তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে শুরু করে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে নিয়মিতই ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন নারী। ধর্ষণের পর একদিকে নারীকে যেতে হয় ভয়ংকর শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে। অপরদিকে, বিচারের নামে বার বার যৌন সহিংসতার শিকার ওই নারীকে বাধ্য করা হয় সেই বিভৎস ঘটনার কথা মনে করতে। বিচার ব্যবস্থাটাই এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ধর্ষিত হয়ে বিচার চাইতে গিয়ে নারীকেই প্রমাণ করতে হয় যে তিনি ধর্ষিত হয়েছেন। আর সামাজিক ও পারিবারিক বিড়ম্বনা তো রয়েছেই।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন এক নারী। চৈতন্যহীন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত সাঁতারু ব্রুক টার্নার ধর্ষণ করেন ওই নারীকে। গত শনিবার ওই নারী ব্রুক টার্নারের উদ্দেশে এক দীর্ঘ বিবৃতি আদালতের মাধ্যমে পেশ করেন। মামলাটির জেলা অ্যাটর্নি বিবৃতিটি প্রকাশ করেন।
শনিবার অনলাইনে বিবৃতিটি প্রকাশ হওয়ার পর হাজার হাজার পাঠক তা পড়ে স্তব্ধ হয়ে যান। শুধু বাজফিডেই লেখাটি পড়েছেন ৪ মিলিয়ন পাঠক। এমনকি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এ পুরো বিবৃতি পাঠ করেন এক উপস্থাপক।
মার্কিন ওই নারীর সাড়া জাগানো বিবৃতিটি সোনেলা ব্লগের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। বিবৃতিটি ভাষান্তর করেছেন উম্মে রায়হানা যা বাংলা ট্রিবিউনে ৭ জুন ২০১৬ তারিখে প্রকাশিত হয়েছিল।
একজন নারী তা বাংলাদেশেই হোক আর উন্নত যে কোন দেশেই হোক, ন্যায় বিচার পাওয়াটা তার জন্য খুবই কঠিন। তনুরা সমস্ত বিশ্বেই এক। সঠিক বিচার এরা কখনোই পাবেনা। অর্থ, ক্ষমতার কাছে বারবার পরাজিত হয় তনুরা।
যদি কোনও সমস্যা না থাকে আমি অভিযুক্ত বরাবর আমার বিবৃতিটি পেশ করতে চাই।
তুমি আমাকে চেনো না কিন্তু তুমি আমার ভেতরে প্রবেশ করেছ। এ কারণেই আজ তুমি এখানে।
২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি, শনিবার রাতে আমাদের বাসাটি নিরিবিলিই ছিল। আমার বাবা রাতের খাবার তৈরি করলেন, আমি বোনের সঙ্গে টেবিলে বসে গল্পগুজব করলাম। বোন আমাদের সঙ্গে থাকে না। সপ্তাহান্তে বেড়াতে এসেছিলো সে। সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত ছিলাম খুব। ভেবেছিলাম খেয়ে-দেয়ে শুয়ে পড়ব। বোন তার বন্ধুদের সঙ্গে পার্টিতে চলে গেলে একটু টিভি দেখে বা বই পড়ে ঘুমাতে যাবো। পরে ভাবলাম ওর সঙ্গে তো আর থাকা হবে না, আর বেশি কিছু করারও নেই। ওর বন্ধুদের পার্টি আমাদের বাসা থেকে মাত্র দশ মিনিটের পথ। বরং ওর সঙ্গে যাই, পার্টিতে গিয়ে নাচানাচি করি। যাওয়ার পথে বোন আমাকে ক্ষেপানোর চেষ্টা করলো-বড়সড় কারডিগ্যান পরে আমাকে নাকি লাইব্রেরিয়ানদের মতো দেখাচ্ছে। আমি বললাম, আমি তো আম্মা, ওখানে সবাই আন্ডারগ্র্যাড স্টুডেন্ট, ওদের মধ্যে আমার বয়সই সবচেয়ে বেশি। আমি অনেক মজা করলাম, মদ্যপান করলাম খুব দ্রুত। মদ জাতীয় পানীয় সম্পর্কে আমার সহিষ্ণুতা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই কমে আসছিলো।
এরপর যা আমার মনে আছে তা হচ্ছে, আমার পিঠে আর হাতে ব্যান্ডেজ করা, কনুইতে শুকিয়ে যাওয়া রক্ত। আমি ভাবলাম, হয়তো আমি পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছিলাম। আমাকে ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক কার্যালয়ে আনা হয়েছে। আমি শান্তভাবে মনে মনে আমার বোনকে খুঁজতে শুরু করলাম। এক কর্মকর্তা জানালেন, আমাকে আঘাত করা হয়েছিল। তখনও আমি শান্তভাবে তাকে বললাম, তার হয়তো কোথাও কোনও ভুল হচ্ছে। আমি তো ওই পার্টিতে কাউকেই চিনতাম না।
