তখন আমি ক্লাস ফাইভ কি সিক্সে পড়ি। একদিন বিকেলে স্কুল থেকে ফেরার সময় একটা আমগাছের নিচে হালকা কালো নাকি ছাঁই রং এর একটা পাখির বাচ্চা পেয়েছিলা। স্কুল ব্যাগ কাঁধ থেকে নামিয়ে পাখির বাচ্চা টা কে নিয়েই লেগেছিলাম। পরে ওটাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে ছিলাম। ওকে পাওয়ার পরেই কি যেন একটা নাম দিয়েছিলাম এতো দিন পরে তা আর মনে পরছে না। সেই পাখিকে পেয়ে কি আনন্দেই না কেটেছিলো তার পরের কদিন। সে কি মায়া। একটু পরপর গিয়ে দেখে আসা,নিয়ম করে খেতে দেওয়া, স্কুলের সময় টুকু বাদ দিয়ে বাঁকি সময় টা তাকে নিয়েই আমার দিব্বি কেটে যেত। যে যা বলে তাই খাওয়াতাম। সে হোক না কেনো ভাত,চাল,মশা,মাছি বা ফরিং। একদিন বিকেলে দেখি দিব্বি হাটার চেষ্টা করছে। আর তার তার ঠিক পরের দিন সকালেই দেখি কোথায় যেন চলে গেছে।
সেই পাখির বাচ্চার শোক তো আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না।
তখন আমার এক ফ্রেন্ড বলেছিলো ” তোর পাখিটা আকাশে উড়ে বেড়াবে এতে অখুশি হচ্ছিস কেন, ওদের জন্মই তো হয়েছে ওড়ার জন্য। তুই চাইলেই কি তাকে ধরে রাখতে পারবি?”
এরপর পাখির মায়া আমায় ছুতে পারেনি কোন দিন।
কিন্তু আজ বিকেলে যখন সিমেন্টের ব্রেঞ্চে একা একা বসে বিড়াল গুলোর খেলা দেখছিলাম, হঠাৎ করেই যেন আমি আবার সেই স্কুল লাইফে ফেরত চলে গেলাম। চোখের ডান পাশ দিয়ে কি যেন একটা নড়াচড়া দেখে পাশ ফিরলাম। ময়লা ফেলে ফেলে জায়গা টা এখন দেখতে ডাস্টবিন মনে হয়। এটার একপাশে একটা সজনে গাছ। গাছে অনেক গুলো কাক আর ময়লার স্তুপটার পাশে দুটা বিড়াল এক কদম সামনে যায় তো দু কদম পিছনে ফিরে আসে বিষয় টা ঠিক ধরতে পারছিলাম না। এবার একদম ময়লার স্তুপের দিকে ফিরে বসলাম। কিছু একটা দেখতে পাচ্ছি। ধুসর রং হওয়ার বুঝতে পারছিনা। সাহস করে কাছে গেলাম। কি মায়া মায়া দুটো চোখ তার। বেশ বড়( সম্ভবত হুতুম প্যাঁচা কি লক্ষীপ্যাঁচা)। কিন্তু ডানা দুটো ঝাপটানো আর ঠোট হা করে ভয় দেখানো ছাড়া একচুল নড়তে পারছেনা।কিছু একটা হয়েছে এবং সেটা পায়ে। আমি খুব বুঝতে পারছি ওকে রেখে চলে গেলে মাত্র কয়েক মিনিট লাগবে ওর বিড়াল আর কাকের খাদ্যে পরিনত হতে। সাহস করে একটা ডানা ধরে ডাস্টবিন থেকে তুলে নিয়ে এসে পরিস্কার জায়গায় রেখে দিলাম। মাথায় হাত বুলালে দেখি ঘুময়ে পরছে। অনেকেই ছবি তোলার জন্য পাগল হয়ে গেছে দেখে আমার ফ্ল্যাট এ নিয়ে আসলাম। বেশ কজন মিলে ওকে ভালো করার চেষ্টা করেছি। তারপরে আমার রুমের সামনে যে ফাকা জায়গা টা আছে সেখানে রেখে দিয়েছি। কিন্তু মনে হচ্ছে বাঁচানো যাবে না।
আমার মনে পরছে সেই ফ্রেন্ডের কথা।পাখিদের না আকাশে ওড়ার কথা? কিন্তু এই মায়া মায় চোখের পাখিটা মনে হয় না আর উড়বে! হয় তো কাল সকালেই দেখবো সে আমায় ছেড়ে চলে গেছে। আমায় শোকে ফেলে। আবার আমার সেই ফ্রেন্ডটাও আমায় ছেড়ে চলে গেছে প্রায় ছ’বছর হলো। আমি তাকে ধরে রাখতে পারি নি 🙁
২৮টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
আমারও একটা পাখি আছে
আমার পাখির দিকে আবার নজর দিয়েন না।
