বাড়িটিতে ছোটখাটো পার্টি চলছে। শিশুরা এঘর ওঘর ছুটোছুটি করছে। পুরুষরা ড্রয়িং রুমে। আর নারীরা ভেতরের রুমে গল্পে মশগুল। গল্পচ্ছলে বন্ধুপত্নী বললেন, দেশে ফোন করলেই শাশুড়ি বলেন, “বাবারে, আমারে তোর কাছে লইয়া যা” । আমি বলি, নিয়ে আসুন, বাড়িতে একজন মুরুব্বী থাকলে ভালোই হবে আপনার। তিনি কিঞ্চিৎ বিরক্তিতে বললেন, “থাকবে কোথায়, আমাদের তো বাড়তি রুম নেই।” অতঃপর প্রসঙ্গ পাল্টায়। অন্য বিষয় নিয়ে গল্প চলে। আগামাথা বিহীন গল্প। বাবা-মা, ভাই-বোন’কে এদেশে আনার ব্যাপারে কে কে আবেদন করেছে সেইসব গল্প। উচ্ছ্বসিত বন্ধুপত্নী এবার জানালেন, তিনি তাঁর বাবা-মা’য়ের জন্যে আবেদন করেছেন। সহসাই তাঁরা এদেশে আসছেন। আমি বললাম, “থাকবে কোথায়, আপনার তো বাড়তি রুম নেই।” তিনি বুঝলেন, হো হো করে হেসে উঠলেন। জানতাম, হাসির চেয়ে সুন্দর কিছু নেই। কিন্তু এই প্রথমবার কারো হাসি ভীষণ রকম অসুন্দর মনে হলো।
অতঃপর একদিন বন্ধুপত্নী’র বাবা-মা এলেন, বেড়ালেন, বছরখানেক বাদে দেশে ফিরেও গেলেন। কিন্তু “বাবারে, আমারে তোর কাছে লইয়া যা” বলে আকুতি করা মায়ের আকুতি আকুতিই থেকে যায়। তাঁর আর আসা হয়না প্রানপ্রিয় ছেলের কাছে।
টুকটাক কাজ করার সময় আমার সত্তরঊর্ধ্ব বয়সী শাশুড়ি এগিয়ে আসেন প্রায়ই। আমার মা যেমন করে বলতেন, ঠিক তেমন করে বলে উঠেন, “তোমার ভারী কাজ করা ঠিক না কিংবা তোমার ঠাণ্ডা লেগে যাবে”। বলেই তিনি নিজে করার চেষ্টা করেন ! তেমনি আমিও প্রায়ই বলে বসি, “আম্মা আপনি রেস্ট নেন, শরীর খারাপ করবে।” আবার বৈকালিক চা’য়ের সময়টাতে আমাদের গল্প ফুরাতে চায় না। যুদ্ধের সময়কার গল্প, জীবনের চড়াই উৎরাই এর গল্প কিংবা অন্য কোন বিষয়।এটি দু’জনের প্রতি দু’জনের মায়া, ভালোবাসা’র বন্ধুসুলভ এক সম্পর্ক।
যতবারই বাংলাদেশে যাই, দীর্ঘ ভ্রমনে পাশের সহযাত্রী’রা জানতে চায় আমরা মা-মেয়ে কিনা। মা-মেয়ে কিংবা বৌ-শাশুড়ি একটি পরিচয় মাত্র। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষের প্রতি সহমর্মিতা, ভালোবাসা কিংবা সন্মানটুকু তো অন্তত করা যায় । ঘরে ঘরে এমন সম্পর্ক বিরাজ করলে আমাদের শিশুদের জন্যে কতোই না ভাল হতো, তাই না ?
আমার বন্ধুপত্নীও একদিন শাশুড়ি হবেন। একটু একটু করে যত্নে আগ্লে রাখা সন্তানটি থেকে দূরে থাকার কষ্ট নিশ্চয়ই তিনি সেদিন অনুভব করবেন। কিন্তু সেদিন যে বড় বেশি দেরি হয়ে যাবে ! “বাবারে আমারে তোর কাছে লইয়া যা”___ এমন আকুতি কি তাঁর কানে বেজে উঠবে সেদিন ? হয়তো বা হ্যাঁ … হয়তোবা না..
