একটি রাষ্ট্রের সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং নীতিনির্ধারকের ভূমিকায় নিজেকে সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করে সেসবকিছুকে দেশ এবং জনগনের কল্যানের জন্য ব্যবহারযোগ্য করে তোলার ধারক এবং বাহক হচ্ছে সেই দেশের সরকার। আর দেশের যেকোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যই হচ্ছে উক্ত দফতর সম্পর্কিত সমস্ত কার্যকে সহজ সাবলীলভাবে সম্পাদন করে জনগনকে নির্বিঘ্নে সেবা প্রদান এবং কাজের গতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।
জনগনের সেবক হিসেবে এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের গদিতে আসীন হয়ে আমাদের অনেকেই সরকারের এই মহৎ উদ্দেশ্যকে দেশের পবিত্র সংবিধানের বইয়ের পৃষ্টায় আবদ্ধ করে আমরা ভুলে গিয়েছি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। মৌলিক চাহিদাগুলির সর্বোচ্চ অধিকার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নিশ্চিত করার সেই দায়িত্বগুলিকে খাতাকলম পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রেখেছি আমরা। আর মুখে বলা তোতাপাখির মিথ্যে বুলির মতন আমাদের নৈতিকতাগুলোও কালের অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে নষ্ট মানবিকতার অতল গহব্বরে।
বাংলাদেশে এমন সরকারি প্রতিষ্ঠান কখনওই কাম্য নয় যা এখনো জনবান্ধব হতে পারেনি। আমাদের সরকারী চাকুরেদের মনে রাখা উচিত, দেশের ৮০ ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। শহরে বসবাসকারীরাতো এদিক সেদিক করে দফতরগুলিতে কাজ করিয়ে নেয় কিন্তু যারা গ্রাম থেকে শহর কিংবা রাজধানীতে এসে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলিতে হেনস্তার স্বীকার হন তাদের কি হবে? তারা কোথায় যাবে? সেবাপ্রদানকারী মানসিকতা না থাকলে সরকারি চাকুরী করা উচিত নয়। এতে হয়তো সাময়িকভাবে নিজের ব্যক্তিস্বার্থ অক্ষুণ্ণ থাকে কিন্তু দেশের বিশালতায় সেই কর্ম একবালতি দুধে একফোঁটা বিষ ঢেলে দেবার মতই একটি বিষয় কিন্তু!
অনেক প্রতিষ্ঠান শতভাগ কম্পিউটারাইজড না হবার কারনে সেই মান্ধাতা আমলের ফাইলিং সিস্টেমেই বন্ধী হয়ে আছে আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলি। ফাইল এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে যায় সাথে যায় কিছু দর্শনি। পকেট ভারি হয় কর্তাদের, যত ভোগান্তি সব জনগনের। এ সীমাবদ্ধতাগুলির বিষয়ে দায়িত্ববান সকলেরই আরও যত্নবান হওয়া উচিত বলে মনে করি।
দেশের প্রত্যেকটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে জবাবদিহিতারও আওতায় আনা উচিত। সরকারী বেতন নেবেন আর জনগনের সেবা করবেননা তা চলবেনা। বিশেষ করে – দেশের সকল এমার্জেন্সি সার্ভিস, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, জরুরী মেডিকেল সেবা এবং সকল সরকারি ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের কাছে জরুরী কারন ছাড়া মানুষ যেতে চায়না। অথচ তাদের আচার আচরণে মনে হয় তারাই অফিসার, আর অন্যেরা তাদের চাকর।
সকল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারি যে সিস্টেম বা অবকাঠামোগত দিক থাকে তারা সেটা মানেনা। উল্টো পুরো অফিসকেই তারা নিজেদের সিস্টেমের অংশ বানিয়ে নিয়েছে। আর সে কারনেই সরকার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সেবার মানকে সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারছে না।
একজন মাঝি তার নৌকা নিয়ে যেতে চায় একদিকে আর নৌকাটিকে বিপরীত দিকে ঠেলে ধরে একশ জন। মাঝি হলো সরকারি সিস্টেম আর সেই একশজন হচ্ছে অফিসের কর্মচারী, বিষয়টা হয়েছে এরকম। তাই শুধু সরকারের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের নিজেদেরকেও সচেতন হতে হবে।
দুর্নীতিবাজদের এমন মনোভাব আপনি আমি যতই বরদাস্ত করবো ততই তারা মাথায় উঠতে থাকবে। আর আমাদের তারা সেবা দেবেইবা কেন? বসে থাকলেও যে মাস শেষে বেতন ঠিকই পেয়ে যায়। অথচ এদের মধ্যেই কালেভদ্রে দেখা পাই দু’একজন সৎ অফিসার। যাদের কাজ দেখলে, কথা শুনলে শ্রদ্ধা এসে যায় মনে।
ইতিমধ্যে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ বক্স রাখা হচ্ছে আর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে, তবে তা খুবই নগন্য। এসব অব্যবস্থাপনা রোধে বাংলাদেশ সরকার কিছু উপকারী কার্যপদ্ধতি অবলম্বন করেছেন যার ফল ভোগ করছি আমরা। উদাহরণ হিসেবে টোল ফ্রী নম্বর ৯৯৯ এ অভিযোগ করা কিংবা দুদকের কথা বলা যেতে পারে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানকেও কিন্তু শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত এবং সেবা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত।
