মোটেও পাত্তা দেয় না রূপুকে। মাঝে মাঝে তো ওর লেখাপড়ার খোঁজখবর করে রীতিমতো অপমানই করতে চায়। জানে, সাজগোজ আর ঢঙ-ঢাঙ করতেই রূপুর বেশি পছন্দ, লেখাপড়া যতটা পারা যায় কম করাই ভালো, তবুও জেনে বুঝে অংক কষতে বলবে। কবিতার অর্থও বুঝিয়ে দিতে বলে মাঝে মাঝে। কচি খুঁকি তো নয় রূপু। এই তো আর কিছুদিন পর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েই কলেজে ভর্তি হবে, এখনও মোটে পাত্তাই দিল না!
হঠাৎ হঠাৎ অবশ্য পকেটে হাত ঢুকিয়ে বের করে আনে দামী চকলেট। তাতে কী!
আবার হঠাৎ হঠাৎ কোথায় যেন হাওয়া হয়ে যায়। একটানা দু-তিনদিন আসে না। কেন যে বড় ফাঁকা ফাঁকা লাগে তখন! এই যেমন আজ, জানালা খুলে বসে থেকে থেকে ক্রমশঃই আরও বেশি উদাস হল রূপু, আকাশ থেকে ধীরে ধীরে মুছে গেল আলো, তবুও এল না, একদম ফাঁকা হয়ে গেল ওর বুকের ভেতরটা।
একসময় মা বলল, পড়তে বসো রূপু। যেন শূন্য হয়ে চলে গেল ও পড়ার টেবিলে।
রাত বোধহয় সাড়ে ন’টা। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। কে এল এই রাতে? এসময় তো কেউ আসে না বাড়িতে! কেউ খুলেছে দরজা। শুনতে পাওয়া যায় সেই কণ্ঠস্বর, সেই হৈহৈ। মা বলছেন, দু’দিন আসিসনি কেন রে? কোথায় ছিলি?
আর বোলো না খালা, কাজের কি অভাব আছে? দেশ উদ্ধার করছিলাম! হা হা হা……..
কপোট রাগ দেখিয়ে মা বললেন, হয়েছে হয়েছে, দেশ উদ্ধার করে খুব ভাল কাজ করেছিস। এসময়ে এসেছিস যখন, রাতে খেয়ে যাস।
তা তো খাবই, কিন্তু…. ওই সাজুনি বুড়িটা কই, তাকে দেখছি না তো! বলতে বলতে রূপুর পড়ার টেবিলে। কী, আমাকে দেখে খুব পড়ায় মনোযোগ দেখান হচ্ছে?
গা জ্বলে গেলেও রূপু একদম চুপ। যেন সে পণ করেছে, কোনদিকে তাকাবেই না, এমনভাবে মুখ গুঁজে আছে বইয়ে। হঠাৎ মাথায় আলতো ছোঁয়া। আর তারপরেই বইয়ের ওপর টুপ করে পড়ল ভাঁজকরা একটুকরো কাগজ।
বেরিয়ে গেল সে রূপুর ঘর থেকে। ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে গেল রূপু। থরোথরো হাতে কাগজটা নিয়ে খুলে দেখল,
“ঘুমোতে পারছি না ক’দিন ধরে। তুমি কি ঘুম পাড়িয়ে দেবে আমায়?”
২৫টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভীন
কাল ফেইসবুকে পড়েছিলাম গল্পটি
ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া কী কারোরই ঘুম আসে?
দারুণ লিখেছেন আপু
ভালো থাকুন ভালোবাসা
ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষ
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন সবসময়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
💓💓💓💓🌹🌹 একরাশ ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা। খুউব ভালো লেগেছে। ভালো থাকবেন শুভ কামনা রইলো
রেহানা বীথি
আপনার জন্যেও ভালোবাসা একরাশ।
ভালো থাকুন আপু।
জিসান শা ইকরাম
বাহ !
খুবই মিস্টি একটি গল্প 🙂
এত ছোট গল্প, তারপরেও পড়ে মন শান্তি পেলো।
শুভ কামনা প্রিয় আপু।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
ভালো থাকবেন সবসময়।
সুপায়ন বড়ুয়া
সুন্দর একটি অনুগল্প
পড়তে লাগে ভালো।
প্রিয়জন পাশে থাকলে
ঘুমটা হয় ভালো।
শুভ কামনা।
রেহানা বীথি
শুভকামনা দাদা।
ভালো থাকবেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
বাহ্
বেশ ভালো অণুগল্প।
ভালো লাগলো দিদি।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন।
ফয়জুল মহী
বেশ মন ছুঁয়ে গেল লেখা।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
মিষ্টি প্রেমাবহ এর ছোট্ট একটি দারুন গল্প। মন ছুঁইয়ে গেল আর বেশ মুগ্ধতা রেখে শেষ ও হয়ে গেলো কিন্তু রেশটা ছড়িয়ে থাকলো সারাক্ষণ।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য।
ভালো থাকুন সবসময়।
হালিম নজরুল
চমৎকার অনুগল্প। মন কেড়ে নিল।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন সবসময়।
ছাইরাছ হেলাল
মিষ্টি-প্রেমের কুট্টি গল্প পড়েই ফেললাম।
ভালোতো।
রেহানা বীথি
পড়েছেন জেনে খুশি হলাম ভাইয়া।
ভালো থাকবেন সবসময়।
তৌহিদ
আহা! আপনার লেখা পড়া মানেই মনে প্রশান্তি আসে মনে। ভালোবাসার মানুষ মাথায় একটু হাত বোলালেই শান্তির ঘুম চলে যেন। আবেগময় লেখাটি মনে দোলা দিয়ে গেলো।
ভালো থাকবেন আপু।
রেহানা বীথি
আপনিও ভালো থাকবেন ভাই।
শুভকামনা নিরন্তর।
আরজু মুক্তা
মিষ্টি প্রেমের মিষ্টি দোলা।
রেহানা বীথি
ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল আপু।
কামাল উদ্দিন
তারপর কি ঘুমানোর ব্যবস্থা হয়েছিলো আপু, মনে হচ্ছে আর একটু পড়তে পারলে ভালো লাগতো।
রেহানা বীথি
তারপর কি হয়েছিল, সেটা পাঠক নিজের মতো করে সাজিয়ে নেবেন।
ভালো থাকবেন ভাই।
কামাল উদ্দিন
ঠিক আছে, তাহলে তাই হোক।