দোকানের ছেলেটা এল। ওর হাতে সব কিছু দিয়ে আমি আর মেজ কুটুম টেকনাফ বাস স্ট্যান্ডের দিকে চলে এলাম। এখানে একটা ট্যাক্সিতে উঠলাম । সিএনজি চলতে শুরু করল। টেকনাফ শহর ছেড়ে সিএনজি চলতে চলতে পিচ ঢালা পথ বেয়ে উচু দিকে উঠতে লাগল ।
এই রাস্তাটা পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে। সিএনজি উঠতে উঠতে যখন উপরের সমতলে চলে এল তখন প্রকৃতির রুপের ছটায় আমার ভ্রমন ক্লান্ত মনটা মুগ্ধ হয়ে গেল। অন্তরের অন্তস্থল থেকে বের হয়ে এলঃ আলহামদুল্লিলাহ !! হে আল্লাহ কত সুন্দর আমার জন্মভূমি ! তুমি আমায় এই দেশে জন্ম দিয়েছ তাই আমি ধন্য।
ওখান থেকে দেখা যায়, পাহাড় হতে যেন সবুজের গালিচা গড়িয়ে গড়িয়ে নেমে গেছে নাফ নদীর রুপালি তটে । নদীর রুপালি তটও গড়িয়ে গড়িয়ে পড়েছে নদীর নীলাভ ঢেউয়ের বুকে । সেখানে বাতাস আর ঢেউয়ের কত অজানা কানাকানি । নদীর পাড়ের কাছাকাছি ছোট ছোট নৌকা নিয়ে জেলেরা মাছ ধরছে।
নাফের ঐ পাড়ে মায়ানমার সীমান্তে গাঢ় সবুজ পাহাড় যা দেখতে অনেকটা কালচে রং এর মনে হয় । বিশাল উচু উচু সব পাহাড়। দেখে মনে হয় একজন আরেকজনের কাধেঁ হাত রেখে দাড়িয়ে টেকনাফের পাহাড় গুলোর সাথে আড্ডা মারছে । মাথায় তাদের ছাই রংয়ের মেঘের টুপি । হয়ত সেই টুপি থেকে ঝরঝর বৃষ্টি হছ্ছে । এতদুর থেকে দেখা যাছ্ছে না।
সোজা বন্দরে চলে এলাম । সিএনজি থেকে বন্দরের দিকে প্রবেশ করতেই গেটের ভিতরে একটা ওয়াচ ঘর । সেখানে পাচজন বর্ডার গার্ড বসে আছে । তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ, দুইজন তরুনী । পুরুষরা আগতদের সাথে কথা বলছে তথ্য লিখছে । তরুনীদ্বয় বর্ডার গার্ডের পোষাক পড়ে শোভা বর্ধন করছে অর্থাৎ বসে আছে। মেজ কুটুম ওর পাসপোর্ট দিল। বর্ডার গার্ডরা পাসপোর্ট থেকে তথ্য লিপিবদ্ধ করে নিল। মেজ কুটুম এবার আমার ভোটার আইডি কার্ড ও ছবিগুলো দিল ।
ওরা বললঃ নতুন?
ঃহ্যাঁ ।
আমার দিকে তাকাল তারপর তথ্যগুলো লিখে আমাকে জিজ্ঞাসা করলঃ বাড়ি কোথায় ?
বললাম।
ঃ নাম কি ?
ঃ বললাম।
এরপর আর কিছু জিজ্ঞাসা করল না । আমার জন্য নতুন পাসপোর্টের বই দিয়ে দিল। বইটা এখনও পাসপোর্ট হয়নি। এবার আরও সত্তর গজের মত ভিতরে গেলাম। হাটতে হাটতে মেজকুটুম বললঃ আপনার ভাগ্য ভাল মাঝে মাঝে এখানে এমন কতগুলো বসে , অসম্ভব কর্কশ ভাষী ।
আমি মুখে কিছু বললাম না । মনে মনে বললাম সীমান্ত প্রহরীদের ব্যাপারে হযরত ইব্রাহীম আলাইহী ওয়াসাল্লামও মন্তব্য করেছেন । কারণ বিবি সায়রাকে নিয়ে তিনি যখন মিশর সীমান্ত পার হছ্ছিলেন তখন এই সীমান্ত প্রহরীরা উনাকে বিপদে ফেলেছিল ।
এখানে একটা বিল্ডিং দুই তলা । প্রবেশ করলাম । ভিতরে তিনজন লোক বসা । মেজ কুটুম একজনকে কাগজ পত্র সব দিল । যাকে দিল দেখলাম সে মেজকুটুমের সাথে খুব আন্তরিক ভাবে কথা বলছে। এমনকি নাম ধরেও ডাকছে । বুঝতে পারলাম এখানে মেজ কুটুমের সাথে সবার সম্পর্কটা ভাল । লোকটি বলল ঃ ইনি তোমার কে হন ?
