গুড স্যাম হসপিটালের বিছানা থেকে আকাশ দেখা যায় না। জানালায় ভারী পর্দা দেয়া।আমার রুমে সব সময় আলো জালানো থাকে।তাই দিন কি রাত বোঝার কোন উপায় নাই। গত তিন দিন আমি এই বিছানায় শুয়ে আছি। ঘর থেকে হাজার মাইল দূরে পরিবার,পরিজন হীন।বাইরে একটানা বৃষ্টি হছে। ছোট্ট এই পাহাড়ি শহরে বলতে গেলে প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়। খুবই বিরক্তিকর। বৃষ্টি একসময় আমার খুবই পছন্দ ছিল। এখন আর ভাল লাগেনা। এই মুহূর্তে বলতে গেলে কিছুই ভাল লাগছেনা। কিছুক্ষণ পর পর নার্স এসে আমকে দেখে যায়। মনিটরে আমার হার্টবিট দেখে। আমার সাথে হাসি,গল্প করতে চায়। আমার ভাল লাগেনা। মাঝে মাঝে একা একা কাঁদি। সারা শরীরে এক অসহ্য ব্যথা। আমার শরীরের ভীতর যে ছোট্ট আরেকটা প্রান বেড়ে উঠেছে ধীরে ধীরে সে এখন পৃথিবীর আলো দেখার জন্য উদগ্রীব। কোন কারনে তার সেই যাত্রা বিলম্বিত হছে। সাদা বুড়ো ডাক্তার জেনিফার এর চোখে মুখে একধরনের চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। জেনিফার বলল আর অপেক্ষা করা ঠিক হবেনা। আমরা অপারেশন করেত চাই। চরম উদ্বেগ আর ভয় নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে যাবায় জন্য তৈরি হচ্ছি।ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদি। ইস মা যদি থাকত একটু পাশে।
নার্স বলল” তোমার সাথে অপারেশন থিয়েটারে আর কে যাবে, তোমার মা অথবা বোণ কেউ নাই”।অনেক কষ্টে কান্না চেপে বললাম কেউ নাই। নার্স আমার হাত ধরে বলল মন খারাপ করোনা আমি তোমার বোণ, আমি তোমার পাশে থাকব। ভিন দেশি এক অচেনা নার্সের মমতা মাখা সেই কথায় মনটা ভাল হয়ে গেল। অপারেশন থিয়েটারের সবাই কত কথা বলল। তারপরও আমার মনের ভয় কাটেনা। হঠাত মনে হল আমার শরীরে কোন অনুভুতি নাই। কত সময় এমন ছিলাম মনে নাই। নার্স বলল চোখ খোল। চোখ খুলে যা দেখলাম তা দেখার জন্য প্রতিটা নারী অপেক্ষায় থাকে জন্ম জন্মান্তরে। একটা ছোট্ট মোমের পুতুল। চিৎকার করে কন্না করে সেই পুতুল টা বলছে আমি এসেছি,এসেছি এই ধরায়। আমার চোখে এত অশ্রু কোথায় ছিল জানিনা। চখের জল যেন বাধ মানে না। নার্স মেয়েটা বলল কাঁদছ কেন বোকা মেয়ে। আমি নিজেও জানি না কেন কাঁদছি। শুধু জানি আমার আজ কাদতে খুব ভাল লাগছে। আজ থেকে আমার পরিচয় শুধু এক নারী নয় আমি একজন মা।পৃথিবীর সব থেকে সন্মানের পদবি।
আমার সেই ছোট্ট পুতুলটার আজ জন্মদিন। তিন বছরের দুষ্ট পরীটা আমার বড় হয়ে যাচ্ছে।অনেক বড় হও মা, আমার আকাশের চেয়েও বড়।
২৬টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
মন টা মায়ায় ভরে গেলো এক মা এর জন্য। অদ্ভূত সুন্দর লেখা। পরীর জন্য জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। অনেক বড় হও। দুস্ট পরীটার নাম কি?
