কি শিখাচ্ছে আমাদের দেশের মাদ্রাসায় ? তাদের পাঠ্যসুচির বইয়ে কি পড়াচ্ছে ? এসব আমরা ভেবে দেখিনি বা খুঁজে দেখিনি কোনদিন । তাদের পাঠ্য পুস্তকের কিছু বই পড়লে মনে হবে , মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড জামায়াত ইসলামের কর্মী সংগ্রহে নেমেছে ।
” যুগে যুগে ব্যক্তি সমষ্টি তথা সমিতি, সংঘ, দল প্রভৃতিও ইসলামী মূল্যবোধের অনুশীলনে যথেষ্ট অবদান রাখছে। বর্তমান শতাব্দীতে মুসলিম বিশ্বে বহু দেশে বহু সংঘ বা দল সমাজে ইসলামী মূল্যবোধে জাগ্রত করার চেষ্টা করছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইখওয়ানুল মুসলেমীন, ইন্দোনেশিয়ান শরীয়ত পার্টি, মালয়েশিয়ায় প্যান মালেয়ান ইসলামী অ্যাসোসিয়েশন, ভারতীয় উপমহাদেশ ও আফগানিস্তানে জামায়াতে ইসলামী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম প্রভৃতি রাজনৈতিক দল এবং ছাত্রদের মধ্যে সাবেক ইসলামী ছাত্রসংঘ, ছাত্রশক্তি পরে ইসলামী ছাত্রশিবির প্রভৃতি ছাত্র সংগঠনের যৌথ প্রচেষ্টায় মুসলিম সমাজে অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়েছে বা হচ্ছে।’ এটি কোনো রাজনৈতিক দল বা ইসলামী দলের কোনো ওয়েবসাইট বা দলীয় লিফলেট বা মুখপত্রের ভাষা নয়। খোদ বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত নতুন সিলেবাস অনুযায়ী আলিম (একাদশ) শ্রেণীর ‘ইসলামী পৌরনীতি’ বইয়ের ৫৬ পৃষ্ঠার অংশ বিশেষ।বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে বইটি প্রকাশ করেছে ইসলামী ব্যাংক ও জামায়াত-শিবিরের আর্থিক সহায়তায় গড়ে উঠা আল ফাতাহ পাবলিকেশন্স। এভাবেই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের পৌরনীতি শিক্ষার নামে কৌশলে ধর্মের দোহাই দিয়ে জামায়াত-শিবির কার্যক্রমের প্রশংসা করা হয়েছে।”
মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের সর্বশেষ সিলেবাস অনুযায়ী আলিম শিক্ষার্থীদের জন্য রচিত এবং আল-বারাকা লাইব্রেরির প্রকাশিত ‘ইসলামী পৌরনীতি’ প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র বইতে জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীকে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, বিংশ শতাব্দীর ইসলামী পুনর্জাগরণ আন্দোলনের নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই বইতে ‘ইসলামী রাষ্ট্রের সংজ্ঞায়’ আবুল আলা মওদুদী, অধ্যাপক গোলাম আযম, মোহাম্মদ আসাদ ও আবুল কাশেম সিফাতুল্লাহসহ বিতর্কিত ব্যক্তিদের উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে।
বইটির ৪৯১ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘ইসলামী সাহিত্য সৃষ্টির মাধ্যমে ইসলামী চেতনা ও সংস্কৃতির বিকাশে অনবদ্য অবদান রাখেন এ উপমহাদেশে সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (র.)। ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা, ব্যাংকিং, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ, রাজনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
একই বইয়ের ৩৮৭ পৃষ্ঠায় ধর্মনিরপেক্ষতার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কোনো কল্যাণমূলক মতবাদ পৃথিবীতে নেই। ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মহীনতার নামান্তর। ধর্মকে ধ্বংস করার কৌশল হিসেবে রচিত একটি অপতন্ত্র। কেননা, ধর্মনিরপেক্ষতার মূলকথা হল কোনো ধর্মই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সুতরাং রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো ধর্মকেই মডেল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। প্রত্যেক ধর্ম থেকে কিছু কিছু মূলনীতি গ্রহণ করে বাকি মূলনীতিগুলো মানব রচিত মতবাদ থেকে গ্রহণ করত রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে। এটি ইসলামী ধর্ম বিশ্বাসে সম্পূর্ণ পরিপন্থী।’
আলিম শ্রেণীর ‘ইসলামী পৌরনীতি’ বইয়ে জাতির জনকের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও জামায়াতের প্রশংসা করে ৫৮২ পৃষ্ঠায় বলা হয়, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৭৫ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে, কিন্তু ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোকে কাজ করতে না দেয়ায়, তাদের সঙ্গে তৎকালীন সরকারের সম্পর্ক ছিল তিক্ত ও বিদ্বেষপূর্ণ। …বর্তমান সরকার পরিচালনা করছে চারদলীয় ঐক্যজোট। এ জোটের অন্যতম দুটি দল হল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোট। তাই বলা যায়, এদেশে ইসলামকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠাকরণের ক্ষেত্রে ইসলামী দলগুলো অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। সময়ের বিবর্তনে এ দেশে হয়তো একদিন তাওহীদের পতাকা উত্তোলিত হবে- এমন ধরণা এদেশের ইসলামপ্রিয় জনগণের।’
একই বইতে৫৯১ পৃষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামীর গুণকীর্তন করে আরও বলা হয় , ‘বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতিতে সর্বাধিক বড় রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী। এ দলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে ইসলামী রাজনীতিকে এ উপমহাদেশের মানুষের সামনে তুলে ধরতে প্রয়াস পেয়েছেন। ইসলামের বিভিন্ন দিকের ওপর তার অনেক রচনাবলী রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক কার্যাবলী ছাড়াও সমাজসেবায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্গত মানবতার পাশে সব সময়ই জামায়াতে ইসলামী এগিয়ে আসে। এদেশের ইসলামী অর্থনীতি চালুর প্রচেষ্টায় জামায়াতে ইসলামী বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় জামায়াতের বলিষ্ঠ ভূমিকা মুখ্য। জামায়াতে ইসলামী শিক্ষার ক্ষেত্রে অনবদ্য অবদান রেখেছে। তামিরুল মিল্লাত ট্রাস্টের অধীনে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসা পরিচালিত হচ্ছে। মাদ্রাসাটির শিক্ষাদানের মান বেশ উন্নত। প্রতিবছর বোর্ডের পরীক্ষায় ছাত্ররা বেশ ভালো ফল করে।’
এখনই সময় এই সব বই তুলে নিয়ে জামায়াতের হিংশ্রতা , ১৯৭১ জামায়াতের ভুমিকা সম্বলিত সঠিক ইতিহাস মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এটিতো আমরাই অনুমোদন দিয়েছি , গোপনে বা চোরাগোপ্তা ভাবে তো পড়ানো
হচ্ছে না । কে বা কাহারা প্রকাশ করছে এটি বিচার্য হতে পারেন না । প্রকাশনা ও অনুমতির বাইরে হয়নি ।
অতএব দেখে যাওয়া ছাড়া সাধারণের উপায় কী ?
এটা আমার কাছে খুব আশ্চর্য জনক মনে হয়নি।। এমনি এমনি জামাত বা এতো রকমের নামে বেনামে ইসলামী সংগঠন গড়ে ওঠেনি ।। কিছুই হবেনা, ভবিষ্যতে আমরা আরো একটি ইসলামী রাষ্ট্র পাবো, ভালই তো ।। 🙁
১১টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এটিতো আমরাই অনুমোদন দিয়েছি , গোপনে বা চোরাগোপ্তা ভাবে তো পড়ানো
হচ্ছে না । কে বা কাহারা প্রকাশ করছে এটি বিচার্য হতে পারেন না । প্রকাশনা ও অনুমতির বাইরে হয়নি ।
অতএব দেখে যাওয়া ছাড়া সাধারণের উপায় কী ?
প্রজন্ম ৭১
এসব এতদিন দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছে । ভাবতে অবাক লাগে কিভাবে একটি দলের প্রচারনা চালানো হচ্ছে যে দলটি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ছিলে এই দেশের বিরুদ্ধে ।
জিসান শা ইকরাম
জামাতের ঘাটি , শক্তি , জনবল দিন দিন বৃদ্ধির কারন তাহলে পাওয়া গেলো ।
প্রজন্ম ৭১
প্রতিটি মাদ্রাসা জামায়াত ইসলামীর এক একটি দুর্গ ।
খসড়া
সর্বনাশ এর সমাধান কি?
প্রজন্ম ৭১
কঠোর নজরদারীর মাধ্যমে এদের পড়াশুনাকে নিয়ন্ত্রন করা।
শুন্য শুন্যালয়
এটা আমার কাছে খুব আশ্চর্য জনক মনে হয়নি।। এমনি এমনি জামাত বা এতো রকমের নামে বেনামে ইসলামী সংগঠন গড়ে ওঠেনি ।। কিছুই হবেনা, ভবিষ্যতে আমরা আরো একটি ইসলামী রাষ্ট্র পাবো, ভালই তো ।। 🙁
প্রজন্ম ৭১
তাদের পরিকল্পনা তাই ।
ফাঈলাসূফ
কিছুটা অবাক হলাম। যত দূর মনে পড়ে , মৌদূদীর বই সিলেবাস থেকে বাদ দেয়ার দাবীটা মাদ্রাসা শিক্ষকদের ভেতর থেকেই উঠেছিলো!
প্রজন্ম ৭১
একদিন দেশ হবে তালেবান, এমন ইচ্ছেই তাদের।
সঞ্জয় কুমার
সব নষ্টদের অধিকারে যাবে ।