ঃ আমার বড় বোনের স্বামি।
শুনে লোকটা উৎফুল্ল হয়ে বললঃ দুলাভাই !!
আমাকে জিগ্গাসা করলঃ কি দুলাভাই বেড়াতে যাবেন ?
আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম।
যাই হোক এখানে দ্রুত সব কিছু হছ্ছিল । পাসপোর্ট বাবদ এক হাজার টাকা জমা দিতে হল। এই পাসপোর্টের মেয়াদ এক বৎসর । এখান থেকে মায়ানমারের ভিসা দিবে সাত দিনের । এই ভিসা নিয়ে মায়ানমার গেলে মায়ানমার সরকার ভিসা দিবে মাত্র তিন দিনের ।
এরপর আমার আর মেজ কুটুমের ছবি কম্পিউটারে তুলে নিল।
মেজ কুটুম বললঃ আগেত ছবি নিতেন না ।
ঃ একটু ঝামেলা হয়েছে তাই নতুন নিয়ম করেছে।
যাই হোক আমার অপূর্ব সুন্দর মায়াবী (??! ) চেহারা খানা ওদের কম্পিউটারের মেমোরিতে রেখে আমরা ঘাটের উদ্দেশে রওয়ানা হলাম । ঘাটে পৌছার আগেই বিল্ডিং এর পিছনের গেটের সামনে এক লোক টিকিট হাতে দাড়িয়ে আছে। মেজকুটুম ওর কাছ থেকে দুইটা টিকিট নিল।
মেজ কুটুম বললঃ মায়ানমার যেতে একবারই টিকিট কাটতে হয় । এটাই আসা-যাওয়ার টিকেট। একটু তাড়াতাড়ি হাটেন । বোট বোধহয় ছেড়ে দিছ্ছে ।
আমরা দ্রুত পদক্ষেপে প্রায় দুইশ গজ পরে বোটের সামনে এসে দাড়ালাম। এখানে আরেকজন লোক আমাদের টিকেটের একটু করা অংশ ছিড়ে নিয়ে নিল।
আমি বোট দেখে মুগ্ধ !! আমি আগে ও দেশ ছেড়ে বিদেশ গিয়েছি। তখন গিয়েছি ওমান এয়ার লাইন্সে এসেছি গালফ এয়ারে । আহ !! কি আরামের ভ্রমন ! কিন্ত এখানে !!! বিদেশ যাওয়ার একি বাহন !! যাব না পালাব ভাবছি ।
এই সময় মেজ কুটুম বললঃ কি হল উঠুন । বোট ছেড়ে দিছ্ছেত ।
ওর কথার তাগাদায় আমি চমকে কখন যে নাফ ওয়াটার ওয়েজে উঠে গেছি নিজেই জানিনা। উঠে কাঠের পাটাতনে বসলাম । আমি একটু মোটাসোটা মানুষ । ওজন ৭৬ কেজি । তাই বসতে একটু কষ্ট হছ্ছিল । মেজ কুটুম আমার আশেপাশে জায়গা পেলনা তাই একটু দুরে বসল।
এই বোট দিয়ে মানুষ টানে আবার মালও টানে । বোটের মধ্যেখানে খোলের মত আছে । মাল টানার সময় সেখানে মাল নেয় । মানুষ পারাপাড়ের সময় নারী ও শিশুদের ওখানে বসানো হয়। আমি যেখানে বসেছি তার সামনে বোটের ইন্জিন । ইন্জিন হতে প্রায় চার-পাচঁ হাত দুরে , আমার পিছনে বোটের সারেং দাড়ায় । অর্থাৎ যার হাতে বোটের হাল থাকে । বোটটাকে মুলত সেই চালায় । ইন্জিনের কাছে ছোট্ট একটা ছেলে বসে থাকে । বয়স এগার হতে তের বছর হবে । ছেলেটির কাজ হল ইন্জিন স্টার্ট দেওয়া , গিয়ার বদলানো, বোটের গতি বাড়ানো কমানো আর বোটের খোলের ভিতর পানি জমলে সেই পানি তুলে নিয়ে নদীতে ফেলা ।বোট ছিল নারী-পুরুষ আর দুইটি শিশুতে ভর্তি । বোট ছেড়ে দিল । আমারও বারটা বাজা শুরু হল। ইন্জিনের এমন ভটভটি আওয়াজ আমার কানের পর্দা যায় যায় অবস্থা। বোটটা এমন ভাবে মানুষে ভর্তি যে নড়াচড়ারও জায়গা নাই । কি আর করা কোন প্রকারে সহ্য করে থাকতে হল।
আকাশটা মেঘলা তাই রোদের তাপ নাই। নদীর বাতাস একটু গরম। মাঝে মাঝে হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হছ্ছে। বোট দ্রুত গতিতে মাঝ নদীতে প্রবেশ করল । টেকনাফ অনেকটা পিছনে চলে গেছে ।
আমি আকাশের দিকে তাকালাম । সামনে একটা ঘন কালো মেঘের আস্তর দেখে মনে মনে কিছুটা শঙ্কিত হয়ে, মেজ কুটুমকে জিগ্গাসা করলাম ঃ ছাতি এনেছ ?
