মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ৩০ লক্ষ নাকি ৩ লক্ষ? খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কিছু ব্যাপার খেয়াল করুন।
১) আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশে চালানো পাকিস্তানিদের নারকীয় গণহত্যা তেমন প্রচার পায়নি। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি এদিক দিয়ে সম্পূর্ণ সফল। পাকিস্তান যতটা না সফল তার চেয়ে বেশি ব্যর্থ বাংলাদেশ।
২) সংখ্যাটাকে ৩০ লাখ থেকে কমিয়ে ৩ লাখ করে ফেলতে পারলে পাকিস্তান এবং পাকিস্তানি বীর্যপ্রসুত বাংলাদেশি শূয়োরশাবকদের জন্য অনেক বড় একটা সাফল্য হবে। দুই তিন লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে মানে এটা তেমন বড় কোন যুদ্ধ হয়নি।
ইংরেজীতে War এবং Battle শব্দ দুটার পার্থক্য বুঝেন তো? War অর্থ যুদ্ধ আর Battle মানে হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী সংঘর্ষ। সংখ্যাটাকে ৩ লাখ প্রতিষ্ঠিত করা গেলে আমাদের ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধও তখন একটা সংঘর্ষে পরিণত হয়ে যাবে। ঐ যে জামাতিরা মুক্তিযুদ্ধ না বলে একাত্তরের গন্ডগোল বলে। আমাদের Greatest War তখন হয়ে যাবে smallest battle। একাত্তরে ৯ মাস গণ্ডগোল চলেছিল কোন যুদ্ধ হয়নি।
৩) আন্তর্জাতিকভাবে পাকিস্তানিদের ভাবমূর্তি এতে বাড়বে। খুব বেশি অত্যাচারী তারা ছিল না। টুকটাক গোলাগুলিতে ৩ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে মাত্র। মনে রাখবেন জামাত শিবির ও পাকিস্তানের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন।
৪) জামাত শিবির রাজাকারের দল। একবার ভেবে দেখুন যখন ৭১-এ দেশ স্বাধীন হয় তখন কেউ কি ভাবতে পেরেছিলেন যে রাজাকারেরা দেশের মন্ত্রী হবে? সেই রাজাকারেরা দেশের মন্ত্রী হয়েছে। বিএনপিকে জামাত গিলে খেয়ে ফেলেছে। বিএনপি বলে কিছু নেই। আওয়ামিলীগকেও গিলে খাওয়া শুরু হয়েছে। দলে দলে জামাতিরা আওয়ামিলীগে যোগ দিচ্ছে। সাতকানিয়ার বর্তমান আওয়ামিলীগের(!) এমপি রাজাকারশিরোমনি গোলাম আজমের সাবেক পিএস। ঐদিকে সিলেটে আরেক রাজাকারের ছেলে এবং আওয়ামিলীগের এমপি জাফর ইকবাল স্যারকে চাবুক মারার হুমকি দেন।
উপজেলা নির্বাচনে জামাত শিবির আওয়ামিলীগের সমান আসন পেয়েছে। তৃণমূলে জামাত এখন অনেক জনপ্রিয়। চট্টগ্রাম নামের দেশের একটা বিরাট অঞ্চলে ঘরেঘরে সাঈদির “নন্দিত জাতি নিন্দিত গন্তব্যে” বইটি পাওয়া যায়।
নিবন্ধন বাতিল হলে তারা অন্য নামে আসবে। জামাতের নেতারা নিজ নিজ এলাকার সাথে বেশ সক্রিয়। জামাতের হয়ে কলাগাছ দাঁড় করিয়ে দিলেও তারা চট্টগ্রামে নির্বাচনে জিতে যাবে।
