তন্বী আজকে কর্মস্থলে যোগদান করতে গেলো। ওর অফিসের সবার সাথে পরিচিত হলো কিন্তু একজনের সামনে এসে থমকে গেলো। এমন একটি অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে তন্বী কিছুক্ষণ স্ট্যাচু হলেও নিজেকে সামলে নিলো। তন্বীর ষোড়শী প্রেম আজ তার সামনে দাঁড়িয়ে। অফিসের ম্যানেজার আকাশ ওর পূর্বপরিচিত, শুধু পরিচিত বললে ভুল হবে ওর একসময়ের জীবন, ভালোবাসা। তন্বী তখন মাত্র স্কুলজীবন শেষ করেছে, কলেজে ভর্তি হবে। কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে ওর সাথে পরিচয়। ভর্তি ফরম পূরণ করতে গিয়ে আকাশের সাহায্য পেয়েছিল। একদিন তন্বীর বাসায় একটি সুন্দর খাম আসলো।
স্বাভাবিকভাবেই সদ্য স্কুল শেষ করা মেয়ের কাছে চিঠি আসা নিয়ে বাবা-মা বকাবকি করলো। তন্বী কিছু বুঝতে না পেরে অঝোরে কাঁদলো। পরে ওর মা ওকে চিঠিখানা খুলে দেখালো। তন্বী যেন বোবা হয়ে গেলো। ওতো এর কিছুই জানে না। ভাগ্য ভালো আকাশ নাম, ঠিকানা কিছু লিখেনি, শুধু কিছু ভালোলাগার কথা লিখেছিলো। যখন কলেজে গেলো দেখলো আকাশ দাঁড়িয়ে আছে কলেজের সামনে। কথা বলতে গিয়ে জানতে পারলো ঐ চিঠি আকাশ তাকে দিয়েছে। তন্বী বললো, আপনি আমার ঠিকানা কোথায় পেলেন?’ আকাশ বললো,’ ফরম পূরণ করতে গিয়ে তোমার ঠিকানা মুখস্থ করে নিয়েছিলাম। তোমার মনের কথা জানতে চাই।’ তন্বী বললো,’ সে বাবা-মায়ের অমতে কিছু বলতে পারবেনা।’ আকাশ তন্বীকে ভাবার সময় দিলো আর ছোট্ট একটি প্যাকেট ও কিছু গোলাপ তুলে দিলো হাতে। তন্বী নিতে চায়নি, জোর করে দিয়ে বললো, ‘বাইরে সিনক্রিয়েট করোনা, ভালো না লাগলে বাসায় নিয়ে বা রাস্তায় ফেলে দিও।’ তন্বী চুপচাপ নিয়ে নিল। সেদিন আর কলেজে ঢুকলো না তন্বী, সোজা বাসায় চলে আসলো।
জিনিসগুলো ফেলতে গিয়েও ফেলতে পারেনি, সারা শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছিলো।
প্রথম প্রেমের প্রস্তাব, উপহার ওকে অস্থির করে দিচ্ছিলো। ও সবকিছু ব্যাগের মধ্যে লুকিয়ে রাখলো। বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে প্যাকেট খুলে একটা টেডি বিয়ার, কবিতার বই আর একটা চিঠি পেলো সাথে কিছু ফুলের পাপড়ি ছিলো। চিঠির ভাষাগুলো ওর মনকে নাড়া দিয়ে গেলো। বারবার লুকিয়ে পড়লো তবুও যেন মন ভরছে না ওর। কবিতার বইয়ে লেখা ছিলো , ‘হে সুজন তোমার মতো স্বজন আছে মোর ক’জন।’ সাথে শাড়ী পড়া গাঁয়ের একটি মেয়ের ছবি লাগানো । তন্বী এবার সত্যিই আকাশের উপহারের মায়ায় জড়িয়ে গেলো। ক্লাস শুরু হলে প্রতিদিন আকাশের সাথে দেখা হতো, কথা হতো। কিছুদূর পর্যন্ত প্রতিদিন এগিয়ে দিতো তন্বীকে। আকাশের প্রেমে একদিন ও কলেজ মিস্ করতো না।
সবই ঠিকঠাক চলছিলো হঠাৎ আকাশ তন্বীকে ওর জীবন থেকে সরে যেতে বললো। তন্বী প্রথমে ভেবেছিলো আকাশ ওর সাথে মজা করছে কিন্তু আকাশ যখন রাগ দেখালো, কঠোরভাবে ওকে সরে যেতে বললো তন্বীর জীবনে প্রথম মনে হলো ,ও যেন রাস্তার ভিখারি। তন্বী ওর অপরাধ জানতে চাইলো । আকাশ কোনকিছু বললো না। তন্বী বাসায় এসে বাথরুমে ঢুকে ঝর্ণা, পানির কল ছেড়ে দিয়ে ভিজতে লাগলো আর বুকের সমস্ত কান্না ধুইয়ে দিচ্ছিলো। আজ সেই আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে সে না পারছিলো বের হয়ে আসতে না পারছিলো ওখানে থাকতে।