ও আকাশের দিকে তাকিয়ে বললঃ না আনিনি । আপনি চিন্তা করবেন না বৃষ্টি পড়লে ছাতির ব্যাবস্থা হয়ে যাবে।
ওর কথায় আশ্বস্থ হয়ে চুপ হয়ে গেলাম। বোট এগিয়ে চলছে। আমি কতক্ষন নদীর ঢেউ গুনি কতক্ষন খোলের ভিতর এক বোরকা পড়া এক সুন্দরী মেয়ের কান্ড কারখানা দেখি। সুন্দরী মেয়েদের বয়স আন্দাজ করা কঠিন তাই ঐ কঠিন অংকে গেলাম না । পাঠক-পাঠিকারা যার যার মত বয়সটা কস্ট করে ধরে নিবেন । যদিও আপনাদের কষ্ট দেওয়ার জন্য দুঃখিত।মেয়েটি তার সামনে বসা চার বছরের একটি বাচ্চা মেয়ের সাথে খুটসুটি করছিল । সুন্দরীর আর বাচ্চা মেয়েটির খুনসুটি বোটের সবাই মিলে উপভোগ করছি আর মায়ানমারের দিকে এগিয়ে চলছি । যদিও বোটের মুখ এখন পর্যন্ত সমুদ্রের দিকে, তাই বাম পাশে মায়ানমার এখনও আনেকটা দুরে ।
প্রায় পৌনে এক ঘন্টা পর আমারা বৃষ্টির কবলে পরলাম । হঠাৎ ভারী বর্ষনে ছাতি নিতে নিতে আমরা বোটের সবাই অর্ধেক ভিজে গেছি। মেজ কুটুম তার ব্যাবসায়িক বন্ধুর ব্যাগ হতে একটা সুন্দর লেডিস ছাতি বের করে দিল। ছাতি ওয়ালা বেচারা মনে হয় ব্যাবসার জন্য ছাতিখানা স্যাম্পল হিসেবে মায়ানমার নিয়ে যাছ্ছিল । ছাতি পেয়ে মোটামোটি বৃষ্টির হাত থেকে আমি সহ কয়েকজন রক্ষা পেলেও মেজ কুটুমসহ বেশির ভাগ যাত্রীই ভিজে গেল। ছয়-সাত মিনিট পরই বৃষ্টি চলে গেল । ছাতি বন্ধ করে রাখলাম। এরপরই এমন রোদ উঠল যে ছাতি আবার খুলতে হল।
প্রায় দেড়ঘন্টা পর হঠাৎ বোট তার মুখ ঘুরিয়ে বামে মোড় নিল । এবার আমাদের বোটটি বড় নাফ নদী ছেড়ে ছোট একটা খালে প্রবেশ করল । খালে প্রবেশ করা মাত্র আমরা মায়ানমার সীমান্তে ঢুকে গেলাম । খালের দুই পাশে তাকালাম। বোটের ডান দিকে অর্থাৎ সুমদ্রের দিকে একটু খানি এলাকা । ঐ এলাকা পুরাটাই প্রায় পনের ফুট উচু কাটা তার দিয়ে ঘেরা । বেশ কিছুদিন আগে মায়ানমারে যে সাম্প্রদায়ীক দাংগা হয়েছিল, তখন মুসলমান রোহিংগা যারা আকিয়াব ( মায়ানমারের সীমান্ত প্রদেশ । সীমান্ত থেকে প্রায় তিন মাইল দুরে । ) থেকে নৌকা করে পালিয়ে এসেছিল তারা যেন আবার মায়ানমারে ঢুকতে না পারে তাই এই ব্যাবস্থা । দেখে আমার চোখ ছলছল করে উঠল। না জানি কত অসহায় মুসলমান ভাই বোনেরা সারারাত ঐ কাটা তার ধরে দাড়িয়েছিল আর দুই চোখের নোনা জল ফেলে কতই না কাকুতি মিনতি করেছিল মগাদের কাছে একটু আশ্রয় আর খাবার পানি পাওয়ার আশায়। বাংলাদেশেও তারা আশ্রয় চেয়েছিল । আমাদের পাষান হৃদয় তাদের আশ্রয় দিতে পারিনি । আমরা দিতে না পারলেও দয়ালু নাফ নদী তার বুকে অনেককেই আশ্রয় দিয়েছে। জানি না কাল কেয়ামতের মাঠে কি জবাব দেব মহাপরাক্রান্ত আল্লাহ তালার কাছে।
বাম দিকে তাকালাম দেখলাম বিশাল প্রান্তরে শুধু একটা সেমিপাকা ঘর তার পাশে বৌদ্ধদের উপসনালয়।
সোনালী রংয়ের ছটায় জ্বলজ্বল করছে । দেখে মনে হয় এইমাত্র রং করেছে।