পড়িনি পোষ্ট
ভোরে পড়বো।
মেহেরী তাজ
না আমি আপনার পাখির দিকে নজর দেবো না। পাখি বড্ড মায়ার জিনিস। আপনার টা আপনারই থাক।
মামুন
আমার মনে পরছে সেই ফ্রেন্ডের কথা।পাখিদের না আকাশে ওড়ার কথা? কিন্তু এই মায়া মায় চোখের পাখিটা মনে হয় না আর উড়বে! হয় তো কাল সকালেই দেখবো সে আমায় ছেড়ে চলে গেছে। আমায় শোকে ফেলে। আবার আমার সেই ফ্রেন্ডটাও আমায় ছেড়ে চলে গেছে প্রায় ছ’বছর হলো। আমি তাকে ধরে রাখতে পারি নি – কষ্ট পেলাম জেনে।
মেহেরী তাজ
কষ্ট পাবার মতই ভাইয়া। তবে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করি।
শুন্য শুন্যালয়
সব মায়াকে ফেলে রেখেই সবাই হারিয়ে যায় আপুনি। পাখি বিধাতার অপূর্ব এক সৃস্টি, এদের সৃষ্টিই হয়েছে মায়ায় বাঁধতে। গুলতি দিয়ে না মেরে ফেলে, এই মায়া বুঝে নিতে পারাই আনন্দের। তোমার বন্ধুটিও উড়ে গেছে, কষ্ট নিওনা, এটাই নিয়ম।
তুমিও খুব মায়ার একজন, লেখা পড়লেই বোঝা যায়।
মেহেরী তাজ
কোথা থেকে যে হারিয়ে যাওয়া মায়াগুলো সামনে আসে ঠিক বুঝতে পারিনা। কষ্ট না নেওয়ার চেষ্টা করি।
ছাইরাছ হেলাল
জোর করে কোন কিছুই আটকে রাখা যায় না। যে যেতে চায় তাকে যেতে দিতেই হয়।
মেহেরী তাজ
ধরে রাখার চেষ্টা করিনি ভাইয়া। শুধু স্মৃতিচারন করে হলকা হওয়ার চেষ্টা করেছি।
কৃন্তনিকা
মন খারাপ হয়ে গেল…
মায়া বড্ড খারাপ জিনিস… শুধু কষ্ট দেয়…
মেহেরী তাজ
হ্যা মায়া বড্ড খারাপ জিনিস কারনে অকারনে কষ্ট দেয়।
বন্দনা কবীর
তুমি সোনেলায় লিখছ দেখে ভাল লাগলো।পাখির মায়া আসলেই সাংঘাতিক।আমি তো একসময় একটি বিশাল পেঁচা পালতাম।এখন আর নেই।মায়ারা আসলে দূরে চলে যায় কিভাবে যেন।আরো বেশি বেশি লেখ তাজ,ভাল করতে পারবে।
মেহেরী তাজ
আমি সোনেলায় লিখছি পরোক্ষভাবে আপনারই জন্য। এত্তগুলা ইন্সপিরেশনের জন্য এত্তগুলা ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂
হুতুম প্যাঁচার চোখ গুলো আমার খুব ভালো লাগে।
আমি লেখার চেষ্টা চালিয়ে যাবো আপু। 🙂
খেয়ালী মেয়ে
খাঁচার পাখির প্রতি একটা সময় আমার অনেক নেশা ছিলো–আমাদের বাসায় কয়েক ধরনের পাখি ছিলো–এ কথাটা কারো অজানা ছিলো না যে, আমি পাখি প্রেমে মত্ত–ছোট্ট জীবনে পাখি আমি গিফট হিসেবেও পেয়েছি—কিন্তু যখন আমার এক ভাইয়া আমাকে বললো যে খাঁচার পাখিরা কেনো মরে যায় তুমি জানো?..তখন অব্দি এবিষয়টা আমার কাছে ওতটা সিরিয়াস ছিলো না—ভাইয়া আমাকে একটা গল্প শুনালো পাখির জীবনী নিয়ে–যে গল্পটাতে আমি জানতে পারি পাখিরাও নাকি আত্মহত্যা করে, এমন আরো অনেক তথ্য যা আমার কাছে আগে কখনো গুরুত্ব পায়নি….কিন্তু ভাইয়ার কথাগুলো আমার মনকে নাড়া দিয়েছিলো—বন্দী পাখিগুলোর জন্য অনেক মায়া হয়েছিলো–নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়েছিলো..ঐদিনই আমি আমার পাখিগুলোকে মুক্ত করে দিয়েছিলাম–এরপর এই পর্যন্ত আর কখনোই আমি পাখি খাঁচায় বন্দী করার মতো অন্যায় কাজটা করিনি…
মনে খারাপ করার কিছু নেই আপু, মায়ার পাখিটা তার নিজ ভুবনে অনেক ভালো আছে, এ কথাটা মনে করে প্রাণ খুলে হাসো….