২৪টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
বরাবরি খুব সুন্দর লাগছে আপু
অনেক শুভ কামনা জানাই
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো লাগলো। শুভ কামনা রইলো
ইঞ্জা
বারবার স্মৃতি গুলো কঠিন সত্য রূপে ফিরে আসছে তম্বির জীবনে, ভবিষ্যত তার কি হবে শুধু লেখিকা জানেন।
বেশ সুক্ষ্ম ভাবে এগিয়ে চলেছে আপু আপনার এই ধারাবাহিক গল্প, বেশ লাগছে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। এভাবেই স্মৃতি গুলো কঠিন হয়ে সামনে দাঁড়ায়। ভালো থাকুন শুভ কামনা রইলো
ইঞ্জা
শুভকামনা অফুরান।
মনির হোসেন মমি
দিদি গল্পের মুল আকর্ষন সম্ভবত পাঠক আমরা ফিরে পেলাম। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়। চলুক।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা রইলো
ছাইরাছ হেলাল
যাক অবশে্ষে গল্প নূতন মাত্রা পেল। এই পর্বটি বেশ মজার হবে বুঝতে পারছি।
চলুক চলুক।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো লাগলো।
কামাল উদ্দিন
এবার তো দেখছি গল্প ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হওয়ার লক্ষণ ফুটে উঠেছে…….চলুক, সাথেই আছি আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা
কামাল উদ্দিন
আপনার জন্যও রইল অনেক অনেক শুভ কামনা।
সুপায়ন বড়ুয়া
কৈশোর প্রেমের বাস্তব কাহিনী
সুনিপুন হাতে তুলে ধরা হলো।
চালিয়ে যান। শুভ কামনায়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ দাদা শুভ কামনার জন্য। আপনার জন্য ও শুভকামনা ও শুভ সন্ধ্যা
হালিম নজরুল
বহুরৈখিকতা গল্পের আলাদা একটি আর্ট
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো লাগলো
ফয়জুল মহী
সুকোমল ভাবনার অনন্যসাধারণ লেখা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
সাবিনা ইয়াসমিন
কষ্টের স্মৃতি-বাহক সম্মুখে এসে দেখা দিয়েছে। হয়তো এবার তন্বীর জানা হবে কেন আকাশ নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলো। আমরাও জানবো।
পরের পর্বের অপেক্ষায়,
শুভ কামনা 🌹🌹
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন। শুভ সকাল
তৌহিদ
আগের পর্বগুলি পড়া হয়নি তাই বিস্তারিত বলতে পারলামনা। তবে কিছু স্মৃতি অম্লান থাকে। কারও মনে দাগ কেটে যায় যার কেন’র উত্তর তার নিজেরও জানা থাকেনা।
ভালো থাকবেন আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ঠিক বলেছেন ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে। সময় করে পড়ে অবশ্যই মন্তব্য করবেন। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা রইলো
জিসান শা ইকরাম
গল্পে নতুন চরিত্র এলো,
আকাশের প্রতি কেমন আচরন করে তন্মি তাই এখন দেখার বিষয়।
ভাল হচ্ছে গল্প।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ দাদা ভাই। ভালো থাকবেন শুভ কামনা রইলো