আজকে ফেসবুকে জিসান ভাইয়ের একটা পোস্ট পড়ে একটা ভাবনা মাথায় এলো। যদি প্রশ্ন করি যে ক্লাস ওয়ানের একটা ছেলেকে কেউ কি কোয়ান্টাম বলবিদ্যা শেখাতে পারবে? জানি অল্প/ বেশি/ শুন্য জ্ঞানী সবাই একবাক্যে উত্তর হিসেবে “না”-ই বলবেন! তেমনি আমাদের মুক্তমনারা আবহমানকাল ধরে বেশিরভাগ ধর্মের প্রতি অনুরক্ত এবং কিছু কিছু ধর্মান্ধ মানুষকে রাতারাতি ধর্মহীনতা বোঝাতে উঠে পড়ে লেগেছেন! তারা তা না বুঝলে তাদেরকে এবং তাদের ধর্মকে শ্লীল/ অশ্লীল ভাষায় উপহাস করছেন/ গালাগাল করছেন! ফল হচ্ছে সহনশীলতার বদলে পুরো ব্যাপারটাই চলে যাচ্ছে সংঘাতের দিকে! তাতে কাজের কাজ কিছু তো হচ্ছেই না, বরং যে উদারপন্থী বিশ্বাসী, সেও উগ্রবাদীদের পক্ষে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানসিকভাবে ঝুঁকে পড়ছে!

 

এ প্রসঙ্গে আমি আমার অবস্থানটা ব্যাখ্যা করি! আমি ধর্মে বিশ্বাসী (যদিও ধর্মের সব বিধি-বিধান পালন করা সব সময়ে হয়ে ওঠেনা)! এবং আমি কোনো কারনকেই, আই রিপিট- কোনো কারনকেই একটা মানুষকে কুপিয়ে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট মনে করিনা! সেই সাথে যুক্তি ব্যবহার করে, শালীন ভাষায় যে কোনো মত প্রকাশের স্বাধীনতায় প্রবল বিশ্বাসী!

 

সেই আমিও কিছু মানুষের (উভয় পক্ষেরই) যুক্তি বিবর্জিত, কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে সম্পূর্ণ না জেনে, আংশিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে বা অন্য কারো মাধ্যমে পাওয়া অসম্পূর্ণ/ আংশিক তথ্যের উপর নির্ভর করে করা আক্রমনাত্মক, অন্ধ বিদ্বেষমূলক লেখা মন্তব্য পড়ে অস্বস্তি অনুভব করি! প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে চাই যে আজকের মুক্তচিন্তার অনুসারিরা প্রায়ই ইতিহাসের পাতা থেকে উগ্র ধর্মান্ধদের হাতে গ্যালিলিও এবং অন্যান্য মুক্তচিন্তা প্রচারকদের করুন পরিনতির কথা প্রচার করেন! তাদেরকে আমি জিজ্ঞেস করতে চাই যে, তারা কি কেউ এদের একজন কর্তৃকও লেখা/ বলা ধর্মের বিরুদ্ধে অশ্লীল, আক্রমণাত্মক কোনো বক্তব্যের প্রমান দিতে পারবেন? বরং আমি জানি যে এঁরা হয় জ্ঞান প্রচার করতে গিয়ে বা যুক্তি দিয়ে ধর্মের অসংগতিগুলো প্রচার করতে গিয়ে নানা বিরোধীতার/ আক্রমণের শিকার হয়েছেন! তাই তাঁদের উপরে আক্রমণের দায় পুরোপুরিই ধর্মব্যবসায়ী পুরুতচক্রের উপর বর্তায়! কিন্তু আজকের বাংলাদেশের মুক্তচিন্তার অনুসারীদের ক্ষেত্রে কি একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়?

 

মুক্তচিন্তার উদ্দেশ্য নিশ্চয় মানবকল্যান, শান্তি, সহিষ্ণুতা ও সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরী করা! এবং তারা তা করতে চান জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে! অন্যদিকে প্রত্যেক ধর্মেরও মূল উদ্দেশ্য কিন্তু এগুলো! তবে ধর্মানুসারীরা তা করতে চান ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা ও ধর্মের রীতি নীতি পালনের মাধ্যমে! উদ্দেশ্য অনেকটা এক হলেও উভয়পক্ষের কিছু সংখ্যক উগ্র, অন্ধ বিদ্বেষী মানুষের কারনে সেই উদ্দেশ্যই ব্যাহত হচ্ছে!

 

মনেপ্রানে কামনা করি আমার এ দেশ মুক্তি পাক সবরকমের উগ্রতা, কূপমণ্ডুকতা আর অন্ধ বিদ্বেষ থেকে! এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমরা যারা নিজেদের মডারেট (যারা প্রতিনিয়ত গালি খাই উভপক্ষের উগ্রপন্থীদের কাছ থেকে) দাবী করি, তাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে!

 

৪৫০জন ৪৪৯জন
0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