সম্পর্কগুলো হোক___
ভালোবাসার, সহযোগিতার, সহমর্মিতার, সন্মানের।
৩০টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
সবাইকে নিয়েই আমাদের মায়া,ভালোবাসা,শ্রদ্ধায় তৈরী হয় একটি আনন্দময় পরিবার
এটি অনেকে বুঝেন,অনেকেই বুঝেন না।
আপনাকে শ্রদ্ধা জানাতেই হচ্ছে,প্রচলিত ধারনাকে মিথ্যে প্রমান করে দিয়ে শাশুড়ির মেয়ে হতে পেরেছেন বলে।
তবে আপনার বন্ধু পত্নীর আগাম আকুতি যেন শুনতে পাচ্ছি………… বাবারে আমারে তোর কাছে লইয়া যা।
সম্পর্কগুলো হোক___
ভালোবাসার, সহযোগিতার, সহমর্মিতার, সন্মানের -{@
রিমি রুম্মান
দোয়া করবেন এমনটিই যেন থাকি সকলকে নিয়ে। শুভকামনা নিরন্তর।
ছাইরাছ হেলাল
আপনি যা পেরেছেন তার সামান্য অংশ যদি অন্যেরা পারতো
আমাদের পৃথিবীটা পাল্টে যেত অনেকখানি।
রিমি রুম্মান
একটু ত্যাগ স্বীকার করলেই কিন্তু সবকিছু সুন্দর হয়ে উঠে। সামান্য ত্যাগটুকু স্বীকার করবার মানসিকতা পরিবার থেকেই শিখে আসে প্রতিটি নারী, আমার ধারনা। ভাল থাকুন সবসময়।
আজিম
লেখায়ই শুধু নন, শাশুড়ি আর আপনি আপন মা-মেয়ের মত হয়ে গিয়েছেন আপনারা, এজন্য বড় মাপের মানুষও আপনি।
রিমি রুম্মান
আমার নিজের মা নেই। শাশুড়িই মা। আবার শাশুড়ির কন্যারা কাছে নেই, আমিই কন্যা । 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
কিচ্ছু বলার নাই -{@ -{@ -{@ -{@ -{@ -{@ -{@
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন সবসময়। শুভকামনা জানবেন। -{@
মোঃ মজিবর রহমান
আক্ষেপ তাঁর জন্য
বাবারে আমারে তোর কাছে লইয়া যা।
সম্পর্কগুলো হোক___
রিমি রুম্মান
সময় থাকতে আমরা অনেককিছুই বুঝতে চাই না। যখন বুঝি, তখন অনেক সময় পেড়িয়ে যায়।
মোঃ মজিবর রহমান
ঠিক তাই আপু।
সিকদার
আপনার মত করে কয়জনে বোঝে ? একটু সেক্রিফাইস একটু ভালবাসার শক্তি যে কত তা আমদের ধারনার অতিত।খুব ভাল লাগল আপনাদের সম্পরকের গভিরতা দেখে। আপনার জন্য তাই -{@
রিমি রুম্মান
আমি বিশ্বাস করি, ভালবাসা দিলে একজন মা কখনই তা ফিরিয়ে দেয়না। বিনিময়ে কয়েকগুণ বেশি ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দেন। ভাল থাকুন। -{@
নাসির সারওয়ার
আপনি পারছেন কারন আপনি জীবনকে উপভোগ করতে জানেন।
রিমি রুম্মান
জীবনটা অনেক ছোট। একজীবনে যে গল্প লেখা হয় তা কিন্তু দ্বিতীয়বার আর লেখা হবে না। তাই জীবন উপভোগ করাই শ্রেয়। তাই নয় কি ?
বোকা মানুষ
সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে মানুষেরর মন নিয়ে আরেকজনের চাওয়া পাওয়ার খোঁজ রাখতে পারাটা ও তার প্রতি সম্মান দেখাতে পারার মত সহজ কাজটা সবাই সহজে করতে পারেনা! ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটার জন্য! -{@
রিমি রুম্মান
ঠিক বলেছেন। আমরা ভুলে যাই, মানুষকে সন্মান দেখালে নিজের সন্মান বাড়ে বই কমে না। ভাল থাকুন সবসময়। -{@
আবু খায়ের আনিছ
একটা প্রশ্ন থাকল আপু, সম্পর্ক কোথায় হারিয়ে যায়?
রিমি রুম্মান
সম্পর্ক হারায় না। আমাদের আশেপাশেই থাকে। শুধু আমরা খুঁজে নিতে জানিনা।
অরুনি মায়া
আপু তুমি যা পেরেছ তা সত্যি ই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু এখানে একটি বিষয় না বললেই নয়, বিয়ের পর শাশুড়ি আর পুত্রবধূরর সম্পর্কই নির্ধারণ করে দেয় সেই ফ্যামিলির ভবিষ্যত। শাশুড়ি ছেলের বউ কে নিজের মেয়ের মত আর পুত্রবধূ শাশুড়িকে মায়ের স্থানে রাখতে না পারলে আর কিছুই ঠিক থাকেনা। অবশ্যই উভয় পক্ষকেই সচেতন হতেই হবে,,,,
রিমি রুম্মান
উভয়পক্ষকেই সচেতন হতে হবে জানি। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উভয়েই সচেতন থাকে না। সেক্ষেত্রে আমরা বউরা একটু মানিয়ে নিলেই অনেককিছুই সুন্দর হয়ে উঠে। শাশুড়িদের বয়সের কারনে ধৈর্য সহ্য ক্ষমতা কম থাকতে পারে হয়তো। “আমার মা হলে কি মেনে নিতাম না? “__ এই বোধটুকু ভেতরে থাকলে অনেককিছুই সহজ হয়ে উঠে কিন্তু। ভাল থেকো সবসময়। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
শাশুড়ি যে মা সে কথা আমরা মেয়েরা ভুলে যাই। আমি আমার মায়ের সাথে যেমন কথা বলি, শাশুড়ির সাথেও। রাগ করি আবার জড়িয়েও ধরি। এক অদ্ভূত সম্পর্ক। তবে এও মানি মায়ের বিকল্প মা ছাড়া আর কেউ না। কেউ যদি বলে আমি আমার শাশুড়ীকে মায়ের মতোই ভালোবাসি কিংবা মায়ের চেয়েও বেশী, সেটা হিপোক্রেসি হয়ে যাবে।
তবে আমি আমার শাশুড়ীকে প্রচন্ড সম্মান করি। উনাকে অবহেলা করার কথা ভাবতেও পারিনা। রিমি আপু আপনি যে অনেক বড়ো মনের মানুষ, তা আবারও দেখিয়ে দিলেন। -{@
রিমি রুম্মান
মা তো সবার কাছে মা ই। মায়ের বিকল্প নেই পৃথিবীতে। তারপরেই কিন্তু শাশুড়ি। কেননা তিনি আমার স্বামীর মা। টুকিটাকি অনেককিছুই ইগ্নোর করে গেলেই কিন্তু অনেক কিছু জটিল না হয়ে সুন্দর হয়ে উঠে। আমার মা নেই। শাশুড়িকে মাথার উপর বিশাল এক বটবৃক্ষের ছায়া মনে হয়। ভাল থাকুন নীলাপু। -{@
নীতেশ বড়ুয়া
(3 -{@
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন সবসময়। শুভকামনা নিরন্তর। (3 -{@
নীতেশ বড়ুয়া
আপনিও ভাল থাকুন সমর্কের মায়াজালে আনন্দের সাথে -{@ (3 -{@
লীলাবতী
আপনি অন্য রকম আপু।এত মায়া আপনার মাঝে।আপনার মত সবাই ভাবেন না আপু।
রিমি রুম্মান
জীবনটাকে যত বড় মনে হয়, আসলে কিন্তু তা নয়। আমাদের ছোট্ট জীবনটা সুন্দরভাবে উপভোগ করতে চাইলে অনেক কিছুই ইগ্নোর করে যেতে হয়। ভালবাসলে বিনিময়ে ভালোবাসা পাবেই, এটা আমি আমার জীবন থেকে শিখেছি। ভাল থাকুন অনেক। -{@
শুন্য শুন্যালয়
নারী একদিন শ্বাশুড়ি হবে, এই বোধটা লোপ পায় বেশিরভাগের। এ ধরনের মানুষের জন্য আমার করুনা।
আপনার জন্য শ্রদ্ধা জাগে আপনাতেই, লেখাগুলোতে সবাইকে দেখাতে আর পড়াতে ইচ্ছে করে।
আপনি অনেক ভালো থাকুন আপু।
রিমি রুম্মান
পরিবার থেকে আমরা কত কি শিখি। ভাল কিংবা মন্দ। যেমন, আমার দাদু’র সাথে আমার মায়ের সুন্দর সম্পর্কগুলো দেখে দেখে আমরা বেড়ে উঠেছি। মানুষকে ভালোবাসা, সন্মান করা শিখেছি। আমার সন্তানরা আমাকে দেখে শিখুক, এটাই চাই। এভাবেই কিন্তু একের পর এক প্রজন্ম সহমর্মিতা শিখবে।
ভাল থাকুন আপু।
ভাল থাকুন সবাইকে নিয়ে।