৫) একসময় বাংলাদেশে দল থাকবে দুইটা। আওয়মিলীগ এবং জামাতিলীগ। নিশ্চিত থাকুন একদিন না একদিন জামাত শিবির ক্ষমতায় আসবেই আসবে। তাদের হাতে আছে মোক্ষম অস্ত্র ইসলাম। ভোটের রাজনীতিতে ইসলামের চেয়ে বড় অস্ত্র বাংলাদেশে আর কিছুই নেই। যেদিন জামাত ক্ষমতায় আসনে সেদিন তাদের প্রথম দায়িত্ব হবে;-
— মুক্তিযুদ্ধকে একাত্তরের গন্ডগোল বলে প্রতিষ্ঠা করা।
— তার জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার সেটা হচ্ছে শহীদের সংখ্যাটাকে ৩০ লাখ থেকে ৩ লাখ বানানো। তাহলেই কাজ হয়ে যায়।
৬) হুমায়ুন আজাদের একটি প্রবচন আছে;-
“সত্য একবার বলতে হয়। সত্য বারবার বললে সেটা মিথ্যার মতো শোনায়। আর মিথ্যা মিথ্যা বারবার বলতে হয়। মিথ্যা বারবার বললে সেটা সত্যের মতো শোনায়।”
জামাত শিবিরের টাকা পয়সার অভাব নেই। পুরা আরব বিশ্ব তাদের সাথে আছে। রাজাকারের ফাঁসি হলে তারা বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। আলজাজিরার মতো চ্যানেল সরাসরি রাজাকারের পক্ষ অবলম্বন করে। স্বয়ং জাতিসংঘ এবং আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে ফোন করে জামাতের নেতা এবং রাজাকারের ফাঁসি টেকাতে। বুঝেন টাকার জোর!
এই টাকার জোরেই তারা এখন থেকে মিথ্যাটা প্রচার করে যাচ্ছে শহীদের সংখ্যা নিয়ে। ঐ যে হুমায়ুন আজাদের প্রবচনের মতো মিথ্যাকে বারবার প্রচার করে সত্যি বানানো। আর এই মিথ্যার ফসল জামাত ঘরে তুলবে ৫০ বছর পর যেদিন বাংলাদশের নাম হয়ে যাবে বাংলাস্তান কিংবা নিউ সৌদিআরব বা এমন কিছু।
৬টি মন্তব্য
মিথুন
আওয়ামীলীগে যোগদান করে জামায়াত তাদের কার্যকলাপকে বৈধতা দিচ্ছে, এবং আওয়ামীলীগ সেটা মেনেও নিচ্ছে। এদেশ যে বাংলাস্তান কিংবা নিউ সৌদিআরব হবে আমারও তাই মনে হয়। ধর্ম নিয়ে আমাদের মেন্টালিটি যতই দেখছি, এই ধারনা বদ্ধমূল হচ্ছে।
জিসান শা ইকরাম
লেখায় যুক্তি আছে
তবে এই দেশ বাংলাস্তান কিংবা নিউ সৌদিআরব হবেনা কোনদিন এটি আমার বিশ্বাস।
লীলাবতী
ওদের এই প্রচারের অর্থ বুঝলাম আপনার লেখা পড়ে।এতদিন ভাবতাম ওরা এসব বলে কেন?
খেয়ালী মেয়ে
সুন্দর পোস্ট, অনেক অজানা তথ্য খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন…
অনিকেত নন্দিনী
জামায়াত ধর্মকে ঢাল বানিয়ে যুদ্ধের ময়দানে একটু একটু করে সামনে এগোচ্ছে। কূট কৌশলে বি এন পিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। আওয়ামীলীগকেও ফোকলা করে।দিতে পারলে তাদের সাথে আর লাগতে যায় কে?
শুন্য শুন্যালয়
“সত্য একবার বলতে হয়। সত্য বারবার বললে সেটা মিথ্যার মতো শোনায়। আর মিথ্যা মিথ্যা বারবার বলতে হয়। মিথ্যা বারবার বললে সেটা সত্যের মতো শোনায়।” কথাটা এ দেশের প্রেক্ষাপটে চরম সত্য।
কি অপেক্ষা করে আছে ভবিষ্যতে জানিনা, শংকিত।
ভালো পোস্ট।