এক সময় আমাকে বাথরুম ব্যবহার করতে দেওয়া হলো। বাথরুমে গিয়ে হাসপাতাল থেকে দেওয়া পাজামা আর অন্তর্বাস খোলার সময়ও আমি কিছুই টের পাইনি। আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে ওই অনুভূতিটা। আমি হাত দিয়ে নিজের ত্বক স্পর্শ করছি কিন্তু কিছুই টের পাচ্ছি না।
তারপর আমি ঘাড়ে আর চুলের গোঁড়ায় সূঁচ ফোটানোর মতো ব্যথা অনুভূব করতে শুরু করলাম। মনে হচ্ছিল কোনও গাছ থেকে হাজার হাজার সূঁচ আমার মাথায় পড়ছে আর বিঁধে যাচ্ছে। আমি নিজেকে সাহস দিচ্ছিলাম, যেন অচেতন হয়ে না পড়ি।
আমি একটা কম্বল জড়িয়ে এক রুম থেকে অন্য রুমে ঘুরে বেড়ালাম কিছুক্ষণ। তারপর আমাকে একটা কাগজে সই করতে দেওয়া হলো, যেখানে লেখা ‘রেপ ভিকটিম’। তখন আমি বুঝলাম আসলেই আমার সঙ্গে একটা কিছু হয়েছে। আমার পোশাক জব্দ করা হয়েছিল আগেই। আমি নার্সদের সামনে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। তারা আমার শরীরের বিভিন্ন অংশের মাপ নিলেন, ছবি তুললেন। তারা জানালেন, আমার যোনী আর পায়ুপথে কিছু প্রবেশ করানো হয়েছিলো। সে সব অংশের ছবি তুললেন তারা। আমার যোনীর ভেতরে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে ঠাণ্ডা ও নীল হয়ে ছিলো।
এর কয়েক ঘণ্টা পর তারা আমাকে গোসল করতে দিলেন। আমি পানির ধারার নিচে নিজের শরীরের বিভিন্ন অংশ খুব মন দিয়ে দেখলাম। এই শরীর আমি আর চাই না। আমি জানি না, আমার সঙ্গে কী হয়েছিলো, কে এর ভেতর ঢুকেছিলো, কে একে নষ্ট করেছে, কে ছুঁয়েছে। আমার ইচ্ছে হচ্ছিলো জামা-কাপড়ের মতো শরীরটা খুলে হাসপাতালে ফেলে রেখে চলে যাই।
সেই সকালে আমাকে জানানো হলো, আমাকে একটা আবর্জনা ফেলার ট্রাকের পাশে খুঁজে পাওয়া যায়। অজ্ঞাত কোনও ব্যক্তি আমাকে ধর্ষণ করেছে। আমাকে আরেকবার এইচআইভি পরীক্ষা করাতে হবে। কেননা, অনেক সময় পরীক্ষায় ঠিক ফলাফল আসে না। তবে এখন আমি বাড়ি ফিরতে ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারব।
এই তথ্য নিয়ে আমাকে স্বাভাবিক জীবনে প্রাত্যাহিক জীবনে ফিরতে হলো। তারা আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করলেন, নতুন পোশাক দিলেন। আমি হেঁটে হেঁটে হাসপাতালের পার্কিং লটে গেলাম। আমার বোন আমাকে সেখান থেকে তুলে নিলো।
কাঁদতে কাঁদতে তার (বোন) পুরো মুখ ভিজে গিয়েছিলো। তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার ইচ্ছে হলো, ওর কষ্টটা আমি লাঘব করি। আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসলাম। বললাম, আমার দিকে তাকাও, আমি একদম ঠিক আছি, আমরা এখন বাসায় যাব, কিছু খাওয়া দরকার। দেখ, আমার চুল পরিষ্কার আছে, ওরা কী অদ্ভুত একটা শ্যাম্পু দিয়েছিলো!
আমি তাকে হাসপাতাল থেকে দেওয়া হাস্যকর জামা-পাজামা দেখিয়ে খুব একচোট হাসলাম। সে তো জানতো না আমার এই হাস্যকর পোশাকের নিচে ব্যান্ডেজ করা, আমার যোনী ক্ষতবিক্ষত, আমার মনের ভেতরটা শূন্য।
আমরা বাসায় ফিরলাম, আমার বোন কয়েক ঘণ্টা আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকলো।
আমার প্রেমিক জানতো না আমার কী হয়েছে। সে ফোন করে জিজ্ঞেস করলো, ‘আমি গত রাতের জন্য দুশ্চিন্তা করছিলাম। তুমি তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছো, ঠিকভাবে বাসায় পৌঁছেছো তো?’ আমি ভয় পেয়ে গেলাম। বুঝলাম, সেই রাতে অচেতন অবস্থাতেই ওকে আমি ফোন করেছিলাম। তবে সেই কথোপকথনের কিছুই আমার মনে নেই। সে বলল, আমি ভয় পেয়ে কী সব যেন বলছিলাম আর ও আমাকে বারবার বলেছিলো যে করেই হোক বোনকে খুঁজে বের করতে। সে আবারও জানতে চাইলো, ‘কী হয়েছিলো কাল রাতে? ফিরেছ তো তুমি বাসায়?’