একজন সরকারী চাকুরে হয়ে যখন এসব ভাবি, দেশের জনগনের কাছে লজ্জায় মাথানত হয়ে আসে আমার। কারন আমিও যে প্রতিবাদ করতে পারিনা অনেক সময়। প্রতিবাদ করলে চাকরি নিয়ে টানাটানি হয়, হয়েছিলোও এমন। তখন কিন্তু কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি আমার। নোংরামীর বাইরে গিয়ে কার কাছে অভিযোগ করবো? তাই চুপচাপ দেখে যাই আর অপেক্ষাকরি আমার পাশে কেউ একজন এসে দাঁড়াক, আমার সহযোদ্ধা হোক।
মাঝেমধ্যে ইচ্ছেকরে- চাপরাশি থেকে শুরু করে রাঘববোয়ালদের গড়া সেই নষ্ট সিস্টেমের পিরামিডটাকে দুমড়ে মুচড়ে আছড়ে ভেঙে ফেলি। আজ আমি শুরু করবো কাল আপনারা করবেন। একদিন দেখবেন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার প্রতিটি মানুষ এই গনজোয়ারে কাঁধ মিলিয়েছে। সেই সুদিন আর বেশী দূরে নয় পাঞ্জেরী।
১৯টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
সরকারী প্রতিষ্ঠানে জনগনের জন্য সেবা! ডুমুরের ফুল এটি আমাদের দেশে। এরা জনগনের প্রভু, সেবক নয়। সেবক টেবক এসব সংবিধানে লেখা আছে। বাস্তবে নেই।
এমন একটা সরকারী প্রতিষ্ঠানের নাম আমি বলতে পারব না, যেখানে একজন সেবা চাইতে গিয়ে খুব সহজে জনতা সেবা পায়।
একটি জেলার সবচেয়ে বড় সরকারী কর্মকর্তার পদবীর নাম ; জেলা প্রশাসক। প্রশাসক শব্দ দিয়েই বুঝা যায় সব কিছু।
ভালো পোস্ট।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
মাঝেমধ্যে আমি নিজেই এমন হ্যারাসমেন্টের শিকার হই অন্য অফিসে গেলে তখন লজ্জা পাই। কি আর বলবো! অথচ তারাও সরকারি চাকুরী করে আমিও।
আমাদের প্রত্যেকের জনগনের কাছে কিছু দায়বদ্ধতা আছে। সেগুলো মানতে হবে।
প্রশাসক!! দেখা করাই মুশকিল। আর বেশী কিছু বললামনা।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই।
নিতাই বাবু
দাদা, এরকম প্রতিবাদী পোস্টের জন্য আপনাকে স্যালুট। আশা রাখি আপনার পোস্টখানা সংশ্লিষ্টদের নজরে পড়বে।
তৌহিদ
মানুষের মনে বিবেকবোধের জন্ম হোক এই কামনাই করি। সরকারি চাকুরে হিসেবে দেশের জনগনের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা আছে বৈকি!!
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ দাদা।
জাহিদ হাসান শিশির
সহমত
তৌহিদ
ধন্যবাদ
মনির হোসেন মমি
দেশে সব কিছুই চলছে আল্লারওয়াস্তে। লেখাটি মনমত হয়েছে।
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই।
আরজু মুক্তা
সরকারি সেবা, আর তাদের কর্মকাণ্ডের কথা কি বলবো। অনেক কিছু নিজের চোখে দেখা।প্রতিবাদ করেছিলাম বলে এরপর থেকে আর আমাকে ভিজিটে পাঠায়না!
তৌহিদ
এসব পরিবর্তন আসবে একদিন নিশ্চয় আপু।
প্রদীপ চক্রবর্তী
কথায় আছে যা কাজে নেই।
সুদিনের আশায় আজও অপেক্ষামান পাঞ্জেরি।
সময়োপযোগী লেখনী দাদা।
তৌহিদ
অবশ্যই পরিবর্তন আসবে দাদা।
শামীম চৌধুরী
তৌহিদ, আজকাল যে সরকারী চাকুরী পেয়েছে সেই সোনার হরিন পেয়েছি। এমনকি সরকরী দপ্তরী পদের লোকটিও আমাকে তোমাকে মানুষ হিসেবে গন্য করে না। সর্বত্র ঘুষের রাজত্ব চলছে। সরকারী চাকুরীজীবি মানেই ভাগ্যবান আর আমরা তাদের গোলাম। সংবিধান তাদের কাছে পুথিগত কিছু কালো অক্ষরের লেখা মাত্র।
তৌহিদ
তবে এদের মধ্যেও অনেক সৎ অফিসার আছেন যাদের ব্যবহার মুগ্ধ করে। বাকীটা আপনার মন্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করছি ভাই।
ধন্যবাদ জানবেন।
ছাইরাছ হেলাল
টেবিলের এপাশ ওপাশে যে দারুন বৈষম্য ভুক্তোভুগি ছাড়া কেই তা বুঝতে পারেনা।
আশা রাখি একদিন আলো আসবে। তবুও নিরাশায় মন বেঁধে থাকে।
তৌহিদ
আলো আসবেই। না হলে রাষ্ট্র ব্যবস্থা হুমকীর সম্মুখীন হবে।
সাবিনা ইয়াসমিন
সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো জনগণের স্বার্থে তৈরি করা হলেও, জনবান্ধব হয়ে উঠেনি কখনোই। খুব কম মানুষই আছেন, যারা সঠিক সেবা পান। সব ক্ষেত্রেই অরাজকতা চলে। কিছুই যেন করার নেই। কেউ কিছু করতে চাইলেও পারেনা। 🙁
ভালো একটা বিষয় নিয়ে লিখছেন।
তৌহিদ
আসলে নজরদারির অভাব আপু। আর সবচেয়ে বড়কথা আমরা আমাদের দ্বায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন নই।
ধন্যবাদ জানবেন আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
আপনাকেও শুভ কামনা তৌহিদ ভাই 🌹🌹