মেহেরী তাজ
বলেন কি আপু? পাখিরাও আত্মহত্যা করে?
আমি খাঁচায় পাখি পালন মূলত অপছন্দই করি। সেই সাথে আবার যোগ হলো এই তথ্য।
এই কদিনে মন পুরপুরি ভালো হয়ে গেছে আপু। সারাদিন কিছু না কিছু নিয়ে হাসতেই থাকি।
জিসান শা ইকরাম
লেখা সম্পর্কে মন্তব্য আসলে সবাই করে ফেলেছেন।
আপনার মন আসলে বেশ নরমই বলা যায়
পাখি প্রেম থেকে বন্ধু হারানোর হাহাকার বেশ ভালভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন।
অত্যন্ত ভাল লিখেছেন এই লেখাটি।
মেহেরী তাজ
মন আসোলেই নরম কি না পরীক্ষা করে দেখতে হবে। :p
সঞ্জয় কুমার
লেখা পড়ে বোঝা গেল আপনি অনেক নরম মনের মানুষ । নরম মনের মানুষদের সবচেয়ে বেশী কষ্ট পেতে হয় । আমারও একটা লক্ষ্মী বেড়াল ছিল । কোন অভিমানে চলে গেছে জানি না । আপনার গল্প পড়ে ওর কথা মনে পড়ে গেল ।
আমাদের মিনি । পড়ে দেখতে পারেন https://sonelablog.com/archives/16501
মেহেরী তাজ
আমি আসোলেই কি নরম মনের মানুষ? সবাই তো উল্টো বলে।
আমি কিন্তু কষ্ট কম পাই। কারন অনেক কিছু আমি গায়ে মাখি না।
আপনার লিংক টার জন্য ধন্যবাদ। সময় নিয়ে এটি পরবো।
ব্লগার সজীব
এ এক নতুন ওস্তাদকে দেখছি আজ।মায়াময় ওস্তাদ।এত মায়া নিয়ে রুমমেটকে ভুতের ভয় দেখান কিভাবে?
মেহেরী তাজ
যার যা প্রাপ্য তাকে তা দিতে হয়। আমি আমার রুম্মেট কে ভয় দেখাই বলে তাকে ভালোবাসি না তা কিন্তু নয়। ভয় দেখানোর সময় ভয় দেখানো অন্য সময় অন্য কিছু।
লীলাবতী
তুমিও একটি মায়ার পাখি তাজ।কত সুন্দর ভাবে মায়ার কথা লিখলে।
মেহেরী তাজ
ও লীলাবতী আপু আপনার মন্তব্যে দেখি আমার লেখার চেয়ে বেশি মায়া।
নুসরাত মৌরিন
আহ্ আপু,মনটা ভিজে গেল।
পাখিটা কি আর আকাশে উড়েছে নাকি অন্য ভুবনে পাড়ি জমিয়েছে?
মেহেরী তাজ
আমি বোকা টা আপনার মন্তব্য দেখছি এতো পরে। 🙁
পাখিটা পরদিন সকালেঈ আমায় ছেড়ে চলে গেছে। ;(
আশা জাগানিয়া
খুবই ভালো লিখেছেন।আবেগের সুন্দর প্রকাশ।নতুন লেখা দিন আপু।
মেহেরী তাজ
আপু আমি নিয়মিত লিখছি। আপনি কোথায় হারালেন???
অরুনি মায়া
হুম পাখি বড্ড মায়ার জিনিস,,,,,
কেও একজন আমায় ডাকত বুলবুলি বলে,,,,,
মেহেরী তাজ
বুলবুলি “? সুন্দর তো। এখন আর ডাকে না? কেনো?