আমি শুধু বললাম, হ্যাঁ। তারপর ফোন রেখে কাঁদতে বসলাম।
আমি প্রেমিককে বা মা-বাবাকে বলতে চাইনি আমাকে একটা ময়লা আবর্জনা ফেলার ট্রাকের পেছনে ধর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু কে বা কারা করেছে তাদের আমি চিনি না। এ কথা বললে তারা যে ভয় পেতো। তাদের মুখে যে অনুভূতি ফুটে উঠতো তা আমি কল্পনায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। ফলে আমি ভাবতে চেষ্টা করছিলাম এই পুরো বিষয়টাই অবাস্তব।
আমি মন থেকে বিষয়টা বের করে দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু এটা এতই কষ্টকর ছিল যে, আমি কথা বলতে পারতাম না, খেতে পারতাম না, ঘুমাতে পারতাম না, কারও সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ করতে পারতাম না। আমি কাজে যেতাম, কাজ শেষে একটা নির্দিষ্ট স্থানে থেমে চিৎকার করে কাঁদতাম। আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষগুলোর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। ঘটনার এক সপ্তাহ পরেও আমি আর কোনও খবরাখবর জানতে পারিনি। কিন্তু এটা যে কোনও দুঃস্বপ্ন ছিল না তার প্রমাণ হিসেবে আমার ড্রয়ারে ছিল হাসপাতাল থেকে দেওয়া সেই পোশাক।
একদিন কাজ করতে করতে মোবাইলে পত্রিকা পড়ছিলাম। হঠাৎ একটা খবরে চোখ আটকে গেল। সেই প্রথমবারের মতো জানতে পারলাম আমাকে কোথায় কীভাবে পাওয়া গেল। জানলাম আমাকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল, আমার চুল ছিল আলুথালু, লম্বা নেকলেস ছিল গলায় পেঁচানো, জামার ভেতর থেকে ব্রা টেনে বের করা, জামা টেনে কাঁধের ওপর ওঠানো, পায়ে জুতো ছাড়া পুরো শরীর বিবস্ত্র, দুই পা দুদিকে ছড়ানো। অপরিচিত কেউ আমার ভেতরে কিছু একটা প্রবেশ করিয়েছে।
এভাবেই জানলাম আমার কী হয়েছিলো। যা আমার আগেই বিশ্বের সবাই জানে। পত্রিকায় এই বর্ণনা পড়ে মনে হলো, এটা আমি নই, কিছুতেই না।
এই তথ্যগুলোর কোনওটাই আমি হজম করতে পারছিলাম না। ভাবতে পারছিলাম না আমার পরিবারের সবাই অনলাইনে এই খবর পড়বে। আমি পড়তে থাকলাম। এর পরের অনুচ্ছেদে যা লেখা ছিল তা ক্ষমার অযোগ্য। অচেনা সেই লোকটা দাবি করছে আমিও তার ওই ধর্ষণকাণ্ড পছন্দ করছিলাম, আমিও চাচ্ছিলাম। এই কথা পড়ে আমি পুরোপুরি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।
সংবাদটির একদম শেষ দিকে, যেখানে আমার ওপর ঘটে যাওয়া যৌন সহিংসতার বিস্তারিত বিবরণ ছিল, লেখা ছিল তার সাঁতারের সময়সূচি। লেখা ছিল আমার অন্তর্বাস কতখানি খোলা ছিল, কেমন করে কুকুরকুণ্ডলী হয়ে ছিল আমার দেহ আর সে সাঁতারে কতখানি পারদর্শী। তাই যদি হয়, তাহলে আমি খুব ভালো রান্না করি, সেটাও লেখা দরকার ছিল।
সে রাতেই আমি বাবা-মাকে সামনে বসিয়ে বললাম আমার সঙ্গে কী হয়েছিল। বললাম, খবরটা যেনও তারা না পড়েন। কারণ এটা অত্যন্ত খারাপভাবে দেওয়া বিবরণ। বললাম, আমি একদম ঠিক আছি। কথার মাঝখানে মা আমাকে ধরে ফেললেন, কারণ আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। একদমই ঠিক ছিলাম না আমি।
সে (ধর্ষক) অনেক কিছুই জানিয়েছিলো। সে আমার নামও জানে না, পরে দেখলে হয়তো চিনতেও পারবে না। সে স্বীকার করেছিল যে, সে কাউকে রাতের সঙ্গী হিসেবে পেতে চাইছিলো। এর মধ্যে আমি যেমন ছিলাম, আমার বোনও ছিল। আমার বোন ওকে তেমন পাত্তা দেয়নি। আমরা একসঙ্গে নেচেছিলাম, চুমু খেয়েছিলাম। গোয়েন্দা পুলিশ যখন জানতে চেয়েছেন নাচার সময় আমাকে নিজের রুমে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল কিনা, সে জানায় তেমন কোনও পরিকল্পনা তার ছিল না। কিন্তু ওই পার্টিতে আমিই ছিলাম একমাত্র একা এবং বদ্ধ মাতাল। এক এক সময় ভাবি, ওখানে না গেলে তো এই ঘটনা ঘটতোই না। পরে মনে হয়েছে, নিশ্চয়ই ঘটতো। তবে আমার সঙ্গে নয়, অন্য কারও সঙ্গে।
সে দাবি করেছিল, আমার সম্মতি ছিল। কারণ আমি নাকি তার পিঠ আঁকড়ে ধরেছিলাম। আমাদের কোনও কথা হয়নি, কিচ্ছু হয়নি। আমি শুধু একবার তার পিঠ আঁকড়ে ধরেছিলাম। আমার মনে নেই কিছুই। কিন্তু সেই একবারের ধরা থেকেই সে অবলীলায় দাবি করে, আমারও সায় ছিল। আমি কী করে প্রমাণ করি, আমার সায় ছিল না!
আমি ভেবেছিলাম, কোনও মামলা হবে না। সাক্ষী প্রমাণ রয়েছে। সে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করলেই আমরা যে যার পথে চলে যেতে পারি। কিন্তু জানলাম সে একজন প্রভাবশালী আইনজীবীর কাছে গেছে, বেশ কিছু সাক্ষী সংগ্রহ করেছে। তারা আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য ব্যক্তিগত তথ্য জোগাড় করছে। আমার ও বোনের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে তারা প্রমাণ করবে এই যৌন সম্পর্ক ছিল একটা ভুল বোঝাবুঝি। সে আমার আচরণে বিভ্রান্ত হয়ে এই কাজ করেছে।
আমাকে বলা হলো, আমি শুধু ধর্ষিত হয়েছি তা নয়, আমার কিছু মনেও নেই। ফলে কিছুতেই প্রমাণ করতে পারব না বিষয়টি আমার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। ঘটনাটি আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, ত্যক্ত করেছে, ভেঙেচুরে ফেলেছে। এমন দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে! আমি ধর্ষিত হয়েছি কিন্তু একে ধর্ষণ বলে দাবি করতে পারব না!
আমাকে বলা হলো, আমরা মামলায় হেরে যেতে পারি, সে জন্য মানসিক প্রস্তুতি থাকা দরকার। বললাম, আমি এই প্রস্তুতি নিতে পারব না। যে মুহূর্তে আমার চেতনা ফিরে এসেছে সে মুহূর্ত থেকে সে অপরাধী। আমি একটা প্রবল হুমকিতে পড়ে গেলাম। সে জানে আমার কিছু মনে নেই। ফলে সে তার বিবৃতিতে যা ইচ্ছা তা-ই লিখতে পারবে। আমি একেবারেই নিঃসহায় এক্ষেত্রে। আমার হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি আমারই বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে।
তার আইনজীবী জুরিদের বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন, এই পুরো মামলায় একমাত্র ব্রুককেই ভরসা করতে হবে কেননা আমার কিছুই মনে নেই। এই অসহায়ত্বের বলে বুঝানো সম্ভব নয়।
ওই ক্ষত থেকে সেরে ওঠার বদলে বারবার ওই রাতের কথা মনে করার চেষ্টা করতে হলো আমাকে। কেননা মামলার জন্য বিবৃতি তৈরি করতে হবে, আদালতে হাজির করতে হবে আমার বক্তব্য।
আমাকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করা হলো। আপনার বয়স কত? ওজন কত? কী খান? রাতে কী খান? পান করেন? করেন না? পানিও পান করেন না? কখন পান করেন? কে তৈরি করে দেয়? কতখানি মদ্যপান করেছিলেন? কে আপনাকে ওই পার্টিতে নিয়ে গিয়েছিলো? কোন সময়? সেখানে গিয়ে কী কী করলেন? কাকে টেক্সট করছিলেন? এই টেক্সটের অর্থ কী? বাথরুমে গিয়েছিলেন? মূত্রত্যাগ করেছিলেন? সঙ্গে কে ছিল? বাইরে করেছিলেন? বাগানে গিয়েছিলেন? কার সঙ্গে? আপনার বোন আপনাকে ফোন করে পায়নি কেন? সাইলেন্ট করে রেখেছিলেন? কেন সাইলেন্ট করে রেখেছিলেন? কখন সাইলেন্ট করে রেখেছিলেন? প্রেমিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন? আপনি নিশ্চিত? প্রেমিকের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে সক্রিয় থাকেন? ব্রুকের সঙ্গে ছিলেন? কলেজেও এমন মাতাল হয়ে যেতেন? অনেক পার্টি করতেন? কোন সময় থেকে ডেট করতে শুরু করেন? কাউকে প্রতারণা করেছেন প্রেমে? কখন জেগে উঠলেন? কারডিগ্যান ছিল গায়ে? আর কিছু মনে আছে? ওকে, এবার ব্রুককে প্রশ্ন করা হবে।
আমার ব্যক্তিগত জীবন, আমার প্রেম, আমার পরিবার, আমার অতীত ইতিহাস সমস্ত কিছু বিশ্লেষণ করে দেখা হলো। অসম্ভব সব প্রশ্ন করে, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিস্তারিত প্রশ্ন করে সেই লোকটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হলো, যে আমার নামটা জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করেনি। যে দেখার কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমাকে নগ্ন করেছে।
যৌন সহিংসতার পর আরও এক সহিংসতার শিকার হলাম আমি। আমাকে দেখিয়ে বলা হলো, আমি মাতাল, আমার কথা পরস্পরবিরোধী, মাথার ঠিক নেই, যার তার সঙ্গে জুটে যেতে চাই, সে একজন বিখ্যাত সাঁতারু, আমার কারণে সে বিপদে পড়ে গিয়েছে।
প্রথম অবস্থায় আমাকে এভাবে আক্রমণ করা হলো, বলা হলো আমরা দুজনই মাতাল ছিলাম। সে জানতো না কখন ডাস্টবিনের পেছনে গিয়েছি আমরা। সে হঠাৎ করে জেগে উঠলে তাকে তাড়া করা হয়, তাই সে দৌড়ে পালাতে চাইছিল ইত্যাদি।
এক বছর পর ব্রুক একটা সম্পূর্ণ নতুন গল্প নিয়ে হাজির হলো। গল্পটা কোনও তরুণ লেখকের লেখা দুর্বল একটি প্রেমের উপন্যাসের মতো। তাতে হাত ধরাধরি, মাটিতে শুয়ে আকাশ দেখা ইত্যাদি ছিল। এবং ছিল সম্মতি। আমার সম্মতি। এক বছর পর তার মনে পড়লো, আমি আসলে সম্মতি দিয়েছিলাম।
সে আমাকে নাচার প্রস্তাব দিয়েছিলো, আমি হ্যাঁ বলেছিলাম। সে আমাকে তার রুমে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলো, আমি তাকে হ্যাঁ বলেছিলাম। সে আমার যোনীতে আঙ্গুল প্রবেশ করাতে চেয়েছিলো, আমি তাতেও হ্যাঁ বলেছিলাম! বেশিরভাগ ছেলেই তো এটা জিজ্ঞেস করে না। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ হয়। কিন্তু সে এতই স্পষ্টভাষী যে, এটাও সে জিজ্ঞেস করে নিয়েছিলো।
পুরো গল্পে আর তেমন কোনও সংলাপ নেই। শুধু ওই তিনটা হ্যাঁ।
তার ভাষ্যমতে, আমরা মাটিতে শুয়েছিলাম পড়ে গিয়েছিলাম বলে। আমি পড়ে যাওয়ায় সে আমাকে সাহায্য করতে গিয়েছিলো। কোনও মেয়ে পড়ে গেলে তাকে সাহায্য করতে হয়। তার পাশে শুয়ে পড়তে হয়? তার অন্তর্বাস খুলে ফেলতে হয়? তার যোনীতে আঙ্গুল প্রবেশ করাতে হয়? সে যদি কারডিগ্যান পরে থাকে তা খুলে ফেলে তার স্তন স্পর্শ করতে হয়?