আস্তে আস্তে বোট মায়ানমার বন্দরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল । খালের মুখ হতে মায়ানমার প্রায় তিন-চারশ গজ দুরে হবে। কিছুক্ষনের মধ্যে আমাদের বোট মায়ানমার বন্দরে ভিড়ল । আমারা সবাই নামলাম। বন্দরে সব মগা জাতির লোক । তাদের পরনে বেশির ভাগেরই স্যান্ডো গেন্জি । আমি আস্তে আস্তে উঠতে লাগলাম। এই সময় বন্দরের এক মগা অফিসার ইশারায় আমার মাথা টুপিটা খুলে ফেলতে বলল । এক প্রকার অপমানিত বোধ করে টুপিটা খুলে ফেললাম । যেই দেশে যেই নিয়ম । মানতেত হব । ওখানে এক মধ্যে বয়স্ক এক অফিসার আছে সে আমাদের দাড়িয়ে থাকতে দেখে বসতে বলল। তার সাথে পানের কৌটা ছিল সেখান থেকে আমাদের পান খাওয়ার জন্য অনুরোধ করল। আমি সবিনয়ে উনার মেহমানদারী প্রত্যাখ্যান করলাম। এখানে সবাই প্রচুর পান খায় । একটার পর একটা পান মুখে দেয় । পানের সাথে প্রচুর পরিমানে চুন খায় । মেজ কুটুমকে জিগ্গাসা করলামঃ ওরা যে এত চুন খায় ওদের জিহ্বা পুড়ে যায় না ?
ঃ না ওদের জিহ্বা পুরে না। ওরা চুনের মধ্যে কি যেন মিশ্রিত করে চুনটা এক ধরনের মিষ্টি হয়ে যায়।
বন্দর অফিসাররা আমাদের পাসপোর্ট ভিসা চেক করল। তারপর জিজ্ঞাসা করল কোন হোটেলে উঠব?
মেজ কুটুম হোটেলের নাম বলল। আমি অবাক হয়ে মেজ কুটুমের দিকে তাকাতেই সে বললঃ এখানে কোন মেহমান বা বিদেশি এখানকার কোন স্থানিয়দের বাসায় রাত্রি যাপন করতে পারেনা। অতিথিদের রাতে হোটেলে থাকতে হয় । আর এখানকার ভিসা তিনদিনের । তিনদিনের ভিতর আপনি যদি ফেরৎ না যান তাহলে এখানকার নাসাকা বাহিনী আপনাকে হোটেল থেকে খুজে এনে বোটে তুলে দিবে ।
এখানকার কাজ শেষ । আমরা এগিয়ে গেলাম সেখানে লম্বা একটা কামরায় প্রবেশ করলাম । এখানে আমাদের ফটো তোলা হবে। আমরা প্রবেশ করতেই দেখি সেই সুন্দরী মেয়েটির ভাই উত্তেজিত ভাবে কথা বলছে। আর সেই মেয়েটি মেয়েদের চেক করার ছোট্ট একটি রুমের দরজায় দাড়িয়ে হাসছে।
মায়ানমারের এক মগা মহিলা অফিসার । তার পরনে সাদা ফুল হাতা জামা আর কালচে সবুজ রংয়ের থামি ( লুংগীর মত ।)। মগা মহিলাটি মেয়েদের দেহ চেক করে। সে দোভাষীকে উত্তেজিত ভাবে কি যেন বলছে। দোভাষি যখন অনুবাদ করে মেয়েটির ভাইকে বোঝাছ্ছিল তখন বুঝতে পারলাম ঘটনাটা কি ?
দেহ তল্লাশী করার জন্য যখন মায়ানমারের মহিলা সুন্দরী মেয়েটিকে রুমে নিয়ে যাছ্ছিল, তখন তার ভাই বাধা দিয়েছিল। ভাইটির বাধা দেওয়াটা কিছু বাড়াবাড়ি ধরনের হওয়াতে, মায়ানমারের মহিলাটি ক্ষেপে গিয়েছে। মায়ানমারের মহিলা দোভাষীকে বললঃ যে দেশের যে নিয়ম তা পর্যটকদের মানতে হবে। তানা হলে সেই দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না ।
দোভাষী কথাটা অনুবাদ করে ছেলেটিকে বলল। ছেলেটির বড় বোনের স্বামি ওদের সাথে ছিল । সে ছেলেটিকে ধমক দিয়ে মায়ানমারের মহিলার কাছে ক্ষমা চাইল । তারপর সব কিছু স্বাভাবিক হলে এল । আমি মনে মনে ভাবলাম এইসব মূর্খদের কে বলেছে এখানে আসতে ।
আমারা ওখান থেকে বের হওয়ার পর মেজ কুটুম বললঃ মাথায় টুপিটা দিয়ে দেন । আর হোটেলে যাওয়ার জন্য রিক্সা নেব না হেটে যাবেন ?
আমি বললামঃ এখানে রিক্সা কোথায় ?
মেজকুটুম হাসতে হাসতে বললঃ এই আপনার পাশেই দাড়িয়ে আছে ।
আমার দুই ঠোট ফাক হয়ে মুখে মাছি ঢোকার রাস্তা হয়ে গেল।
আমাদের দেশের বাই সাইকেলের পিছনের চাক্কার পাশে একটা গদির ফ্রেম করে তার সাথে আরেকটা চাক্কা লাগিয়ে এই রিক্সা বানানো হয়েছে । এই রিক্সায় দুইজন প্যাসেন্জার বসে । তবে বসাটাও অদ্ভুত একই সিটে দুই দিকে মুখ করে পিঠে পিঠ লাগিয়ে বসতে হয়। একজনের মুখ থাকে সাইকেলের সামনের দিকে আরেকজনের মুখ থাকে সাইকেলের পিছন দিকে।
আমি রিক্সা দেখে বললামঃ হোটেল কি বেশি দুরে নাকি ?
ঃ না , এইত কাছেই মোড়টা ঘুরলেই পরে হোটেল।
আমরা হাটতে হাটতে হোটেলের দিকে চলতে লাগলাম।
চারদিকে দেখছি গাছগাছালীতে ভরপুর । প্রশস্ত রাস্তা । চারদিক পরিষ্কার পরিছ্ছন্ন । তেমন মানুষ জন নাই । মায়ানমারের সীমান্ত শহর । নাম মোংডু । কত সুন্দর পরিকল্পিত ভাবে তৈরী না জানি রাজধানী কত সুন্দর ।
আমরা বাংগালীরা এই বাংলাদশে চার হাজার বছর ধরে আছি। আমরা বলতে গেলে প্রাচীন জাতিদের মধ্যে একটি । কিণ্তু আমরা এই চারহাজার বছরেও অন্যান্য জাতিদের মত পরিকল্পিত ভাবে নাগরীক কাঠামো গড়ে তুলতে পারলাম না । পারলাম না নিজেদের পরিস্কার পরিছ্ছন্ন জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে ।
কিছুক্ষন হাটতেই হোটলে পৌছে গেলাম । খুব সুন্দর সাজানো গোছানো পরিবেশ । নাম কাহন্নাহ । হোটেলের ম্যানেজারকে জিগ্গাসা করেছিলাম কাহন্নাহ অর্থ কি ? উনি বললেনঃ নদীর কিনারা ।
দোতালায় দুই বিছানার একটি কামরা নিলাম। সেখানে ব্যাগ রেখে । মুখ হাত ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার বের হয়ে গেলাম। সুন্দর রাস্তা এখানকার মানুষদের মুল পোষাক লুংগী আর সার্ট । পোষাকটা অদ্ভুত ভাবে পড়ে। লুংগির ভিতর শার্টটা ইন করে পড়ে। এখানে যে বাহনটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় । আমাদের দেশের ইয়ামাহা এট্টি ৮০ সি সি মটর সাইকেলের মত মটর সাইকেল । প্রচুর দেখা যায়। এখানে দামও কম । বাংলাদেশী টাকায় বিশ/ পচিশ হাজার টাকা।
আমদের আবাসিক হোটেলে কোন খাওয়া দাওয়া ব্যাবস্থা নাই । দুপুরের খাওয়ার জন্য বের হলাম। এখানে দুই রকমের হোটেল আছে। এক রকম রোহিংগাদের আরেক রকম মগাদের । উল্লেখ্য এখানে কোন বর্মি জাতি নাই সব মগা জাতি । এই কিছুদিন আগে যে দাংগা হয়েছিল তার আগে নাকি মগাদের কোন হোটল ও স্বর্ণের দোকান ছিল না । দাংগার পর ওরা নিজস্ব হোটেল ও স্বর্নের ব্যাবসা শুরু করে । মগাদের প্রত্যেক হোটেলে বিশাল বিশাল এল সিডি টিভি আছে আর মেয়েরাই হোটেল চালায়। রোহিংগাদের হোটেলে কোন টিভি নাই আর পুরুষরা হোটেল চালায়।
