
পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাসে নারী শাসক বিরল। তাদের সবাই সফল শাসক হিসেবে। যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন ইতিহাসের পাতায় – তাদের মধ্যে সেমিরামিস অন্যতম। সিরীয় দেবী দারসেটো ও সিরীয় যুবার সম্পর্কের পরিণতি হলো সেমিরামিস। কন্যা শিশুকে লজ্জিত হয়ে পরিত্যক্ত করে আত্নাহুতি দেন দেবী। ঘুঘু পাখিরা দেখাশোনা করতেন সেমিরামিসের। অ্যাসিরিয়ার রাজার প্রধান মেষপালক কন্যা শিশুকে পেয়ে বড় করতে থাকেন। অপরূপ সুন্দরীর সৌন্দর্যে রাজকীয় গভর্ণর ওনেস অভিভূত হয়ে বিয়ে করেন। সুখ সহ্য হয়নি রাজা নিনাসের রোষানলে পড়ে। ওনেসের জীবন অতিষ্ঠ করে বাধ্য করে আত্নহত্যা করতে। অ্যাসিরিয়ার রাণী বনে যান সেমিরামিস ভাগ্যের উপহাসে।
নব্য অ্যাসিরিয়ার শাসনামলে খ্রিস্টের জন্মের প্রায় হাজার বছর আগে সেমিরামিস একাই শাসন করেছিলেন বিশাল সাম্রাজ্য। পাঁচ বছরের শাসনকালে আজো ইতিহাসে তাকে প্রভাবশালী করে রেখেছে। সফল নারী শাসক , দেবতার পরিত্যক্ত, ঘুঘু পাখির পালিত আর ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানের নির্মাতা – সেই রহস্য এখনো টানে মানুষকে। ধারণা করা হয় তার আসল নাম সামু-রমত। গ্রিসের লেখক, ঐতিহাসিকগণ নাম বদলে সেমিরামিস রাখেন। প্রাচীন শহর নিমরুদে ( বর্তমান ইরাক) পাওয়া জ্ঞান ও লেখার দেবতা ‘নাবু’কে উৎসর্গ করা দুটি মূর্তিতে সামু-রমতের উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়া দুইটি স্টালির (বিশেষ ধরণের পাথরের স্তম্ভ, যাতে কারোর জীবন সম্পর্কিত বর্ণনা লেখা বা খোদাই করা থাকে) একটি পাওয়া যায় বর্তমানে তুর্কির একটি শহর কিজকাপানলি থেকে। অন্যটি পাওয়া যায় ইরাকের আশুর শহরে।
কবির বিয়োগান্তক প্রেমের কবিতায় কুহকিনী সুন্দরী, গল্পে তিনিই অফুরন্ত সামরিক শক্তির অধিকারী। রক্ত-মাংসের সেমিরামিসের ইতিহাস ধোঁয়াশায় ভরা; দান্তের ‘ইনোফার্নো’ তে যৌন অপরাধী, ভলতেঁয়ার লিখেছেন বিয়োগান্তক নাটক। খ্রিষ্টপূর্ব অষ্টম ও নবম শতকের মাঝামাঝি অ্যাসিরিয় সাম্রাজ্যে বাস করতেন-স্বামী রাজা পঞ্চম সামসি আদাদ শাসনকাল ৮২৩ থেকে ৮১১ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ। সেমিরামিসের সন্তান রাজা তৃতীয় আদাদ নিরারি। দ্বিতীয় অশুর্নাশিরপালের পৌত্র সামসি প্রকাশ্যেই ছিলেন নিষ্ঠুর সম্রাট। বিদ্রোহী নেতাদের চামড়া দিয়ে স্তম্ভ ঢাকেন, শূলে চড়ান অনেককেই।
সাহিত্যিক ডিওডোরাস বলেন রাজকীয় প্রাসাদ , মারদূকের মন্দির, নগরের প্রাচীর তার আদেশেই নির্মিত। অনেক লেখকের ধারনা নেবুচাঁদনেজারের নামে ঝুলন্ত উদ্যান তারই তৈরি। কিজকাপানলি থেকে পাওয়া স্টালিতে বর্ণিত আছে যখন তার সন্তান নিরারি ইউফ্রেতিস নদী পার হয়ে আরপদ নগরের বিদ্রোহী রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ছিলেন, সেমিরামিস উপস্থিত ছিলেন সেখানে। মিশরে রানী ভবিষ্যদ্বাণী শুনেছিলেন, তার পুত্র নিনিয়াস তাকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করবে। ভারত আক্রমণের পর সেমিরামিস এই কথার সত্যতা টের পেয়েছিলেন। ডিওডোরাসের বর্ণনায় যদিও তার ছেলে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, সেমিরামিস কৌশলেই বিদ্রোহের পূর্বে ছেলেকে সাম্রাজ্য সঁপে দেন। আগুনে ঝাঁপ নয়তো নিজপুত্রের হাতে খুন হয়ে সেরিমাসিসের জীবনাবসান ঘটে।
