” আপনার সাথে যুদ্ধ করতে না দিলে আমরা অন্য জায়গায় যুদ্ধ করবো।বাংলাদেশ কি একা আপনার?”
মেজর খালেদ মোশাররফকে উদ্দেশ্য করে Y বা Young Platoon এর সদস্যদের রাগান্বিত উক্তি এটি। মুক্তিযুদ্ধে অংশ
নেয়ার জন্য সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কয়েকজন কিশোর ভারতে পৌঁছালো ।উদ্দেশ্য প্রশিক্ষণ শেষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ। কিন্তু বিনা অনুমতিতে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ঢুকার চেষ্টা করার অপরাধে
মেজর খালেদ মোশাররফের নির্দেশে তাঁদের চোখ বেঁধে রাখা হয় । খালেদ মোশাররফ যখন ক্যাম্পে ফিরলেন তখন তাঁদের চোখ খুলে দেয়া হলো । ক্রোধে কিশোরেরা উন্মত্ত । দেশ রক্ষার জন্য তাঁরা জীবন দিতেও প্রস্তুত। আর তাঁদেরই কিনা চোখ বেঁধে রাখা হয়েছে !
কিশোরদের মনোবলের কাছে মেজর নতি স্বীকার করলেন। তখনই নির্দেশ দিলেন ওদের Y Platoon এর সদস্য করার। যে দেশের সন্তানেরা জীবন বাজী রাখতে পারে সেই দেশ হানাদার মুক্ত হবেই !
শুরু হলো প্রশিক্ষণ । ব্রিটিশ ৩০৩ ব্রাউনিং ওরা উত্তোলন করতে পারে না সহজে। কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে যায়!বুকে তাঁদের স্বদেশের মানচিত্র!
কয়েক সপ্তাহ প্রশিক্ষণ শেষে মেজর খালেদ মোশাররফ সীমান্ত এলাকা বক্সনগরে নিয়ে গেলেন ছেলেদের। কাছেই পাকিস্তানিদের বাঙ্কার। ছেলেদের বলা হলো হানাদারদের সেই বাঙ্কার ওড়িয়ে আসতে পারলে পুরষ্কার স্বরুপ তাঁদের দেয়া হবে ঘড়ি !
মেজরের নির্দেশে তাঁরা প্রস্তুত। পুরষ্কারের ঘড়ি পাওয়ার লোভ কিশোরদের ছিলো না। তাঁরা জানতো প্রশিক্ষিত শত্রুদের চোখ এড়িয়ে বাঙ্কার ওড়িয়ে দেয়া কতোটা কঠিন।
কিশোররা এ’ও বুঝতে পেরেছিলো , দেশের প্রতি তাঁদের কতোটা
ভালোবাসা তা প্রমাণেরও দিন আজ। জীবন উৎসর্গ করতেই এসেছে তাঁরা । দিনের বেলা এমন অপারেশন অভিজ্ঞ কমাণ্ডো দ্বারাই সফল হতে পারে কেবল। কিন্তু কিশোরেরা হেরে যাওয়ার পক্ষে নয়। প্রবল দেশাত্মবোধ তাঁদের অন্তরে। রক্তের কণা বিদ্রোহ করে উঠছে । প্রতিশোধ নিতেই হবে।
সতর্কতার সাথে ছেলেরা ঢুকে গেলো শত্রুর ক্যাম্পে। বাঙ্কারগুলো ওড়িয়ে দিয়ে বিজয়ীর বেশে তাঁরা যখন ফিরলো , খালেদ মোশাররফ জল ভরা নয়নে জড়িয়ে ধরলেন কিশোরদের!এদের দিয়েই সম্ভব , এরাই পারবে দেশকে স্বাধীনতা এনে দিতে। কিছুদিন পর Y Platoon এ যুক্ত হয় ঢাকা থেকে আগত আরও কিছু কিশোর। ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গার অপারেশনে যাদের রাখা হতো। ক্যাপ্টেন হায়দার যাদের নাম দিয়েছিলেন , ওয়াকি টকি।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এমন সব কিশোরদের অবদানকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। যে বয়স রঙিন স্বপ্নে বিভোর হওয়ার ,হেসে-খেলে কাটিয়ে দেয়ার সেই বয়সেই ওরা দেখেছে হানাদারদের অত্যাচার , শোষণ , নির্বিচারে হত্যা , ধর্ষণ।পরিস্থিতিই এই কিশোরদের বানিয়ে তুলেছিলো একেকজন যোদ্ধা ।
বিজয়ের মাসে নাম না জানা এমন দেশপ্রেমিক কিশোরদের জন্য রইলো
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অফুরান।ওরাই আমাদের বাংলাদেশ ! আমাদের বিস্ময়….
৯টি মন্তব্য
অয়োময় অবান্তর
পড়ার সময় একটা রক্ত গরম করা উত্তেজনা কাজ করছিল। খুব আফসোস হচ্ছে। খুব ভীষণ। খালেদ মোশাররফ, ক্যাপ্টেন হায়দার এরা এক এক কিংবদন্তি। Y প্লাটুন সম্পর্কে টুকাটুকি জানতাম। জানার পরিধি আরও বড় হল। লাল সালাম। তাদের প্রতি আকুন্ঠ শ্রদ্ধা বোধ। তোমরা চিরকাল কিশোর থেকো।
রুম্পা রুমানা
ধন্যবাদ । অনেক দেরী হলো জবাব দিতে। দুঃখ প্রকাশ করে নিলাম। ঠিক বলেছেন, চিরকার তাঁরা কিশোর যুদ্ধা হয়ে থাকুক।
রুম্পা রুমানা
আপনার আগ্রহ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তবে না লিখবো আরও । দেরীতে জবাব দেয়ার
জজন্য ক্ষমা চেয়ে নিলাম।
অলিভার
শুধু বিজয়ের মাসেই নয়, বরং সকল সময়ের জন্যেই ওয়াকি টকি এবং সকল মহান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা থাকল।
ছোট করে নিয়মিত যদি এমন যোদ্ধাদের খবর, তাদের যুদ্ধের ইহিতাস আর ছোট ছোট করে তাদের মিশন গুলি সম্পর্কে লেখা হতো তবে অনেকেই উপকৃত হতো।
ধন্যবাদ চমৎকার এই আর্টিকেলটি আমাদের সাথে শেয়ার করবার জন্যে 🙂
রুম্পা রুমানা
আপনার আগ্রহ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তবে না হয় লিখবো আরও । দেরীতে জবাব দেয়ার
জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলাম।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
শ্রদ্ধা তাদের তরে।
দেশের স্বাধীনতায় যে কত মানুষের ত্যাগ তিতিক্ষা জড়িয়ে আছে।
রুম্পা রুমানা
বিনম্র শ্রদ্ধা তাদের তরে। আপনাকে ধন্যবাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহঙ্কার আর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের বাঙ্গালীদের গর্ব।
আরোও লিখুন। যখন এসব পড়ি রক্ত গরম হয়ে যায়। মনে হয় কেন ওই সময়ে আমি ছিলাম না?
রুম্পা রুমানা
লিখবো আপু। আপনারা পড়লে আমার লেখা উচিত। আপনিও মজাদার রেসিপি দিন । রন্ধন শিল্প সমৃদ্ধ হোক।