তবে খাওয়া দাওয়ার দিক থেকে রোহিংগারা সেরা। এমনকি আমি বলব আমাদের দেশের ভাল ভাল হোটেলে ও এত ভাল স্বাদের এত উন্নত মানের খাদ্য পাওয়া যায় না । সব টাটকা এবং ভেজাল ছাড়া । গরু বলে মহীষের গোশত বেচে না । দেশী মুরগী বলে ফার্ম বেচে না। তবে দামটাও বেশি । বাংলাদেশের এক টাকা মায়ানমারের দশ টাকার সমান। সেই হিসেবে আমরা দুপুরের খাওয়া খেয়েছি ওদের টাকায় চার হাজার টাকা আমাদের দেশের চারশ টাকা। খাওয়া খুব ভালই হল। এখন নামায পড়তে হবে ।
মেজকুটুম বললঃ মসজিদ বাজারের দিকে । চলেন মসজিদে নামায পড়ে আমার বন্ধুর দোকনে আপনাকে বসিয়ে আমি একটু বাজার ঘুরে আসব।
আমরা হাটতে হাটতে মসজিদের সামনে আসলাম । মসজিদটা অনেক পুরানো । জরাজির্ণ অবস্থা । দেখলাম গেটে বিশাল তালা লাগানো।
মেজকুটুম বললঃ চলেন বন্ধুর দোকানে যাই ওখানে পিছনের গেট আছে, ওটা দিয়ে মসজিদে ঢুকে নামায পড়ব।
আমরা ওর রোহিংগা বন্ধুর দোকানে এলাম।
রোহিংগা বন্ধুটি আমায় চিনত , তাই আমাকে দেখে উৎফুল্ল হয়ে উঠল। আমার নাম ধরে ভাই ডেকে ক্যাশ থেকে উঠে এল ।
রোহিংগা চিটাইংগা ভাষায় বললঃ কেমন আছেন ?
ঃ ভাল ।
ঃ বাড়িতে সবাই কেমন আছে ?
ঃ ভাল।
আমি কথা বেশি না বলে তাড়াতাড়ি বললামঃ ভাই কি নামায পড়ব আপনাদের মসজিদের মূল ফটকেত তালা দেওয়া । পিছনে কোন দিক দিয়ে ঢোকা যায় বলে।
বন্ধুটি মুখখানা মলিন করে বললঃ নাসাকা এসে এইটাও বন্ধ করে দিয়েছে।
ঃ বলেন কি ? তাহলে নামায ……।
ঃ একটু বসেন দোকানের পিছনে চাচাত ভাইয়ের বাড়ি আছে ওখানে ব্যাবস্থা করছি। আগে ভাত খান। বাসা থেকে নিয়ে এসেছি।
ঃ না ভাই, ভাত খেয়ে এসেছি। আগে নামাজের ব্যাবস্থা করেন।
কিছুক্ষন পড়ে একজন এক বদনা পানি এনে দিল । অজু করলাম । তারপর একটা ঘরে নিয়ে গেল।
উচু পাটাতনের বাড়ি । সেখানে জায়নামাজ বিছানো ছিল। দুই রাকাত যোহরের কছর নামায পড়লাম । কারন আমি মুসাফীর।
নামাজ পড়ার পর বসলাম। সবুজ রংগের মোসাম্বি নিয়ে এল। ওরা বলে লেমু । কেটে প্লেটে করে দিল। সাথে লবন। খেতে খেতে জিগ্গাসা করলামঃ কি ব্যাপার ভাই আপনাদের কি অবস্থা । মসজিদ বন্ধ কেন ?
