
মা…..
নিজ ভাবনা থেকে–পর্ব ২//
নজর লাগে কেমন করে বা নজর লাগলে কি ক্ষতি হয় জানার আগ্রহের চেয়ে, নজর ফিরিয়ে নেই বিনাবাক্যব্যয়ে। সন্তানের মঙ্গল কামনায়। আঙুল ছুঁয়ে থাকি, পায়ের দিকে তাকাই, লেপ্টানো ঘনকালো চুলগুলোর তাকিয়ে থাকি, পিট পিট করা চোখদুটোর কাঁপন দেখে অসম্ভব রকম অনুভূতির প্রকাশে ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে মহান স্রষ্টার দরবারে কৃতজ্ঞতা জানাই।
তিনদিন পরে জানতে পেরেছিলাম আম্মা’র আর্তচিৎকারের কারন। দীর্ঘ সময় কষ্টভোগ করার কারনে মেয়ে প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়েছে। মহান স্রষ্টার রহমত আর নাসিমা খালার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৫/২০ মিনিট পরে কন্যা আমার নিঃশ্বাস নিয়ে কেঁদে উঠেছে। আব্বা এবং মেজো চাচা ভোর রাতে গিয়ে ডাঃ আকছেদুর রহমানকে ডেকে এনেছিলেন।তিনিও ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন বেবির হার্টবিট পর্যবেক্ষণ করে। নার্স নাসিমা খালা আর ডাক্তারের মধ্যে ইশারায় কথা হয় সবার অগোচরে। আরো কিছু সময় পার হলে সন্তান অথবা মা, যে কোনো একজনকে হারতে হতো। প্রবাদ কথাগুলো কখনো বিফলের ফসল নয়….আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
দিনে দিনে মেয়ে আমার বড় হচ্ছে আমার ছায়ায়। প্রথম ঠোঁট বাঁকা করে হাসছে আমার চোখে তাকিয়ে, আম্মু বলে ডাকলে মাথা ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাত পা ছুঁড়ছে, অযথা কোনো কান্নাকাটি নেই, কোনোরকম বিরক্ত করা নেই। হামাগুড়ি দিতে শেখার পর তার কত কৌতুহল! এখান থেকে সেখানে ছুটছে। সারাক্ষন পেছন পেছন থাকতে হচ্ছে। কিছু একটা ধরে উঠে দাঁড়াতে চাওয়ার দিনটি স্মৃতী করে রেখেছিলাম দেবরের ক্যামেরায়। হাত ছেড়ে সেদিন সে হেসে কুটি কুটি কিছুসময় পরেই ধপাস করে বসে পরা, আবার উঠে দাঁড়াচ্ছে, আবার বসে পরছে আর খিলখিল করে হাসছে। ওর বাবা হাসছে,চাচা হাসছে,আমি হাসছি। তাঁর কাছে খাবার বলতে শুধু ফিডারের দুধ পছন্দ, খিচুড়ি,সুজি সেরেল্যাক তৈরী করে করে নষ্টই করতে হতো। আমার রাগ বেড়ে যেতে লাগলো।এটা সেটা ধরতে গিয়ে ভাঙতে শুরু করলো।আমি নির্দয় হতে লাগলাম। এতটুকু বাচ্চাটাকে একা সামলাতে আমার ধৈর্যও কখনো কখনো হেরে যেতো আমার রাগের কাছে। মেয়েটা ভয় পেতে শুরু করলো ধীরে ধীরে।
বাচ্চা সামলাতে সাধারনত অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয়। অতকিছু মাথায় আসবে কি করে তখন? সংসারে কতকিছুর প্রভাব পরে মনের ওপর! সব মিলিয়ে বিপরীত আচরন ভোগ করে অবুঝ শিশু। আট মাস বয়সে মেয়েটাকে নিয়ে, আমার নিজের অজ্ঞানতার কারনেই আবারো জীবনমৃত্যু’র মুখোমুখি হতে হলো।……….চলবে
২৪টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভীন
প্রথম সন্তানের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো সত্যিই অদ্ভুত সুন্দর। গুটি গুটি পায়ে সন্তানের বেড়ে উঠা সত্যিই অসাধারণ অনুভূতি।
আল্লাহ সহায় ছিলেন বলেই মা মেয়ে দু’জনেই আছেন।
দারুণ লিখেছেন আপু 😍
বন্যা লিপি
ভালো থেকো, সাবধানে থেকো ভালবাসা নিও।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
প্রথম হাসি, প্রথম কথা বলা, প্রথম দাঁড়ানো ইস্ কি সুন্দর অনুভূতি গুলো প্রকাশ করলেন। রাগটাকে সবসময় নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না এটাই স্বাভাবিক। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা
বন্যা লিপি
ধন্যবাদ ছোটদিভাই, ভালো থাকবেন, সাবধানে থাকবেন।
রেহানা বীথি
মা হওয়া সব নারীরই এক অনন্য অনুভূতি। আর প্রথম মা হওয়া, এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আপনার লেখা পড়ে স্মৃতির পাতায় হারিয়ে গেলাম। ভালো থাকুন সবসময়।
বন্যা লিপি
ভালো থাকুন সবসময়।সাবধানে থাকুন।শুভ কামনা সবসময়।
নীরা সাদীয়া
আমার জন্মের পর আমি কি কি করেছিলাম, তার গল্প আমার মাও ঠিক এভাবেই করে। আমি যেহেতু ১ম সন্তান তাই আমার স্মৃতিগুলো মনে বেশি করে গেঁথে আছে।
বন্যা লিপি
আমিও কিন্তু আমার মায়ের প্রথম সন্তান,আমারো প্রথম সন্তান কন্যা।
একেকজন মেয়ের কাছে একেকরকম এ অনুভূতি। এই অনুভূতি প্রকাশ করার ইচ্ছে হবার পেছনে কারন আছে হয়তো। সামনের পর্বগুলোতে জানা যাবে ধীরে ধীরে।
ভালো থাকবেন সবসময়।
সুপায়ন বড়ুয়া
“আট মাস বয়সে মেয়েটাকে নিয়ে, আমার নিজের অজ্ঞানতার কারনেই আবারো জীবনমৃত্যু’র মুখোমুখি হতে হলো।……….চলবে”
আবার কি হলো ?