নাঈমা নাসরিন নিপু
পরীটার নাম নওমি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
ছাইরাছ হেলাল
নওমির জন্য দোয়া।
তবে মা মা ই। এ অনুভুতির বিকল্প নেই। মা ছাড়া এটি কেউ বুঝবে ও না।
বিভুঁইয়ে অপরিচিত জনও আপন হয়ে যায়।
নাঈমা নাসরিন নিপু
আপনার কথা ঠিক। ধন্যবাদ আপনাকে।
মরুভূমির জলদস্যু
নার্স বলল” তোমার সাথে অপারেশন থিয়েটারে আর কে যাবে, তোমার মা অথবা বোণ কেউ নাই”।অনেক কষ্টে কান্না চেপে বললাম কেউ নাই। নার্স আমার হাত ধরে বলল মন খারাপ করোনা আমি তোমার বোণ, আমি তোমার পাশে থাকব।
এমন কিছু অপ্রত্তাশিত পাওয়া মনটা ভিজিয়ে দেয়।
নাঈমা নাসরিন নিপু
প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এত দেরিতে জবাব দেবার জন্য। খুব ব্যাস্ত ছিলাম। ধন্যবাদ আপনাকে
জিসান শা ইকরাম
শুভ জন্মদিন দুষ্ট পরী নওমি।
শুভ কামনা সব সময়ের জন্য–
আনন্দ, সুখ এর মাঝে থেকো আজীবন।
নাঈমা নাসরিন নিপু
ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার এই দোয়া নওমির জীবনের শ্রেষ্ট পাওয়া
সায়ন্তনু
প্রতিটি মায়ের সন্তান ভাবনা একই রকম মধুর।
নাঈমা নাসরিন নিপু
ঠিক মায়ের মত কেউ ভাবেনা
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
আপনার পরীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। কত আবেগ দিয়ে লিখলেন। নওমি যেন অনেক অনেক বড় হয়।
নাঈমা নাসরিন নিপু
ধন্যবাদ আপনার এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য
নুসরাত মৌরিন
অসাধারন লাগলো আপু।
পরীর জন্য শুভকামনা…।
নাঈমা নাসরিন নিপু
ধন্যবাদ আপু
লীলাবতী
এত অল্প লেখার মাঝে এত আবেগ কিভাবে আনেন আপু? নওমিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
নাঈমা নাসরিন নিপু
এই আবেগ টুকু ই আমার লেখার একমাত্র উপকরণ। আমি সেই অর্থে কোন যোগ্যতাই নাই। আপনি অনেক ভাল লেখেন।
খেয়ালী মেয়ে
আমার আজ সত্যি মনটা অনেক খারাপ ছিলো, কিন্তু পরীর পৃথিবীতে আসার গল্প পড়ে মনটা ভাল হয়ে গেলো…..
শুভ জন্মদিন পরী -{@
অনেক বড় হও, আকাশের সমান (3
নাঈমা নাসরিন নিপু
মন ভাল হেয়েছে শুনে ভাল লাগল। ধন্যবাদ আপনাকে
খসড়া
শুভ শুভ শুভ জন্মদিন।
নাঈমা নাসরিন নিপু
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
মেঘাচ্ছন্ন মেঘকুমারী
নার্স এর ব্যাবহারটি অতুলনিয়। আপনার পরীকে আদর।
মোঃ মজিবর রহমান
শুভেচ্ছা রইল
ভালো থাকুন।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
হুম শুভ কামনা।
সোনিয়া হক
অসাধারন লিখেছেন আপু। নওমির জন্য শুভ কামনা, এমন মায়ের স্বপ্ন যেন সে পুরন করতে পারে।
আপু আপনাকে আমার লেখায় জলপাই আচারের দাওয়াত দিলাম :p
নাঈমা নাসরিন নিপু
ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার জলপাই আচারের কথা শুনে এখনি মুখে জল চলে আসছে। আসব আপনার আচার খেতে
জিসান শা ইকরাম
প্রবাসে ব্যাস্ত থাকেন আপনি বুঝি।
আপনার লেখা অনেকেই পছন্দ করে
যারা এখানে আপনার লেখা পড়েন, তাঁরা কিন্তু আশা করে আপনি তাঁদের লেখাও একটু পড়ুন।
সময় পেলে এনাদের লেখাও একটু পড়ুন।
প্রবাসে ভালো থাকুন সবাইকে নিয়ে।