ঃ ভাই আমাদের সেই দাংগা এখনও শেষ হয়নি। আজ তেইশ বছর কোন মসজিদে আযান দিতে পারি না । গতকাল পর্যন্ত নামাজ পড়েছি মসজিদে । আজ থেকে বন্ধ । জুম্মার নামায পড়তে পারি না । এতদিন যাবৎ পান্জেগানা নামায পড়েছি তবে, জোরে একামত দিয়ে জামাত পড়তে পারিনি। চার-পাচজন মিলে কয়েকবার করে লুকিয়ে লুকিয়ে জামাতে নামায আদায় করতাম। দিনের বেলা বিদ্যুৎ দেয় না । সন্ধ্যা ছয়টা বাজে বিদ্যুৎ দেয় আবার রাতের দশটা বাজে বন্ধ করে দেয় । রাতে বিদ্যুৎ যাওয়ার পর নাসাকারা বের হয় । মুসলমানদের ঘরে ঘরে ঢুকে তল্লাশী চালানোর নামে ডাকাতি করে । মেয়েদের গায়ে হাত দেয় । প্রতিবাদ করলে ধরে নিয়ে যায় । তারপর দিন কোর্টে চালান করে দেয় । কোর্টে নেওয়ার সময় মেইন রোড দিয়ে না নিয়ে মগা পাড়ার ভিতর দিয়ে হাটিয়ে হাটিয়ে নিয়ে যায় । মগা পাড়া দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় মগারা মুসলমানদের অকথ্য ভাষায় গালাগালী করে আর দৈহিক নির্যাতন করে । এতে অনেকে গুরুতর আহত হয়ে যায় । আহত মুসলমানদের দেখে নাসাকা হাসে আর বন্দুকের ডাট দিয়ে মারতে বলে তাড়াতাড়ি চল। বাইরের বিদেশী কেউ বা জাতিসংঘের কেউ সরেজমিনে তদন্ত করতে আসলে। মগারা মুসলমানদের মারে ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় । আর বলে তোরা খবর দিয়েছস তাই ওরা এসেছে। সুকি্র নিরলজ্জ ভাবে ওদের পক্ষে বক্তব্য দেয় । এই বর্তমান সামরিক সরকার চলে গেলে আমাদের উপর অত্যাচার আরও বাড়বে । প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে মগারা একবার আমাদের উপর চড়াও হয়েছিল । তখন তিনি মায়ানমার সরকারকে বলেছিলেন দুই ঘন্টার ভিতর যদি মুসলমানদের উপর অত্যাচার বন্ধ না হয় তাহলে আমি টেকনাফ দিয়ে বাংলাদেশের আর্মি ঢুকিয়ে দেব। তখন সাথে সাথে মায়ানমার সরকার মগাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিয়ে ছিল। ( আমি মনে মনে বললাম তখন মায়ানমারের চেয়ে বাংলাদশের সাথে চীনের সম্পর্ক ভাল ছিল।) এরপর অনেকদিন আমরা শান্তিতে ছিলাম । দোকানদারি করতে নানা খবরদারি । মগাদের সাথে বেশি কিছু বলা যায় না। পণ্য নিয়ে বেশি দ রদাম করা যায় না । এখানে আমাদের বাংগালীর কোন স্কুল নাই । মগাদের স্কুলে বাচ্চাদের পড়াতে হয়। স্কুলে আমাদের বাচ্ছাদের পড়ানো হয় না । মগাদের বাচ্চাদের পড়ানোর সময় আমাদের বাচ্চাদের আলাদা কামরায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আমরা নিজেরা ঘরে যতটুকু পারি বাচ্চাদের পড়াই । যত মাদ্রাসা ছিল সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোরান হাদিসের শিক্ষা এখন বন্ধ । আমরা ঘরে শুধু আরবী অক্ষরটা শিখাই । কোথাও এক জায়গায় বেশি লোক জমায়েত করতে হলে নাসাকা থেকে অর্ডার নিতে হয়। তখন ওরা ওখানে গোয়েন্দা লাগিয়ে দেয়।
খুব কষ্টে আছি ভাই ।
ঃ আপনারা প্রতিরোধ করতে পারেন না ।
ঃ প্রতিরোধ করার জন্য ট্রেনিং নিতে হয় । সেই জন্য অন্য কোন দেশের সাহায্য লাগে । আমাদেরত কেউ সাহায্যও করে না জায়গাও দেয় না। প্রতিনিয়ত আমাদের মুসলমান বোনদের ওরা ধর্ষিত করছে । ধর্ষিতা বোনের দিকে তাকতে পারিনা । তিলে তিলে গড়া আমাদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিছ্ছে । বল্লমের আগায় আমাদের শিশু সন্তানদের মৃতদেহ নিয়ে উল্লাস করছে । আমরা কিছুই করতে পারছি না চোখের পানি ফেলা ছাড়া । কিন্তু দেখেন আমরা সবাই সুস্থ সবল পুরুষ। আমাদের শক্তি আছে সাহস আছে, নাই শুধু এতটুকু সাহায্য । নাই এতটুকু নিরাপদ মাটি যেখানে দাড়িয়ে নিজেকে প্রশিক্ষিত করব । তারপর গড়ব সুকঠিন এক প্রতিরোধ যা আমাদের হৃত সম্মান ফিরিয়ে দেবে , ফিরিয়ে দেবে বোনের মুখে হাসি ও শিশুদের নির্ভয় কলতান।
দোকানে বসা সবার চোখ পানি ভরে উঠল । আমি নিজের চোখের পানি লুকাতে মাথা নিচু করে ফেললাম।
সারারাত বিছানায় ছটফট করলাম কখন সকাল হবে । পরদিন দুপুর সাড়ে তিনটায় আমরা টেকনাফের বোটে উঠলাম। বিদায় জানলাম আমার অসহায় মুসলমান ভাইদের । যারা রাতের আধারে গুমরে গুমরে কাদে আর দিনে আলোয় মলিন মুখে চেয়ে থাকে আকাশের দিকে কখন এই পরাধীনতার সূর্যটা ডুববে । উদয় হবে স্বাধিনতার সুর্য, যার আলোয় নিরহ রোহিঙ্গা মুসলমানদের মুখে ফুটবে অনাবিল আনন্দের হাসি । মসজিদে মসজিদে উচ্চ রবে ধ্বনিত হবে ফজর , যোহর , আছর মাগরীব ও এশার আযানের সুমধুর আওয়াজ ।
সেইদিন আর কত দুরে বলতে পারেন কেউ ?
( সমাপ্ত ) ।
[email protected]
৬টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
এসব সাম্প্রদায়িকতা পৃথিবীর কোথায় নেই? মাঝে-মধ্যে ভাবি ধর্ম হলো রাজনীতি। মনুষ্যত্ত্বের মৃত্যু ঘটিয়েছে এই ধর্ম। কি বীভৎস, ভয়ঙ্কর হতে পারে মানুষ, ধর্মের নামে রাজনীতি করে। সাম্প্রদায়িকতা আমি ঘেণ্ণা করি। মনে আছে বাবরী মসজিদ যখন ভাঙ্গলো, ভোলা শহরের হিন্দুদের কি অবস্থা হয়েছিলো। ঠিক সেই সময় আমি ছিলাম সিলেট চালিবন্দর উমেশচন্দ্র-নির্মলাবালা ছাত্রাবাসে। ওই পাড়ার ভাইয়ারা সেদিন হাজারটি মেয়ের সম্মান বাঁচিয়ে রেখেছিলো। পরেরদিন সকালেই উনারা এসে বললেন এখুনি যেনো নিজেরা নিজেদের বাড়ীতে চলে যাই। কারণ আর আটকে রাখা যাবে না এদেরকে। এরা বলতে অতি ধার্মিক যারা বাবরী মসজিদের পক্ষে। যে ভাইয়ারা বাঁচিয়েছিলো তাদের ধর্ম মনুষ্যত্ত্ব, জন্মসূত্রে মুসলমান। আর যারা সেদিন আমাদের পিষিয়ে ফেলতে চেয়েছিলো, তাদের ধর্ম কি সে কি বলে দিতে হবে? ওহ আমাদের মেয়েদের ইজ্জত নিতে পারেনি, কিন্তু রামকৃষ্ণ মিশন ভেঙে টুকরো টুকরো করে গেছিলো। জানতে ইচ্ছে করে যারা এভাবে ধর্মের নামে মানুষের সাথে এমন জঘণ্য আচরণ করে, তাদেরকে কোন ধর্মের অণুসারী বলা যায়?
সিকদার
ধর্মের নামে নিরহ সাধারন মানুষদের উপর অত্যাচার কোন ধর্মই দেয়না । তারপরও ধর্মকে অহরহ ব্যাবহার করা হয় নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে । ধর্ম যেমনই হোক সবাইত রক্ত মাংসে গড়া মানুষ । আপনার মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ ।
অনিকেত নন্দিনী
সাম্প্রদায়িকতা মানবতাকে কুচলে দিয়েছে।
ভয়ংকর রাগী অজগরের মতো ফুঁসে উঠছে সাম্প্রদায়িকতা, জেরবার করে দিচ্ছে মনুষ্যত্ব। এসব ঘটনার বিবরণ দেখলে বা শুনলে কষ্ট লাগে, লজ্জা লাগে। ধর্মের নামে জোর জবরদস্তি করার নির্দেশনা কোন ধর্মে আছে? যতদূর জানি জগতের কোন ধর্মই জোর জবরদস্তি সমর্থন করেনা।
সিকদার
কিছু স্বার্থপর আর লোভী মানুষের কারনেই আজ ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত চারাটা লকলকিয়ে মহীরুহে পরিণত হচ্ছে ।
আজিম
রোহিংগা মুসলমানদের উপর অত্যাচার সম্পর্কে টেকনাফে একসময় চাকরী করার সুবাদে জানি। রোহিংগা ক্যাম্পেও কাজ করেছি তিনমাস, ওদের সঙ্গে মিশেছি ভালভাবে, দেখেছি ওদের খুব কাছে থেকে। বিশেষত: রোহিঙ্গা মহিলাদের বিভৎসতার কথা শুনেছি অনেক। মংডু শহরে যাওয়ার এবং ৮ ঘন্টা থাকার পাশও ইস্যু করেছি ইউনিয়ন কাউন্সিলের প্রশাসক থাকার সুবাদে। কিন্তু নিজেরই কোনদিন যাওয়া হয়নি অত্যন্ত ব্যস্ত থাকার কারনে।
যাহোক আপনার এই লেখাটা মনে দাগ কাটে। এই লেখার আগের খন্ডগুলো পড়ে দেখব। গুছিয়ে খুব ভাল লিখেছেন।
সিকদার
ওদের কাছে আমি ওয়াদা করেছিলাম আমার ক্ষুদ্র পরিসরে যতটুকু সম্ভব লিখব । আপনার মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ ।