আমি যেখানেই যায় মানুষের সাথে মিশি। একদম কাছ থেকেই মানুষের জীবন দেখি। একসময় আমি ফিরিঙ্গি বাজারের দিকে ছিলাম। তখন আমি প্রতিদিন বিকেলে কর্ণফুলি ব্রীজঘাঁটে গিয়ে মাছ ধরার ট্রলারে বসতাম। প্রতিদিন যাওয়াতে সেখানকার কয়েকজন জেলের সাথে আমার খুব বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। অশিক্ষিত মানুষ তবে অনেক সরল। তাঁরা আমাকে বলেছেন, সমুদ্রের যেখানে গিয়ে তারা ইলিশ মাছ ধরে সেখানকার পানি নাকি অনেক পরিষ্কার। ইলিশ মাছ পুকুরের পুঁটি মাছের মতো ঝাঁক বেঁধে একসাথে থাকে। পরিষ্কার পানিতে ইলিশ মাছ সাঁতরাতে দেখা যায়। তাঁরা আস্তে করে মাছের ঝাঁক দেখে জাল বসিয়ে দেন। তাঁদের সাথে আমি একবার মাছ ধরতে যাবও বলেছিলাম। কিন্তু আমার দিদিকে বলায় সে ক্যাঁচাল শুরু করে তাই আর যাওয়া হয় নি। গেলে দিদি আমি পাগল হয়ে গেছি বলে বাড়িতে নোটিশ পাঠিয়ে দিত। বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরুপ ঐ জেলেরা আমাকে দুইবার ফ্রী ফরমালিনমুক্ত ইলিশ মাছ দিয়েছিলেন।
আমার আর একটি মেসের নিচে দাঁড়িয়ে একজন ভিক্ষুক ভিক্ষা করতেন। প্রতিদিন দেখা হওয়াতে উনার সাথে আমার একটি ভালো সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। উনার প্রতিদিনের ইনকাম, খরচ এইসব নিয়ে ভালোই কথা হতো আমাদের। অনেক কিছুই শেয়ার করতেন তিনি আমার সাথে।
আমি রেলওয়ে স্টাফ কোয়ার্টারেও সাবলেট থাকতাম। আমার বাসার নিচেই ছিলো বস্তি। সবসময় ঝগড়া করতো সেখানকার মানুষেরা। তাদের জীবনও দেখেছি আমি। হুটহাট গরম গরম জীবন প্রণালী। এই ঝগড়া লেগে যায়, স্বামী স্ত্রী যে যতটা পারে একজন আর একজনকে ধোলাই দিয়ে দেয়। বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সুঁচাগ্র মেদিনী, কেউ কাউকে কোন ছাড় দেয় না। তারপর কেউ এসে মিটমাট করে দেবে। যে আজ ঝগড়া মিটমাট করলো সে আবার তার পরদিন ,নিজের বউয়ের সাথে মারামারি করে। আর একজন ঝগড়া মিটিয়ে দেয়। তারপর আবার সব ঠিকঠাক। হাসি কান্না ঘর সংসার।
আমি আবার অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষের সাথেও মিশেছি। একেবারে এলিট সোসাইটি। এই প্রজাতি ভয়ংকর। শিক্ষিত মানুষের এত সুন্দর করে যত্নের সাথে আপনার গলায় ছুরি বসাবে যে আপনি কিছু বুঝে উঠার আগেই আত্মা শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে। শিক্ষিত মানুষ কখনও ঠকে না কিন্তু ঠকায়। অবশ্যই সবাই এমন নয়। অনেক ভালোও আছেন।
১২টি মন্তব্য
আদিব আদ্নান
বাস্তবতা তুলে এনেছেন নিবিড় পর্যবেক্ষণে ।
জুলিয়াস সিজার
ধন্যবাদ।
নীহারিকা
একেবারে আটপৌড়ে জীবনের গল্প। সুন্দর উপস্থাপন।
জুলিয়াস সিজার
ধন্যবাদ নীহারিকা।
শুন্য শুন্যালয়
টুকরো টুকরো গল্প গুলো বেশ লাগলো, বেশি ভালো লাগলো “হুটহাট গরম গরম জীবন প্রণালী” …
তোমার উপস্থাপন অনেক ভালো, লিখতে থাকো …
জুলিয়াস সিজার
ধন্যবাদ দিদি।
ছাইরাছ হেলাল
হ্যাঁ ,আপনি একদম কাছে থেকেই দেখেছেন এবং তুলেও
ধরেছেন নিপুণতায় ।
চলুক ।
জুলিয়াস সিজার
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।।
খসড়া
আপনার অনুধাবন চমতকার। 🙂
জুলিয়াস সিজার
ধন্যবাদ 🙂
আমীন পরবাসী
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার ব্যাক্তিগত কিছু সুন্দর উপলব্ধিটা শেয়ার করার জন্য। আমারও ভাল লেগেছে কথাগুলো। শুভেচ্ছা নিবেন ভাইয়া। আমারও মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা হয় ওদের সাথে মিশে ওদের জীবন প্রণালীর সাথে নিজেকে কিছুটা জড়িয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করতে সত্যি বলতে আজও তা করা হয়নি।
আপনার লিখাটা পরে মনে হল যখন আমি দেশে ছিলাম তখন আমিও হয়তো এমন কিছু করতে পারতাম। যাই হোক আপনার লিখাটাকে আমার মনে গেথে রাখলাম।
এবার ভাইয়া আপনার লাস্ট প্যারাটা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই। আপনি বলেছেন
আমি আবার অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষের সাথেও মিশেছি। একেবারে এলিট সোসাইটি। এই প্রজাতি ভয়ংকর। শিক্ষিত মানুষের এত সুন্দর করে যত্নের সাথে আপনার গলায় ছুরি বসাবে যে আপনি কিছু বুঝে উঠার আগেই আত্মা শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে। শিক্ষিত মানুষ কখনও ঠকে না কিন্তু ঠকায়। অবশ্যই সবাই এমন নয়। অনেক ভালোও আছেন।
আমি শুধু আপনাকে একটি জিনিস অবগত করতে চাই যে, পকেটে বড় বড় সার্টিফিকেট নিয়ে যারা ঘুরেন তাদেরকে আসলেই কোনো উচ্চশিক্ষিতের কাতারে ফেলবেন না কারণ তাদের কাছে সার্টিফিকেটের অভাব না থাকলেও রয়েছে মনুষত্যের বড়ই অভাব। আপনি যাদেরকে উচ্চশিক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন তাদের কেউই শিক্ষিত নন তারা শুধু সার্টিফিকেটধারী আর কিছু না। তাদেরকে যদি শিক্ষিত বলেন তাহলে যারা সত্যিকারে শিক্ষিত তাদের ঠিকমত মূল্যায়ন করা হবে না। সত্যি বলতে একটি সত্যিকারের উচ্চশিক্ষিত মানুষ কখনো অন্যকে ঠকায় না। শিক্ষা যার মাঝে রয়েছে তারাই শিক্ষিত।
লিখতে থাকুন ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে আবার।
জুলিয়াস সিজার
আমাদের সমাজে সার্টিফিকেটের ভুমিকাই যে বেশি ভাই, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।।