বিপদ কাটিয়ে উঠুন ! শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
অপেক্ষা করুন দাদা, সামনে জানা যাবে।ভালো থাকবেন সবসময়।
ফয়জুল মহী
ভালো লাগলো । ঘরে থাকুন। ভালো থাকুন।
বন্যা লিপি
অভ্যস্থ্যতায় ঘরেই থাকা হয়। প্রয়োজনেও ঘরের বাইরে যাবেন না। ভালো থাকুন, সাবধানে থাকুন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
মা মা আধো আধোভাবে ডেকে উঠা সন্তান ধীরে ধীরে বড় হতে চলছে।
এক অনন্য অনুভূতির প্রকাশ দিদি।
বন্যা লিপি
ধীরে ধীরে নিজ সন্তানকে বেড়ে উঠতে দেখা আর তা অনুভবে নিয়ে অনুভূতি প্রকাম করা…..আমার জন্য সহজ হচ্ছে না যদিও।শব্দেরা কখনো কখনো বেপাত্তা লাপাত্তা হয়ে যায়। সামান্য করে চেষ্টা করছি বলা যেতে পারে।থাকুক এখানে জমা।
ভালো থেকো দাদাভাই।সাবধানে থেকো।
জিসান শা ইকরাম
চোখের সামনে প্রথম সন্তান বড় হচ্ছে,
তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ,
আচার আচরণ সবই দেখা অদ্ভুত ভালোলাগার উপলব্দি থেকে।
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম,
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
ভালো থাকবেন,সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকবেন। শুভ কামনা।
এস.জেড বাবু
মা হতে পারার অনুভূতি যদি কোন সন্তান কোনদিন বুঝতো-
দুনিয়ার কোথাও হয়ত “বৃদ্ধাশ্রম” শব্দটা ব্যাবহার হতো না।
ভালো লাগছে আপনার অনুভূতি পড়তে- মায়া হচ্ছে দুনিয়ার সমস্ত মায়েদের জন্য।
চলুক এগিয়ে___
বন্যা লিপি
ভালো লাগছে আপনার অনুভূতি পড়তে- মায়া হচ্ছে দুনিয়ার সমস্ত মায়েদের জন্য।”
আপনার এই অনুভূতিটুকু সঞ্চিত থাকলে, অনাগত দিন আপনার জন্য সহজতর হয়ে উঠবে প্রার্থনা করি।
ভালো থাকবেন নিরন্তর।
এস.জেড বাবু
বিধাতা কবুল করবেন-
আমিন।
আপনিও ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
মায়ের সামনে ক্রমান্বয়ে বেড়ে ওঠা সন্তানের কাহিনী আমরা পড়ছি।
বন্যা লিপি
কৃতজ্ঞতা রইলো, আসবো পরের পর্ব নিয়ে জলদি।ভালো থাকবেন, সাবধানে থাকবেন।
হালিম নজরুল
সন্তানের সব প্রথমগুলোর অনুভূতিই অন্যরকম।
বন্যা লিপি
একদম ঠিক বলেছেন ভাই। ভালো থাকবেন সাবধানে থাকবেন।
তৌহিদ
সন্তান যখন মায়ের কোলে বড় হয় ক্রমান্বয়ে সাবলিল হতে শেখে তখন একমাত্র মা’ই স্বাক্ষী থাকেন তার এই বেড়ে ওঠার। অসাধারণ এক অনুভূতি পড়ছি। লিখুন আপু।