ব্রুক, তুমি বলেছ দুই সুইডিশ গার্ড তোমাকে তাড়া করলে তুমি ভয় পেয়ে দৌড়ে গিয়েছিলে। গার্ডরা যখন তোমাকে হাতেনাতে ধরে ফেললো, তখন তুমি কেন বলনি, ‘সব ঠিক আছে। মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করে দেখুন, সে ওখানেই আছে। সেই তোমাদের সব বলবে।’ তুমি তো আমার সম্মতি নিয়েই সব করেছ। তার মানে আমার জ্ঞান ছিল। যেহেতু আমি তোমাকে সম্মতি দিয়েছিলাম।
পুলিশ এসে যখন ওই গার্ডদের জেরা করছিলো তখন একজন কোনও কথাই বলতে পারেনি। কেবল কাঁদছিল। সে যা দেখেছে তার ধকল সামলাতে পারছিলো না সে। অথচ তুমি বলেছিলে তারা ছিল ভয়ংকর। তাদের দেখেই তুমি অর্ধনগ্ন একটি মেয়েকে ফেলে পালিয়েছিলে।
যেভাবেই তুমি সাজাও না কেন, তোমার গল্প কোনও অর্থই তৈরি করে না।
আমি জানতে চাই, যদি ওই ভয়ংকর গার্ডরা আমাদের দেখে না ফেলতো, তুমি কী আমার জামা আবার পরিয়ে দিতে? ঢেকে দিতে আমাকে? আমার পা জোড়া বন্ধ করে দিতে? আমাকে নিরাপদে পৌঁছে দিতে?
এ কথা মনে হলে আমি আর ঘুমাতে পারি না, ওই গার্ডরা এসে না পড়লে তুমি আর কী কী করতে! আমার কী হতো!
এক বছর পরও তোমার কাছে এই প্রশ্নগুলোর কোনও জবাব নেই, আমি নিশ্চিত।
তুমি শপথ নিয়ে বলেছ, আমি তোমাকে অনুমতি দিয়েছি, আমি সম্মতি দিয়েছি। তুমিই আক্রান্ত হয়েছ, ওই দুই গার্ডের দ্বারা। এসব বলে তুমি তোমার সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে চেয়েছ। আমাকে অসম্মান করে, অপমান করে, ভেঙেচুরে দিয়ে, আমার বিনিময়ে তুমি নির্দোষ থাকতে চেয়েছে।
পরিবারের সবাই আমার ওই অবস্থার ছবি দেখেছে, আমার মাথা আর শরীরে ক্ষত দেখেছে। আমার ছিন্নভিন্ন পোশাক দেখেছে। সবকিছুর পরও তোমার আইনজীবীদের ভাষ্য শুনেছে। শুনেছে কী করে তুমি আমার বোনকেও আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চেয়েছ।
তারা আমার মামলার শুনানিতে এসেছে। চুপচাপ সব শুনেছি আমি। এই যন্ত্রণা আমি বহন করেছি। আমরা বহন করেছি।
তুমি দোষী। বারোজন জুরি এই রায় দিয়েছেন। অবশ্যই তুমি অপরাধী। সে জন্য তোমাকে ক্ষমা চাইতে হবে। সত্যিকার অর্থে ব্যথিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে তোমাকে।
তুমি বলেছ, মাতাল হলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। আমরা দুজনেই মাতাল ছিলাম।
মদ কোনও অজুহাত হতে পারে না। মদ আমাকে মাটিতে শোয়ায়নি। মদ আমার পোশাক ছেঁড়েনি। মদ আমার যোনীর মধ্যে আঙ্গুল প্রবেশ করায়নি। ধর্ষণ কোনও দুর্ঘটনা নয়। তবে আমার ধারণা তুমি এখনও কিছুই বুঝতে পারছ না, এখনও তুমি বিভ্রান্ত।
তুমি বলেছ, পরিচিত হওয়ার সময় পেলে, তুমি নাকি আমার নাম্বারও চাইতে। আমি জানি তুমি তা করতে না। আমার প্রেমিক আমাকে চেনে। সে আমার নিজের প্রেমিক, কিন্তু সে-ও যদি ডাস্টবিনের পাশে আমার যোনীতে আঙ্গুল রাখতে চাইতো, আমি তাকে চড় লাগাতাম। কোনও মেয়ে ওই পরিস্থিতিতে সম্মতি দেয় না, দিতে পারে না।
মদ্যপান কোনও অপরাধ নয়। আমরা সবাই তা করেছি। কিন্তু তুমি এমন কিছু করেছ যা অন্য কেউ করেনি। তুমি ক্যান্ডির খোসার মতো আমার অন্তর্বাস খুলেছ। তোমার উত্থিত শিশ্নকে শান্ত করতে চেয়েছ আমার অচেতন শরীর দিয়ে। সেটা ছিল অপরাধ।
তুমি বলেছ, মদ্যপান জীবন ধ্বংস করে। মদ একটা জীবন ধ্বংস করে দিতে পারে।
তুমি তোমার জীবনের কথা বলেছ। আমার কথা ভুলে গেছ। মদ যদি জীবন ধ্বংস করে থাকে তাহলে দুটো জীবন ধ্বংস করেছে। তোমার এবং আমার। তুমি কারণ, আমি ফলাফল।
তুমি আমার সব কিছু ধ্বংস করেছ। আমার ডিগ্রি, পড়ালেখা, পারিবারিক জীবন, ঘুম, শান্তি, আমার মূল্য, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, প্রেম, সময়, শক্তি, নিরাপত্তা, আত্মবিশ্বাস। আজ পর্যন্ত সবকিছু ধ্বংস করে যাচ্ছ তুমি।
সংবাদপত্রে আমাকে ‘অচেতন মাতাল নারী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর কিছু না। কয়েক মুহূর্তের জন্যে আমি নিজেও বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম, আমি একটি অচেতন মাতাল নারী, আর কিচ্ছু নই।
তুমি আমেরিকার একটি প্রথম শ্রেণির বিশ্ববিদ্যালয়ের তারকা খেলোয়াড়, তুখোড় সাঁতারু। ফলে, অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তুমি নির্দোষ।
আর আমি একজন সাধারণ মানুষ যাকে আহত অবস্থায় আবর্জনার পাশে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। এক বছর ধরে অপেক্ষা করছি এই সত্য প্রমাণ করতে যে, আমার সঙ্গে সত্যিই কোনও অপরাধ ঘটেছে।
আমার স্বাভাবিক জীবনের কোনও অস্তিত্ব আর নেই। আমি ক্লান্ত, হতাশ ও শূন্য। আমি প্রেমিকের সঙ্গে চিৎকার করি, পরিবারের মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। বাবা-মা যারা আমাকে আদর করে বড় করেছেন, তাদের সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ নেই।
আমি নিজের স্বাধীনচেতা মন নিয়ে অহংকার করতাম। এখন আমার বাইরে হাঁটতে যেতে ভয় লাগে। আমি প্যারানয়েড হয়ে গেছি। প্রতিবেশীরা জানে, এই সেই মেয়ে যাকে ধর্ষণ করতে আবর্জনার পাশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। আমার এখন সবসময় কাউকে পাশে রাখতে হয়, নিরাপত্তার জন্যে।
তুমি হয়তো আমার চিকিৎসার খরচ দিয়ে দিতে পার। কিন্তু আমার নির্ঘুম রাতগুলো তো ফিরিয়ে দিতে পারবে না। আমার পুরো আট মাস লেগেছিল বিষয়টা সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে। আমার শরীর সেরে উঠতেও লেগেছে অনেক সময়। এই শুনানির পর আমি হয়তো আবারও স্তব্ধ হয়ে যাব, আর কথা বলতে পারব না অনেকদিন।
আমি এসব সহ্য করতে পারতাম কিন্তু যখন দেখি আমার ছোট বোন আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে, স্কুলে গিয়ে স্বাভাবিক হতে পারছে না, তার জীবন থেকে সব আনন্দ হারিয়ে গিয়েছে, আমি আর সহ্য করতে পারি না। আমার বোন যখন কাঁদতে কাঁদতে আমাকে দুঃখিত বলতে থাকে, বলতে থাকে সে আমাকে একা ফেলে গিয়েছিল বলেই এমনটা ঘটেছে, কাঁদতে কাঁদতে যখন তার দমবন্ধ হয়ে যেতে থাকে, আমি আর সহ্য করতে পারি না।
আমার বোন তোমার চেয়ে অনেক বেশি অপরাধবোধে ভুগছে আমার জন্য। তুমিই এর জন্য দায়ী। আমি তোমাকে ক্ষমা করতে পারি না।
তুমি যদি ভেবে থাকো তোমাকে কারারুদ্ধ করে আমি খোলা হাওয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছি, তাহলে ভুল করবে। আমরা কেউ হারিনি, কেউ জিতিনি। আমরা দু’জনেই অর্থহীন যন্ত্রণায় আছি।
তোমার এটা করা উচিত হয়নি। এই কথা বলার জন্য আমাকে দিয়ে এতখানি লড়াই করানোও তোমার উচিত হয়নি। ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমি যন্ত্রণা ভোগ করেছি, তুমি শাস্তি ভোগ করছ।
তোমার জীবন শেষ হয়ে যায়নি। পৃথিবীটা অনেক বড়। সেই তুলনায় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ছোট জায়গা। কোথাও না কোথাও নিজের জন্য একটা জায়গা করে নিতে পারবেই তুমি। তোমার সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে, আমি নিশ্চিত তুমি নতুন নামও নিতে পারবে। পৃথিবীর জন্য ভালো কিছু করতে পারবে, সুখী হতে পারবে। নিশ্চয়ই তুমি পারবে।
একদিন তুমি নিজের ভুলও হয়তো বুঝতে পারবে। আমি জানি, তুমি আরও ভালো মানুষ হবে ও পুরো বিষয়টা অনুধাবন করতে পারবে। আমি তোমার এই যাত্রাকে স্বাগত জানাই। নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলার কাজে তোমাকে পূর্ণ সমর্থন জানাই।
আমি বলেছিলাম, আমি চাই না তুমি কারাভোগ কর। আমি বলিনি কারাদণ্ড তোমার প্রাপ্য নয়। বরং এক বছরেরও কম সময়ের জন্য দেওয়া শাস্তি একটা প্রহসনের মতো।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে বারোজন জুরি দোষী বলে রায় দেওয়ার পরও মদের দোহাই বড় হয়ে উঠলো। আমি চেয়েছিলাম তুমি তোমার অপরাধটুকু বুঝতে পারো। আর কিছু নয়। যে নিজের অপরাধের উপলব্ধিই করতে পারে না, তাকে কোনও রকম শাস্তি দেওয়াই অর্থহীন।
সব শেষে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই সবাইকে, যারা যারা এতে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, যে নার্সরা আমার সেবা করেছেন, যে গোয়েন্দারা আমাকে জেরা করেছেন, যে থেরাপিস্ট আমাকে শান্ত করেছেন, যে মা-বাবা আমাকে শোককে শক্তিতে পরিণত করার শিক্ষা দিয়েছেন, পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন, যে বন্ধুরা আমাকে খুশি রাখতে চেষ্টা করেছে, যে বোন আমার হৃদয়ের অর্ধেকটা জুড়ে রয়েছে।
শেষ পর্যন্ত ওই দুই গার্ডকে আমার সশ্রদ্ধ ধন্যবাদ, যারা আমাকে বাঁচিয়েছেন। এই গল্পের প্রকৃত বীর তারাই।
এবং সবকিছুর পর আমি বলতে চাই, এই পৃথিবীর মেয়েরা, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। রাতের বেলা যখন তোমাদের একা লাগবে, আমি তোমাদের সঙ্গে থাকবো। যখন অন্যরা তোমাদের সন্দেহ করবে, হেসে উড়িয়ে দেবে, আমি তোমাদের সঙ্গেই থাকবো। আমি সবখানে তোমাদের জন্য, তোমাদের হয়ে লড়াই করবো। কখনোই যুদ্ধ বন্ধ করা যাবে না।
বাতিঘর কোথাও যায় না। একা দাঁড়িয়ে আলো দিয়ে যায়। আমি জানি, আমি সব নৌকা বাঁচাতে পারবো না, কিন্তু আজকের এই বক্তব্য কিছুটা হলেও আলো পৌঁছাবে বলে আমার বিশ্বাস।
মেয়েরা, তোমরা সুন্দর, সম্মানীত, আত্মবিশ্বাসী ও অমূল্য। তোমরা সাহসী, তোমরা শক্তিশালী। এই শক্তি কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। আমি তোমাদের সঙ্গেই আছি। ধন্যবাদ।”
***********************************************************************
ক্ষমতার দাপটে এই ধর্ষকের বাবার দাবি: ‘২০ মিনিটের কাজে’ জেলে যেতে পারে না ছেলে। কতবড় অমানুষ হলে এমন কথা উচ্চারন করতে পারে এরা। সর্বশেষ খবর, এই ধর্ষকের মাত্র ছয় মাস জেল হয়েছে যা কমে তিন মাস হতে পারে।
২৯টি মন্তব্য
মেহেরী তাজ
কিছু বলার নাই। শুধু পড়লাম….
ব্লগার সজীব
কি বলার থাকতে পারে এই লেখা পড়ে? দুইদিন আগে পড়েছি লেখাটি, এই দুই দিন মনটি এতটাই বিষণ্ণ ছিল যে আমি বাসা হতে বের হইনি। অনেক চিন্তা ভাবনার পরে আজ সোনেলায় শেয়ার দিলাম।
শুন্য শুন্যালয়
লগিন হতে বাধ্য হলাম। এই ঝাপসা চোখে কোন বইএর লাইন আর চোখে পড়ছেনা …
আমার ইচ্ছে হচ্ছিলো জামা-কাপড়ের মতো শরীরটা খুলে হাসপাতালে ফেলে রেখে চলে যাই। প্রত্যেকটা লাইন পড়ে মনে হয়েছে আমার শরীরের উপর দিয়ে কোন পোকামাকড় যেন ক্রল করছে। দম বন্ধ হয়ে এসেছে বারবার।
একজন রেপিষ্টের আত্মসুদ্ধি কোনদিনই হয়না, তার ভুল সে কোনদিনই বুঝতে পারেনা। তাকে পৃথিবীর যেই শাস্তিই দেয়া হোক না কেন তার জন্য কম।
এতো শক্তিশালী কোন লেখা আমি এই প্রথম পড়ছি, লিঙ্কে দেখলাম একজন বলেছে এই লেখাটি ব্রুক কে প্রতিদিন একবার করে পড়ানো হোক। আমি বলি প্রত্যেক পুরুষকে একবার করে পড়ানো হোক, যারা ব্রুকের মতো সন্তানের জন্ম দেয় তাদের পড়ানো হোক।
ব্লগার সজীব
দুঃখিত আপু, মন খারাপ করিয়ে দিয়েছি আপনার। লেখাটি পড়ার পরে আমি বিষণ্ণ হয়ে ছিলাম দুইদিন। একজন নারী কত অসহায় হয়ে লিখছেন এমন কথা। ব্রুককে হাতে নাতে না ধরা গেলে কি হতো ভাবা যায়? কেউ জানতোই না কে করেছে এসব। ব্রুকের প্রতি ঘৃনার পাশাপাশি একটি প্রশ্ন মাথায় স্থায়ী আসন নিল, অসহায়দের প্রতি এই অবিচার কেন?
আবু খায়ের আনিছ
বাকরুদ্ধ। অনেক কথাই বলে গিয়েছে, অনেক কথা না বলিয়া।
যে নিজের অপরাধের উপলব্ধিই করতে পারে না, তাকে কোনও রকম শাস্তি দেওয়াই অর্থহীন।
অনুশোচনা, অনুতপ্ত না হলে অপরাধীর কোন শাস্তিই তাকে সংশোধিত করতে পারে না, আবার সে কোন না কোন অপরাধে জাড়িয়ে যায়।
জানিনা এই মেয়ের কি হয়েছিল, মদ্যপান নিয়ে কি হয়েছিল, কিন্তু এটা অনুধাবন করতে পারি আমাদের দেশের কোন মেয়ে হলে কি অবস্থা হতো।
ধন্যবাদ এমন একটা বিষয় পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
ব্লগার সজীব
মদ্যপান বেশি করায় এই নারী সেন্সলেন্স হয়ে গিয়েছিলেন। এরপর এই অবস্থায় ব্রুক তাকে বাইরে নিয়ে এসব ঘটনা ঘটায়।
অনুসোচনায় সামান্য দগ্ধ হয়নি ব্রুক। বিচারব্যাবস্থা আসলে ক্ষমতাবানদের জন্য।
মোঃ মজিবর রহমান
কি লিখব মন্তব্যে সজীব ভাই।
আমার মনে হয় এই বিষয়টি মিডিয়াতে প্রকাশ করা থেকে বিরত রাখার আইন করা আশু প্রয়োজন।
হয়ত দ্বিমত থাকতে পারে কিন্তু ব্যাক্তিগত ব্যাক্তিগতই রাখা প্রয়োজন বলে মনে করি আমি।
ব্লগার সজীব
কি যে বলেন মজিবর ভাই, এতবড় একটি অন্যায় হল এই নারীর উপর, আর এটি গোপন কেন রাখা হবে?
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
স্তব্ধ আমি কোন ভাষা নেই বলবার
স্রষ্টা তুমি কোথায়?
ব্লগার সজীব
স্রষ্টা মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করে রাখেন, অথবা স্রষ্টা ক্ষমতাধর দের পক্ষে।
মোঃ মজিবর রহমান
স্রষ্টা ক্ষমতাধর দের পক্ষে।
ব্লগার সজীব
হ্যাঁ মজিবর ভাইয়া, আল্লাহ্ শুধু অসহায়দের পরীক্ষা করেন, ক্ষমতাধরদের যদি পরীক্ষা করতেন তাহলে ভাল হতো মনে হয়।
মেহেরী তাজ
ব্রুকের মত ছেলের জন্ম যে বাবা দেয় তার তো মরে গিয়েও লজ্বা ঢাকার উপাই নাই। সে কি না বলে “২০ মিনিটের কাজে’ জেলে যেতে পারে না ছেলে”। আমার ইচ্ছে করতেছে ব্রুক জানোয়ার টার হাত পা বেধে ধারালো ব্লেড দিয়ে গায়ের বিশেষ করে মুখের চামড়া কেটে দিতে!
ব্লগার সজীব
এরা জানোয়ারেরও অধম ওস্তাদ। নারী সব স্থানেই নিষ্পেষিতা, এর থেকে বের হয়ে আসার কোন উপায় মনে হয় নেই।
সঞ্জয় কুমার
নির্বাক !!!! হতবাক !!!!
এই মুহূর্তে কমেন্ট করার মত ভাষা পাচ্ছি না
ব্লগার সজীব
আমিও থেমে গিয়েছিলাম লেখাটি প্রথম পড়ার পরে।
ইঞ্জা
বাকরুদ্ধ হলাম।
ব্লগার সজীব
নারীরা সব দেশেই এমন ভাবে নিগৃহীত।
ইঞ্জা
আমরা দানবরা যে আশে পাশেই থাকি। :@
জিসান শা ইকরাম
কি মন্তব্য করবো বুঝতে পারছি না।
ঘটনাটি আমাকে এতটাই প্রভাবিত করেছে যে, এই লেখাটি তো ফেইসবুকে তো শেয়ার দিয়েছিই, লেখাটি পড়ে নিজেই কুঁকড়ে ছোট হয়ে গিয়েছি। কতটা অসহায় হলে একজন নারী এমন একটি বিবৃতি দেন তা ভাবতে পারিনা। ধর্ষিতা নিজে জানেন যে প্রত্যাশিত বিচার তিনি পাবেন না। বিচার পাওয়ার মত শক্তি, অর্থ কোনটাই নেই এই নারীর। লেখার প্রতিটি লাইনে প্রতিটি শব্দে তীব্র অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে।
ধর্ষকের মাঝে সামান্য গ্লানিবোধ নেই, তার পিতা যে ভাষায় কথা বলেছে, তাতেই বুঝা যায় এই ধর্ষক কোন মানসিকতায় তৈরী হয়েছে।
এমন লেখা শেয়ারের জন্য ব্লগার সজীবকে ধন্যবাদ।
ব্লগার সজীব
শিক্ষা নিয়ে ভদ্রতার মুখোশ পরেও আমরা আদিমই রয়ে গেলাম ভাইয়া।
নাসির সারওয়ার
ব্লগার সজীব বেশ মজার মজার লেখার একজন মানুষ। কিন্তু এই খবরটা এভাবে সোনেলায়!!!
এটা ফলো করছিলাম। ব্রুক এর বাবার কথায় থমকে গেলাম। জানতাম এই ধরনীতে কোন খারাপ বাবা নাই। ভুল।
ব্লগার সজীব
ব্রুকের বাবার মত আরো বাবা থাকা বিচিত্র কিছু নয় ভাইয়া।
লীলাবতী
২২ তারিখেই পোষ্টটা পড়েছি, মন্তব্য করার মত সাহস সঞ্চার করতে পারিনি। কতটা অক্ষম, শক্তিহীনা, অসহায় হলে এমন একটি বিবৃতি দেয়া যায় তাই ভাবছি। ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে ব্রুক আরো কি করতো যদি সে ধরা না পরতো তা ভেবে শিউরে উঠছি। যুক্তিতর্ক, প্রমাণ এর অভাবে ব্রুক তথা শক্তিমানরা জিতে যায়, রক্ষা পায়। আর নারী এভাবে ধুকে ধুকে মরে যায়। লেখাটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
লীলাবতী
প্রিয় তালিকায় নিলাম লেখাটি।
ইয়াসির রাফা
কি আর বলবো !!
ছাইরাছ হেলাল
এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা এই পৃথিবীতে হয়ে চলছে, আমরা তার অনেক কিছুই
জানি না,
আর এটি আমাদের আধুনিক সভ্যতার কোন মাত্রা তাও আমাদের অজানাই থাকবে।
অপার্থিব
লেখাটা কয়েকদিন ফেসবুকে শেয়ার হতে দেখেছিলাম তখনই পড়েছিলাম।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমায় দিয়ে মন্তব্য করা হবেনা। কারণ বলার মতো ভাষা আমার নেই।