এভাবেই পরিসমাপ্তি ঘটে একজন সফল নারী শাসকের শাসনব্যবস্থার।
তথ্য ও ছবি-গুগল
২০টি মন্তব্য
আরজু মুক্তা
একটু বুঝতে অসুবিধা হলো। মনে হলো ধারাবাহিকতার ঘাটতি। তবে ইতিহাসে এমন অনেক নারী আছেন, যাঁরা নিজগুণেই গুণান্বিতা।
অবশ্যই আপনাকে ধন্যবাদ, এমন সুন্দর একটা তথ্য জানালেন বলে।
শুভকামনা
সুপর্ণা ফাল্গুনী
প্রথম হবার জন্য অভিনন্দন। হুম আপু গোছানো টা হয়তো ভালোভাবে পারিনি। ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভ কামনা অবিরাম
ফয়জুল মহী
খুব ভালো লাগলো
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া। নিরন্তর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
ছাইরাছ হেলাল
এই -ই প্রথম এ বিষয়ে পড়লাম।
অবশ্য ভিন্ন বিষয়ে লেখার জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। নিরন্তর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
আলমগীর সরকার লিটন
শুভ সকাল সুন্দর একটাি ইতিহাস জানলাম কবি দিদি
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অফুরন্ত ধন্যবাদ ভাইয়া। নিরন্তর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
মোঃ মজিবর রহমান
জীবন কখন কিভাবে বদলায় তা বুঝা খুবই কঠিন। ইতিহাস বিভিন্নভাবেই ঘটে বাস্তবতায়। নতুন জানলাম।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
রোকসানা খন্দকার রুকু
অনেক সুন্দর পোস্ট দিদিভাই। জানতাম আবার জানলাম।
শুভ কামনা রইলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ আপু। আপনার জন্য ও শুভকামনা রইলো। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
মনির হোসেন মমি
ব্যাবিলনের শুন্যে উদ্যানের সৃষ্টি ও স্রষ্টার নারী শাষকের অনেক কথাই জানা হল।ক্ষমতা এমনি এর লোভ অন্ধ করে দেয় তার আত্মা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হুম ভাইয়া ক্ষমতা এমনি এর লোভে পড়ে পাপ-পূন্যের হিসাব ভুলে যায়। সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা নিরন্তর
রেহানা বীথি
ইতিহাসের পাতায় পাতায় যেমন রয়েছে ক্ষমতার জন্য নিষ্ঠুরতার নানা কাহিনী, তেমনই রয়েছে অনেক নারী-শাসকের বীরত্বগাথা। চমৎকার পোস্ট আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা আপু। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। একরাশ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
সুপায়ন বড়ুয়া
সুন্দর নতুন বিষয় বস্তু নিয়ে হাজির হলেন দিদি
সফল নারী শাষক নিয়ে।
ভাল লাগলো জেনে। শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা। আপনার জন্য ও শুভকামনা রইলো। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
তৌহিদ
সেমিরামিস সম্পর্কে আজই প্রথম জানলাম। নারীদের জন্য তিনি আদর্শ অবশ্যই।
ধন্যবাদ, তথ্যসমৃদ্ধ এমন পোস্টের জন্য।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা ভাইয়া। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আপনাদের উৎসাহ ও উদ্দীপনায় লিখছি ভুলত্রুটি শুধরে দিবেন। নিরন্তর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো